।। তারেক কাজী ।।
এক
এই জন্ম এখানেই শেষ
কাল ফের
ঘুম থেকে উঠে রাজার মতো বাঁচবো
ইলামবাজার ঘুরে ঘুরে
নতুন বৈভবে আবার ভাববো
আর কী কী
করা যেতে পারে
তারপর কোনো একদিন
চৌ পাহাড়িয়ার শালবন ফেলে
সুখ বাজারের পথে হাঁটতে হাঁটতে
তুমিও দুঃখ পাবে
ব্যথায় উঠবে কেঁপে লোকমুখে শুনে—
এই হাল, বেদনার বীজ ওই মনে
পুঁতেছিলে কবে!
দুঃখহীন পরিতাপহীন
ভিন্ন এই জন্ম
সে ক্ষরণ এখনও হয়নি বন্ধ
নাভিও পোড়েনি
হাওয়া দিলে
ছাই ওড়ে তাই আজও চারিদিকে
দুই
তোমাকে পাওয়ার কথা ভেবে কতদিন হেঁটে গেছি
এই পথ নীরবে অক্লেশে আমার সমূহ ভার—
কতদিন বহন করেছে
কোনোদিন দাঁড়িয়ে পড়ে একবারও
তার কাছে জানতে চাইনি
সে কেমন আছে?
তোমাকে পাওয়ার কথা ভেবে কত না করেছি ভুল
তবু তুমি কৃপার দৃষ্টিতে
তাকিয়েছ খালি, আর আমি
আরও আশকারা পেয়ে আদরে সোহাগে
কেবল বলেছি
ভালোবাসি প্রিয়, ভালোবাসি!
তোমাকে, তোমাকে ভালোবেসে কোনোদিন আর
কারও কাছে জানতে চাইনি
দগ্ধ সেই কবুতর—
আমাকে মার্জনা করেছিল কি না!
তারপর কেটে গেছে কতদিন, আমরা দু’জন দুইদিকে
ছিটকে পড়েছি
দ্যাখো, দ্যাখো তবু সেইসব দিনের হাজারও ছবি
এখনও বহন করে
সুজলা-সুফলা ওই আদিম পৃথিবী…
তিন
তোমাকে পারব না বোঝাতে কিছুই সুন্দরী আজ
তার চে বরং আকাশে দিকে চোখ মেলে
একবার তুমিই তাকাও
দ্যাখো, আমার হৃদয় থেকে জন্ম নিয়ে
কত রং ওড়ে ওই পাখির ডানায়—
তাদের কল্লোলে যে সুর ছড়ায় ইহলোকে—
তোমার জান্নাতে তার কিছু গুঞ্জন শোনা যায়
সুন্দরী এখন বলো এই চোরাস্রোতে তোমাকে আবার
কীভাবে বোঝাই
এ তো হঠাৎ কুড়িয়ে পাওয়া
ঐশ্বর্যের মতো কিছু পাওয়া
বিপুল ছটায় যার অন্ধকার ম্লান হয়ে গেছে
আবদ্ধ গুহার মুখে খুলে গিয়ে আবার বইছে
পাঁজরে পাঁজরে হিম হাওয়া
সুন্দরী অথচ দ্যাখো ভাগ্যের কী পরিহাস
ঈশ্বরের কোটি কোটি
বছর কেটেছে শুধু
নদীর ওপার থেকে এইপারে তোমাকে আমার কাছে
পৌঁছে দিতে একবার…
প্রচ্ছদের ছবি: নীলাঞ্জনা বসু
তারেক কাজী
কবি, প্রকাশক, স্বাধীন চলচ্চিত্রনির্মাতা। পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলায় ফুরফুরা শরীফ এলাকার বাসিন্দা। জন্ম- ১৯৭৩ সালে। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ , ‘ দেওয়ালে খড়ির দাগ’, ‘বিপন্ন মেঘের কালি’, ‘তওবা তওবা’, ‘সুখের মুহূর্তগুলি’ ও ‘দৃশ্য’।