আজ বৃহস্পতিবার, ২৫শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আলাদিনের চিঠি

কাব্য

।। অর্ণব সাহা ।।

একদিন তোমরা ছিলে।
তোমাদের ছায়ামূর্তি ছিল।
কুয়াশা দাঁড়িয়েছিল চরিত্রের মতো।
আলেয়া জেনেও আমি যাদের আগুন অনুভব
করতে চেয়েছি, আজ একে একে সকলেই ঘরে
ফিরে গেছে…

বাবা নেই । মা জন্মানো মাত্র ছেড়ে গেছে !
সে একটা আতুর গাছ । শিকড়ে টলটলে
কাদামাটি…

ছেঁড়া পুতুলের ঘরে সংসার পেতেছে মৌমাছি ।
যে পারে আঁচড় দেয় গাছের তলপেটে

আমার অ্যালবামে তার শৈশবের কোনও ছবি নেই
শুধু তাকে গানে-গল্পে চিনি ।

আমি তাকে দু’চোখে হারাই

জটিলতা ঢুকে পড়ত আমাদের সফেদ জমিতে

আমরা ছিলাম নীল রুমালের মতো স্বেচ্ছাধীন
কল্পনার ঘরবাড়ি খামতি ঢেকে দিত

বাষ্প লেগে জমে-যাওয়া দুলালের তালমিছরি
থেকে
বাতাসে কুড়িয়ে-পাওয়া ছেঁড়া ঘুড়ি থেকে
বেমালুম উবে যেত কর্পুরের গন্ধ। উড়ো চিঠি।

স্মৃতি একটা ছেঁড়া খাম। ঝাপসা। দোল খায়।
আনকোরা নামগুলো মুছে গেছে কবে!

কোনওদিন বেজে ওঠে আশ্চর্য সেতার!

কাটেনি ঘুমের রেশ। ডানাওয়ালা দেবতার সাথে
একলা পাড়ি দেবার দেশ-কাল-কাঁটাতার ভেঙে
আরেকবার
শুকনো চত্বর জুড়ে বৈশাখের স্বার্থপর রোদ!

আজও তার ছায়া হেলে আছে একইভাবে

কোথাও দেবদারু নেই। কবিতার নামগন্ধ নেই।
মেয়েটার অস্পষ্ট ছবি ভোররাতে গলা টিপে ধরে…

ঝড়ে নুয়ে-পড়া গাছ। যোনির ভিতরে মোমবাতি।

ফুঁ দিয়ে নেভাও শিখা। গলতে-থাকা মোম কামড়ে ধরো!
উপোসী  জিভের গায়ে ছ্যাঁকা লেগে যাবে
অন্ধকার ফেঁসে-ওঠা ছেঁড়া মশারির চতুষ্কোণ
এবড়োখেবড়ো। ভাঁজ করে রাখা হয় না কোনও মুহূর্তেই!

সে একটা চাদরে-ঢাকা অন্ধ গ্লেসিয়ার।
সে একটা উইয়ে-খাওয়া বুড়ো হিমবাহ

শূন্যতার থেকে আরও গাঢ়তর শূন্যতার দিকে

হেঁটে যাই। শেষতম ছায়াটুকু নেই।
এ মাটি খরায় ফেটে শুকনো। চৌচির।

একদিন তোমরা ছিলে। তোমাদের ছায়ামূর্তি ছিল।
কুয়াশা দাঁড়িয়েছিল চরিত্রের মতো।
আলেয়া জেনেও আমি যাদের আগুন অনুভব
করতে চেয়েছি, আজ একে একে সকলেই ঘরে
ফিরে গেছে…

ঝাঁট-দেওয়া বাসি পাতা পাক খায় হাওয়ায়
হাওয়ায়!

প্রচ্ছদের ফটোগ্রাফ: মোহাম্মদ রোমেল

অর্ণব সাহা

কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গেনব্বই দশকের অন্যতম প্রধান কবি। পেশায় অধ্যাপক। তাঁর কয়েকটি বিশিষ্ট কবিতার বই : ধর্ম নেই কোকাকোলা নেই, ব্ল্যাকহোলের বাকি অংশ, প্যারানইয়া, ২০ জুনের ডায়েরি, নিচু গিলোটিন, নীল রঙের হাভেলি, স্বপ্নের কশেরুকা। অর্ণব বাংলাভাষার সেই বিরল কবিদের একজন যিনি মনে করেন, অক্ষরমাত্রই রাজনৈতিক।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top