আজ বৃহস্পতিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

যে কোনো গল্প জমে ওঠার আগে

।। সোহেল হাসান গালিব ।।

কেউ নেই আর চারপাশে।
দুই ব্যালকনির মাঝখানে যেটুকু আকাশ
সেখানে কেবল জাকারান্ডা গাছ
থেকে থেকে মাথা ঝাঁকায়।

যে কোনো গল্প জমে ওঠার আগে
প্রতিটি সকাল তাই কিছুটা বেগুনি দেখায়।

যে কোনো গল্প জমে ওঠার আগে

থু

এখন আমার কাজ হলো থুতু দেয়া।

প্রথমত নিজের গায়ে থু দিই
শার্ট খুলে বুকের ভিতর, যাতে
ভূতের ভয়টা কাটে।

এরপর থু দিই হাঁটুতে—ছড়ে যাওয়া ডান হাঁটু;
দোতলা কাঠের বাড়ি থেকে পড়ে তো গেলাম নিচে—
সেই যে হঠাৎ পাজামার ফিতে খুলে
ছুটে এল জিনের বাদশা…

তোমার মুখেও থুতু দিতে পারি,
থুতু দিতে বড় সাধ হয়।

চাইলে এসব মুছে ফেলা যায়, মুছতে পারবে
খুব সহজেই। টিস্যুটিও লাগবে না।
হাতের কাছেই রাশি রাশি
ব্যালট পেপার।


আঁকুপাঁকু

তোমাকে বাঞ্চোত বলে গালি দিতে ইচ্ছে হয়
যেন তুমি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠো,
আমাকে হঠাৎ লাথি মেরে ফেলে দাও
পদ্মাসেতু থেকে।

যেখানে সেতুর নিচে জলস্তনে সূর্যাস্তের থাবা—
ঢেউ তুলে স্পিডবোট উল্টে যায়, এতটাই হাবা।

হাসমত নামেও আজ আমাকে ডাকতে পারো।
কাতরাতে কাতরাতে আমি ঠিক
চলে যাব, কিছুদূর সাঁতরাতে সাঁতরাতে—
যেখানে যাবার কথা নয়।

ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে দেখবে কি তুমি?
নিজেকে দেখতে লাগে ভয়।


জাকারান্ডা

পৃথিবীতে সকাল আসে কফির মগ হাতে
ব্যালকনিতে দাঁড়াবার জন্য, এমনটা মনে হয়।

কিন্তু রাস্তার ওপারে তিন তলায়
যে লোকটি বসে থাকে,
কফির উৎফুল্ল ধোঁয়ার ফাঁকে তার বিধ্বস্ত চেহারা
স্পষ্ট চোখে পড়ে।

বিরস দাম্পত্য জীবনের
একটি নীরস গল্প তাতে লেখা যায়।

কেউ নেই আর চারপাশে।
দুই ব্যালকনির মাঝখানে যেটুকু আকাশ
সেখানে কেবল জাকারান্ডা গাছ
থেকে থেকে মাথা ঝাঁকায়।

যে কোনো গল্প জমে ওঠার আগে
প্রতিটি সকাল তাই কিছুটা বেগুনি দেখায়।


ভার্চুয়াল

নারীটি কোথায় থাকে, তার
দেহতরঙ্গের কোন শীর্ষে? কতটুকু দূরে?

এই প্রশ্নে ঘুরে ঘুরে উড়ে যায়
পুরুষপালিত পায়রার মন। কবে থেকে?

তবে সেই পুরুষ কোথায় থাকে? কোন
ক্লাউড সিস্টেমে রেখে তার
চৌরপঞ্চাশিকা?

সেই নারীটিকে আজ
হয়তো জিজ্ঞেস করা যায়
ইউনিকোডে, সন্ধ্যার সাইবার ক্যাফে—
ফাইবার অপটিকে খুলে ফেলে
ধূর্ত কপাটিকা।


স্পর্শাতীত

ক্রিমশাদা পেয়ালার ঠোঁটে
লিপস্টিকের দাগ—হালকা বেগুনি—

হয়তো এখুনি টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলা যায়,
স্মৃতি বা স্মারক বিলোপনযোগ্য নয়
তা জেনেও।

তবু মোচনীয় মুহূর্তের আগে
একবার শুধু ঐ পেয়ালার ঠোঁট
এই দুটি ক্ষুধিত আঙুলে
ছুঁতে সাধ হয়।

চোরা আঙুলের ফাঁকে—অমনি হঠাৎ
ফোটে নীল কৃষ্ণচূড়া—

লজ্জা নাকি ভয়?

Painting: Don Jusko, America

সোহেল হাসান গালিব

জন্ম ১৫ নভেম্বর ১৯৭৮, টাঙ্গাইল। বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। সহযোগী অধ্যাপক ও প্রশিক্ষণ বিশেষজ্ঞ, নায়েম, ঢাকা। প্রকাশিত বই : কবিতা— চৌষট্টি ডানার উড্ডয়ন [সমুত্থান, ২০০৭] দ্বৈপায়ন বেদনার থেকে [শুদ্ধস্বর, ২০০৯] রক্তমেমোরেন্ডাম [ভাষাচিত্র, ২০১১] অনঙ্গ রূপের দেশে [আড়িয়াল, ২০১৪] তিমিরে তারানা [অগ্রদূত, ২০১৭] ফুঁ [বাতিঘর, ২০২০] প্রবন্ধ— বাদ-মাগরিব (ভাষা-রাজনীতির গোপন পাঠ) [অগ্রদূত, ২০১৮] সম্পাদিত গ্রন্থ— শূন্যের কবিতা (প্রথম দশকের নির্বাচিত কবিতা) [বাঙলায়ন, ২০০৮] কহনকথা (সেলিম আল দীনের নির্বাচিত সাক্ষাৎকার) [শুদ্ধস্বর, ২০০৮] সম্পাদনা [সাহিত্যপত্রিকা] : ক্রান্তিক,

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top