।। সৌরভ গুহ ।।
ইউনিয়নে নাম লিখিয়েছ, ভিড় জমিয়েছ আধো ইচ্ছার
হাওয়াটে বিকেল, ঘরে ফিরে এসো চেক-চেক লুঙ্গি
সাজানো আছে বাটিক প্রিন্ট জামা, মুড়ি মেখে দেবো?
হ্যাঁ গো শুনছো টুকুনের বাবা, চলো না ম্যাটিনি শো’তে
পাশের বাড়ির রেবা বৌদিও যাবে, ওরাও প্রাইভেট ফার্ম
এসেছ সমুদ্রে মীন, লবনাক্ত ইশারা সঙ্কুল এ নৌবহর
আমার মিঠাজলের নাবিক সন্তরণপটু, সুলেখা ফ্যাক্টরির
বাদামী ইউনিফর্ম খুলে রাখো।
আমার অক্ষর-পৃথিবী স্থিরচিত্রে এ দৃশ্যের ওম পেতে চায়
মাতৃপরম্পরা
ওই যে প্রগাঢ়, শান্ত লালমেঝে ওই যে লক্ষ্মীর
অস্ফুট পা-পাতা যুগল, সুতলির হাঁস ভাসে পর্দার
সমুদ্র আড়ালে, ওই যে আড়াল গানের বর্ম এলাচ দুপুর
ছাপা ছাপা চাদরে সে শুয়ে আছে অশান্ত নাবিক
মেষ পালকের স্নেহে যে তাড়িয়ে বেড়ায় আসন্ন গোধূলি
ল্যাটা মাছের শিল্পিত-ঝোলে মাতৃপরম্পরা
ও ইশারাকাতর যুদ্ধ-অভিলাষী বকধর্মময়
ওর গৃহকোণে হোমিওপ্যাথির ছোটো বাক্সজুড়ে মায়াসন্তাপ
হারমোনিয়মটা সেই কবে থেকে, বেলো, রিড ডোয়ার্কিন ডোয়ার্কিন
কীসব দিন ছিল বলো তো ? বেগম আখতার ছিল, টেপরেকর্ডার
জুড়ে ছলো কমলা ঝরিয়া। নাবিক, আমার মিঠাজলের মীন
সন্তরণপটু, সুলেখা ফ্যাক্টরির বাদামী ইউনিফর্ম খুলে রাখো
দরজার ভাঁজে, আজ বিষ্যুদবার আম্রপল্লব আনো টগর ঝুরো
বধূসিঁদুরে সরিষার তেল, মায়ের কপালের মতো টিপ পাতায় পাতায়।
এবার ওঠো, বিছানাটা ঝাঁট দিই নারকেল শলার ঝাড়ু ধূলা
যদি থাকে আজ লক্ষ্মীবার কাল সন্তোষী ব্রত
বালক ভোজন হবে সুজি লাড্ডু হবে প্রার্থনা
প্রার্থনা জুড়ে মুখ ম্লান হবে লকআউট ত্রস্থ রাত
গাঢ় হবে মীন আমার মিঠা জলের নাবিক সন্তরনপটু
সুলেখা ফ্যাক্টরির বাদামী ইউনিফর্ম খুলে রাখো।
ইউনিয়নে নাম লিখিয়েছ, ভিড় জমিয়েছ আধো ইচ্ছার
হাওয়াটে বিকেল, ঘরে ফিরে এসো চেক-চেক লুঙ্গি
সাজানো আছে বাটিক প্রিন্ট জামা, মুড়ি মেখে দেবো?
হ্যাঁ গো শুনছো টুকুনের বাবা, চলো না ম্যাটিনি শো’তে
পাশের বাড়ির রেবা বৌদিও যাবে, ওরাও প্রাইভেট ফার্ম
এসেছ সমুদ্রে মীন, লবনাক্ত ইশারা সঙ্কুল এ নৌবহর
আমার মিঠাজলের নাবিক সন্তরণপটু, সুলেখা ফ্যাক্টরির
বাদামী ইউনিফর্ম খুলে রাখো।
ডায়মন্ড হারবার রোড
মেয়েপুলিশ তোমাকে নজরে রাখে মাস্তানের বান্ধবীকূল
বর্মে ঢেকেছো নদী, স্বচ্ছন্দ সৌরভ, তাতে কী! তোমার গ্রীবা জুড়ে
অস্থির হংসিনী, গুল্মলতার সংকেত লেগে আছে পোশাকের খাঁজে
এ শহরে এত দ্বিধা, স্পর্শকাতর কত ঘাম-দেয়া দুপুর
বাসের ধোঁয়ায়, অটোর কলরব তোমার বাহুভঙ্গি দ্যাখে
মেয়েপুলিশ তোমাকে নজরে রাখে খোঁজা মাস্তানের রাত্রিভ্রম
লিপস্টিক বান্ধবী, বায়োস্কোপবালা
সেইসব মস্তানেরা গেছে চলে দূরে যেখানে শহরের কবর
তাদের ছায়ালোভী কারবারি কূল ছলনা ফেঁদেছে পেশী মরীচিকা
সে সব বাবুমস্তান আর তাদের গণিকা সঙ্গিনীর প্রেত তোমাকে দেখে
শহরে তখন এক পুরোনো আতর ছড়িয়ে পড়ে হাওয়ায় হাওয়ায়
গণিকার প্রেত দেখে মফস্বলী সুঠাম বালিকা শাসন করে যান জংশন
মেয়েলি মেয়েদের আর ভালো লাগে না তার, মূদ্রাইশারা
মেয়েপুলিশ, তোমাকে দেখে এক শাকান্নজীবি মস্তান হবে ভেবেছিল
ছায়া অভিলাষ, সিঁড়ি ও সুড়ঙ্গ জুড়ে সে প্রার্থনা করেছিল অবক্ষয়
শাসন নামক সম্পর্ক সমীকরণ, গণিকার প্রেত এসব প্রগলভতায়
ম্লান করেছিল মুখ, এই লিঙ্গজীবিদের কেউ পুরুষমানুষ বলে?
বাবুটির কথা তার মনে পড়ে গেল, শরীর, খাঁচা মাংশাসী উচাটন
নিষিদ্ধ প্রণয় জুড়ে সে কী চোর-পুলিস খেলা
শিসার খোলের মতো তীব্র হনন, ঠোঁট শুষে নেওয়া বিবশ বিবশ
বড় মনে পড়ে গেল, সূর্যডোবা বেলায় আতরের গন্ধ ছড়াল
শহরে শহরে।
রানি শঙ্করী লেন
আমার ভাষা-পৃথিবীর যোজন অনাত্মীয় অক্ষর মিছিল
তুমি চিহ্ন, পর্যটনের উড়ুক্কু ভ্রমণ আর ঠাঁই সংগতি
শ্যাওলাধরা সেই সব উচ্চারণ খুঁজি বর্ণমালায়
খুঁজি উত্তরাধিকার শিৎকারের মতো অনাবিল ও তীব্র
খিস্তির মতো সহজাত, ঐকান্তিক
আমার পাকশালার ধোঁওয়া আমার ঘামের বাস্প
আমাকে রিক্ত করো পূনর্জাগরণে
সেই বিবশকালের আধোচেতন অক্ষর মানচিত্র পাক
হাতিবাগান মোড়ে আজও কারা যেন ফুল ফুল টেপজামার
পশরা সাজায়, আজও কি সেই সব রহস্যের মতো কিশোরীরা
ফ্রক পরে? যাদের গা বেয়ে এক আশ্চর্য আলো!
যাদের দু’পা পেছনে টেরিকটনের জামা গায়ে বিষণ্ণ বাবারা
হাঁটেন, যদুঘোষ সে সময় সিঙ্গারা ভাজছিল এক অভ্যস্থ বিকেল
কারেন্ট লবণ আর ছোট কুল দিয়ে মোড়া সহজ রোমাঞ্চ বেলা
আমার অক্ষর-পৃথিবী স্থিরচিত্রে এ দৃশ্যের ওম পেতে চায়
শব্দকুহক ধ্বনির বিভা স্মৃতি পর্যটন দৃশ্যপদাবলী
কৃষ্ণানন্দ, কৃষ্ণানন্দ কাব্যতীর্থ প্রসন্নময়ী ঔষধালয়
মেজ বৌ আজ গেস্লো ব্রনো ও মেচেতা সম্পূর্ণ নিরাময়
ন কাকা আপিস ফেরৎ দাঁড়িয়ে ছিল চেতলা হাটে
নীল ব্লাউজ কিনবে মেজোবৌ ফিসফিসিয়ে বলি শোনো
স্নায়বিক দুর্বলতায় অব্যর্থ ‘শতাবরী’ আর মদ্যপানের
কূফল হইতে নিশ্চিত মুক্তিলাভ ঔষধ কিনবে মেজোবৌ
তারপর ফিরে এসে অন্ধকার ছাদে এক কোণে দাঁড়াবে
ওর চুলের মতো কবোষ্ণ সেই অন্ধকার মেজোবৌ
দেখবে আদিগঙ্গায় একজোড়া প্রদীপ ভাসিয়েছে কেউ
পুণঃপুণঃ শাখের ফুঁয়ে জমাট বাতাসে কম্পন জাগবে
ভারী হয়ে উঠবে বাতাস। মেজোবৌ কালো সিমেন্টের সিঁড়ি
বেয়ে নেমে আসবে ঘরে। হলুদ বাল্বের আলোয়
তার অবিন্যস্ত জীবন ছড়িয়ে আছে, শরীর সংরাগ।
সৌরভ গুহ
পেশায় টেলিভিশন সাংবাদিক । নিউজ লেখেন, ফিচার লেখেন । কবিতা লেখেন । প্রকাশিত হয়েছে রম্য রচনার বই ‘চেনা নেতা অচেনা নেতা’। সম্পাদিত পত্রিকা ‘কবিতা কারিগর’। ২০১০ সালে প্রকাশিত হয় কবিতার বই ‘কলোনির কবিতা’। কালীঘাট পটুয়া পাড়া নিয়ে বানিয়েছেন তথ্যচিত্র ‘নগর পটুয়া’। খবরের পাশাপাশি টিভি চ্যানেলের জন্য বানান ডকু ফিচার ।