।। সীমিতা মুখোপাধ্যায় ।।
উপশম
কোথাও কোনো গ্লানি নেই আর।
চলে যাচ্ছ, যাওয়ার রাস্তাটুকু দেখাতে দেখাতে—
আসলে এগিয়ে আসছ উপশম হয়ে।
আমার ঘুমন্ত পায়ের পাতায় তখন অঝোর
ছিদ্রগুলি ভরে গেছে জোনাকিতে,
শূন্যতা ‘রায়বেঁশে’ খেলছে অপরূপ নীল আলোয়,
নিজস্ব মুখ নেই বলে মিলিয়ে গিয়েছি অন্যের মুখোশে।
পৃথিবীর আড়ম্বর সরে সরে যায়, সরে সরে যায়।
আমিও লিথপ্সের মতো পড়ে থাকি
তোমাদের আসা-যাওয়ার পথে!
সংযম
রুমালে মেট্রোর গন্ধ বেয়ে কবিতা নেমে আসে,
ঢেউটিন বাজায় জলতরঙ্গ,
বিকেলের মরা আলোয় গাছে গাছে কালো পাতা ডাকে,
আমার নরম নরম ইচ্ছের চোখে লেপ্টে থাকে কাজল,
তবুও সংযম পাখি পড়ায়।
আমি যে ফড়িং ধরতে জানি না।
সাউথসিটির ভাগাড়ের পাশ দিয়ে ছুটে যায়
দিলদরিয়া অটো, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
লেসের ছাতা ঘোরায় ছাতিম গাছ,
পুকুরধারে বসে থাকে দুটো বোকা বোকা সিংহ―
সিঁড়ি নেমে যায় ওদের মাঝখান দিয়ে।
মৎস্যপুরাণ
জানি না রে, দাদা,
কতটা মিথ্যে বললে
আঁশটে হয়ে যায় সিঁড়ির ঘর,
কতটা একান্নবর্তী সেই কাঁটা
আমার বয়সসন্ধিক্ষণে।
দুপুর কেমন হেলান দিয়ে
চিলেকোঠার গায়ে—
শ্যাম-অঙ্গে-রাই …
মা তাকে চোখ পাকিয়ে
ডেকে নিল ঘরে!
নারকেল পাতায় ছি ছি
করছে তীক্ষ্ণ আলো,
বিকেলের চায়ের জল মিটিমিটি
ফুটে যাচ্ছে ধোঁয়ায় …
এরা কেউ জানে না,
শাক দিয়ে ঢেকে
জন্ম জন্ম যে আমি
মাছের কাঁটা রেখে আসি,
দাদা, তোর যমের দুয়ারে।
সীমিতা মুখোপাধ্যায়
১৯৮২ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার গরলগাছা গ্রামে জন্ম। বেড়ে ওঠা উক্ত জেলার উত্তরপাড়ায়। প্রাণীবিদ্যায় স্নাতকোত্তর হয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পেশায়। আপতত দুটি কবিতার বই। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যাপনচিত্র’ থেকে ২০১৫ সালের কোলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত ‘দশভুজা সার্কাস’ ও দ্বিতীয় বই, ‘অস্ট্রিক’ থেকে ২০১৮ সালের কোলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত ‘আমার অসময়গুলি’।