আজ বৃহস্পতিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আজ রাতে অমাবস্যা

।। রহিমা আফরোজ মুন্নী ।।

আজ রাতে প্রকাশ হবে
আজ রাতে অমাবস্যা
আজ রাতে শেষ যেকোনও সম্ভাবনা
আজ রাতে সবর রাখো
আজ রাতে জিকির রাখো
আজ রাতে ভরসা রাখো

শহীদ

মুশকিল আসান চাইলে আসুক
আসুক নিজ পায়ে হেঁটে
এসে-রুখে-হেঁকে-বলুক
চড়াও হয়ে হলেও চড়ুক
উতোর-চাপান নাহলে চাপান-উতোর
ভাঙলেই হলো
গুঁড়োদানা নাহলে মিহিদানা
থাকে যেন নাগালে
থাকে যেন যথাযথ

মুশকিলটা এখন ধারালো
কেননা ইচ্ছাগুলা সব বিপরীতমুখী আর
পরস্পরের দিকে মেশিনগান তাক করা
আর দুই পক্ষই নিজকে জয়ী দেখতে চায় আর
অপরকে মৃত যদি বা কণ্ঠ বলে
আমিই বাঁচবো অথচ আড়াল মাত্রই বলে
মরে যাব
মরেই যাব

মুশকিল হয় দিশাণহারা
আশ্বাসেও ফিরে হয় না আসা
অথচ দোষ বলতে…

আমি বলেছি ছোঁবে আমায়?
আর তুমি বলো থেকো স্মরণে,
আমি কি শহীদ?

এইবার বলো কী করবে?


সালতামামি

তোমাকে সহজ করব বলে
নিজেকে ভেঙেছি উপযাচিকা হয়ে
অকপটে দেখবে অবিকল
তাই আমি স্ফটিক
তুলে দিয়েছি চক-ডাস্টার ইত্যকার
ইচ্ছে মতোই শুধরে নাও আপনার করে

শর্তহীন সর্মপণ যে ছলে নিছক
জোটেও তার ছিঁচেপানি নম্বর
এমন পাশ এত পাশাপাশি হয়েও?
ভালবাসা বুঝি পথ হারাতে ভালবাসে!

সাবধানের মার সর্বাঙ্গে
না চাইলেও তাই হুঁশিয়ার
কী ঘুমের কী জাগরণের
অতসবের খেয়াল কার?
অতন্দ্র প্রহরায় ছিল মাত্র-
হৃৎপিণ্ড-পাঁজর-যকৃৎ
অসংকোচের চোখ তাই
কাজলে কালোতে আলোকময়!

এই নিবেদনে তাই বুঝি হ্যাংলামি?

মরুর যে উট বোবা
ভার বহনের প্যাঁচ সেও কষে
ভালবাসার এজেন্সিশিপ বুঝি দখলে?
পাক্কা?
কখনও ফুরাবে না?
চাঁদমারি ভেবে হাত পাকাচ্ছ তো পাকুক
পেকে পোক্ত হোক
পেকে পোকায় না কাটুক!

তবে বুমেরাং-এর নাম বুঝি শোনো নি?

যাক চলে যা গেছে চলে বলে বা না-বলে
ঢের বেশি যা আছে তা মনে করালে
সত্য যে এখনও পারি
সত্য যে বিশ্বাস মেনো
সত্য
এখনও পারি দিতে দে-ছুট


মজবুত ঘাঁটাঘাঁটি

দেখো, যার দেখার স্পর্শ অনুভব করবো সে অলস মানি তাই দেখাদেখিও আর দেখি না, তবে মানি বলেই মানিয়ে নেব এমনও না-মানলাম আর মানেও যে আছে তা বুঝতে মানসাঙ্ক যথেষ্ট— তবুও দেখো আলস্যের দোহাই না দেখিয়ে দেখালাম হাতের আবেগ কেননা ইনিয়েবিনিয়ে কম হাতড়াই নাই হেতু সেই হাতের হক হাঁকাইব না কেন চড়াদামে?

তবে অবশ্য হয়তো বা কে জানে হতেও পারে চোখ বুলিয়েছে এক মণি ত্যাড়াত্যাড়া তো আরেক মণি ছাড়াছাড়া এই করে করে আর তাতে ছ্যাড়াব্যাড়া শব্দরা নাকাল ছাড়া আর কিই-বা অনুভব করবে!

তবে দেখো; পারি না-বুঝি না-জানি না, জানাইয়া লাজুকলতার কতশত নাজুকতা না আর না দিয়া যখন প্রায় স্তিমিতপ্রাণ তখন ঝটপট ঝটকা মেরে গোঁ ধরে পারা আর না-পারা নিয়া।

হ্যাঁ, একদমে আটকানো ঠিকঠাক পারে, আকালে আক্কেলদাঁত গঁজিয়ে বেদনার সংজ্ঞা বুঝাতে পারে, দরকারে আক্কেলগুড়ুম করে পেটে পর্যন্ত গুড়গুড় নামিয়ে আনতে পারে আর তাতে রাত বিহানে গড়ালেও আড়ালের পরোয়া না করার হিম্মৎ তো পারেই।

কেন রে সব বুঝে অবুঝ?
কাল না পাই যদি?
পুঁথিপড়া পিছিয়ে যায় যদি ?
পিছিয়ে গেলেও পিছনের দিকেই তো দেখা?
কিসের তাড়ায় এত তাড়া?

তবে দেখো, এইসমস্ত কথায় প্রশ্ন চিহ্ন গুঁজে দিয়ে বাড়তি জোর হোক বা হোক বাড়াবাড়ির বাড় কিছুতেই ইজাযত নাই মাথার উপর যে ঘাড়
তারই, তবে জোড়া কানের হিম্মত লাজওয়াব, এইকালে এসেও সে নির্বিকার, তো আরজ গুজার তার তরেই।

আজ রাতে প্রকাশ হবে
আজ রাতে অমাবস্যা
আজ রাতে শেষ যেকোনও সম্ভাবনা
আজ রাতে সবর রাখো
আজ রাতে জিকির রাখো
আজ রাতে ভরসা রাখো

কিন্তু দেখো, অটল ভাবের এমন টলমল ভাব আর অতল ভাবের এমন ভাসাভাসা ভাব যার ভাবনায় তারে কি ভরসা হয়?

অবশ্য এইসব ভারযুক্ত ভারী-ভারী ভরসা
দেয়া-নেয়া নিয়ে খেয়োখেয়ি করা সেই তেজীয়ান আর নিস্কলুষ স্বর কতপ্রকারে যে বেদিশা করলো তার হিসাব মিলিয়ে লেলিয়ে তার তারেই যদি বাঁধি, যদি তার তালেই তাল ফেলি, যদি বলি নিষ্কলুষ স্বরে সত্য প্রকাশের সুখে ভাসব তো সিন্দুক হাঁ-খোলা খুলে দেখাবে একফোঁটা জায়গাটুকুও নাই।

আরও দেখো, এমনও হয় না যে মনউঠা উঠলো আর তারে কল্পনায় সাজালাম নিখুঁত, তার বন্দনায় বাজালাম বাদ্য, তার সৌরভে মাখালাম দেহ, তার পায়ে থাকলাম ধূলা হয়ে বা হয়তো খুঁটিতে বেঁধে নিলাম খুঁটিনাটি ব্যাপারও।

আরে কী মুশকিল যে!
কী যে আহা-উহু!
বিনা অনুমতি তারে সরানো?
আর সারা হলেই কি সইবে?
সে কি সীমার?

হ্যাঁ, আকুতিভরা অন্তর সে দুই ধারি দিয়া নিখুঁত কাটে, অবলীলায় মধ্যে রাস্তা বানিয়ে ঘুরে বেড়ায়, প্রত্যেক কদম তার সজোরে জোর আছড়ায়, আগাছাগুলা ইতস্তত লুকিয়ে সারে না, ছোট ছোট সব নুড়ি অভিমানে ধূলা হয় তবুও মিশিয়ে রাখে তারই পা জোড়ায়

তবুও দেখো
নাই বিকার
নাই খেদ
অকারণ তাড়ায় মাড়ায় খালি
ছোট ছোট গাছ
ছোট ছোট কণা
ছোট ছোট সমস্ত প্রাণ
মাড়ায় আর মারে
আর কি কোনও কাজ নাই বাকি?
বাকি নাই আর কোনও বাহানা?

দেখো চেয়ে, কী নিখুঁত ঠেললো, গড়িয়ে নিল পাথরে, নিশ্চিত করলো কষমাত্র না গড়ানোর, উঁচিয়ে রাখলো নিজেরে এমন যে পরওয়া-ও পার পাবে না

আমি হতবাক!
কত উন্নত পারাপার ঘেঁষে যে ঘাঁটি তার।


কোনও এক রানীর দেশ

চাইলেই কেনা যাবে এবং স্বভাবতই মূল্যহীন অবশ্য এইরকম আবেদন অস্বস্তিকর হবার হালে পরিস্থিতির ভিন্নমতো রূপে না-হয় চাইবার হলেই বেচা লাগবে এবং স্বভাবতই মূল্য তদ্রূপ-হীন।

মনে করায়ে দেয়া আবশ্যক মূল্যহীনতার হেতু প্রথমে সংখ্যার অভাব দ্বিতীয়তে পরিমাপযোগ্য পাত্রের অভাব তবুও বাঁচোয়া রানী সাহেবার যার দুই দুইটা অভাবও কুলায়ে পারে নাই নাকে নিতে খৎ আর এমনই পলকা বাঁধনের হাস্যকর একখানা গিঁট, কী আর বলা সেই বিষয়ে, সে এমনই না শক্ত না আধা না গৎবাঁধা।

সে যাইহোক— না যাই বা চাই মূল্যায়নে তাছাড়া মূল্যবান ম্যালাকিছু মান্য হলেও গণ্য সে-ই ফেরে, ফিরে দেশি মূলা নাইলে চিনা মূলা আর বিশেষ কী বলা সেই বিষয়ে কেননা সে-ও ঝুলাবারই… নাইলে আর কী!


সহজ

আর কোনও সোচ্চার অবশিষ্ট নাই
নাই দূর কী বা নিকট অতি অতীতেরও স্পর্শের কাতরতা
বিড়ম্বনার পৃথিবীতে না তার পাথর চোখওয়ালা ঈশ্বরেতে না মানুষেতে
সকলের সেই একই আলোয়ান গায়ে চাপানো
এক চরিত্রবান নীরবতা

এদিকে পাহাড়ের সমান নীল জল
কী তার অগণন কৃপা
ধেয়ে এলো ক্ষুরধার হয়ে
সরিয়ে নিয়ে গেল স্মৃতির সার
সার সার বাঁধানো বাঁধাধরা ছবিগুলোও
ধেয়ে এলো বেধার হয়ে
ধুয়ে দিল ফুসফুস ভর্তি লবণ

দেখি লুটপাট শেষ হলে জাগে কচি ঘাস
দেখি এক নিশ্চিন্তের বিছানা
প্রিয় সব জড়িয়ে জাগছে সার সার টানা
প্রিয় পথ জুড়ে বিউগলের বাজছে সুর টানা
দেখি সব জাগছে বাজছে

এইবার জেগে থাকা
এইবার জড়িয়ে থাকা
এই শেষবার চেপে ধরা
হৃদয় প্রত্যাখ্যাত রক্ত সোল্লাসে নাচবে মস্তিষ্কে
শরীর মাখিয়ে নেবে ঘাসের নির্যাস

ওই শোনো বাজছে পালাবদলের শব্দ!

রহিমা আফরোজ মুন্নী

কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক। জন্ম ২৬ এপ্রিল, ১৯৭৪, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায়। ইডেন কলেজ থেকে ইসলামিক ইতিহাসে এম এ। প্রথম কাব্যগ্রন্থ, ‘আলিলুয়েভার হারানো বাগান’ (২০১৪)। প্রকাশিত অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ উড্ডীন নদীর গান’ (২০১৫), ‘দি নিউ রহিমা পদ্যবিতান’ (২০১৬), ‘মগজে ছাতা’ (২০২০)। উপন্যাস ‘কালো মানুষের কারনামা’ (২০১৮)।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top