।। সম্পাদকের দফতর।।
ব্রাত্য বসুকে আমরা নাট্যকার, অভিনয়শিল্পী ও চলচ্চিত্রকার হিশাবে চিনি। মঞ্চ ও রূপালী পর্দার বাইরে তাঁর আরেকটি পরিচয়, তিনি সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী। শুধু তাই নয়, তিনি পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী।
ব্রাত্য বসু নিজের লেখা নাটকের জন্য ভারতের সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর যে পরিচয় সম্পর্কে অনেকেই অবগত নন, সেটা হল তিনি একজন কবি। নিভৃতে কবিতা লেখেন। এক সময় একটি কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। তাঁর বন্ধুবৃত্তের সবাই কবি, সৌম্য দাশগুপ্ত, জয়দেব বসু, অচ্যুত মণ্ডল, তন্ময় মৃধা, প্রবীর দাশগুপ্ত কিংবা বিপ্লব মুখোপাধ্যায়। ব্রাত্য বসুর নাটকের মতোই তাঁর কবিতা আমাদের আগ্রহ তৈরি করেছে।
পশ্চিম বাংলা ছাড়াও ব্রাত্য বসুর প্রতি বাংলাদেশে আগ্রহের আরেকটি কারণ হচ্ছে তিনি একসময় বিপ্লবী কমিউনিস্ট ধারার ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এটা তাঁর প্রতি আমাদের বাড়তি আগ্রহের কারন। গণমানুষের লড়াই-সংগ্রামের ধারা কবিতা নানান ভাবে ধারণ করতে পারে, এই অনুমান থেকে তাঁর কবিতা পড়া পশ্চিম বাংলার নান্দনিক-রাজনৈতিক উপলব্ধির স্বরূপ অনুধাবনে সহায়ক। বাংলাদেশে ব্রাত্য বসুর প্রতি আমাদের বিশেষ আগ্রহের এই বাড়তি কারন যুগপৎ নান্দনিক এবং রাজনৈতিক। পশ্চিম বাংলাকে চেনা, জানা এবং বোঝা দরকার। ঐতিহাসিক এবং বাস্তব পার্থক্যের বাইরে বৃহত্তর মৈত্রীর ক্ষেত্রগুলো সবসময়ই পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার। সেখানে বাংলাভাষীদের বৃহত্তর স্বার্থ জড়িত। পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়নের প্রবল বিস্তার এবং ভূরাজনৈতিক রূপান্তর আমাদের ক্রমশই দূরে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু বাংলাভাষা এবং বৃহত্তর বাংলা সংস্কৃত্তির পরিসরে চিন্তা, নন্দনতত্ত্ব এবং গণমানুষের সার্বজনীন স্বার্থের ক্ষেত্রগুলো কিভাবে সকলের কন্ঠস্বর হয়ে উঠতে পারে সেই দিকে আমাদের অনেক বেশী মনোযোগী হওয়া দরকার। সেখানে মনোযোগের অভাব ঘটেছে এবং অভাব রয়েছে। তার নিরসন দরকার। এই বৃহত্তর স্বার্থের জায়গা থেকে ব্রাত্য বসু সহ পশ্চিম বাংলায় আমাদের সকল কবিবন্ধুদের সঙ্গে আমরা আত্মীয়তা বোধ করি।
ভাষা, সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক উপলব্ধির নান্দনিক রসবিস্তার কিম্বা প্রকাশের বিপুল বৈচিত্র রয়েছে। কাব্য বা অভিনয়ের রাজনৈতিক-মতাদর্শিক রূপ নিয়ে আলাদা পর্যালোচনা হতে পারে। কিন্তু কিভাবে সেটা ঘটে তাকে সরলরৈখিক ভাবে বিচার করা যায় না। সেটা ভিন্ন তর্ক। কিন্তু ব্রাত্য বসুর কবিতা এবং শিল্প চর্চাকে সেই জায়গা থেকে পাঠ করার বিশেষ মূল্য রয়েছে। কারন তিনি সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। যে মতাদর্শ তাঁর কাব্য ও নাট্যচর্চায় প্রতিফলিত হয়, তার মধ্য দিয়ে তাঁর ছাত্র জীবনের যাপন এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিজ্ঞতা নেপথ্যে অবশ্যই থেকে যায়। পশ্চিমবঙ্গের বিগত বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজ থেকে যে সমালোচনা শুরু হয়েছিল এবং পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়নের কালে পুঁজি বিনিয়োগের নীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যে সামাজিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল তার জেরে সিপিএম গণবিরোধী অবস্থানে চলে গিয়েছিল, সেই সময় পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক বিদ্দজ্জন সমাজের তরফে যে সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলন তৈরি হয়েছিল, তার পুরোভাগে ছিলেন ব্রাত্য। পরে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন এবং পরিবর্তিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী হন। অতএব তিনি রাজনৈতিক বা দলীয় তর্কবিতর্কের বাইরে নন, কিন্তু সেটাই বরং ব্যক্তিত্ব হিশাবে তাঁকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
ব্রাত্য বসু শেষাবধি কবি ও শিল্পী। রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যেও তিনি নিভৃতে এবং নীরবে কবিতা লেখেন। গেল বছর ২০২২ সালে তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘থিয়েটার বিষয়ক কবিতা’ প্রকাশিত হয়৷ এর একটি পাঠপ্রতিক্রিয়া ‘প্রতিপক্ষ’ পত্রিকায় ইতিমধ্যেই প্রকাশিত। এবার আমরা তাঁর কবিতা বিষয়ক সাক্ষাৎকার ও স্বরচিত কবিতা পাঠ পেশ করছি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমাদের পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক অতনু সিংহ ও সৌরভ গুহ।
ফরহাদ মজহার
সম্পাদক, প্রতিপক্ষ
শ্যামলী, ঢাকা, বাংলাদেশ
নীচে প্রথমে সাক্ষাৎকার ও তারপর কবিতাপাঠের লিঙ্ক দেওয়া হল