।। অনুভব আহমেদ ।।
পরকীয়া
তোমার সাথে আমার বিয়ে হবেনা
কিন্তু আমার বিয়ে হয়ে যাবে
সে সংসারে যেতে যেতে ভাববো
তোমার সাথে আমার সংসার ছিল
মাঠভর্তি সর্ষে ফুলের হলুদ দোলে
পাতাভর্তি কবিতায়, শব্দের শোরে
আমার সাথে তোমার বিয়ে হবেনা
কিন্তু তোমার বিয়ে হয়ে যাবে
মাছের ঝোলে আঙুল ডুবিয়ে তুমি ভাববে
মেয়েটা কবিতা লিখতো
তোমার পায়ে ব্যথা হবে
তুমি ভাববে
মেয়েটার জন্যে প্রেম ছিল
তোমার মনে হবে একটা ফোন করা দরকার
আমার মনে হবে একটা টেক্সট করা দরকার
আমাদের মনে হবে আমরা ভালোবাসতাম
ওদের মনে হবে আমরা এখনও ভালোবাসি।
ভীতি
ব্ল্যাঙ্ককলে উড়ে আসা ভীতির মতো জাপটে রেখেছো
একদা ভালোবেসেছিলে-
যতটা বাসলে নিঃশ্বাসও বিষাক্ত হয়
…আর আমি আছি এখানে
চারকৌনো টেবিলে বেড়ে রালহা জড়ানো ভাত
যার শরীর থেকে উড়ে যাচ্ছে উত্তাপ
বড় বিষাদ নিয়ে আমাকে গিলছে সময়।
তোমাকে লিখতে চেয়ে -৭
এখানে প্রেম –
সারাদিন হরবোলা
নিনাদমেদুর নদী
সেইনের উপকথা
মাঠের ফসলে
ভাষার প্রণয়ে
দৃশ্যের মেঘলতা
শ্বাস নিমীলিত
পরান্মুখ ব্যথা।
মদিরা মোহ
শরীর বনছায়া
দুর্বিনীত ষাঁড়ের চোখে
লাল ফেট্টির ধাঁধা।
নিমিত ভেজা মুখ
নালিশ ভুলে কাহারবা ধারা।
এখানে তুমি- ঝরিছো ঝরো, বাঁধাহীন সরোবর,
পাখির ঠোঁটে আকাশ গুঁজে নিঃস্ব করো ঘর।
তোমাকে লিখতে চেয়ে – ৫
এসো ফিরি দুজনে,
ধরো নদীর ধার থেকে বুকের ভিতর
ঠোঁটের ধার থেকে বনের শিয়রে
এসো ফিরি,
শীতের শেষে, বৈঠকি গানের আসরে
যেকোনও সুর ধরে অনুপ প্রান্তরে
এসো বুকের হ্রদে
আততায়ী পদ্মের কোলাহলে
দেহের গড়নে শান্ত হাঁসের চালে
এসো ফিরি দুজনে,
ফিরবো না এমন কোনও শর্তের মতো …
তোমাকে লিখতে চেয়ে -৯
চিরকাল বোকাসোকা এক পাখি
ঢেউ আছড়েছে লোকালয়ে ঘরবাড়ি
আকাশ জানেনা কী ক্ষতিতে পোড়ে চোখ
মেঘের স্কুলে চিরকাল তুমি আমি
শহরের বুকে কাঁপে থরথর নদী
মফস্বলের এঁদো গলিটাও চুপ
জানো কত করে মানুষের অপচয়
নৃতত্ত্বের ভাঁজে ভাঁজে রয়
গল্প বলো ইতিহাস মহাকালের
সেসব দানে তুমি আমিই ঘুঁটি
যেকোনো সন্ধে চোখের কানাচ ছুঁলে
চলে এসো, এখানে আমি থাকি
বিপ্লব থেমে গেলে ফেরে যে সেনানী
এখানেই, এখানেই তার বাড়ি।
প্রচ্ছদের ফটোগ্রাফ: অতনু সিংহ
অনুভব আহমেদ
জন্ম: ১৯৯৩ সন। নিবাস গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সিলেট জেলায়। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘মৃৎফুলের নকশা’ (২০২১)