আজ বৃহস্পতিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আমাদের নিজস্ব ঘর

গুচ্ছ কবিতা

।। শুভঙ্কর দাশ ।।

“আমাদের ছোটোবেলায় আমাদের নিজস্ব ঘর
ছিল না তো,
একটা ছাতের কোণ ছিল একান্ত আপন শুধু।
আর একটা পড়ার ঘর
আর একটা বই ভর্তি কাঠের টেবিল
আর দুটো ভারিক্কি কাঠের চেয়ার।”

জ্ঞান, সমস্ত কুঁড়েদের জন্য

আমার ভেতর যে শুভঙ্করটা বসে থাকে
তাকে মাঝে মাঝে জিজ্ঞাসা করি
কী খাবি আজ?
আজ যেমন আমার প্রশ্ন শুনে
সে ঝাড়া আধ ঘন্টা হেসে গেল।

কারণ আমরা দুজনেই জানি
পেঁয়াজ আর ডিম ছাড়া রান্নাঘরে
আর কিছু নেই।

এত খাই খাই করিস কেন?
এই না ইয়োরোপ থেকে ফিরে
জ্ঞান দিচ্ছিলি
মানুষ খায় বেঁচে থাকার জন্য।
এখন বাঙালি বলে পার পেয়ে যাবি।

শোন হোটেলের খানা তোর তো আবার সহ্য হয়না
তাছাড়া কে হাঁটবে অতটা এখন?
তার থেকে শুকনো লঙ্কা আর পেঁয়াজ কড়া করে
ভেজে দিচ্ছি
ভাতের সাথে অপূর্ব লাগবে রে জ্ঞানদা।

ফ্লেমেঙ্কো ডান্সার

এমন নয় যে স্পেনে গেলেই
মন ভালো হয়ে যাবে আমার।
এই যে এখন যাচ্ছি রাসবিহারী মোড়ে
এমন তো হতেই পারে
কোনো সুন্দরী্র পা দেখে মনে হলো
এই তো সেই ফ্লেমেঙ্কো ডান্সার
যে নেচেছি্ল ফ্রিডা কাহলোর সাথে।

আজ এসেছে এ শহরে আমাদের অল্প
ভালোবাসা ধার দেবে বলে।

ইস কেন যে আধার কার্ডটা করিনি আমি
তাহলে অন্তত বলা যেত
আমারও একটা আধার আছে হে সুন্দরী।

রান্নাঘর

খিদে মানেই একটা রান্নাঘর
যার দিকে তাকাতেই আতঙ্ক হয় আমার।
ঢুকলেই বলবে এই নেই ওই নেই।
এঁটো বাসন পড়ে আছে সিঙ্কে পাহাড়ের মতো,
না না ঠিক বললাম না
পড়ে আছে সিঙ্কে ডুবো পাহাড়ের মতো,
কারণ খানিকটা জলও জমে আছে কিনা।
সেখান থেকে খুঁজে হাতা খুন্তি চামচ পাওয়া
কি সোজা ব্যাপার নাকি?

কোনো ফ্রেঞ্চ আঁতেল এ নিয়ে কোনো থিয়োরি
মারিয়েছেন কিনা আমার জানা নেই।
জানলে বলতাম ফালতু না ভাটিয়ে
সিঙ্কটা পরিষ্কার কর না এসে।
মাইরি বলছি এক কাপ কফি খাওয়াব ফ্রি-তে।

নামতা

আমরা রোজ নামতার মতো মুখস্থ করছি
সম্পর্কের কথা,
যেন সেটা আছে
এই জোট-বন্ধন ভাঙার নয় আমাদের।

কেউ কি আর ভাঙার জন্য জোট করে?
তবু সব জোটের মতোই
এটাও ভেঙে যাচ্ছে, যাবে আমরা জানি।

কারণ না ভাঙলে তো বড় মুশকিল তখন,
হে ভগবা্‌ন,
মুখোশের মুখোমুখি হওয়া কি সোজা নাকি?

তবু কেন যে ভেঙে যাওয়ার শব্দে
ছ্যাঁত করে ওঠে বুক?
ঘুম ভেঙে বোকার মতো
অন্ধকার দেখি
চেয়ে থাকি অন্ধকারের দিকে
যেন অন্ধকারে লেখা আছে সব
সমস্ত উত্তর।

নিজের ঘর

বাচ্চাটা আমায় বললো
তুমি তোমার নিজের ঘরে যাও।

কার থেকে ও শিখেছে এ সব?
নাকি এখন অনেক ঘর হয়েছে মানুষের?
অনেক দেওয়াল আপন হয়েছে
যাদের দিকে রাতদিন চুপ করে তাকিয়ে থাকা যায়?
আমাদের ছোটোবেলায় আমাদের নিজস্ব ঘর
ছিল না তো,
একটা ছাতের কোণ ছিল একান্ত আপন শুধু।
আর একটা পড়ার ঘর
আর একটা বই ভর্তি কাঠের টেবিল
আর দুটো ভারিক্কি কাঠের চেয়ার।

রাতে একটাই শোয়ার ঘরে শুতাম সবাই
বাবা মা দিদি আমি
আর বাবার নাকের সিংহ গর্জন
যা পাইচারি করে বেড়াত ঘরময়,
যা শুনে রাতের সব ভূত ঘেঁষতে
সাহস পেত না।

পরে যখন একটা একলা ঘর হলো
তার সাথে এলো সব একলা ভূতেরা
আর ইন্দ্রজাল কমিক্সের ফ্যান্টাসি
আমি ডায়না তুমি বেতাল।

অবশ্য আমার একলা ঘরে
এখন একটা টিকটিকি থাকে,
আর থাকে তার ওঁত পেতে বসে থাকার অপেক্ষা,
যা দেখে মনে হতে পারে
সে হয়ত ধ্যানে বসে আছে।

মাহলের

আরে বুকাওস্কি তোমার ওই মাহলের-এর
দশ নম্বর আমাকে তো কিছুই দিলো না কাকা।
বরং কুমার গন্ধর্ভ-এর মালকোশ
আমার গায়ের আঁশ ছাড়ায়
খেলা করে বেশ।

আসলে হয়ত তুমি লিখতে মাঝ রাতে
আর আমি বসি সক্কাল বেলায় বলে
এই তফাৎ ঘটে যাচ্ছে।

তুমি কি জানতে মালকোশের গায়ে লেগে আছে
সপ্তম চক্রের সাদা আলো?
সে ভয়েই কি তুমি এখানে এলে না
শুধু ভারতীয় বিড়ি টেনে গেলে
বছরের পর বছর?

একবার নিঝুম মাঝ রাতে
মাহলের শুনে দেখতে হবে
কিছু ঘটে কিনা এই অশিক্ষিত ভারতীয় গোদা চামড়ায়
যেখানে সূক্ষ্মতার প্রবেশ নিষেধ।

সে

আমার ঘরে এসে সে
আমার উপহার পাওয়া
ফসিল হাতঘড়িটা আপন করে
নিয়ে গেল।

সে এসে আমার টেবিলের ধুলো মুছলো
র‍্যাকের বইয়ের ধুলো ঝাড়ল
শুধু কফি খাইয়ে এই ভালোবাসা
কীকরে শুধব আমি।

ভালোই হয়েছে
ড্রয়ারের অন্ধকার কোণে দিনের পর দিন
কাটিয়ে এখন সে সূর্যকে চুমু খাবে রোজ।

কাউকে তো মনে করিয়ে দিতে পারবে
সময় বড় কঠিন বস্তু,
যা শুধু এগিয়ে যাওয়াই শিখেছে।

আর আমার সময় তো গলে জল হয়ে গেছে কবে
ওকে নিয়ে আমি আর কীইবা করতাম।

প্রচ্ছদের ছবি- অতনু সিংহ

শুভঙ্কর দাশ

কবি, গদ্যকার, অনুবাদক, প্রকাশক ও সম্পাদক। জন্ম, ১৯৬৩ সালে। ‘কলকাতার বাসিন্দা। বাংলা এবং ইংরাজি- এই দুই ভাষাতেই কবিতা ও কথাসহিত্য রচনা করে চলেছেন।

Share

1 thought on “আমাদের নিজস্ব ঘর”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top