আজ বৃহস্পতিবার, ২৫শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চিলমারী

কবিতা

।। নাদিয়া জান্নাত ।।

স্নানের সময় যারা নদীতে রূপোর আংটি হারিয়ে ফেলেন তারা শৈশবের আত্মীয়। যে আত্মীয়দের বাড়ি অনেক দূরে, যাদের ঠিকানায় চিঠি কম পাঠানো হতো, তারাও বাড়ি আসতেন শীতকালে।

চিলমারী

ক.

(হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দর এ রে…)

শীতকালে— দুপুর আরো ঝিমিয়ে গেলে—আমরা মা-মেয়ে বারান্দায় মাদুর বিছিয়ে চুলে তেল দিতাম যখন ; তখন অঘ্রাণের রোদ আসতো দক্ষিণ থেকে। দক্ষিনে আস্ত একটা ব্রহ্মপুত্র। মা বলতেন, এমন দিনে— আলোর কমলা রঙ খুব আস্তে আস্তে মলিন হয়, তারপর চালভাঙ্গা টিনের বাড়িতে মেজাজ চড়া করে শীত নামে

শীতকাল আম্মার কাছে মামাতো বা খালাতো ভাই-বোন গোছের কিছু একটা ; চিলমারিতে যার নানা বাড়ি। মখমল জামা পরে— রমনা বাজার থেকে গুঁড়ের জিলাপী কিনে সে আমাদের বাড়ি বেড়াতে আসে…

আম্মার আঁকাবাঁকা ব্রহ্মপুত্রে আমি আমি একবার ডুব দিয়েছিলাম, উঠতে পারি নাই ।


খ.

(কত রব আমি পন্থের দিকে দিকে চাইয়া রে…)

বড় হয়ে গেলে আত্মীয়রা ধূ ধূ ঈদের মাঠ হয়ে যান; আর নানা বাড়ির দরজায় ঝোলে তালা— যার চাবি হারিয়ে গেছে শৈশবে।

স্নানের সময় যারা নদীতে রূপোর আংটি হারিয়ে ফেলেন তারা শৈশবের আত্মীয়। যে আত্মীয়দের বাড়ি অনেক দূরে, যাদের ঠিকানায় চিঠি কম পাঠানো হতো, তারাও বাড়ি আসতেন শীতকালে।

শীতকালে বেড়াতে আসা আত্মীয়রা ম্যাজিক জানতেন। নানীর ফাঁটা পায়ের গোড়ালিতে তারা মালিশ করে দিতেন সুখ। সেসময় রেডিওতে বাজতো গান। গানের ভেতর বইতো ছোট খালার বিবাহের বাতাস।

বিবাহের আগে ঢেঁকিতে ধান ভানতে ভানতে চকচকে শ্বাস নিতো মেয়েরা । হৈ হল্লার ভেতর ঘরে আসতো চাল, খৈ থেকে আলাদা করা হতো খুশবু। হাটে বসতো মেলা, ডুবো তেলে কড়া করে ভাজা হতো মাছ।

রাতের বেলা ভূতের ভয় ঢুকে যেতো কলপাড়ে। যেসব দিনে বড়মামা তালপাতার বাঁশি বাজানো শেখাতেন— সেসব দিনেই সরিষা ক্ষেতের আইল ধরে বাড়ির উঠোনে আসতো বিয়ের অতিথি।

শৈশবের চারপাশে যতটুকু রোদ, যতটুকু নানারবাড়ি, ততটুকুর নিচে বাঁধা থাকে দেখার ক্ষুধা। তেষ্টা পেলে ব্রহ্মপুত্র নদী জিয়ারত করা ছাড়া আর প্রিয় কোন গিঁট কোথাও বাঁধা নাই

ফটোগ্রাফি: নাহিদ হাসান ও অতনু সিংহ
নাদিয়া জান্নাত

বাংলাদেশের তরুণ কবিদের মধ্যে অন্যতম। রংপুরের মেয়ে। ইতোমধ্যে তিনটি কাব্যগ্নথ প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলি হলো যথাক্রমে, ‘বুনোফুল ও ‘ছবিওয়ালার গল্প’, ‘শালুক ফুলের যাতনা’ এবং ‘ইতি তোমার লাবণ্য’।

Share

1 thought on “চিলমারী”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top