।। শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ।।
শব্দদের গায়ে সাধারণত একটা ছোটবেলা আটকে থাকে
আর তাদের প্রিয় কোনও বর্তমান
ভাঙা পড়া বাড়ির জঞ্জালস্তূপের রঙিন কাপড়
আত্মজীবনীরা সাধারণত শিক্ষিত হয়
কবিও শৈশব গুলিয়ে ফেলে
আমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে মজা দেখি
কীর্তনের টুকরো কানে
নিচু হয়ে পুরনো বই দেখার ছলে
সময় গুটোই
আত্মজীবনী
১
আত্মজীবনীর মধ্যে কতবার হাত পাতা যায়?
মানুষ তাদের প্রিয় কোনও বর্তমান জড়িয়ে রাখে ভবিষ্যৎ স্মৃতিতে
সেখানে অযাচিত হতে হতে মৃত পতঙ্গের মত অবান্তর হয়ে যায়
অন্যের দারিদ্র্য, দমবন্ধ হয়ে আসা সপ্তাহগুলো
শুধু গ্রীষ্মকালেই দেখা যায়
তোমাদের বেড়াতে যাওয়া রাতের ট্রেনে সদ্য খোলা খাবারের পাত্রের গন্ধ
দপদপ করতে থাকা কোনও টিউব হয়ত
নিভোতে ভুলে যাওয়া কোনও সুইচের কথা মনে করায়
সামান্য রক্তচঞ্চল এই সন্ধে এখনও রাত হয়নি
যাও দরজা দিয়ে বাইরে ভারি লোহার গন্ধ শোঁকো
লুকিয়ে একটা সিগারেট ধরাও
এখনও কীকরে সহজে ঘুম আসে লোকের
তাই ভেবে বিস্ময় গিলে
বার্থে ফেরার আগে দেখে নাও পকেট
হাত ধুয়ে যাও, শুয়ে পড়ো
২
আত্মজীবনী আর আমার মধ্যে বারবার চলাচল হেতু
একটা রাস্তা তৈরি হয়ে গেছে
আচমকা গাছে কাঁঠাল ফাটার শব্দের মতো
একটা স্বর বিনিময় করি আমরা
শব্দদের গায়ে সাধারণত একটা ছোটবেলা আটকে থাকে
আর তাদের প্রিয় কোনও বর্তমান
ভাঙা পড়া বাড়ির জঞ্জালস্তূপের রঙিন কাপড়
আত্মজীবনীরা সাধারণত শিক্ষিত হয়
কবিও শৈশব গুলিয়ে ফেলে
আমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে মজা দেখি
কীর্তনের টুকরো কানে
নিচু হয়ে পুরনো বই দেখার ছলে
সময় গুটোই
৩
আত্মজীবনী সব মুছে দেয়
কফি মেশানো চা প্ল্যাটফর্ম শীতকাল
দরজা পর্যন্ত লাফিয়ে আসা বাড়ি
পাড়া, শেষ ট্রেনের সময় বোঝা কুকুর দল
যখন তাদের প্রিয় কোনও বর্তমান খোঁজে
যাও, দাঁড়িয়ে পড়ো না
ভয় যদিও অন্ধকার রাস্তায় শিস দেওয়াতে চায়
তোমার ঘরটা এখনও আছে ভাবো
ফুলের সঙ্গে বিধবা মালা কাকিমার যতটা স্বাভাবিকতা
ততটাই ঘর সংলগ্ন ছাদ,
যাও একটা সিগারেট ধরাও
এখানে কেউ দেখবে না
ধ্রূপদী কবিতা পড়ো পেন্সিলে দাগিয়ে
৪
আত্মজীবনীর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে অলৌকিক কোনও রেলস্টেশন
চৈত্র দুপুরে তুলোবীজ, পরিত্যক্ত ওয়াগন
আসলে বর্ণনা ও না-বর্ণ প্রতিবেশ
তাদের প্রিয় কোনও বর্তমান জুড়ে এক টুকরো নোনতা মাছের সন্ধে
ভাতের থালা, বকুল রং
নিজেকে দাঁড়াতে বলি, গ্রামের মানুষ বলে যারা এড়িয়ে থেকেছে
তাদের জন্য বেছে নিই সামুদ্রিকতা
ফেনা ও নুনের মত স্বাভাবিক ভাষার গায়ে
অনুমান করি স্বপ্নের জোর
প্রাচীন কোনও গাছের রজনে
আটকে থাকে ঘুমের মত দুপুরপোকা
নিজেকে ফিরে যেতে বলি
সহজ কোনও সন্না দিয়ে শিহরন উপড়ে ফেলে দিই
৫
মাধবীলতাকে আমাদের মাধবীলতা বলতে অনেকেই পারে না
স্বদেশ সেন
আত্মজীবনীর কেন্দ্র থেকে ছিটকে আসা বিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকি
শিকারি কুকুরের মতো রেডিও তরঙ্গ খুঁজে বেড়িয়েছে বসবাসযোগ্য নাটক
জুড়ে নিয়েছি আনুষঙ্গিক আসবাব ও ঈশ্বর অবিশ্বাসীর জন্য প্রমাণ
দেয়াল জুড়ে যুদ্ধের পটচিত্র সৈন্যরা ও তাদের প্রিয় কোনও বর্তমান
শিশু জন্মের মত সামাজিকতা
সমগ্র প্রপঞ্চ ভরা হিন্দোলিত উলুখাগড়া
হ্যাঁ প্রাকৃতিক নিয়মে এখানেই ঘুরপাক খাচ্ছি
পকেট ভর্তি পুরনো বন্ধুদের নাম
সমগ ঘা বহন করা কীট ভরসাযোগ্য শীতালোক গরাদ
মাধবীলতাকে আমাদের করে তুলেছে
৬
আত্মজীবনী বিষ ঢালা মাছপকুর
বর্ষালোক ও কখনও দিগন্ত না দেখা জমি
বাড়ি ফেরার রাস্তা — কখনও ভেবেছি আগে?
ভিড় ও তাদের প্রিয় কোনও বর্তমান
সবসময় বাড়ি খুঁজে পেয়েছে
খাবার টেবিল, সান্ধ্য চুপচাপ, ভ্যাপসা খয়েরি রঙের উপর
টিউবলাইট ব্রোনজ — মানুষকেন্দ্রীক
পুকুর ফেরত রাস্তা, পাতলা ছায়ানিম
দুর্বল পতঙ্গ ছেটাচ্ছে সমগ্র সকালে
৭
আত্মজীবনী সেই উন্মাদনার দুপুর, ভারি মাথার বিকেল
আসঙ্গলিপ্সার রাত মনে করতে চায় না
যেমন দুপুরের রাস্তায় অসুস্থ কুকুর খাবলে দিয়েছে ভিখারির পা
রক্ত ও পেশির ফ্যাকাশে ঝুলে থাকার মধ্যে একটা রাস্তা বাঁক নেবার ইঙ্গিত
ও তাদের প্রিয় কোনও বর্তমান আমাকে বিক্ষত করতে চায়
কোথায় দাঁড়াতে চাইছি কোথায় বেড়ালের মুখে তুলে দিচ্ছি মৌটুসি
রাক্ষসের মত গিলে নিতে চাইছি মায়ের ফেলে দেওয়া অমরা
অস্বীকার করতে চাইছি আমার অসুখ
আমার সর্বান্তঃকরণ সঙ্গহীন থাকতে চাওয়ার হিংস্র বাসনা
প্রয়োজনীয় বাক্য খুঁজে পায় না
শুধু দাড়ি কামানোর সময় গালে জোর করে
ব্লেড চেপে ধরে
আর কাটা দাগ সমেত বেরিয়ে পড়ে অপরিচিতের দিকে
শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
জন্ম ১৯৭৮, কলকাতা। বাংলায় প্রকাশিত কবিতার বই ৪টি। বৌদ্ধলেখমালা ও অন্যান্য শ্রমণ কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্য আকাদেমির যুব পুরস্কার, পেয়েছেন মল্লিকা সেনগুপ্ত পুরস্কারও। স্পেনে পেয়েছেন আন্তোনিও মাচাদো কবিতাবৃত্তি, পোয়েতাস দে ওত্রোস মুন্দোস সম্মাননা। স্পেনে তিনটি কবিতার বই প্রকাশ পেয়েছে। ডাক পেয়েছেন মেদেইয়িন আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব ও এক্সপোয়েসিয়া, জয়পুর লিটেরারি মিট সহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবে। অংশ নিয়েছেন Poetry connections India-Wales প্রকল্পে।
অসামান্য।