।। সোহেল হাসান গালিব।।
ব্যালট-বিছানো জমির হালটে
ভোজন-কূজনহীন নৈশভোটে যদি কোনোদিন
চেতনারহিত প্রশ্ন ওঠে,
কাক কিংবা কাকনুছ পাখিদের
থাকবে কোনো দায়
তোমাদের এই ডাকিনী-সভায়?
কালসংক্রান্তি
❑
মসলা চিবুতে চিবুতে কোনোদিন ফের মসনদে গদিয়ান হলে,
এতদিনকার এই টিকটিকি-লাঞ্ছিত দুর্গ-দেয়ালে
মাথা কুটে মরা এক অন্ধযুগের
অন্ধকূপহত্যা আর গুমগুম ঘুমগানের
খতিয়ান নিতে
ওই শীতলক্ষ্যা নদীর ওপারে যাদের তুমি
ক্রসফায়ারে পাঠাবে তাদের তালিকাটা
এখুনি তৈরি করে রাখো—
ভরা পূর্ণিমায় পুণ্যস্নান সেরে উঠে
তুরাগের তীর ধরে হাঁটতে হাঁটতে
কুকুর তার মনিবকে এই কথা বলে।
জোনাকির চোখ জ্বেলে গাঁজাসন্ন্যাসী
আড়ি পেতে শোনে সব। শোনে আরও কেউ কেউ—
ভোর হলে যারা গণিকার গলার নিচে
নির্মল নোক্তার মতো ফুটে থাকা
তিলটিকেও ভুলে যাবে
তাদেরও লোম খাড়া হয়ে যায়।
মাইজভাণ্ডারী গানের গমকে রাত্রিভর
মহাসড়কের বুকে গাড়ি ছোটে, মহাসমারোহে,
যেন ভাবতে ভাবতে—
অজস্র ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস মাথার মধ্যে নিয়ে
ড্রাইভারগুলো কখন ঘুমায়?
লক্ষ্মীপেঁচাগুলি তখন কি মাল টানে, ঘরে একা বসে?
পেত্নীর আঁচল ধরে তারপর টলতে টলতে
শহর ছেড়ে চলে যায়?
কতদূর তারা যেতে পারে? কতদিন পরে
মাধবীলতাটি জাগবে ধীরে
সারি সারি রাইফেল তাক-করা
সীমান্তের কাঁটাতারে?
ব্যালট-বিছানো জমির হালটে
ভোজন-কূজনহীন নৈশভোটে যদি কোনোদিন
চেতনারহিত প্রশ্ন ওঠে,
কাক কিংবা কাকনুছ পাখিদের
থাকবে কোনো দায়
তোমাদের এই ডাকিনী-সভায়?
শুক বলে, ক্ষমতাই সুখ। বলে কটাক্ষ-কৌতুকে—
তবেই না দুর্গার দুর্নিবার
স্তনযুগ হাতের মুঠোয় পাওয়া।
সূচের ইঙ্গিতে তাই নাচে সুতো, দোলে
পাতার সম্পুটে রক্তজবা।
এই জবা রাত্রিবেলা ফোটে।
রাত্রি মানেই পালাবদল, মালাবদল অন্ধকারে…
কুঞ্জপথে গুঞ্জরিয়া ভোর কি এখন
টোকা দেবে দ্বারে?
সোহেল হাসান গালিব
জন্ম ১৫ নভেম্বর ১৯৭৮, টাঙ্গাইল। বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। সহযোগী অধ্যাপক ও প্রশিক্ষণ বিশেষজ্ঞ, নায়েম, ঢাকা। প্রকাশিত বই : কবিতা— চৌষট্টি ডানার উড্ডয়ন [সমুত্থান, ২০০৭] দ্বৈপায়ন বেদনার থেকে [শুদ্ধস্বর, ২০০৯] রক্তমেমোরেন্ডাম [ভাষাচিত্র, ২০১১] অনঙ্গ রূপের দেশে [আড়িয়াল, ২০১৪] তিমিরে তারানা [অগ্রদূত, ২০১৭] ফুঁ [বাতিঘর, ২০২০] প্রবন্ধ— বাদ-মাগরিব (ভাষা-রাজনীতির গোপন পাঠ) [অগ্রদূত, ২০১৮] সম্পাদিত গ্রন্থ— শূন্যের কবিতা (প্রথম দশকের নির্বাচিত কবিতা) [বাঙলায়ন, ২০০৮] কহনকথা (সেলিম আল দীনের নির্বাচিত সাক্ষাৎকার) [শুদ্ধস্বর, ২০০৮]