।। জহির হাসান ।।
সবুজ মেঘেরও মৃত্যু থাকে কেন, আফসানা
হেমন্তে ফোটা ঘাসগুলির ফুল আমরা ফিরি আসি পাবোনে তো, আফসানা
ঘর সহজে ভবঘুরেদের কোলে ডাকে না ক্যানে , আফসানা
চোখের মণিধোয়া জল অশ্রু নামে ধরে কেন, আফসানা
সুরাপাত্রের মুখ ছিপি আঁটা থাকে কেন, আফসানা
ইমেলের যুগে আজও আমি ডাকপিয়নের অপেক্ষায় দরজার দাঁড়াই থাকি কেন, আফসানা
ইমেলের যুগে আজও আমি ডাকপিয়নের অপেক্ষায়
ভালা কবিতা
ভালা কবিতা কাউরে লিখতে দেখলে
আমার চক্ষেতে পানি আসে কোন বা মায়ায়!
তারা জোট বান্ধি ফোঁটা হয়।
কে আগে ঝরিবে
কে আগে নামিবে ধরায়
প্রতিযোগিতা লাগায়!
‘তোরা থামবি!’ আমি কই।
ধমকাই ওদেরে
কেউ ভালা কবিতা লিখে কহন জানস তোরা?
কেউ ভালা কবিতা লিখলে
তার কয়দিন পর সে মারা যায়!
তাই বুঝি শেষমেষ সে টিয়া পাখিরে হুদাই
আদর করে
লাল মরিচ খাবায় একা একা বিকাল বেলায়
একাকী একটা
অদৃশ্য
ব্রিজের উপর নিজেরে ফালাই আসে !
সমুদ্রযাত্রা
আমার বুদ্ধিরা কনে গেল
ফের নিজেরে কেমনে খণ্ড খণ্ড জোড়া লাগাই !
কেমনে বর্ণনা করি
জাহাজ ডুবির পর ভাগ্যাহতরাই নিজেরা একটা ক্লাব খুলি
মৃতদের বছর বছর স্মরণ করে
আমাদের নিজেদের আলাদা আলাদা ঘরবাড়ি আছে
তবু খুঁজতে আসছি একটা প্রকৃত ঘর
যদি আমরা পাইতাম নিজেদের দেহের ভিতর…
এইটুকুই স্মরণে আসে
আমরা ডুবছি কে কার সাগরে
আমরা দু’জন ছিলাম অনেক কাছে
আরও বেশি কাছে ঘেঁসতে গেছি যেই
ধাক্কা লাগলো আমরা
কে কোথায় রইলাম
কে কোথায় গেলাম
কবে
কী
হৈলাম টুকরা টাকরা
ভাসতে ভাসতে
ঠিকানাহীন
কোনবা তীরে ঢেউয়ের বাড়ি খাইতেছিলাম!
আমাদের পোশাক কোথায় গেল
খোলস হারায় কোথায় গেল!
আমাদের হুঁশ কোথায় গেল !
আমাদের পরিচয় তো ছিল
নাম সাকিনও ছিল!
ভাবলাম নীড় খুঁজতে আসি
এ ধরণের সমুদ্র যাত্রায়
গৃহহীন হওয়ার সম্ভবনা কম ন!
রাত
রাতের তারা উল্টা আমারে জিগায়
’তুমি’ কে গো!
সেলাই করে মহাকালরে যেই যেই তারা সারারাত
দখিন আসমানে উলি উঠে তারা!
রাতের নির্জন দিকটা ফেলি
গড়ানো আন্ধার ফেলি
ডানা হারা বিলাপী পাহাড়ের দিকে ভোরের প্যাঁচা ধায়
বলতে বলতে
’আমি’!
দুর্বোধ্য কিছু জায়গা থাকে কিছুদিন মানুষের শরীরে
তারপর উধাও হয়!
তখন অর্থ পাল্টায়
প্রশ্নও পাল্টায়!
শুধু মনে হয়
’আমি’
’তুমি‘
হুদাই কী বাখোয়াজি!
প্যাঁচার মতো রাতরে ফেলি
আমার আর ভাগার জায়গা কনে!
আফসানা
চারদিকে ধ্বংস দেখার মতো অনেক দর্শক তৈয়ার হতেছে, আফসানা
দিনরাতে এদের সংখ্যাই বাড়তেছে, আফসানা
আমার গিটার কারা আসি মুছি দেয়, আফসানা
কারা শূন্যের পেটের মধ্যে শূন্য চালান করতেছে, আফসানা
আমরা কনে এখন, আফসানা
যেন এ শহরতলীর সবাই তাদের আগের নিজ নাম পাল্টাই ফেলছে,আফসানা
সম্রাট শাহজাহান একটা স্বপ্ন দেখতেছে,আফসানা
একটা সোনালি প্রাসাদ (ওরফে ভালোবাসার ঘর) তাই তো মনে হয়, আফসানা
ও প্রাসাদ ব্যাঙের ছাতার মতন ছোট কেন, আফসানা
কে যেন বহুবচন হই পা দিয়া সে প্রাসাদ (ওরফে ভালোবাসার ঘর) পিষে দিতেছে, আফসানা
শাহজাহান নাকি তার স্বপ্ন মিথ্যা ছিল, আফসানা
বঙ্কিম চন্দ্রে এত বেশি বেশি শোভা ধরে কেন, আফসানা
বিষণ্ণ কুঞ্জলতার ছানা হইতে চাইছিলাম কেন আমি, আফসানা
সবুজ মেঘেরও মৃত্যু থাকে কেন, আফসানা
হেমন্তে ফোটা ঘাসগুলির ফুল আমরা ফিরি আসি পাবোনে তো, আফসানা
ঘর সহজে ভবঘুরেদের কোলে ডাকে না ক্যানে , আফসানা
চোখের মণিধোয়া জল অশ্রু নামে ধরে কেন, আফসানা
সুরাপাত্রের মুখ ছিপি আঁটা থাকে কেন, আফসানা
ইমেলের যুগে আজও আমি ডাকপিয়নের অপেক্ষায় দরজার দাঁড়াই থাকি কেন, আফসানা
আর কী কী আমি হারাইতে চাই তার লিস্টি করি নাই ক্যানে, আফসানা
একাকী দেবদারুটার নিচে আমি ছাড়া আর কে কে শুইছিল, আফসানা
একটা স্মৃতি আরেকটা স্মৃতিরে খাইয়ে বাঁচি থাকে কেন, আফসানা
ছাইয়ের নিচে উঁকি দেয়া আগুন খুটে খাই কেন আমি, আফসানা
প্রেমে আত্মহারার পথ-ঘাটে এত আগুন মউজ ক্যানে, আফসানা
পড়ুন- জহির হাসানের কবিতা ভাবনা
জহির হাসান
জন্ম: ১৯৬৯, যশোর জেলায় মাতুলালয়ে।
প্রকাশিত কবিতার বই: পাখিগুলো মারো নিজ হৃদয়ের টানে (২০০৩), গোস্তের দোকানে (২০০৭), ওশে ভেজা পেঁচা (২০১০), পাতাবাহারের বৃষ্টিদিন (২০১২), খড়কুটো পাশে (২০১৪), আয়না বিষয়ে মুখবন্ধ (২০১৬) ও আম্মার হাঁসগুলি(২০১৭), বকুলগাছের নিচে তুমি হাসছিলি(2018), আমমার আরও হাঁস(2019)।
অনুবাদ : এমে সেজেরের সাক্ষাৎকার ও আধিপত্যবাদ বিরোধী রচনাসংগ্রহ (২০১১) । সাক্ষাৎকার পুস্তিকা (কবি উৎপলকুমার বসুর সাক্ষাৎকার) : কথাবার্তা (সপ্তর্ষি প্রকাশন, কলকাতা, ২০০৬)