।। শৈবাল সরকার ।।
তোমার ফোঁপানো শরীর থেকে
উবে গেছে বালকের শ্বাসকষ্ট
আজ বহুদিন পরে
তোমার ঘরে ফেরা
অকারণ দীর্ঘ হয়ে এলো
তোমার ঘরে ফেরা অকারণ দীর্ঘ হয়ে এলো
গোরস্থান
রাস্তার উলটো দিকে অবিকল বাড়ির আদল
তোমার রাতের গান
কে যেন রেখে দিয়ে চলে গেছে দূরে
এখন শিশির প’ড়ে
ভিজে গ্যাছে তোমার গড়ন
আলোর জানলা দিয়ে
ছায়াগুলো ঘুরে মরছে
একা
প্রজাপতি কারখানা
যতক্ষণ আলো আছে, কথা বলো
বাগানের আনত গাড়ি চেপে
স্বপ্ন আসে তার
ধাতুর চমক লাগে পরিবারে
জমানো আবহাওয়া ঝ’রে যায়
তোমার আমার মাঝে
এইসব চকিত রঙিন খেলা
পথ চলে যায়
যতক্ষণ আলো আছে
নিয়ে চলো
হ্যারিকেন
ভিজে যাওয়া জিভ থেকে
গড়িয়ে নামে রঙ
বিছানা বালিশ আলনা
একে একে বেদখল
আবছায়া দাগ জমে
হলুদ শরীর জুড়ে
এমন ঝড় বাদলের রাতে
বসে আছো তাবিজের মতো
আর ডোরাকাটা হাওয়ায়
দুলে উঠছে জিভের নাগাল
পথ
জ্বরের ছায়ায় একা দাঁড়িয়ে আছে।
কিছুকাল আগে পুড়ে গেছে পুতুলের
যা কিছু কল্পিত পাপ
সেই দাগে থেমে ছিল যানবাহন,
ছেঁড়াখোঁড়া ছাপানো কাগজ
তোমার ফোঁপানো শরীর থেকে
উবে গেছে বালকের শ্বাসকষ্ট
আজ বহুদিন পরে
তোমার ঘরে ফেরা
অকারণ দীর্ঘ হয়ে এলো
হলুদ দস্তানা
কোনো বিষ নেই
মাটির পাত্র ভরে আর যা কিছু
রেখে যাও।
হলুদ দস্তানা চুইয়ে পড়ছে আলো
মাদুলির প্রবেশ পথে মোমের প্রলেপ
ভেতরে ঘুমিয়ে আছে
গ্রামীণ দেবতা
তার কাছে রেখে দিয়ে
দূরে চলে যাও
শৈবাল সরকার
পশ্চিমবঙ্গের শূন্য দশকের অন্যতম কবি। পড়াশুনা, বেড়ে ওঠা ও স্থায়ী বসবাস পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার লিলুয়া চকপাড়ায়। হাওড়া জেলা থেকে শূন্য দশক জুড়ে প্রকাশিত হওয়া পত্রিকা ‘লালন’ পত্রিকার অন্যতম সংগঠক এবং কয়েকটি সংখ্যার সম্পাদক। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একুশ নম্বর ভালো থাকা’ প্রকাশিত হয় ২০০৯ সালে, ‘লালন’ প্রকাশনা থেকে। এরপর তাঁর আরও দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ, ‘বেশি বয়সের প্রেমের মতো।’ সাম্প্রতিক কাব্যগ্রন্থ, ‘পুরোনো কবিতা’, ২০২০ সালের কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় ‘আদম’ প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। শৈবাল পেশায় শিক্ষক। কবিতার পাশাপাশি গানও লেখেন। অবসরে গীটারে সুর তোলেন, গেয়ে ওঠেন গান। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ান, মালভূমি-পাহাড়-সমুদ্র-অরণ্যে।