আজ শুক্রবার, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

একটি মৃত্যু অথবা বজ্রযানী

কবিতা সিরিজ

।। সোনালী চক্রবর্তী।।

দ্যাখো যে খড়গ করতল ছেড়ে তর্পণে বসলো জলে,
তার শরীর বেয়ে নামা সহস্র অস্থি
আজ নির্লিপ্ত সিরাজ হয়ে উড়ে গেল মহাকালে

একটি মৃত্যু অথবা বজ্রযানী

মুখাগ্নি

প্রাগৈতিহাসিক ক্লান্তি নিয়ে নীলকণ্ঠ পেরিয়ে চলা কাছিমের খোলটিকে দেখছিলেন বজ্রযানী। সহসা দর্পণ জ্ঞানে বিসর্জনে উড়াল দিতে গিয়ে তাকালেন গঙ্গাতীরে। অযুত সমুদ্র পেরিয়েছেন যাঁর আঙ্গুল সম্বল করে প্রথম ও শেষ নশ্বর বিশ্বাসে, তিনি শুয়ে অদ্ভুত রাজবেশে। মোহনা ছাপিয়ে অভিষেক উপাচার সিক্ত করছে পট্টবস্ত্র, যেমত আদরে গড়িয়ে নামে হেম হইতে মাধব। মায়াসমুদয় গোপীবৎ অনাহুত দাঁড়িয়ে দূরে, স্মৃতিরাস। চক্রমুদ্রায় অমোঘ জ্বাললেন প্রাকাম্য শোক। ভষ্ম হাতে স্মরণ করলেন যেহেতু যেকোনো নাভি নিরঙ্কুশ অন্ধ অতএব প্রতিটি জন্ম মূলত ঘোষণা করে ব্রহ্মের ব্যর্থ প্রসব। অনন্ত অন্ধকার এখন আচমনকাল, থির আলোয় প্রকট হচ্ছে রথ, আসন নেবেন মহাগুরুনিপাতযোগ। 

হবিষ্যি 

উদাসীন বীজে’রা ফুটছে আগুনে, শুভ্র নক্ষত্রের কুন্দ হয়ে ছড়িয়ে পড়বে পদ্মপত্রে কিছু পর, দেখছেন বজ্রযানী। স্ফটিক নীল চরাচরে শুক্লপক্ষটি অবিরল এঁকে চলেছে পরমহংস রোদ্দুর। পিঙ্গল অমার্জিত কেশভার ধীরে জটাউন্মুখ। ধারণা ও বিচার, ব্রহ্মকূটে লীন হতে হতে সংযম উজ্জ্বল ক্ষীণ তনুবোধে ফিরিয়ে জানালো তাঁকে নশ্বর শোক আদতে এক অলীক স্যালাম্যান্ডর। 

ভাতসরা

যুদ্ধ শেষে নদীতীরে দাঁড়ালেন বজ্রযানী, দ্যাখো যে খড়গ করতল ছেড়ে তর্পণে বসলো জলে, তার শরীর বেয়ে নামা সহস্র অস্থি আজ নির্লিপ্ত সিরাজ হয়ে উড়ে গেল মহাকালে।

অন্ধকার যত প্রবল হয়, জেনো যে কোনো অগ্নি ততোধিক উজ্জ্বল তবু মৃত্যু নামের অদ্ভুত শরৎ তাকে ম্লান করে। নশ্বরতা তো ঋতুসম্ভব অবস্থান মাত্র, আশ্চর্য সরোদ হয়ে অনন্ত শূন্য তাকেও মায়াবোধে ঢেকে রাখে। 

অলংকরণ: সাইদ উজ্জ্বল

সোনালী চক্রবর্তী

কবি, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক ও অনুবাদক । ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর । ২০১৬ সালে প্রত্যক্ষ লেখালিখির জগতে যুক্ত হওয়ার আগে পরিচয় ছিলো ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী । বর্তমানে লাতিন আমেরিকান সাহিত্যে গবেষণারত । প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : ১| ‘জামার নীচে অলীক মানুষ’ (২০১৭) ২| ‘পদ্মব্যূহে নিম অন্নপূর্ণা’ (২০১৯) ৩| ‘মমিস্রোতে বেহায়াসিন্থ’ (২০২১) সম্পাদিত গ্রন্থ ‘ষটচক্র’ (ভারত বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগ, ২০১৯) ও “সংকলিত বাক্” (২০১৯) । কবিতার সঙ্গে নিয়মিত অনুবাদক বিশ্বসাহিত্যের । অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে ‘নীলগিরি ওয়াগন’, ‘দি ডেইলী স্টার’, ‘অংশুমালি’-সহ ভারতের বাইরের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় এবং কবিতা পঠিত হয়েছে ‘দিল্লী সার্ক সম্মেলন’- এ ।

Share

2 thoughts on “একটি মৃত্যু অথবা বজ্রযানী”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top