।। কুলাবধূত সৎপুরানন্দ।।
তিনটি বাউল গান
বাউলা বানাইলো তারে
ছাড়ি মহাসুখ ধাম
পূরাতে প্রেমের কাম
নিতাই আসিল দুয়ারে। (ধূয়া)
বৃদ্ধ মাধবেন্দ্র পুরী
নিতাই পেয়ে বলিহারি।
নিমায়ের সন্ধানে জুড়ি
রসের পশরা পাঠাইলো রে।।
নদীয়ার পণ্ডিত নিমাই
স্ত্রী-বিয়োগে বিবাগী তাই।
বিষ্ণুপ্রিয়া ঘরে বসাই
শচীমাতায় যে ফাঁদ পাতিলো রে।।
নিতাই এক ক্ষ্যাপা ছিল
গৌরাচাঁদে সে কোল দিলো।
প্রেমেতে ভাসায়ে নিলো
বাউলা বানাইলো তারে।।
নিতাইয়ের সঙ্গ পেয়ে
গোরায় চৈতন্য হয়ে।
হরিনামের ধারায় বয়ে
কপট সন্ন্যাসী সাজিল রে।।
অদ্বৈত-শ্রীবাস-গদাধরে
না রাখতে পারলো শ্রীগৌরাঙ্গে।
নিতাইয়ের প্রেমের রঙ্গে
নীলাচলে চলে গেল রে।।
নিত্যানন্দের সহজ ফান্দে
পড়িয়া চৈতন্যে কান্দে।
গম্ভীরায় কি রসাস্বাদে
মাধবী সঙ্গেতে ওরে।।
বলে ক্ষ্যাপা অবধূতে
পোষ মানালে পঞ্চভূতে।
নিতাই তোরেও নেবে সাথে
প্রেমভিখারী বানাইবে রে।।
শ্রীশ্রী নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর জন্মমহোৎসবে বাউল গান
গোহাড়ের মালা গলে
ঢলে যুবতীর কোলে
মুখে হরিহরি বলে।
নিতাই চাঁদ আমার।।
জগত-মায়া নাশি
নিমাই হোল সন্ন্যাসী
হবে বলে অবিনাশী।
নিতাই সাধিল শৃঙ্গার।।
বসুধা-যমুনা লয়ে
জাহ্নবায় বসতি করে
লছীমাবাইয়ে (লক্ষহীরায়) বুকে ধরে।
নারায়নী কইল শিরধার।।
নিমাই যায় গো ঘর ছাড়িয়া
নিতাই এলো ঘর বাঁধিয়া
মাগুর মাছের ঝোল হরিহরি বোল।
অদ্ভুত অবধূত-আচার।।
ধর্ম করে পাপী মনে
পাপ নাই যার ধরে পরম ধনে
সে না যায় বিন্দুক্ষরণে।
ক্ষ্যাপা অবধূত কয় অদ্ভুত ব্যাপার।।
বাউল গান
প্রেম দেবো প্রেম দেবো
আর কিবা আছে দেব বলো।
দেহ-প্রাণ-মন-বুদ্ধি সাধনে করিতে শুদ্ধি
ধন-মান-প্রতিপত্তি গেলো।।
রয়েছি একেলা পড়ে
এই প্রাণনদী-তীরে চলো।
কালাকাল মহাকাল জন্মমৃত্যু
চলাচল মুখে শুধু হরি হরি বলো।।
হরিরে হরিয়া আমি
পেয়েছি বিষামৃত লহো।
প্রেম দেবো প্রেম দেবো
আর কিবা আছে দেব বলো।
প্রেম নাও প্রেম নাও
প্রেম ছাড়া কিবা নিবে বলো।
শূন্য হৃদি পূর্ণ করে চলো যাই প্রেমপুরে
ক্ষ্যাপা অবধুতে বলে চলো।।
**হরি – বিমর্শ-ঈশ্বর / কৃষ্ণ / ব্রহ্মবিন্দু-স্তম্ভন
কুলাবধূত সৎপুরানন্দ
অবধূত, বজ্রযানী তন্ত্রগুরু, চিত্রকর, কবি, গবেষক ও শিক্ষক। বাস করেন পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং-এ। বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায় পারিবারিক শিকড়। কমলকুমার মজুমদারের ছাত্র ও পুত্রসম। বাউল-ফকিরদের সঙ্গে একাত্ম থাকতে পছন্দ করেন। বিপ্লবী কমিউনিস্ট ধারার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন এক সময়। গান করেন, মানুষের এবাদতে, প্রাণ ও প্রকৃতির ভজনায়।