অসুখ

গল্প। স্কেচ- LOUI JOVER

।। ফাতেমা রিয়া ।।

নিষাদের লাশ প্রথমে রিশুই দেখেছিল। দেখেছিল বললে ভুল হবে, নিষাদ তার সামনেই গলায় ছুরি চালিয়েছিল।
তার আগে বলেছিল, আমি মরলে সাহসীদের মতোই মরব বলেছিলাম না? ঘুমের ওসুধ, সায়ানাইড এসব খেয়ে পেইনলেস মরণের ট্রাই করার কাওয়ার্ড আমি না।

অসুখ

সুবিশাল উপত্যকা। দুইপাশে পাহাড়। কালো পাহাড়। সূর্যটা ধীরে ধীরে লাল হয়ে যাচ্ছে। আধার নামছে। রিশু দৌড়াচ্ছে। তার পায়ে বারবার পাথরের ধাক্কা লাগছে। সে এই উপত্যকা থেকে বের হতে চায়। দূরে দেখা যাচ্ছে কালো সাগর। সে ওখানে যেতে চায়। তার পানির তেষ্টা পেয়েছে। যত দৌড়ায় তত মনে হয় সাগর দূরে সরে যাচ্ছে। এর মধ্যে সে দেখলো তার সাথে আরেকজন দৌড়াচ্ছে। মুখটা চেনা চেনা লাগছে। আরেহ! নিষাদ।

রিশু থামলো। নিষাদ ও থামলো। তারপর হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো, রিশু হাত ধরো।

রিশু বললো, তুমি এখানে কীভাবে এলে?
তুমি কীভাবে এলে?
রিশুর মাথা কাজ করে না, সে নিষাদকে বলে, এত তর্ক কোরো না। তোমাকে কত করে বলছি পিছু নেবে না।
|নিষাদ হাসতে হাসতে বললো, পিছু নিলাম কই? এখানেই থাকি। এটা মৃত্যু উপত্যকা। কালো সাগর, কালো পাহাড়, লাল সূর্য। কিছুই বোঝো না?

রিশুর সামনে সব ঘোলাটে হয়ে যায়। হুট করে সে দেখে তার পরনের শাড়িটা নেই। সে নগ্ন। আর নিষাদ তাকে আদর করছে। রিশু বলতে চাইলো, থামো। কিন্তু তার মুখ দিয়ে আওয়াজ বের হলো না।

নিষাদ চুমু খাচ্ছে, রিশুর ভালো লাগতে থাকে, সে নিষাদকে জড়িয়ে ধরে, কিন্তু মনে হয় তার শরীর ভিজে আসছে। নিষাদ তার স্তনে কামড় দেয়, সে ব্যথা পায়।
‘উহ’ করে ওঠে। সে নিষাদকে বলতে চায়, আস্তে।
এরই মধ্যে নিষাদ তার দিকে তাকায়, রিশু চমকে ওঠে। নিষাদের মুখে রক্ত, ঠোটে ঝুলছে মাংসপিণ্ড, রিশু চিৎকার করে ওঠে, এতক্ষণ তাকে কামড়েছে নিষাদ, তার মাংস খেয়েছে। ‘ওমা’ বলে সে সরে যেতে চায়। নিষাদও তাকে ছেড়ে দেয়। রিশু উঠে বসতে পারে না, তার সারা শরীরের ভেজা ভাব সে বুঝতে পারে। শরীর ভিজে গেছে রক্তে।
নিষাদ হাসে। ‘যাও, যেখানে ইচ্ছা।’
‘তোমার এই থেতলানো শরীর নিয়ে কই আর যাবে? আমার কাছেই আসবে। হাহাহা’
রিশু চিৎকার করে, সূর্যের লাল রং রক্তের সাথে মিশে যায়।

রিশু, রিশু

— কে ডাকে। রিশুর চিৎকার থামে। সে চোখ খোলে। নিবিড় তাকিয়ে আছে তার দিকে। চোখ বিস্ফোরিত
— এই কি হয়েছে? তুমি রাতে চেচাচ্ছ কেন?
রিশু প্রথম কয়েক মিনিট চুপ করে থাকে। তার সারা শরীর ভিজে গেছে ঘামে। একটু পর বললো, পানি খাবো।

নিবিড় পানি নিয়ে আসে, তারপর বলে, কাল সকালে জরুরী একটা মিটিং আছে, অনেক কষ্টে ঘুম আসলো, কিন্তু তুমি ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছ হুট করে!

রিশু চুপচাপ পানি খেয়ে নেয়। সে কাঁপছে।
নিবিড় বললো, ভালো একটা সাইক্রিয়াটিস্ট দেখাও। প্রতিদিন রাতেই চেঁচামেচি আর ভালোলাগে না।
এইসব কথা রিশুর পরিচিত। সে উত্তর দেয় না।
পানি খেয়ে শুয়ে পড়ে। নিবিড় লাইট নিভিয়ে দেয়।

সে আর নিবিড় একসাথে থাকে দুইবছর হলো, বিয়ে করার প্লান ছিল। তবে মনে হয় হয়ে উঠবে না। নিবিড় দিনে দিনে দূরে সরে যাচ্ছে। রিশুরও ইদানিং কিছু ভালো লাগে না। তার মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। জবও চলে গেছে। বলতে গেলে সে নিবিড়ের ওপরেই নির্ভরশীল এখন। পরিবারের মা ছাড়া কেউ নেই। তিনিও মামার বাসায় আশ্রিতা থাকেন। রিশু কীভাবে এই হাই-সোসাইটির লাইফে চলে এলো কে জানে!

প্রথমে ভার্সিটি। নাচ-গান করতো। ছোট খাটো মডেলিং। সেখান থেকে এক পর্যায়ে নিবিড়ের সাথে পরিচয়। তারপর প্রণয়। যদিও বাসায় জানে রিশু বিয়ে করেছে।
তবে প্লান ঠিক করাই আছে। যদি ব্রেকাপ হয় ডিভোর্স বলা যাবে।
নিবিড়ের চাপা হাসির শব্দ শোনা যায়। অন্যদিকে ফিরে শুয়ে আছে। নিশ্চয়ই কারো সাথে খুব জমে উঠেছে। বোঝাই যায় নতুন কিছু না।
রিশু দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এই পৃথিবীতে দূঃখ আর অনিশ্চয়তা ছাড়া কিছুই আর আপন হলো না।

নিষাদ কে? এই প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। নিষাদ হলো রিশুর প্রথম জীবনের প্রেমিক যে গলায় ছুরি চালিয়ে সুইসাইড করেছিল। সেটাও রিশুর জন্যই।

সুন্দরী রিশুর আশেপাশে ভ্রমরের পাল তো ঘুরে বেড়াতোই। নিষাদ সেখানে রাজার জায়গা দখল করে ফেলেছিল। তবে রাখতে পারেনি। সেসব অনেক কথা। বলতে শুরু করলে পাঠক বলতে পারেন, লেখিকা একটা মিসোজিনিস্ট দৃষ্টিকোণ থেকে নায়িকার চরিত্রহনন করছেন। বলাই যেতে পারে, মাথার ওপরে ছাদ নেই, পরিবারের আশ্রয় নেই এমন মেয়ে নিজের চারপাশে সৌন্দর্যের ঘূর্ণিজাল বিছাতেই পারে। শোনা যায়, থার্ড ওয়েভ নারীবাদ ব্যাপারটা সমর্থনও করে। তবে ঠিক আছে। রিশুকে সংগ্রামী নারীই বলা যাক।

নিষাদের লাশ প্রথমে রিশুই দেখেছিল। দেখেছিল বললে ভুল হবে, নিষাদ তার সামনেই গলায় ছুরি চালিয়েছিল।
তার আগে বলেছিল, আমি মরলে সাহসীদের মতোই মরব বলেছিলাম না? ঘুমের ওসুধ, সায়ানাইড এসব খেয়ে পেইনলেস মরণের ট্রাই করার কাওয়ার্ড আমি না।

রিশু এগোতে যাচ্ছিল। নিষাদ চিৎকার করে বললো, বেশ্যা মাগী দূরে থাক।
এমন কথা শুনে রিশু জমে গেলো। সে ঠান্ডা স্বরে বললো, তুই মরে যা।
নিষাদ হাসতে হাসতে বললো, এই হলি তুই। নিজেকে ছাড়া কারো কথা কখনো ভাবিস নি, আমি মরছি তার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার তোকে কেন বেশ্যা বলেছি। হাহা।
রিশু চলে আসতে উদ্যত হল। নিষাদ পিছন থেকে ডাকলো, রিশু জান, ফিরে তাকাও সোনা।
বলেই ছুরি চালিয়ে দিলো নিজের গলায়। রিশু তাকিয়ে রইলো। নীরব হয়ে। পরের এক সপ্তাহ সেই নীরবতা ভাঙলো না।

কাহিনীটা অনেক ছড়িয়েছিল। অনেক অনলাইন পোর্টালের হেডলাইনও সে হয়েছিল। মানুষজন কমেন্ট সেকশনে যত পারে তাকে ধুয়ে দিয়েছিল। এসব দেখেও রিশু অনেক ভেঙে পড়ে। ফেসবুক অফ করে দেয়। তারপরেও শান্তি নেই। অনেকদিন পর ফেবুতে এসে কোনো অচেনা ছেলের এমন মেসেজ পাওয়াটা খুবই দুঃখজনক।

একটা সময় পর্যন্ত রিশুর ধারণা ছিল, নিষাদ তাকে এতটাই ভালোবেসেছে, জীবন দিয়ে সেই ভালোবাসা প্রমাণ করে গেছে। ভেবে কিছুটা গর্ব হতো।
আজকে রিশু বোঝে নিষাদ তার কতবড় ক্ষতি করে গেছে। ‘রিশু জান, ফিরে তাকাও সোনা’ বলে নিজের গলায় ছুরি চালিয়ে যে বীভৎস দৃশ্যর সাক্ষী করে গেছে তা ক্ষণে ক্ষণে ভেসে ওঠে, এই অপরাধবোধ, ভয়ংকর ট্রমা যেকোনো অনুভূতির চেয়েও তীব্র ঠেকে রিশুর কাছে। বয়সের সাথে সাথে চক্রবৃদ্ধিহারে এর তীব্রতাও বাড়ছে। হয়তো রিশু দিনে দিনে একা হয়ে পড়ছে বলেই নিষাদ তার বীভৎস ভালোবাসার স্মৃতি নিয়ে ফেরত আসে বারবার।

আর শেষ পর্যায়ে রিশুর প্রতি নিষাদের ভালোবাসা ছিল না। বরং এতটাই ঘৃণা ছিল যে হয়ত তা বইবার শক্তি ছিল না, বরং এতটাই কষ্ট ছিল যা নিয়ে কোথাও যাবার জায়গা ছিল না। তাই এই প্রতিশোধ নিয়ে চলে যাওয়া।

রিশু নিষাদকে কখনোই সেভাবে ভালোবাসেনি, তবে সেই গলা থেকে বের হওয়া ফিনকি দেওয়া রক্তের সাথে রিশুর তো একটা বন্ধন হয়েই গেছে।
নিষাদ স্বপ্নে আসে, রিশুর সাথে সংগমে লিপ্ত হয়, তাকে রক্তাক্ত করে চলে যায়। যাওয়ার আগে বলে যায়, কোথায় আর যাবে?

রিশু চিৎকার করে ওঠে। নিবিড় বিরক্ত হয়। এভাবেই চলে যাচ্ছে কতগুলো দিন। কিন্তু কয়দিন!

ফিনকি দেওয়া রক্তের সাথে রিশুর তো একটা বন্ধন হয়েই গেছে।

নিবিড় একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করে। ভার্সিটিতে পড়ার সময় নিবিড়ের সাথে পরিচয় রিশুর। নিষাদের মৃত্যুর পর ছয় মাস হয়ে গেছে তখন।

নিবিড় তাকে ফেসবুকে মেসেজ দিলো একদিন। প্রথম মেসেজটা ছিল, আপনি কি সেই মেয়ে যার জন্য একজন গলায় ছুরি চালিয়েছে?

নিঃসন্দেহে বিরক্তিকর। কাহিনীটা অনেক ছড়িয়েছিল। অনেক অনলাইন পোর্টালের হেডলাইনও সে হয়েছিল। মানুষজন কমেন্ট সেকশনে যত পারে তাকে ধুয়ে দিয়েছিল। এসব দেখেও রিশু অনেক ভেঙে পড়ে। ফেসবুক অফ করে দেয়। তারপরেও শান্তি নেই। অনেকদিন পর ফেবুতে এসে কোনো অচেনা ছেলের এমন মেসেজ পাওয়াটা খুবই দুঃখজনক।

রিশু ব্লক করবে ভাবতে ভাবতে করলো না। ডিপিটা ভালই দেখাচ্ছে। বরং ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলে হালকা হওয়াই ভালো।

নিবিড় এক পর্যায়ে বললো, একজন তো জান দিয়েও মন পেলো না। আমি কিভাবে চেষ্টা করতে পারি?

‘এত কষ্ট করে চেষ্টা করার কি দরকার?’ রিশু লিখলো।

—ধরুন, কষ্ট করতেই ভালো লাগে।
—তবে কষ্ট করেই বের করুন না।
—তা তো করবো। তবে দেবীর অনুগ্রহ তো চাইতেই পারি।

দেবী আজ দাসীর স্থানে নেমেছে। নতুন দেবীর আবির্ভাব হয়েছে। বিসর্জনের মাটির প্রতিমার মতো রিশু হারিয়ে যাচ্ছে গভীরে।

স্কেচ- LOUI JOVER

রিশু খাবার নাড়ছে চামচ দিয়ে। নিবিড় মুখ নিচু করে খেয়ে যাচ্ছে। তারা বসে আছে ডাইনিং টেবিলে। রাত বাজে নয়টা। আজ একটু তাড়াতাড়িই বসা হলো খেতে। নিবিড়ের নাকি কিছু বলার আছে। রিশু জানে কি বলার আছে। সে দেয়ালঘড়ির দিকে তাকিয়ে রইলো।

ডাইনিং রুমটা ছোটখাট ছিমছাম, একপাশে ছোট বারান্দা, দরজা খোলা, হিমেল বাতাস আসছে। কী মাস এখন? রিশু মনে করতে চেষ্টা করে। মনে হয় অগ্রহায়ণ।

খাচ্ছ না যে। নিবিড় নীরবতা ভাঙে।
খাচ্ছি তো। রিশু শশব্যস্ত হয়ে কাটাচামচ আর ছুড়ি মাংসের মধ্যে চালায়।
নিবিড় একটু তাকিয়ে থেকে বললো, খেতে না ইচ্ছে হলে থাক।
রিশু আস্তে আস্তে চামচে মাংস আর মাশরুম তুলে মুখে নেয়। তারপর বলে, কি বলবে বলো?
নিবিড় গ্লাসে পানি ঢালে, তারপর বলে, আমার একটা এফেয়ার হয়েছে তুমি হয়ত জানো।
রিশু চুপ থাকে। তারপর বলে, বিয়ে কবে?

—দু মাস পরেই।
— পরিচয় কিভাবে?
— বাবার বন্ধুর মেয়ে। অস্ট্রেলিয়া থেকে পড়ে এসেছে। পারিবারিক ভাবেই পরিচয় বলতে পারো।
— এতকিছু হয়ে গেল আমি জানতে পারলাম না।
— তুমি নিজের অসুখ-বিসুখ, জব-টব নিয়ে ঝামেলায় ছিলে তাই বলি নি। বলতে পারো স্পেস দিয়েছি।

রিশু আস্তে আস্তে কাটাচামচ নাড়তে থাকে। কাচের প্লেটে লেগে চামচে টুন টুন শব্দ হয়। সে কিছু বলে না।
তারপর খাবার প্লেট শুদ্ধ ঠেলে টেবিল থেকে ফেলে দেয় হঠাৎ করে। চিৎকার করে বলে, স্পেস দিয়েছ? কাওয়ার্ড।
নিবিড় চুপ থাকে। একটুপর দাত কিড়মিড় করে বলে, গেট আউট অব মাই হাউজ। ইউ অরফান স্লাম গার্ল।
— হোয়াই ইউ হ্যাড টু ফাক আ স্লামগার্ল? সন অব আ বিচ।
নিবিড় তাকে চড় মারে। তারপর ঘাড় ধরে দরজার কাছে নিয়ে যায়। তারপর বলে ‘গেট আউট, নাউ।’
রিশু নিবিড়ের হাতে কামড় বসিয়ে দেয়। নিবিড় রিশুকে ছেড়ে দিয়ে মেঝেতে বসে পড়ে হাত চেপে ধরে।
চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, পুলিশ দিয়ে রেপ করাবো তোকে আজ। তুই দেখবি।
রিশু বলে, যা ইচ্ছা কর। তোর অস্ট্রেলিয়ান গাভীর সাথে আমি তো একবার দেখা করবোই। তোর কীর্তি তাকে জানাতে হবে না?
নিবিড় একটু দমে যায় মনে হয়। তারপর বলে, তোর কত টাকা লাগবে বল? আমি তোর চিকিৎসার খরচ দেব। দয়া করে বাসা থেকে বের হয়ে যা।
রিশু ফোঁপাতে থাকে। সে কেন কাঁদছে সে জানে না। রাগ, দুঃখ না হতাশা? নাকি অপমান?

সে টেবিলের দিকে তাকায়। নিষাদ দাঁড়িয়ে আছে। এও কি সম্ভব? নিষাদ ছুরি উঠিয়ে তাকে দেখিয়ে দেয়।
রিশু চেয়ে থাকে।

নিবিড়ের কন্ঠে তার ঘোর ভাঙে।
— চলে যাও রিশু, আমি কোনো ঝামেলা চাই না। তোমার সাইক্রিয়াটিস্টের খরচ আমি দেব। যা যা লাগে দেব। জাস্ট ডোন্ট মেক এ মেস।

রিশু এবার নিবিড়ের দিকে তাকায়। ওকে এত অসহায় আগে কখনো লাগে নি হয়ত। রিশুর মায়া লাগে। অনেক মায়া। নিবিড়কে ছেড়ে সে কিভাবে থাকবে?

সে আবার টেবিলের দিকে তাকায়। নিষাদ হাসছে।
রিশু দৌড়ে টেবিলের দিকে চলে যায়। কিছু বোঝার আগেই ছুরি এনে নিবিড়ের গলায় বসিয়ে দেয়। ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরছে। আহঃ সেই পুরনো দৃশ্য।
রিশু প্রাণভরে দেখে। নিবিড় কাটা কলাগাছের মতো পড়ে যায়। দুচোখ বিস্ফোরিত, কিছু কি বলতে চায়?

রিশুর ভালো লাগে, মৃত মানুষ দূরে সরে যেতে পারে না, নিষাদ তো যায়নি, নিবিড়ও যাবে না। কেউ নিবিড়কে তার কাছ থেকে নিতে পারবে না, সে হাসে।

নিবিড় পড়ে আছে মেঝেতে, শ্বাস যায়নি এখনো, রিশু তাকায়। অবাক হয়, নিষাদ শুয়ে আছে মনে হচ্ছে। সেই কাটা গলা, জলে ভেজা চোখ।
সে এগিয়ে যায়, নিবিড়ের ঠোটে চুমু খায়, গভীর প্রেমের সে চুম্বন। নিবিড়ের রক্ত সে সারাশরীরে মেখে নেয়।

আহ, স্বপ্নে দেখা সেই রক্তসংগম। রিশু মাথা তোলে চুমু খাওয়া শেষ করে। নিষাদ দূরেই দাড়িয়ে আছে। তার দিকে তাকিয়ে আছে, হাসছে।

মৃত মানুষ দূরে সরে যেতে পারে না, নিষাদ তো যায়নি, নিবিড়ও যাবে না। কেউ নিবিড়কে তার কাছ থেকে নিতে পারবে না, সে হাসে।

ফাতেমা রিয়া

তরুণ গল্পকার, উপন্যাসও লিখেছেন। জন্ম ১৯৯৫ সালে। দেশের বাড়ি বরিশাল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পড়েছেন। সাহিত্য, সঙ্গীত, দর্শন ও রাজনীতিতে বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।

Share