।। শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ।।
শুধু ভয় আমাকে ছিটকে দিয়েছিল
তাদের সংশ্লিষ্ট বর্তমান থেকে
পরপর বাড়ি বদলের দিনে জ্বর ও বমি ভাব
অথচ আমার কিছু করার ছিল না
বলে নিজেকে চিরকাল সান্ত্বনা দিয়েছি
১৮
শহরতলির মানুষের বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে
যেন বিকেলের আকাশ তাসের মতো জুলাই
আসলে দ্রুত সিঁড়ি ভাঙা ফুসফুসের পুষ্পল বিন্যাসে ঢাকা রক্ত চলাচল
তোকে সাবধান করেছে
বন্ধুরা ও তাদের তাদের সংশ্লিষ্ট বর্তমান
ক্যালন্ডারে চাঁদমারি হয়ে উঠছে
প্রতিটা মাসেই বেঁধা তির
বার্তাগুলো কিছুতেই কথা হয়ে উঠছে না
১৯
সমস্ত রাত্রি যন্ত্রণা ছিঁড়ে পেশি বের করে আনতে চাইছে
প্রকান্ড কোনও জৃম্ভন সর্বাঙ্গে টের পাচ্ছি তার দাঁত
এখনও জ্বরের ঘুম ভেঙে গেলে জল স্বাদু লাগে
বনপথ মনহরিনী জাতীয় শব্দ অনায়াস হয়
যেমন বৃষ্টিতে মিলিয়ে যাওয়া কমবয়সীদের
সাইকেলের তাড়াহুড়ো তাদের সংশ্লিষ্ট বর্তমান
২০
ভিতরে শুধু রাগ জমা হয়
পারা চটে যাওয়া আয়নায় যেভাবে দুপুরের আলো
যেন পাখিরা পড়লে আটকে যাবে এমন থকথকে
তাদের সংশ্লিষ্ট বর্তমান
অথচ আমাদের ডাকনামগুলো সহজ ছিল
তখনও সময় ছিল
শুধু ছিটকে যাওয়া অনর্থক ভেবে নিয়ে
আজ এই পিঠ ঠেকাবার দেয়াল
উঠোনহীন বাড়ি
পায়রা এসে ঘেন্না রেখে গেছে
২১
মৃত্যু-সম্ভাবনা থাকলেও সত্যি বলা যায় না
মাটি চাপা দেওয়া শিকড়ের সাদা
মুখে এসে ঠুসে দেয় চুপচাপ
তাদের সংশ্লিষ্ট বর্তমান
ক্রমশ মিলিয়ে আসে
প্রাত্যহিক অভিযোগের মত
২২
মৃত্যু-সম্ভাবনা থাকলেও সত্যি বলা যায় না
মাটি চাপা দেওয়া শিকড়ের সাদা
মুখে এসে ঠুসে দেয় চুপচাপ
তাদের সংশ্লিষ্ট বর্তমান
ক্রমশ মিলিয়ে আসে
প্রাত্যহিক অভিযোগের মত
ফেরার পিচ্ছিল পথ জ্যোৎস্না ও কুয়াশা
স্বপ্নে কখনই নিজেকে স্পষ্ট দেখিনি
এখন এই ভিজে অ্যাসফল্ট ঘুমে এসে রেখে যাচ্ছে
হিমবাহ অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের বেরং
মথের দল ও তাদের সংশ্লিষ্ট বর্তমান
অথচ সবাই আমার বাষ্প চিৎকার থেকে
কাচের দরজার দূরত্বে
২৩
ফেঁউটি, মাটির জিভ
থেঁতলে দিয়ে এগিয়েছি উল্লাসে
যেভাবে শুকনো শালুকডাঁটি
বা মোচার বাহ্যিক পাপড়ি পায়ে জড়ায়
সেভাবেই বৈশাখ ও জামরুল বাগান
আঁকড়ে রয়েছে তাদের সংশ্লিষ্ট বর্তমান
২৪
চিৎকারগুলো শুকিয়ে এসেছিল
পতঙ্গের হৃৎপিণ্ড
অথচ অভিযোগ শুধুমাত্র কয়েকটুকরো কাগজ
জ্বালিয়ে দেওয়া যেতে পারতো
কল্পনারেখা বরাবর পোড়া চামড়ার দাগ
উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা মনে করাতো না
শুধু ভয় আমাকে ছিটকে দিয়েছিল
তাদের সংশ্লিষ্ট বর্তমান থেকে
পরপর বাড়ি বদলের দিনে জ্বর ও বমি ভাব
অথচ আমার কিছু করার ছিল না
বলে নিজেকে চিরকাল সান্ত্বনা দিয়েছি
শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
জন্ম ১৯৭৮, কলকাতা। বাংলায় প্রকাশিত কবিতার বই ৪টি। বৌদ্ধলেখমালা ও অন্যান্য শ্রমণ কাব্যগ্রন্থের জন্য ভারতের সাহিত্য আকাদেমির যুব পুরস্কার, পেয়েছেন মল্লিকা সেনগুপ্ত পুরস্কারও। স্পেনে পেয়েছেন আন্তোনিও মাচাদো কবিতাবৃত্তি, পোয়েতাস দে ওত্রোস মুন্দোস সম্মাননা। স্পেনে তিনটি কবিতার বই প্রকাশ পেয়েছে। ডাক পেয়েছেন মেদেইয়িন আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব ও এক্সপোয়েসিয়া, জয়পুর লিটেরারি মিট সহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবে। অংশ নিয়েছেন Poetry connections India-Wales প্রকল্পে।