আজ বৃহস্পতিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

নূতন স্বরে বাঙলা ভাষা

।। পাঁচ তরুণ কবির কবিতা ।।

“আমি তো তোমারে নির্মাণ করি নাই,
নির্মাণ করেছ বরং তুমিই আমারে।
যে কারণে—
তুমি খোঁজো না, তোমারে খুঁজি আমি ।
আমারে ভাস্কর্য ক’রে
পোট্রের্ট ক’রে—
কাটো
ভাঙো
খুলে নাও পার্টস…”

– তানিম আমিন

মিসবাহ জামিলের কবিতা

আম্মা

আব্বা মারা গেলেন। আমরা ধান হয়ে গেলাম। অভাব মাজরাপোকা হয়ে আমাদের খেয়ে ফেলছে। আম্মা একটা চাকরি খুঁজছেন মাজরাপোকা দমনের জন্য। চাকরিই তাঁর কাছে কীটনাশক। গার্মেন্টসসে চাকরি পেয়ে গেলেন। কিছুটা দমন হলো মাজরাপোকা, অভাব। আম্মার মুখে স্বস্তি নামে একটি ফুল ফুটে গেল। মনের আনন্দে সেলাই মেশিন চালান। সুঁইয়ের প্রতিটি ঘাঁয়ে বুনেন সন্তানদের ভবিষ্যৎ।

মিসবাহ জামিল
তরুণ কবি। জন্ম: সেপ্টেম্বর ১৯৯৯। নিবাস: দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ।

জোহান কুুতুবীর কবিতা

ব্ল্যাকহোল

আমি এখন অস্তগামী সুুস্বাদু মাছ এক—
ডুবছি সমুদ্রের দিকে,
সূর্যের মত লাগামহীন, আকাশে উজ্জ্বল ছুটে যাওয়া;
তবু কিছু অন্ধকারের রয়ে যাওয়া দেখি— কিরীট ও তার গন্তব্যের দিকে
অন্তহীন এই এক রীতিতেই ঝুঁকে চলা; দেখে,
কেউ করেনি স্নান—
ম্রিয়মাণ রৌদ্রে আমার নাক-উঁচা এই ডুবোজাহাজ
চলে যেতেছে বুক চিরে আকাশের—
যেভাবে ছুটে চলে একটা ভয়ঙ্কর নীল তিমি, বিস্তর গহীন ভয়ঙ্করের দিকে আরো—

আমরা হারায়ে বসে আছি এ ঘোর পৃথিবী—
হারায়ে ফেলছি আমাদের নদী,
যুথবদ্ধ ঝাঁক, নিঃসীম শ্লোক আমাদের, আত্মীয়হেন
সাগরের বুকে, ছড়ায়ে পড়া জালের মতো ছিটকে গেছি দূরে—
মাছের আশায়
এ ঘোর পৃথিবীতে আমাদের কেউ নাই— সকলে একা,
যার যার বুঝ নিয়ে চলা সে সে,
নিজের আনুগত্য করা
নিজের ইচ্ছাধীন তাকায়ে থাকার এই বিস্তৃত ধরণি , ও হেলানো আকাশ
কোনো তরমুজবাহী গাধার পিঠে, খুব চাপায়ে বসেছে দড়ির দাগ;
তবু বয়ে চলে আমাদের পরম্পরা
জ্ঞান, অহম ও স্বার্থের বোঝা—
আমরা বসে যেতে দেখি বারবার, প্রচণ্ড সূর্যের প্রতাপ
সুর সহকারে, গভীর অসহায়ে, ধীর নুয়ে নুয়ে—
একদম হাঁটু গেঁড়ে— প্রকৃতির কাছে, দুনিয়ার কাছে
প্রত্যহ যেন সে স্বীকার করছে, সমস্ত দোষ দাসত্ব

জোহান কুুতুবী

তরুণ কবি। জন্ম সেপ্টেম্বর ৮, ১৯৯৫ । নিবাস: চট্টগ্রাম।

শোয়াইব শাহরিয়ারের কবিতা

যাত্রা

আকাশ বিদীর্ণ করে নেমে এলো একটি ট্রেন,
তার পেছনে আমি দৌড়াচ্ছি, দৌড়াচ্ছি আর দৌড়াচ্ছি।
দৌড়াতে দৌড়াতে পায়ের চিহ্নগুলো গেঁথে যাচ্ছে পথে—
কারো বা বুকের ভেতরেও।

ট্রেনটা ক্রমাগত চলছে। হাওয়ার ভেতর ধুলো উড়িয়ে।
ধুলো গিয়ে উধাও হচ্ছে সঙ্গোপনে।

ট্রেনের পেছনে দৌড়াতে গিয়ে অকস্মাৎ শুনতে পাই—
‘যাসনে, তলিয়ে যাবি’!
এই যে গায়েবি আওয়াজ, এ আওয়াজ কোত্থেকে এলো?

জানি না। জানি শুধু আমি—

ট্রেনটা দ্রুতগতিতে চলছে, অন্ধকারের সাথে সঙ্গমের অপেক্ষায়।

শোয়াইব শাহরিয়ার

তরুণ কবি। জন্ম এপ্রিল, ১৯৯৯। চিটাগঙের সরকারি সিটি কলেজের বাংলায় বিভাগে অধ্যয়নরত। চিটগঙের বাসিন্দা।

আনিকা ইবনাতের কবিতা

লাশ

লাশ লাগবে! লাশ!
রকমারি ধর্ষিতার লাশ!
জখমে জখমে রক্তাক্ত লাশ!
মাথা কেটে ফেলা বেওয়ারিশ লাশ।
টুকরো টুকরো করা মানুষের লাশ।
আগুনে পোড়ানো অঙ্গার লাশ!
ছুঁড়ে ফেলে দেয়া শিশুদের লাশ!

দীর্ঘশ্বাসের কোলে সঁপে দেওয়া লাবণ্যহীন স্বপ্নের লাশ!
ক্ষুধার চৌকাঠে মাথা ঠেকানো অকালমৃত্যুর লাশ!

লাশ লাগবে? লাশ?
অমর্যাদার কারাগারে বন্দি লক্ষকোটি শ্রমবতীর স্বপ্নহীনতার লাশ!
লাশ লাগবে?

আনিকা ইবনাত
তরুণ কবি। জন্ম ও বেড়ে ওঠা বগুড়ায়।

তানিম আমিনের কবিতা

আর্টিস্ট

আমি তো তোমারে নির্মাণ করি নাই,
নির্মাণ করেছ বরং তুমিই আমারে।
যে কারণে—
তুমি খোঁজো না, তোমারে খুঁজি আমি ।
আমারে ভাস্কর্য করে
পোট্রের্ট করে—
কাটো
ভাঙো
খুলে নাও পার্টস,
মুছে দাও কিছু
জুড়েও দাও অনেক
রঙেরও করো পরিবর্তন।

আমি তৈরি হয়ে জানি—
আমারে তৈরি করো তুমি— বিক্রির জন্যে।

তানিম আমিন

তরুণ কবি। দেশের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়। বসবাস খুলনা জেলায়। জন্ম ২০০০ সালের নভেম্বর মাসে।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top