আজ বৃহস্পতিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মুখভর্তি পানের পিক ও অন্যান্য কবিতা

কবিতা সিরিজ। অলঙ্করণ: সঞ্চারী মুখোপাধ্যায়

।। জ্যোতি পোদ্দার ।।

পান চিবানোর আগে প্লেটে করে সুরৎ সুরৎ
চা পান করতে না জানলে কিন্তু
আয়েশ করে পান চিবানোর মাজেজা
আপনি কস্মিনকালেও জানবেন না।

মুখভর্তি পানের পিক ও অন্যান্য কবিতা

একবার লিখেছিলাম চন্দন বনে সুবাস থাকে।
সুবাস কেন সুভাষও যদি থাকে থাকুক।
তাতে আমার কী?
চন্দন বন আমার দেখা বন নয়।
বইয়ে পড়া বন।

লাগালাগি বাস
আর দেখাদেখি চাষবাস না থাকলে
আমি কোন শালারে কেয়ার করি না।
হোক সে চন্দন বন কিংবা বাঁশের আড়া।

তবে আঙুল সমান শুকনো চন্দন কাঠ দেখেছি
মা আমার শানে ঘষে ঘষে
ঘন মন্ড করে উল্কি আঁকতেন কপালে
কন্ঠে আর হাতের বাহুতে।

চন্দনে চর্চিত মা আমার তখন দিগন্ত প্রসারিত
চন্দন বনের সৌরভ ।

পাতাকাঠির দিকে যে আমি নিস্পলক তাকিয়ে থাকি
তাকে কি তুমি ধ্যানী বলবে?

যদিও আমার শিরদাঁড়া সরলরেখা।
বসেছি পদ্মাসনে ঘাসের উপর তোমার পাশে।
যদিও আমার ছিপ আর মন
ডানপন্থী নয়
বামপন্থী নয়
সিদ্ধার্থ গৌতমের মধ্যবর্তী পথের মুসাফির।

পাতাকাঠির দিকে যে আমি নিস্পলক তাকিয়ে থাকি
তাকে কি তুমি ধ্যানী বলবে?
যে আমি বর্শিতে বর্ষার পুরুষ্ট কেঁচো গেঁথে
বগাডুবি বিলের পাড়ে একাগ্র একলব্য
তাকে কি তুমি ধ্যানী বলবে?

মন নড়ছে না— ছিপও নড়ছে না
আমার শিরদাঁড়া সটান ল্যাম্প পোস্ট
পাতাকাঠি নড়ুক জলের কম্পনে জলের সাথে
আমি ঠিকঠিক ধ্যানের সাথে
বেঁধেছি রূপালি পুৃটিমাছ।

আয়েশ করে পান চিবানো একটা আর্ট।
সবাই পারে না— কারো কারো পান
চিবানো মুখশ্রী আমি হুকে ঝুলিয়ে রাখি
সাদা দেয়ালের মসৃণ শরীরে।

লালে লালে রক্তলাল করা মুখভর্তি পিক যখন
ঠোঁট দুটি গোল করে
পিচকারির মতো ছুঁড়ে দেয়—
মসৃণ দেয়াল তখন বর্ণিল
লাল রঙের দোলের যাপন ও উদযাপনের হল্লা।

আঙুলের ডগায় পাতলা চুন তখন
মুখচেপে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে দাঁতের ফাঁক
গলিয়ে ঠোঁটের কোনে।

পান চিবানোর আগে প্লেটে করে সুরৎ সুরৎ
চা পান করতে না জানলে কিন্তু
আয়েশ করে পান চিবানোর মাজেজা
আপনি কস্মিনকালেও জানবেন না।

এখানেই আর্টের গোপন কথা।
শিল্পকলার বাঁকানো কাস্তে চাঁদ।
পান সুপারি খয়ের নিতান্তই আসরের অনুষঙ্গ মাত্র।

যে আমি দু’হাতের গোল ভাঁজে বেশ কায়দা করে
নির্মিত গহ্বরে দেশলায়ের আগুন জ্বালাই
পান চিবানোর কাছে এটা নিতান্তই শিশু।

ধিঙ্গিগাছ একটু বেহায়া গোছের।
নির্লজ্জও বটে—
সীমানা চেগার পেড়িয়ে সহজে দেখে নিতে
পারে পড়শির উদোম স্নান ঘর
অথবা উঠানে রান্নারত রমনীর অভাঁজ বুকের ভাঁজ।

খসে পড়া বেয়াড়া আঁচল ধিঙ্গির দোসর।
কুট কৌশলে খুলে দেয় আব্রুর সেফ্টিপিন।

আমি পাঁচ ফিট সাত।
ধিঙ্গি হবো বলে একদা গাছের ডালে রিঙ বেঁধে
কতদিন ঝুলেছি বানরের মতো।
যে লিলিপুট সেই লিলিপুটই আছি
ধিঙ্গি আর হয়নি।

বুকের খুব কাছে রেখেছি ঈর্ষা আর ক্ষোভ
আর গালাগলির চারুপাঠ।

ধিঙ্গি গাছ কিংবা মাইয়ালোক
দুই-ই আমার চোক্ষের বিষ
দেখলেই দাঁতে দাঁত রেখে কড়মড় করি।

ধিঙ্গির সটান শরীরে কোন ডাল নেই
তাই একবার জলরঙে আঁকেছি প্রসারিত ডাল
যাতে কিছু পাখি যেন বসতে পারে।
কৃত্রিম ডালে কোনো পাখি বাসা বাঁধেনি।
পাখির নিজস্ব বিশ্বাসে সরে গেছে ঝাঁকপাখি।

এববার এক ধিঙ্গি মাইয়ার করতলে
বুনেছিলাম সপ্রান বীজ।
কচি পাতা ফোটে নি।
নাকউঁচুর তাপে পচে গেছে বীজের বিস্তার।

একবার কর্ষিত জমিনে বীজ রুয়ে ছিলাম।
ছড়ানো ছাতার মতো
ঝাঁকড়া সবুজ মাথা তুলেছিল সকলের
মাথার উপর।

ছাতার নীচে দাঁড়িয়ে দেখেছি তখন
রোদ আর বৃষ্টির অমেয় লীলা নৃত্য।

একবার তোমার করতলে আঁকা রেখা
ধরে ধরে হেঁটেছি বহুদূর—
তোমার কোনো রেখাই সম্পূর্ণ সরল নয়।
কোনটা বাঁকা বা উপবৃত্তের চাপ
অনিদির্ষ্ট উপরন্ত কোনটা ছুঁয়েছে
চোরাবালির মোহনা
যেতে যেতে পথিক হারায় পথ।

একবার কথার ভেতর ডুব দিয়ে কথা না তুলে
আস্তকথা রুয়ে দিতে চেয়েছি তোমার করতলে।

তোমার রৈখিক পথের পাশে কোন স্টেশন ছিলে না
বলে দাঁড়াবার সাহস পাইনি।

একা বৈরাগী পথে কথাগাছ নিতান্ত তালগাছ।
নিজে বাড়ে— ছায়ায় জড়ায় না কাউকে

ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলা পছন্দ করি না।
যা বলি স্ট্রেট বলি— এন্ড দ্যাট’স ফাইনাল।

সমকক্ষ পার্টনারের চেয়ে আমি অধীনস্থ
পার্টনারের প্রতি আমার পক্ষপাত
কারো অজানা নয়।

আর অজানা থাকলেও কোন অসুবিধা নাই।
আমিই ফাইনাল— এন্ড দ্যাট’স ফাইনাল।

কোন কোর্টে কতক্ষণ কীভাবে আমার
পার্টনার খেলবে আমিই সেটা ঠিক করে দেই।

আমিই মূলত জয়।
নিজে হেরে গিয়ে তোমাকে তুলি ভিক্টরি স্ট্যান্ডে।
তোমার ফর্সা উদ্বাহু নিয়ে যখন চারদিকে
ছড়াও বিজয়ের কুশলতা
সেটাকে তুমি বলো নারীবাদ।

আমের চাটি আর ঘন দুধের সর খেতে খেতে
আমি তোমার ফর্সা উদ্বাহু দেখি
সূচালো স্তনের চূড়া দেখি।

কনগ্রেটস,মাই ডিয়ার অধিনস্ত পার্টনার।

কার্য়ত আমার জয় নিয়ে আমি যখন ভিক্টরি স্ট্যান্ডে দাঁড়াই
পথে পথে উড়িয়ে দেই আমার ভি চিহ্ন।
প্রকৃতপক্ষে তুমি আগেই স্বহস্তে
সিগনেচার করে রেখেছো
তোমার অধীনতা।

জয় আমার।
পরাজয়ও আমার।
আমিই ঠিক করি কে উঠবে ভিক্টরি স্ট্যান্ডে।

আমি যখন বিজয়ী— তাকেই বলো তোমার
গালভরা ভাষায়–পুরুষতন্ত্র; শুনতে মন্দ লাগে না।

অলঙ্করণ: সঞ্চারী মুখোপাধ্যায়

কৃতজ্ঞতা- ‘পরবাস’

জ্যোতি পোদ্দার

জন্ম ১৯৭৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশের নয়ের দশকের কবি। বাসস্থান বাংলাদেশের শেরপুর জেলার নালিতা বাড়ি। পেশা শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত। প্রকাশিতকাব্যগ্রন্থ: ‘(a+b)2 উঠোনে মৃত প্রদীপ’ (১৯৯৭), ‘সীতা সংহিতা’ (১৯৯৯),
‘রিমিক্স মৌয়ালের শব্দঠোঁট’ (২০০২), ‘ইচ্ছে ডানার গেরুয়া বসন’ (২০১১), ‘করাতি আমাকে খুঁজছে’ (২০১৭) এবং ‘দুই পৃথিবীর গ্যালারি’ (২০১৯)।
Share

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top