।। সোমনাথ রায় ।।
পণ্ডিতের জ্ঞান ভুলে ধ্বনিসংকেতে চলে স্বর
হলন্ত শব্দে ওই টান মারে মানুষের গান
শ্যামের বাঁশিতে বাজে বিরহের পুরোনো আজান
তার প্রেমে খুঁজে পেতে অশ্রুদাগের অক্ষর?
শাড়ির দোকানে আমি
বেকুবের মতো আমি খুঁজে যাই রঙের ভিতর
চেনা অবয়ব নাকি অচেনা ছকের থেকে মিনার গম্বুজ, বাড়ি
গেট খুলে দেবে কিনা কিম্বা সে তালার শিকড়
কোথায় প্রোথিত আছে, কোন র্যাকে, কাচের বাহারে
আমাকে বসতে দ্যায় গদির ওপরে, তার সাদা চাদরে
পিচের মত সুতো উঠে থাকে
আমি দেখি সুতোর রাস্তা ধরে
অনেক পিছিয়ে গিয়ে তন্তুবায়ের চাক, তাকে-
শাড়ির দোকানে আমি বেকুবের মত চেয়ে থাকি
রঙের ভিতরে রঙ, আঁচলের কারুকাজ কেবলই চমকে দিয়ে যায়
বেকুবের মত আমি সেখানে বিষাদ এনে রাখি
শাড়ির দোকানে আমি তোমাকে খুঁজেছি আয়নায়
ভানুসিংহের জন্য
একশো বছর ধরে মরে গেছে বাংলার গ্রাম
মৃত শরীরের ঢিপি ঢেকে রাখা প্রগতির পথে
রোশনচৌকি বাজে কলোনিপ্রভুর তরিবতে
সে শহরে এ কিশোর কখন শুনল শ্যামনাম?
শ্যামের বাঁশি সে, দ্যাখো মাটিতে গুঁড়িয়ে গেছে ধুলো
ক্ষুধার পরত পড়ে শ্রীখোলের চামড়াটি ফাঁপা
গানের ভাষাটি মূক, অস্ত্রের শিক্ষায় মাপা
মিশনারি সভ্যতা উপড়োবে শিকড়ের মূল-ও
নওলকিশোরসনে দেখা হ’ল কিশোর কবির—
তখনই, যখন ক্রমে অবসাদে অবসাদে ম্লান
মানুষী প্রেমের দেব বাংলায় গিয়েছে ভাসান
নিরাকার ফটোফ্রেম ঘিরে ধরে মঞ্চের ভিড়!
কোথায় লুকিয়ে ছিল ওই মুখ ব্রজের পিয়াসী?
তুলসীর পোড়ো থানে কিম্বা খরায় মরা ক্ষেতে
তাঁতির আঙুল থেকে তোমাকেই নিয়েছিল কেটে
তোমাকে? বাংলাভাষা? নীলের কুঠিতে মরা চাষি?
প্রসাদের গান তুমি মাঝিমল্লার দাঁড়ে ক্ষীণ
আত্মরক্ষা করে বহুদূরে দরিদ্রের গাঁয়ে
অক্ষরচিহ্ন ভুলে ভেসে যাও উজানি হাওয়ায়
লুকোও গোপন প্রেমে সাধনার শব্দে আসীন
বাজার, নৌকোঘাটা, ফিরিওয়ালার পথে পথে
বাঁধানো সড়কজুড়ে কাজ খোঁজা মুনিষের ঠাঁই
সন্ধেমহল্লার কবিগানে, হাফ-আখড়াই
ছিলিমের ধোঁয়া হয়ে মিশে যাও সেই সঙ্গতে
তাকে কি চিনলে কবি? রামপাঁচালির চেনা পাঠে
পশ্চিমি শব্দ কিছু এনেছিল কানা পালোয়ান
অপার বাংলাভাষা ছুঁয়ে থাকে বিবিধ বয়ান
তাকেই কি দেখেছিলে বীরভূমে কালো মেঘমাঠে-
পণ্ডিতের জ্ঞান ভুলে ধ্বনিসংকেতে চলে স্বর
হলন্ত শব্দে ওই টান মারে মানুষের গান
শ্যামের বাঁশিতে বাজে বিরহের পুরোনো আজান
তার প্রেমে খুঁজে পেতে অশ্রুদাগের অক্ষর?
সোমনাথ রায়
আইআইটি খড়গপুরে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সহযোগী অধ্যাপক। উপনিবেশপূর্ব বাংলার সামাজিক গঠন অধ্যয়নে উৎসাহী। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ, ‘ঘেন্নাপিত্তি’, ‘রেলিং জড়িয়ে প্লাস্টিক’, ‘অরূপ বৃন্দাবন ও অন্যান্য পদ’।
‘শাড়ির দোকানে আমি’ বেশি ভাল লাগল। শুভেচ্ছা, সোমনাথ
দারুন। অসামান্য –
পণ্ডিতের জ্ঞান ভুলে ধ্বনিসংকেতে চলে স্বর
হলন্ত শব্দে ওই টান মারে মানুষের গান
শ্যামের বাঁশিতে বাজে বিরহের পুরোনো আজান
তার প্রেমে খুঁজে পেতে অশ্রুদাগের অক্ষর?।