।। কাজী জেসিন ।।
আমার কথারা ভাতের চেয়ে দামি নয়
কবিতাগুচ্ছ: কাজী জেসিন, চিত্রকলা: ধ্রুপদী ঘোষ
প্রিয়তম, তোমাকে যখন ভালোবাসি
প্রিয়তম, তোমাকে যখন ভালোবাসি
তখন মনে রেখো
আমি একটি সম্ভাব্য বোমারু বিমানের
নীচে
পায়চারি করি অনাগত সুদিনের প্রার্থনায়
কাবুলের মাঠে নিরুপায় কৃষকের মতো।
সিরিয়ার মরুভূমিতে হেঁটে যাওয়া অনাথের মতো।
প্রিয়তম, তোমাকে যখন ভালোবাসি
তখন মনে রেখো আমি ভেসে আসি
বাংলাদেশের মাটিতে
গৃহহীন রোহিঙ্গার মতো,
কারণ, তোমাকে ভালোবাসা ছাড়া আমার উপায় থাকে না আর কোনো।
প্রিয়, তোমাকে যখন ভালোবাসি
তখন বাগানে বসে থাকি বেআব্রু
পুঁজির-পুলক-জাগানো অসুখের মাঝখানে,
কারণ, তোমাকে ভালোবাসা ছাড়া আমার উপায় থাকে না আর কোনো।
প্রিয়,
তোমাকে যখন ভালোবাসি
দু’নলা বন্দুকের ক্রসফায়ারে পড়া আসামির মতো আপ্রাণ দৌড়াই
মধ্যরাতে গুম হ’তে চলা
নিরুপায় দুইপায়া প্রাণী
বাক্হীন তাকিয়ে থাকি,
প্রিয়তম।
প্রিয়তম, তোমাকে যখন ভালোবাসি
তখন মনে রেখো
আমি একবিংশ শতকের
রক্তমাখা পথে স্বাধীনতার কথা বলি,
অবিচারে কারাবন্দি কয়েদির মতো
মুক্তপাখির উড়ন্ত চলাচল দেখি।
তুমি আমাকে ভালোবাসবে
কোনো একদিন?
প্রিয়তম তোমাকে যখন ভালোবাসি
তখন মনে রেখো ফেলানীর মতো ঝুলে থাকি আমি কাঁটাতারে
রক্তস্নাত
কারণ তোমাকে ভালোবাসা ছাড়া আমার উপায় থাকে না আর কোনো।
বোমাচ্ছন্ন আকাশের নীচে
হাজার যুগের পরে
অপেক্ষায় থাকি
অপেক্ষায় থাকি
অপেক্ষায় থাকি…
প্রিয়তম
কারণ তোমাকে ভালোবাসা ছাড়া আমার উপায় থাকে না আর ।
মোরগ পোলাও খেতে খেতে
শাহী মোরগ পোলাও খেতে খেতে
আমরা বনে চলে যাবো
সেখানে বাঘের পাশে বসবো
বাঘেরা চ-যুক্ত কর্মে ব্যস্ত থাকবেন, সেসব যৌনকাণ্ড দেখে আমরা হিশফিশ করবো না
সব শব্দ আমরা মুখেও আনবো না।
নকশীকাঁথা জীবন নিয়ে মাঠে গিয়ে
মোরগ পোলাও খেতে খেতে আমরা বাঘের সাথে একসাথে ..
দূর থেকে হরিণেরা তাকিয়ে দেখবেন
আমরা একটুও হরিণ-হরিণ ভাব করবো না তো!
বাঘের পাশে বসে বসে আমরা শাহী মোরগ পোলাও খাবো
বাঘ আমাদের খাবে না
কিংবা আমরাও বাঘকে খাবো না।
আমাদের চুক্তির মধ্য দিয়ে বৃষ্টি পড়বে।
ঝুম বৃষ্টি।
বাঘের জলতৃষ্ণা দেখতে দেখতে আমরা ভিজে যাবো
সবাই তখন সমবেত স্বরে গাইতে থাকবো, ‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে ধান দেবো মেপে’।
বৃষ্টি একদিন ঠিকঠিক আসবে
আরশে প্রেম ও পরিত্রাণ কালে বৃষ্টি আসে।
আমারেও কি দেবা গো বাঘ প্রেম ?
আমিও যে বয়ে নেই দুইশত ছয়খানা হাঁড়
হাজার বছর ধরে আমিও যে ছারখার। বাঁচি
নাই, তবু বাঁচার গরিমা আমার! বাঘ গো বাঘ
আল্লাহর আরশের তলে সমূহ বিস্ময় সহকারে তুমি দেবা গো আমারে একখানা চুমু?
বাংলাদেশ
যে আমার কোনও জন্ম নাই
সে আমারে কেন ফুল দাও বিরহী পতাকা?
কেন বা অজস্র চতুর্ভূজে ঘেরো
কোন আধুনিক যৌনজালিকার ঘোরে?
উড়ন্ত পতাকা
আমার আকাশে তুমি ওড়ো
তুমি ঘুড়ি
তোমার রূপালি সুতা
আমারে বাঁধে গো। তবু
মালতি ফুলের মতো দুলি
প্রেম জাগলে কেউ কেউ তোমারেও বলে ফুল
জানি, ও বন্দি বকুল
যে আমার কোনও জন্ম নাই
সে আমারে কেন তালিকায় ভরো, বিস্তীর্ন পতাকা?
সংখ্যার পাদদেশে
পড়ে থাকি
জন্মাবারও আগে
এহেন নির্লজ্জ আমি
হেসে হেসে গড়ায়ে গড়ায়ে
পাথর কামড়ে ভাঙি দাঁত
ওগো চকমকে চামুচ
কবে তুমি আমারে খাওয়াবা
স্বাধীনতার দু’ফোঁটা দুধ?
যে আমার কোনও জন্ম নাই
সে আমার কেন
ফোটে ফুল
ফোটে রক্তজবা চোখ
দেখি মানুষের মাঝে অজস্র মানুষ
লাশে ও বেলাশে
তারা হাসে
নিদারুণ কারাবন্দি
জন্মাবার আগেই যদি-বা
জলে বেওয়ারিশ
তবে ওগো সার্বভৌম নদীজল
তুমি লজ্জা পাও?
নাকি তুমি বিশুদ্ধ বিশেষ্য এক
পতাকা আমার?
যে আমার কোনও জন্ম নাই
তারে কেন দাও তব ফুল ও পতাকা?
বাক্-পরাধীনতার কালে
বাক্-পরাধীনতার কালে
বিনা-অনুমতিতে প্রেমে পড়ে যাচ্ছি
হাজার কথা মাথায় নিয়ে
পাতিলের টগবগে জলের মতো
বাষ্পীভূত হতে হতে
মেঘমালার মতো
বাতাসের গা বেয়ে
ক্ষয়ে যেতে যেতে
প্রেমে পড়ে যাচ্ছি
বিনা-অনুমতিতে
আচ্ছা দ্যাখো
সাংবিধানিক শক্তিতে
আমি চিৎকার করে কাঁদতে পারি
বলতে পারি আমার রক্তক্ষরণের ব্যথা
সাংবিধানিক শক্তিতে
কিন্তু দ্যাখো
বহু-বহুদিন খোলা ময়দানে
আমি চিৎকার করে কাঁদি না
আমার ময়নাপাখি জীবন
বহু-বহু দিন শব্দহীন।
আমার লাইলাতুল বহুদিন নিঃসঙ্গ
দীর্ঘকাল খাঁচাবন্দি পাখির মতো উড়তে ভোলা
নিঃস্তব্ধ দুইডানা মানুষ অদ্ভুতভাবে পড়ে যাচ্ছি
প্রেমে।
বাক্-পরাধীনতার কালে।
কিন্তু আমি জানি এই দেশে
কান্নার জন্য লাগে অনুমতি
এই দেশে হেঁটে চলার জন্য
প্লাকার্ড হাতে আওয়াজের জন্য
আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকার জন্য
খানিক স্বপন দেখার জন্যও
লাগে অনুমতি।
বাক্-পরাধীনতার কালে
বিনা-অনুমতিতে প্রেমে পড়ছি
পড়ছি
কেন পড়ছি ?
হে নিঃস্তব্ধ মেধা আমার, দাও হে জ্ঞান
হে চঞ্চল রক্তপ্রবাহ এবার থামো
অনুমতিহীন চলাচল
নিষিদ্ধ এখানে।
বারুদ গণিত
আমি মারা গেলে থেকে যাবে হাড় সকল আমার
আমি মারা না গেলেও থেকে যায় আমার হাড়েরা
ধারাবাহিক হাঁটাচলাফেরার মধ্য দিয়ে দরিয়ায়
গল্প বোনে
গল্প হয় কখনও সখনও
কিছু থাকে তার, কিছু থাকে না কোথাও
ইতিহাস এক গল্পখেকো রাজা
আমার সেসব গল্প, ব্যাকরণহীন বিপন্নতা
থাকেনি কোথাও
মানুষের দুই নাকে তুলা ফুলের মতন
ফুটে থাকে
অজস্র অজস্র
সকরুণ কালো ত্বক বোরখার মতো ঢাকে
ঢেকে রাখে পীড়া সব।
বেদনারা মন্দ নয়
বেদনারও বিনিময় হয়
অভুক্ত পথিক পরকালের সুবাস পায়
মজলুম মুনাফিক আমি দিন গুনি
জানি এইসব দিন থাকে না কোথাও
যেমন আমারে রাখেনি কেউ
কোন বৃক্ষতল
কোন নদী-ছায়া-জল
জবাফুল
প্রেমিকবকুল
রাখে নাই কোনও কালো কালো মাছ
তার সাঁতারের তলে
রাতের আকাশে তারাদের নীচে ঢেউ উথলিয়ে উঠলে
রাখে নাই কেউ ঘাসের উপরে
দেখি নাই কোনদিন মায়ের যে গর্ভজল তার রূপ
গড়াতে গড়াতে ফেরেশতার হাতে যদি পড়ি
তুমি ভোলাবে আমায়
দ্বিধাহীন আগুনের ইতিহাস
আলেপ্পোর পোড়া প্রজাপতির রঙ
ভোলাবে আমায়
অস্ত্রের আফিম?
নাফ নদীর বিস্ময়
নদীমধ্যে পানি থাকে, পানি বয়
লাশও বয়ে যায়
নদীর অপর নাম তবুও নদী-ই তো হয়
মাটিতে থাকেনি কিছু
ছোট গাঁদাফুল
ধানসিঁড়ি শৈশব
মাছরাঙা জীবন
সোনার তরী থেকে ট্রাম সবই মুছে যায়
শালিখের ঠোঁটে লাগে নাই রক্ত বিন্দু
পটভূমি পাল্টায়
আলোয় আলোয় আলো বাড়ে
ষোলআনা জীবন উশুল হলে পড়ে
লাশনিরবতা ঝোলে
আমাদের কোলে
ফুলে ফুলে ঢুলে ঢুলে তবুও যে ইতিহাস
তবুও যে মালার বিন্যাস
তাতে থাকে নাই রক্ততকমা
ভোলাবে শূন্যের ইতিকথা?
বারুদ গণিত?
ফেরেশতা আমার?
তরী বেয়ে নাও
মুনাফিক তবে এবার আল্লাহর
অফুরান ময়দানে
লাশ হয়ে যাই বেহেশত বাগানে।
দোল দোল দুলুনি
তোমার পাঁচশ পিস ইয়াবার মধ্যে আমারেও একটু নাও তো
নেশার মতো গিলতে গিলতে আমারেও একটু খাও
না হয় ক্রসফায়ারে পড়ে যাই
হয়ে যাই ফায়ারড।
আমারেও একটু খাওয়াও না হয় মাদক
দুনিয়াটারে আমিও একটু ভজি।
রক্তের মধ্যে হেঁটে হেঁটে
এঁটে এঁটে আমিও একটু দুলি।
তেমন বড় তো নই,
মৃত্যু ভুলতে পারি।
অতটা উঁচু নই
লাশের পাহাড়ে দাঁড়াতে পারি।
কিছু মাদক দাও তো আমায়
তবু দুলে উঠি
দোল দোল দুলুনি
রাঙা মাথায় চিরুনী।
আহ! কিছু মাদক দাও গো
রাঙা মাথায় ঘোমটা পড়ি
একটি সংসার
তাতে একটি ছেলে, একটি মেয়ে
জানালা, দরজা বন্ধ করে তাদের বড় করি
হয় না তো আর সে গান
মাটিতে, মাটির ভেতরে বটের শেকড়ের মতো
গেঁথে থাকা আমার জীবন
উপড়ে উপড়ে পড়ে।
সে আসে ঝড়ের মতো
শত শত গাছ ডুবে যায়
আমিও কীটের মতো পড়ে থাকি পতিত বন্দরে।
বাহাদুর!
এতো যে পোড়াও নেশাচ্ছন্ন
লেলিহানে নেচে উঠো ললিতার মতো
তোমার মাদক সুন্দরতর?
হে মাদক তুমি সকলের নও?
তবে থামাও হে তোমার বন্দুকের নল
যে নেশায় গুলি ছোঁড়
আমিও সে নেশা করতে জানি
মাদকের রাজ্যে আমি তোমার
করুণতর মাদক চিনি।
আমাকে আর মাদকখোর বলো না তো!
ইমোজিকুল
রাতভর মশকরা করে
ফোন হাতে
রহস্যময় হুতুমপ্যাঁচা।
ঘননীল ফেসবুক থেকে
হু হু বাতাস আছড়ে পড়ে
হুতুমপ্যাঁচার জানালার ফাঁক গলে ঢোকে প্রেম
আলিঙ্গন ঢুকে পড়ে
ভুল করে
ঢুকে পড়ে
ট্রাম্প
মধ্যরাতে
আনরোমান্টিক হোয়াইট হাউজ
ফেসবুকের ওয়ালে
ফুটে থাকে নিঃশব্দ রক্তকাণ্ড
ব্যাকুল বাজার
পয়সার পায়চারি
অভাবনীয় কোমর
দুলতে থাকে
হরিণছুট দেয়া মহাকাব্যিক নায়কেরা থামে।
জি-স্পটের জুতসই গর্তে
গলা ডোবে।
গলায় জমাটবাঁধা অক্ষর আঁধারে
অচিন দরজা খোলে
মুয়াজ্জিন হাঁক দিলে পরে
কয়েদখানা একটু একটু নড়ে
কাঁদার ভেতরে ভুতুড়ে হরফ ঘোরে
ঘুরতেই থাকে
জাদু বাড়ে, বেড়ে যায়
কর্দমাক্ত হাতগুলো ভার্চুয়াল হতে হতে
অসামান্য আকাশের নীলে
কলকোলাহলে আওয়াজে আওয়াজে
ঝুলে যায়
হারানো মায়াবী গল্প খুঁজে খুঁজে ঘরে ফিরে ঘুমাই গভীর ভার্চুয়াল ঘুম
সমস্ত সড়ক পাকা হলে,
উন্নয়নের বাজনা বাজলে পর
নিঃসঙ্গ সমতল মাঠে
রাতভর নীরব, খুঁজতে থাকি
কাটা পড়া হারানো আধেক হাত
ভার্চুয়াল স্বপ্নরাজ ভাসতে থাকে
ফেসবুকে, টুইটারে
জনস্রোত মুছে যেতে থাকে
সমস্ত আকুল প্রতিবাদ
স্ন্যাপচ্যাটের আলাপচারিতার মতো
নিমিষে উধাও হতে থাকে
তোমার আমার দুইখানা চোখের মতো
আমাদের হৃদয়ের মতো
মালতীর গল্পের মতো
ছুটে চলা দুরন্ত দৌড়ের মতো
হতে থাকে উধাও আগামী দিন।
আকুল মানুষ ঝুলে থাকে অজস্র ইমোজির মতো।
হাসতে হাসতে
ঝুলে থাকে প্যাকেজবন্দি ইমোজিকূল ।
কথারা ভাতের চেয়ে দামি না
তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম
আমারও একখানা স্বপ্ন আছে
একটা নরম বালিশ
একখানা জানালা
তাতে তাকিয়ে থাকা ধানক্ষেত
তালপাতার বাতাস
কিন্তু আমার কোনো শব্দ ছিল না
তুমি আমাকে দিয়েছ নীল পলিথিন
ফুটপাথের নিষিদ্ধ ঘর।
নীল আলোর নীচে আমার কথারা
হামাগুড়ি খেতে থাকে
ঠিক আমারই মতো
যেভাবে শতাব্দী ধরে
হামাগুড়ি দিতে-দিতে
আমি সভ্যতার কোনায় এসে
একখানা বালিশ খুঁজি।
একটা বালিশের উপর মাথা রেখে
আমি তার জন্য কাঁদতে চেয়েছিলাম
যে আমার প্রিয়তম
যাকে আমি কোনোদিন পাবো না জানি।
তবু সেই প্রশান্তিময় অশ্রুজলে
তাকে আরও-আরও ভালোবাসতে চেয়েছিলাম
কিন্তু এক অদ্ভুততর ক্ষুধা আমাকে কাঁদতে দেয়নি
আমি আমার পেটটাকে পুড়ে ফেলে
আরও-আরও ভালোবাসতে চেয়েছিলাম।
আচ্ছা, বলো, আমার কি স্বপ্ন থাকতে পারে না?
একটা শেফালির মুকুট
কিংবা তার চুম্বনের চিহ্ন— তার বুকে
আমার ক্ষয়ে যাওয়া ত্বকের স্পর্শ রাখার?
এবড়োখেবড়ো গর্তে ভরা পিচঢালা পথের
মতো দুই পায়ে জুতো পরে তার হাত ধরে
দিগন্তের ওপারে যাবার?
স্বপ্ন থাকতে পারে না কি, বলো?
আমি বৃক্ষের মতো বেড়ে উঠি
আকাশের মতো বড় হই
বড় হই-হই
দুই হাত উপরে তুলি
তোমাকে ভালোবাসার কথা বলি
স্বপ্ন থাকতে পারে না আমার, বলো?
ভরপেটে তোমাকে ভালোবাসার কথা বলি?
কিন্তু নীল পলিথিন-ঘরে
ক্ষুধা জেঁকে বসলে পরে
আমি চুপচাপ থাকি
অতিশয় নিশ্চুপ, কারণ
আমার কথারা ভাতের চেয়ে দামি নয়।
আমার পলিথিনের প্রাসাদ থেকে
তুমি আমাকে তাড়িয়ে দিলে।
আমি গড়িয়ে গড়িয়ে
তোমার কাছে যাই
আমার শূন্য থালায়
প্রতিদিন তোমাকে দেখতে থাকি।
তুমি আমাকে রিলিফ দাও—
রিলিফে তোমার নাম।
কিন্তু আমার স্বপ্নের মতো আমার দুইমুঠো ভাত
আমি হারিয়ে ফেলি।
তুমি গৃহহীনকে গৃহে থাকতে বলো
তুমি করোনার ভয় দেখাও—
করোনা কি তোমার চেয়ে ভয়াবহ,
আমার ভাগ্যবিধাতা?
আমি ভয় পাই।
একখানা নরম বালিশের স্বপ্ন ছিল আমার
আর একখানা ঘরের।
তুমি চাকরির জন্য আমাকে ক্রোশের পর ক্রোশ হাঁটালে
আবার তোমাদের নিরাপত্তার জন্য ফিরে যেতে বললে
তখন আমি একটা সামান্য ইঁদুর
লুকিয়ে-লুকিয়ে ফিরে আসি গর্তে।
তোমাদের নিরাপত্তার জন্য
গর্তের ভিতরে থাকি নিশ্চুপ
কারণ আমার কথারা ভাতের চেয়ে দামি না।
আমাদের ছোট-ছোট গর্তে
তোমাদের করোনা
ঢুকে পড়লে
আমাদের জন্য কোথাও কোনো চিকিৎসা থাকে না
কারণ আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা
ইঁদুরের গর্তে মানুষ খোঁজে না
তবু আমরা নিশ্চুপ থাকি, কারণ
আমার কথারা ভাতের চেয়ে দামি না।
কথারা
ভাতের চেয়ে দামি না।
এবং আমরা শ্বাসকষ্টে মরে গেলে
নিশ্চুপে করে ফেলো আমাদের দাফন
গোপনে। যেভাবে চিরকাল লুকানো ছিল আমার ক্ষুধা
ঠিক একইভাবে লুকিয়ে ফেলো আমার মৃত্যু।
এবং
ইতিহাস থেকে গুম করে ফেলো আমাদের ইঁদুর হবার ইতিহাস।
তবু আমাদের সন্তানেরা চুপচাপ থাকে।
গোপন এবং নীরব।
কারণ তাদের কথারা ভাতের চেয়ে দামি না।
কাজী জেসিন
জ্যোৎস্নামত্ত যাত্রা’ দিয়ে বাংলা কবিতার জগতে কাজী জেসিনের পথচলা শুরু ১৯৯৭ সালে একুশে বইমেলায়। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কবিতা ছাপা হলেও, বই আকারে এটাই তার প্রথম প্রকাশ। দ্বিতীয় বই ” তানানুম তানানুম ” প্রকাশিত হয় ২০০৯ সালে। এই বইটির ভূমিকায় কবি ফরহাদ মজহার কাজী জেসিন সম্পর্কে লিখেছেন, ” তার সমসাময়িক আরো অনেক তরুণ কবির কবিতা ভাল লাগে, কিন্তু ওর প্রতি কাব্যিক ঘনিষ্ঠতা বোধ করার কারণ জেসিন কবিতার মধ্যে সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে নয়, বরং সমাজের হয়েই বাস করতে চায় “। সাংবাদিকতা করেছেন অনেকদিন। টেলিভিশন শো-এ পরিচিত মুখ তিনি। কিন্তু কাব্যে তাঁর নিষ্ঠা বরাবরের মতই এখনও প্রবল।
ধ্রুপদী ঘোষ
শান্তিনিকেতনের কলাভবন থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে দিল্লির জিমিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত। ‘Critical Edges, Copenhagen, Denmark’ পত্রিকার মুখ্য চিত্রশিল্পী হিসাবে কর্মরত। স্থায়ী নিবাস পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়।