আজ বৃহস্পতিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কোথাও আন্দোলিত হচ্ছে দুঃখের গান

।। দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম ।।

শূন্য ঘর, মাকড়সার জাল বিস্তীর্ণ শিল্পের ক্যানভাস হলে তুমি শুনতে পাও নিচু স্বর, আরও নিচু লয়ে কোথাও আন্দোলিত হচ্ছে দুঃখের গান… কী ছিল তোমার রূপকথা! চিঠিযুগ, বিলম্বিত বাসনার থেকে উড়ে আসুক অজস্র ডাকনাম। আত্মহারা শব্দেরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে লিখুক নক্ষত্রের কথা, অজান্তে তুমিও নক্ষত্র এই দৃশ্য গোলকের ভেতর, ঈশ্বরীর ক্যানভাসে।

রাত্রি বিরহ হ’ল

যেন প্রেম ভেঙে গেল বলে কুয়াশা ঝরছে এমন
মনে হচ্ছে অসংবরণ, বালকবয়সের কান্না
রাত্রির বাতাস গাঢ় হলে পর কারা যেন শুয়ে
রাজপথকে দিচ্ছে ওম।

এখানে নিশীথিনী ডাক দিয়ে ছুটছে যে গৃহহীন
তারই হাত থেকে ফস্কে যায় আশ্চর্য ধারণ,
পেছনে শোরগোল, কী যে রহস্য চরাচরে।

এমন রাত্রি, দেবতাদের পদাঘাতে শিশির আঁকে
ঘাসফুলে নদী, টলোমলো জলের বিন্দুতে
ঘুম ছুটে যায় দূর, অরুন্ধতী জানে।

প্রেম ভেঙে গেলে আমরা নিশ্বাস গুনি। অফুরন্ত
ঘোড়া ছুটে যায় অনন্তে, মন্তাজের উঠোন-দিকে
পেছনে পড়ে থাকে নির্জনতা, অন্ধকার।

জন্মমাস

আসে জন্মমাস তোমার,
ভাবি শঙ্খ আওড়ে যাব
(মণিভূষণ প্রসঙ্গত প্রিয় যদিও)
অথবা সুমন। কিন্তু হায়,
চাই বলে না-পাওয়ার দলে
যদি জয়, আমি কি তেমন
মন্ত্রে অভিজ্ঞ কোনো ব্রাহ্মণ!

বলবো, ফিরে আসো তুমি
বালকবয়স (এখন যদি তরুণ)
মিনতি জ্ঞান সম্বোধিত চাকায়
কত বৃষ্টি বিকেলে ধুয়েমুছে যায়
তবুও মগ্নতার স্থান, অপূর্ণ —
বাসনায়, হৃদয়ে কী সব গান পায়!

দেখাও অলৌকিকতা

সমস্ত সম্ভবের দিকে পৃথিবী। দ্যাখো, বসন্তে কুয়াশা
মেঘ ছড়িয়ে পড়লো মুখের পর। একটা ফুলের মতো তুমি
অন্ধকার ক্রমে সরিয়ে আমাকে দেখালে দিন
অন্য পৃথিবীর সূর্যালোক, অতি বিস্ময়, আলোকের ধারা
যেমন শিশুটি গাইছে গান, প্রথম শব্দে, ঠোঁটে জড়িয়ে
যেরকম চুম্বন, বৃষ্টি নামলো এরই ভেতর, রৌদ্র-মাখা।

বোধগম্যতা

ভাষার প্রশ্নে কাকতাড়ুয়াটি হাসে। আর যা কিছু
স্বপ্ন, সংগ্রাম? তোরণদ্বার থেকে খসে যায় মাটি
ধুলোর ভেতর প্রেমিকের স্থল, চিরবিরহের বাশি
অবসন্ন তাকিয়ে থাকে। মুছে যায় ছায়াপথ, নাম

আচ্ছন্ন এক রাত্রি। স্বরলিপির মতো উজ্জ্বলতা
ধরে আছে নক্ষত্রপথ, আকাশ, আর সব বিবর্ণ
যেন অভিমান জানে সে মেয়েটি, চাঁদরঙে রূপসী
অনন্ত শীতের কথা মানে। কুয়াশা নির্মিত জঙ্গল

সে দেশে। হয়তো বা গ্রীষ্ম। তবুও জানলাখোলা
দৃশ্যে জাদু, মায়াবাস্তবতা। আর সব আড়াল করে
শুধু হাসি। অবোধ, চির শিশুটি। দূর মফস্বলি
রাত্রির ভিতর, দিনের ভেতর, বাজতে থাকে শুধু।

তোমার না-থাকা

তুমি নাই।
না থাকা ভোরেও রোদ উঠছে।
জামা শুকোচ্ছে উঠোনে, বারান্দায়।
একটা মেষরঙ মোরগ ঢেকে যাচ্ছে
পুরনো হয়ে যাওয়া বেগুন গাছ থেকে
খসে পড়ছে একটি দুটি পাতা, বিবর্ণ রঙে।
মাটির রঙ রোদের মতো বদলে যাচ্ছে
মাটি ও জল একান্নবর্তী তুমিই তো বলতে।
তুমি নাই, বিগত রাত্রির গল্প বলছেনা কেউ আর
এখন দিন, বিলুপ্ত হচ্ছে বিষণ্ণতার গান—
একটা চুপচাপ বালক কবিতা লিখছে দূরে
তেঁতুলগাছের ছায়ায়। তার বুকে কিছু দৃশ্য স্মৃতি
ইতিহাসে এইসবের খুব একটা মূল্যও নাই।

যেহেতু জীবন রূপকথা নয়

‘তুমি চেয়েছিলে একটা রূপকথার গল্প
সত্য হোক তোমার জীবনে।’

-কালীকৃষ্ণ গুহ

কী সেই রূপকথা! ইশকুল ঘরে মিছেমিছি হাত উড়িয়ে যে স্বপ্নের কথা জানান দেয়া হয়, তার যোগসূত্র জানতে না তুমি। চারদিক আমোদে ঘেরা, বন্ধুবান্ধব, দুপুরবেলায় বকুলতলায় টিউবওয়েল চাপড়ে গল্পের আসর, আর ঘন্টি পড়ে গেলে হলুদ সর্ষেক্ষেতের আইল পাড়ি দেয়া একটি বাড়ি। একটা সন্ধ্যা দাঁড়িয়ে থাকে জুড়ের মাঠে, সবুজ ফসলের দেশ প্রস্তুত হবে বলে হেমন্তের রঙ কতদূর যে মিলিয়ে যায়!

পাখিদের ওম দেয়া সংসার, তুমি ভাবতে জীবন এরকম। অথচ বাবা-মা কেউই থাকলো না আর। শূন্য ঘর, মাকড়সার জাল বিস্তীর্ণ শিল্পের ক্যানভাস হলে তুমি শুনতে পাও নিচু স্বর, আরও নিচু লয়ে কোথাও আন্দোলিত হচ্ছে দুঃখের গান।

কী ছিল তোমার রূপকথা! চিঠিযুগ, বিলম্বিত বাসনার থেকে উড়ে আসুক অজস্র ডাকনাম। আত্মহারা শব্দেরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে লিখুক নক্ষত্রের কথা, অজান্তে তুমিও নক্ষত্র এই দৃশ্য গোলকের ভেতর, ঈশ্বরীর ক্যানভাসে।

তুমি চেয়েছিলে তোমার জাগ্রত বোধ, প্রথম আঙুলের ছাপ, সাক্ষী হোক বর্ধিত জন্ম-চেতনার। যা কিছু সুন্দর, দৃশ্যে নির্মিত বাগান তারই দিকে ছুটে যাবে চোখ। পরিশুদ্ধ পথের দিকে লোক, তুমি। কোথাও ক্রন্দন নেই, বাসনা ব্যাকুল গান ছড়িয়ে পড়ছে জলের ধারায়, নদীমাতৃকতায়।

তুমি জানতেনা ঠিক রূপকথা কোনটি! কিন্তু সামান্য চাওয়ার কিছুই যে সত্যি হয়না তা জেনে গেলে দিনে দিনে।

দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম

তিতাস পাড়ের সন্তান। জন্ম বেড়ে ওঠা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। কর্মসূত্রে থাকেন ঢাকায়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শ্রমজীবি। প্রকাশিত কবিতা বই দুইটি। সমুদ্রের ব্যাকরণ (২০১৯, বোধি প্রকাশনা, ঢাকা); বিস্ময়, তুমি বৃষ্টিফুল (২০২০, একলব্য, কলকাতা)।

Share

1 thought on “কোথাও আন্দোলিত হচ্ছে দুঃখের গান”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top