।। বিশ্বেন্দু নন্দ ।।
নবজাগরণ যে একটি ফুলোনো ফাঁপানো বেলুন, সেই ধারণাটি পঞ্চাশের দশক থেকে নানান প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বের লেখায়, কৃতিতে ক্রমশঃ ফুটে উঠছিল। এই ভাবনার সামগ্রিকতা অর্জনের সমস্যা ছিল লেখক তাত্ত্বিকদের পুঁজি নির্ভর ইওরোপমন্য বিকাশের ভাবনা এবং ঔপনিবেশিক ভদ্রবিত্ততার দৃষ্টিভঙ্গী। ফলে সেই তাত্ত্বিক অবস্থান প্রার্থিত অভিঘাত তৈরিতে ব্যর্থ হয় – নবজাগরণের মিথ-মিথ্যে আরও দৃঢ়ভাবে চেপে বসতে থাকে। তবুও অতীতে নবজাগরণকে যারা নতুনভাবে দেখার চেষ্টা করেছেন, তাদের প্রতি তীব্র সম্মান জানিয়ে সেই অধরা তাত্ত্বিক কর্তব্য পূরণের উদ্যম নিয়েছেন গবেষক, উপনিবেশ বিরোধী আ ন্দোলনের সাথী দেবোত্তম চক্রবর্তী। তিনি বহুকাল ধরেই ‘বিদ্যাসাগর মিথ’ এবং সেই সময়ের নানান নবজাগরণীয় অতিকথার ফানুস ফুটো করে অভদ্রলোকিয় দৃষ্টিভঙ্গীতে তিলে তিলে প্রার্থিত পালটা বয়ান তৈরির পরিবেশ তৈরি করছিলেন অসামান্য স্থৈর্যে, প্রাজ্ঞ জ্ঞানচর্চায় এবং তীব্র ব্যক্তি আক্রমনের মুখে অকম্পিতভাবে দাঁড়িয়ে।
‘কলাবতী মুদ্রা’ প্রকাশনা থেকে প্রকাশিতব্য গ্রন্থ ‘বিদ্যাসাগর (নির্মাণ-বিনির্মাণ-পুনর্নির্মাণ)’ নিয়ে লিখছেন প্রকাশক বিশ্বেন্দু নন্দ।
নবজাগরণের মিথ, মিথ্যে ও বিদ্যাসাগর
বিদ্যাসাগর মশাই এবং তাঁর সময়কে নিয়ে বাংলা ইতিহাস জগতে বেশ কিছু মিথ জেগে আছে আজও। সেই মিথগুলিকে প্রশ্ন করা অথবা তার যথার্থ বিচার করার কোনও উদ্যম আজও নেওয়া হয়নি। অথচ এটাই উপনিবেশ বিরোধী চর্চার অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারতো। যে অর্থনীতি আমরা হারিয়েছি, যে উৎপাদন ব্যবস্থার কাঠামোর একাংশ ধ্বংস করেছি, বাংলাজুড়ে যে বিশিল্পায়ন ঘটেছে তাকে প্রশ্ন করার সময় এসেগেছে। ইওরোপমন্য পুঁজিনিষিক্ত ভদ্রলোকিয় দৃষ্টিভঙ্গীর বাইরে কারিগর চাষী হকারদের দৃষ্টিতেও নবজাগরণ দেখার উদ্যম নেওয়া হচ্ছে কয়েক বছর ধরে দেবোত্তম চক্রবর্তীর বিদ্যাসাগর নির্মান বিনির্মান পুনর্নির্মানের আখ্যান সেই উদ্দেশ্যে প্রথম পদক্ষেপ।
এই কলকাতা নির্ভর নব্য সাম্রাজ্যপোষিত নবজাগরিত, ইংরেজি শিক্ষিত ভদ্রলোকেদের অন্যতম নেতা তাত্ত্বিক হয়ে উঠলেন রামমোহন রায়, তস্যপৌত্তলিকশিষ্য দ্বারকানাথ ঠাকুর এবং একাকী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। প্রথমে কোম্পানি, পরে রাণীর দক্ষিণ এশিয়াকে আরও বড় লুঠযোগ্য, আরও বড় সাম্রাজ্যভোগ্য করে যাওয়ার সমস্ত কৃতিত্ব প্রাথমিকভাবে এই তিন মহাতেজের। উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনে এই তিনজনের সাম্রাজ্য বন্ধুত্ব প্রকাশ এবং সমান্তরালভাবে কীভাবে এরা ইওরোপ গঠনে বাংলা লুঠে সাম্রাজ্য নির্দেশ পালন করেছেন অক্ষরে অক্ষরে। সেই ইতিহাস রচনা উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কর্তব্য হিসেবে স্বীকৃত।
কারিগর হকার চাষী বাংলা সমাজের অন্যান্য পেশাদার এবং নানান স্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এবং প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদতে যে সোনার বাংলা গড়ে ছিল কয়েক শত বছরের অক্লান্ত প্রচেষ্টায়, পলাশীর পরে সেই প্রচেষ্টায় ছেদ পড়ল, কারিগর হকার চাষিদের বিশ্ব বাজার ধ্বংস হল, কর্পোরেট আগ্রাসনে ইওরোপে শিল্পায়নের উদ্দেশ্যে এশিয়া, আমেরিকা, আফ্রিকার সঙ্গে বিশ্বের কারিগরি কারখানা বাংলায় বিশিল্পায়ন সম্পন্ন হল ভদ্রবিত্ত গোমস্তাদের প্রত্যক্ষ্য মদতে। পলাশীর ছ’বছর পরে ফকির-সন্ন্যাসীদের নেতৃত্বে চাষী, কারিগরেরা অস্ত্র নিয়ে মাঠে নামলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের লুঠকর্মের বিরুদ্ধে।
পলাশীপূর্বের সাড়ে পাঁচশ বছরে ক্ষমতার কেন্দ্রে বাস করেও যে ভদ্রবিত্তরা শাসকদের চাপে কারিগর হকার এবং চাষী বিরোধী কাজকর্ম করে উঠতে পারেন নি, তারা পলাশীর আগে থেকেই কিছুটা সক্রিয় হচ্ছিলেন। ১৭৫২তে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দাদনি প্রথা থেকে গোমস্তা প্রথায় চলে যাওয়া ক্ষমতার পালা বদল ঘটলে কী হতে পারে তার একটা গুরুত্বপূর্ণ সংকেত দিয়ে যাচ্ছিল। ১৭৫৭র পরে মুর্শিদাবাদের খাজাঞ্চি লুঠ, ব্যবসা দখল এবং পণ্য এবং জ্ঞান লুঠ শুধু বাংলা বা দক্ষিণ এশিয়ার নয় বিশ্ব ইতিহাসের গতিপথে বদল আনল। ইওরোপ বিপুল সম্পদ নিয়ে এশিয়া আফ্রিকা আমেরিকায় বিশেষ করে আক্ষরিক অর্থে সোনার বাংলায় ব্যবসা করত এবং বাংলা ছিল বাণিজ্য উদ্বৃত্ত অঞ্চল। কয়েক হাজার বছরের দামি ধাতু এনে কারিগর চাষীদের উৎপাদন কেনার প্রবণতার বদল ঘটল। অধমর্ণ ইওরোপ ক্রুসেড যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েও যে বাণিজ্য ঘাটতি ঠেকাতে পারে নি, পলাশী কাণ্ড সেই বাণিজ্য অধমর্ণতা দূর করল এবং ইওরোপের সমৃদ্ধতা নিশ্চিত করল। পলাশীর পরের ১৯০ বছর ধরে প্রথমে বাংলার সম্পদ, পরে দক্ষিণ এশিয়ার অমিত সম্পদ আক্ষরিক অর্থে লুঠ হয়ে ইওরোপের সিন্দুকে জমা হতে থাকে। হাজার হাজার বছরের অধমর্ণ ইওরোপ হঠাতই উত্তমর্ণে রূপান্তরিত হয়।
অবিভক্ত বাংলা ভূমিতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাধারণ এক কর্পোরেট সংস্থা থেকে রাষ্ট্র পরিচালক হয়ে ওঠার এই রূপান্তরের অন্যতম সহায়ক হয় বাংলার গোমস্তারা। পলাশীর পূর্ব থেকেই তারা কোম্পানিকে পণ্য কেনার কাজে সহায়তা করত। পলাশীর চক্রান্তের পর তারা কোম্পানিকে বাংলার অমিত সম্পদে সিঁধ কাটার পথ দেখায়, কারিগরদের ওপরে বিপুল অত্যাচার নামিয়ে আনে। যে কারিগর চাষী নবাবি আমল অবদি, বাণিজ্য বা উৎপাদন চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার, উৎপাদন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে অনিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা ভোগ করত, ছিয়াত্তরের গণহত্যার সময় থেকে তাদের ক্ষমতাহীনতা শুরু হল দেশিয় গোমস্তা, বিদেশিয় আমলাদের অত্যাচারে এবং ঔপনিবেশিক আইন বলে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে তাদের হাত থেকে স্থায়ী সম্পদ জমি কেড়ে নেওয়া হল। জাতিবর্ণ নির্বিশেষে বাংলার মহিলাদের হাত থেকে রোজগার কেড়ে নেওয়া হল, হেস্টিংস-হ্যালহেদ-জোনস-কোলব্রুক তাদের সম্পত্তির অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে পুরুষদের হাতে তুলে দিল, যে কাজ স্বয়ং নারী বিরোধী মনু করতেও সাহস পান নি; ফলে সামগ্রিক বাংলার উৎপাদন ব্যবস্থা এবং সমাজ পৌরুষময় হয়ে উঠল। উপনিবেশ বিধবা মেয়েদের চিতায় ওঠার নিদান দিল। বাংলার সমাজ, অর্থনীতি এবং সামগ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থায় মহিলাদের অসামান্য ভূমিকার অবনমন ঘটল।
বাংলার ক্ষমতাকেন্দ্রে উপনিবেশের নীতি রূপয়ায়নের কাজের নিয়ন্ত্রক হিসেবে পুনর্বাসন ঘটল ভদ্রলোকেদের। জোন্স খুঁজলেন ব্রাহ্মণ ভদ্রলোক। সম্পদ, জ্ঞান লুঠ এবং রাজস্ব আদায়ের প্রশাসনিক কাজে ক্রমশ পুনর্বাসিত হতে হতে ব্রিটিশদের বাংলা দখলের অন্যতম দেশিয় কারিগর গোমস্তার উত্তরাধিকারীরা শুধু বাংলা নয়, সাম্রাজ্য বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়া জোড়া সাম্রাজ্য চালানোর নাটবল্টু, ছোটতরফ হিসেবে আবির্ভূত হল। যে বিকেন্দ্রিভূত উৎপাদন প্রশাসন জ্ঞানচর্চা কৃষ্টিচর্চার কাঠামো তৈরি করেছিলেন কারিগর, হকার, চাষী এবং উচ্চপদস্থ শাসক, সেই কাঠামো ভেঙ্গে ফেলে কেন্দ্রিভূত ইসলামবিরোধী,ছোটলোকবিরোধী, হিন্দুত্ববাদী সাম্রাজ্যপন্থী শিক্ষা, শহুরে সমাজ গড়ার কাজে দেশিয় ইংরেজি শিক্ষিত এবং পলাশী কাণ্ডে সহযোগীরা উদ্যোগী হল উপনিবেশিক শাসকদের প্রত্যক্ষ্য মদতে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যপন্থী ঐতিহাসিকেরা যে সময়কে নবজাগরণ হিসেবে দাগালেন, সে সময়েই পলাশী পরবর্তী সময়ের ক্রীড়ানক গোমস্তা পরিবারের উত্তরাধিকারীরাই সাম্রাজ্যের হাল ধরলেন।
বিশিল্পায়িত, সম্পদ লুঠে রিক্ত হয়ে যাওয়া জেলার নানান বাণিজ্য, উৎপাদন এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্র থেকে লুঠের সম্পদ এসে জড়ো হওয়া সাম্রাজ্যের কেন্দ্র, নব্য ভদ্রলোকিয় কলকাতা সমাজের বখরাদার হতে একের পর এক ভদ্রবিত্তপরিবারের রাজধানীতে আগমন ঘটতে থাকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আগে থেকেই। এই প্রবণতা বৃদ্ধি পেল ১৮০০র প্রথম দিকে। সাম্রাজ্যে নির্দেশে লুঠেরা অর্থনীতি, কৃষ্টি আর সমাজের হাল ধরলেন নব্য ইংরেজি শিক্ষিত ভদ্রবিত্ত সমাজ। এদের অধিকাংশই লুঠেরা অত্যাচারী খুনি সাম্রাজ্য পরিচালন শর্ত পূরণ করে বিখ্যাত হলেন।
এই কলকাতা নির্ভর নব্য সাম্রাজ্যপোষিত নবজাগরিত, ইংরেজি শিক্ষিত ভদ্রলোকেদের অন্যতম নেতা তাত্ত্বিক হয়ে উঠলেন রামমোহন রায়, তস্যপৌত্তলিকশিষ্য দ্বারকানাথ ঠাকুর এবং একাকী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। প্রথমে কোম্পানি, পরে রাণীর দক্ষিণ এশিয়াকে আরও বড় লুঠযোগ্য, আরও বড় সাম্রাজ্যভোগ্য করে যাওয়ার সমস্ত কৃতিত্ব প্রাথমিকভাবে এই তিন মহাতেজের। উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনে এই তিনজনের সাম্রাজ্য বন্ধুত্ব প্রকাশ এবং সমান্তরালভাবে কীভাবে এরা ইওরোপ গঠনে বাংলা লুঠে সাম্রাজ্য নির্দেশ পালন করেছেন অক্ষরে অক্ষরে। সেই ইতিহাস রচনা উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কর্তব্য হিসেবে স্বীকৃত।
নবজাগরণ যে একটি ফুলোনো ফাঁপানো বেলুন, সেই ধারণাটি পঞ্চাশের দশক থেকে নানান প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বের লেখায়, কৃতিতে ক্রমশঃ ফুটে উঠছিল। এই ভাবনার সামগ্রিকতা অর্জনের সমস্যা ছিল লেখক তাত্ত্বিকদের পুঁজি নির্ভর ইওরোপমন্য বিকাশের ভাবনা এবং ঔপনিবেশিক ভদ্রবিত্ততার দৃষ্টিভঙ্গী। ফলে সেই তাত্ত্বিক অবস্থান প্রার্থিত অভিঘাত তৈরিতে ব্যর্থ হয় – নবজাগরণের মিথ-মিথ্যে আরও দৃঢ়ভাবে চেপে বসতে থাকে। তবুও অতীতে নবজাগরণকে যারা নতুনভাবে দেখার চেষ্টা করেছেন, তাদের প্রতি তীব্র সম্মান জানিয়ে সেই অধরা তাত্ত্বিক কর্তব্য পূরণের উদ্যম নিয়েছেন গবেষক, উপনিবেশ বিরোদান্দোলনের সাথী দেবোত্তম চক্রবর্তী। তিনি বহুকাল ধরেই ‘বিদ্যাসাগর মিথ’ এবং সেই সময়ের নানান নবজাগরণীয় অতিকথার ফানুস ফুটো করে অভদ্রলোকিয় দৃষ্টিভঙ্গীতে তিলে তিলে প্রার্থিত পালটা বয়ান তৈরির পরিবেশ তৈরি করছিলেন অসামান্য স্থৈর্যে, প্রাজ্ঞ জ্ঞানচর্চায় এবং তীব্র ব্যক্তি আক্রমনের মুখে অকম্পিতভাবে দাঁড়িয়ে। কারিগরদের সঙ্গঠনের পক্ষে শ্লাঘার বিষয় হল, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মশাইয়ের জন্মের ২০০ বছর পূর্তিতে নবজাগরণকে নতুন করে দেখার প্রায়োগিক একটি নির্দেশনামা তৈরি হওয়ার কাজে জুড়ে থাকতে পারা। তার প্রতি বাংলার অভদ্রলোক চাষী, হকার কারিগর সমাজের কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই।
প্রকাশকের পক্ষ থেকে পাঠকদের জানিয়ে রাখা গেল, গবেষক দেবোত্তম কথা দিয়েছেন রামমোহন-দ্বারকানাথের সাম্রাজ্য-বন্ধুত্ব নিয়ে তার খোঁজের কাজ শুরু হবে – যদিও ব্লেয়ার ক্লিং সেই কাজের অনেকাংশ সুসম্পন্ন করেছেন ঔপনিবেশিক শর্ত অনুসরণ করে বেশ কয়েক দশক পূর্বেই, আমরা দেবোত্তমের কাজের দিকে তাকিয়ে থাকব অভদ্রবিত্ত, অইওরোপমন্য দৃষ্টিভঙ্গীতে তাদের কৃতি ইত্যাদি বোঝার জন্যে।
অতীতে কলাবতী মুদ্রার বহু ব্যতিক্রমী প্রকাশনার পৃষ্ঠাপোষণা করেছেন দুই বাংলার পাঠক। এই বইটি নবজাগরণের সঙ্গে জুড়ে থাকা নানান প্রশ্নকে নতুন করে তুলে ধরবে, বিশেষ করে উপনিবেশ তার লুঠ, অত্যাচার, গণহত্যার পরিকল্পনা সাধন করার উদ্দেশ্যে যে সব উদ্দেশ্যপূর্ণ বিভ্রম চাপিয়ে দিয়েছেন, সেগুলি নিরসন করা প্রত্যেক উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনের কর্মীর কর্তব্য। সেই কর্তব্য সাধন করছি আমরা।
বইটি প্রকাশ করেছে কারিগরদের প্রকাশনা সংস্থা এবং ইতিহাস কৃতি খোঁজ-সঙ্গঠন কলাবতী মুদ্রা। সংস্থার মৌল উদ্দেশ্য বাংলা ভাষায় উপনিবেশ বিরোধী চর্চা এবং কারিগর-হকার এবং চাষীদের কৃতিবাখান। ইতিমধ্যে উপনিবেশ পূর্ব সময় বুঝতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই প্রকাশ করেছে কলাবতী মুদ্রা। কারিগরদের নিয়েও প্রকাশনা করেছে। উপনিবেশ বিরোধী চর্চায় বেশ কিছু আলোচনা সভা আয়োজন করছে। বইটি বাংলাদেশ সংস্করণ প্রকাশ করছেন গ্রন্থিক প্রকাশনী। পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনের জোয়ার প্রবল হয়ে উঠছে ক্রমেই। এই আন্দোলন শুধু নেতিবাচক খুঁত খোঁজার আন্দোলন নয়, অতীতের সাফল্য ব্যর্থতা মাথায় রেখে ভেঙেপড়া উৎপাদন কাঠামোকে নতুন করে গড়ে তোলার আন্দোলনও বটে। চাষী হকার কারিগরদের হারানো ব্যবস্থাকে ফিরে দেখার আন্দোলনও।
সেই আন্দোলনের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠবে দেবোত্তমের বইটি।
উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনের জয়। জয় বাংলার কারিগর চাষী হকারদের জয়।
বিশ্বেন্দু নন্দ
লেখক, গবেষক, সংগঠক, প্রকাশক। উপনিবেশপূর্ব সময়ের সমাজ অর্থনীতিতে কারিগরদের ইতিহাসের খোঁজে সর্বক্ষণের কর্মী। হকার, কারিগর সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন প্রায় তিন দশক। বাংলায় পরম্পরার উৎপাদন বিক্রেতাদের বিষয়ে লিখেছেন নিরন্তর। বাংলার উপনিবেশপূর্ব সময়ের পরম্পরার চাষী-হকার-কারিগর-ব্যবস্থা বিষয়ে খোঁজ করছেন। দেশীয় উৎপাদন ব্যবস্থা ছাড়াও দেশীয় প্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে। ‘পরম’ পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। অড্রে ট্রুস্কের আওরঙ্গজেব, ম্যান এন্ড দ্য মিথ, স্বেন বেকার্ট এম্পায়ার অব কটন, যদুনাথ সরকারের মুঘল এডমিনিস্ট্রেসন, আহকমই আলমগিরি অনুবাদ করেছেন। পলাশীপূর্বের বাংলার ৫০ বছর, পলাশীপূর্বের বাংলার বাণিজ্য দুটি মৌলিক পুস্তকের রচয়িতা।
লেখকের বিদ্যাসাগরের ওপর এত রাগ কেন? বিদ্যাসাগর তো সরাসরি ওঁর কোনো উপকার করতে পারেন নি ।