আজ বৃহস্পতিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

একটি আজব লাশ

চারটি কবিতা

।। অতনু সিংহ ।।




রূপঘাটে আগুনের লীলা

যে আকাশ বিষণ্ণ তার কাছে তুমি আশ্বিনের বাজনা চেয়েছ! এই চাওয়া তোমার অভ্যেস! দ্যাখো, জাদুকরী সকল পোশাক ঘাটে খুলে রেখে নিজেই নিজের স্মৃতির পাশে মোনাজাত ধরেছে রাখাল বালক। হাত থেকে তার পানি ঝরে পড়ে নিজের গায়েবে!

আকাশ দেখছে অপার বিস্ময়ে জগতের একটি পুরুষ ক্রমশই জলে নেমে গেছে! জলে নেমে আরও গভীরে গভীরে সে নিজেরে বিলায়! হারায় নিজেরে! আকাশের এই বিষাদবেলায় একদিন নাকি সূর্য ওঠে পশ্চিমাকাশে! বাজনাও বেজে ওঠে বেশ! আগুনের লীলা শুরু হয়৷ প্রথমে পোশাক পোড়ে, তারপর কেশ, তারপর পক্ষীসমাজ… আকাশে আকাশে দ্যাখো অসময়ে কতো বিদ্যুৎ খেলে যায়!

এদিকে আরো কিছু ঘটে! শোনা যায়, আলোয় আলোয় তোমরাও নাকি পতঙ্গপ্রায়! রূপালী নদের পাশে আগুনের লেলিহানে ঝাঁপ দেবে ব’লে নাকি সমবেতপ্রাণ!

শোনা যায়, আরো শোনা যায়, এরপর বিজয়া দশমী আসে৷ ঘাটে ঘাটে ছড়ায় গৌরীজনতার দাহসংবাদ!


এনআরসির দিনগুলোতে

এমনই কি ভাব তোমার?
যেন খুব হালকা পূর্ণিমায়
নেহাতই বোকা রোম্যান্টিক তুমি
কী আর হবে বলে
আচমকাই মরে গেলে!
তারপর দোল হলো নাকি
বসন্তের ফুলবনে
বনভোজনে গেল নাকি
বন্ধুরা সদলবলে,
নদী থেকে ধুয়ে এলো গা,
শিস দিলো..
নাকি দেখল যেন আজগুবি সিনেমার মতো
নিঝুম গ্রহটি হতে
ফাইল-কাগজ হাতে মন্ত্রপূত অলীক যন্ত্রে এক  
নেমে এসেছেন কারা
যারা কেউ তো বনের নয়
জলেতে যে মানুষের ছায়া
তারও তো নয় তারা

ধরো পড়শি যারা, তীক্ষ্ণ চোখে বেঁচে বেঁচে
হামাগুড়ি দিলো, গাছ ও পাখির সাথে
আগুনে ও হুঙ্কারে কোনোমতে
আগলে রাখলো তোমার ওই বোকাসোকা লাশ
এমনকি বাড়িঘর, দালানে নরম রোদের,
শরৎকালীন আকাশের, শ্বাসের পাহারা…

তারা কী পেল—
জানা বাকি থেকে গেল তোমার!
যুদ্ধের পাতায় তুমি ঘুমখোর বেচারা একাকী
নেহাতই রোম্যান্টিক একটি আজব লাশ!


একাত্তর

— দরওয়াজা খোলিয়ে
— দরজা খোলেন

মিরপুরে বুদ্ধিজীবীর গণকবরের ওপর দিয়ে
পেরিয়ে যায় একেকটা শীতকাল
লেখা এইখানে থামাতে হয়
লেখা থামে না
এই লেখাটাও চলবে
একাত্তর পেরিয়ে সত্তর-আশি-নব্বই-শূন্য
দশকের পর দশক পেরিয়ে
এমনকি সীমানা পার ক’রে এই লেখা চলবে

— দরজা খুলুন
— ওপেন দ্য ডোর
— বাহার আও মাদারচোদ

লেখা এইখানে থামাতে হয়
লেখা থামে না
এই লেখাটাও চলবে


পাখিয়ানা, উড়ে যাও

হুস হয়ে যাও পাখি
শান্ত ঘুমের গাছে
কেন এসে বসেছ আবার!
কেন ফের ঝাপ্টাও ডানা!
স্মৃতির পাতাগুলি মর্মর
মোটাপাখি, তোমার ডানার ভারে
তোমার ওমে আর আতরে আতরে
স্বপ্নের গাছখানি বেঁকে যায়,
গাছে গাছে আগুনও তো লাগে খুব
এরকম দাবানলে দাবানলে
তুমিও তো পুড়ে যাবে
তার চেয়ে ভীনদেশে
সুখের ঝর্না মেখে ভালো থেকো
আলগোছে ডেকো না আমায়
ঘুমের শীতল কাচ
ভেঙে যায় ভেঙে যায়
চামড়ার ভিতরেতে ঢুকে পড়ে
ফলাকাচ, স্বচ্ছতা থেকে এই নদীর নীরবে দ্যাখো
রক্ত কী রক্ত হে বহতায় বহতায়!
তার চেয়ে মোটাপাখি
তোমার উড়ানে
লাগুক উছল বাতাস আর
চাঁদের আরাম,
এইখানে হাওয়া নাই, বাতাসে তো গান নাই
রুখাসুখা ঘুমের ট্যাবলেট…
খোয়াব জাগাও কেন
ভুলে থাকা ঘুমের বাক্সে আবার!
হুস হয়ে যাও পাখি
স্বপ্নের ভেতরে এসো না তো আর!



অলঙ্করণ: বৈশালী
প্রচ্ছদের ছবি: ‘SUSPENDED IN SPACE‘ by Marlene Dumas, South Africa and Netherlands.
অতনু সিংহ

শূন্য দশকের কবি ও গদ্যকার। ১৯৮২ সালের ২২ আগষ্ট। স্থায়ী বসবাস পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায়। পড়াশুনা, পেশা ও বন্ধুসঙ্গের কারণে নানা সময় অস্থায়ীভাবে বসবাস করেছেন কলকাতার যাদবপুর অঞ্চলে এবং ঢাকার মিরপুরে। ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা ছিলেন প্রায় দুই বছর। এখনও মিরপুর-সহ গোটা ঢাকা শহরটাকে তিনি তাঁর নিজের শহর বলেই মনে করেন। কবিতা ও ভাব-যাপনের দিক থেকে অতনু বৃহৎ বঙ্গের। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনা গণমাধ্যম ও চলচ্চিত্রবিদ্যা বিষয়ে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণজ্ঞাপন (মাসকমিউনিকেশন) বিষয়ে স্নাতকোত্তর। কিছুদিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশুনা করেছেন। এখন অবধি কবিতার বই মোট ৪টি। ‘নেভানো অডিটোরিয়াম’(২০০৯ সাল, ‘লালন’ প্রকাশনা, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ), ‘ঈশ্বর ও ভিডিও গেম’ ( ২০১৪ সাল, ‘হুডিনির তাঁবু’ প্রকাশনা, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ), ‘বন-পাহাড় থেকে সে কেনই-বা ফিরবে এ কারখানায়’ (২০১৭ সাল, ‘কবীরা’ প্রকাশনা, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ) এবং অবধি সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ ‘ঘুমের চেয়ে প্রার্থনা শ্রেয়’(২০১৯ সাল, ‘বেহুলা বাংলা’ প্রকাশনা, ঢাকা, বাংলাদেশ)। কবিতা লেখার পাশাপাশি নানা বিষয়ে নিয়মিত গদ্য লেখালেখি করেন। একটি ছোটগল্প সংকলনও প্রকাশিত হয়েছে প্রায় এক দশক আগে, নাম ‘অপর লিখিত মনোলগ ও কয়েকটি প্যারালাল কাট’ (‘হুডিনির তাঁবু’ প্রকাশনা, ২০১০ সাল) কাব্যচর্চার পাশাপাশি চলচ্চিত্রচর্চা ও স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত। ২০১২ সালে নির্মাণ করেন ‘প্রিয় মরফিন’ নামক পূর্ণদৈর্ঘ্যের একটি স্বাধীন চলচ্চিত্র। এক সময় কবিতা পত্রিকা ‘লালন’-এর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে অনলাইন ‘প্রতিপক্ষ’ পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত। আরেকটি পরিচয়, রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় একজন সমাজকর্মী। পেশা মূলত সাংবাদিকতা। আগ্রহ বঙ্গের ভাবান্দোলন পরম্পরায়।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top