।। কাজী ওয়ালী উল্লাহ ।।
বিবাহবন্ধন
কালের লিরিক হয়ে আমাদের বিবাহবন্ধন ভেসে আছে
মধ্যখানে, যেন কবিতায় খেই হারাচ্ছি, এমন বিভ্রান্তি
মোমের ফোঁটার মতো বৃষ্টি, সমুদ্রের বালিতে আর
তোমার মেয়েলি চোখ বেয়ে ক্যাসেটের ফিতার মতো সুর
পাঁচটি বছরে আরো ঘ্রাণ হবে নরম মাটিগুলার,
তুমি আরো বিষণ্ণ হবে
সমস্ত নিসর্গবিলাস জমে আছে তোমাদেরই গ্রামে
হাঁস কোলে নিয়ে ভিজছো বৃষ্টিতে
চারাগুলা, রোদে ঘুমাচ্ছে
আর স্মৃতি বেয়ে একটা বিড়ালের বিমূর্তপায়ে হাঁটা
দূর এবং নিকটের মধ্যখানে যে শূন্যস্থান,
সে অবচেতন তোমার কথকতায় কাঁপছে,
তুমি প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে যাওয়ার উপভোগ,
তুমি, হয়তো ন্যারেটিভই, অথচ এমনই ঈঙ্গিতের জাদু, ধাঁধাঁ লেগে গেছে
সময়গুলা ঢেউহীন সমুদ্রের পাড়,
রোদের প্রবোধবুলানো তন্দ্রাভাব
আর যেন কী এক মহাশূন্য!
আজ তোমার চেয়ে তাই অভিকর্ষ বল বেশি টানে বলে ভয় হয়,
তাকে কেবলই,
হঠাৎ কোনো শিশু কেঁদে উঠার মতো মনে পড়ে যায়।
আমার নবী
আমি হলুদ পৃষ্ঠাগুলায় তোমাকে পড়েছি, নবী
আর শুনেছি, পূর্বপুরুষের জিয়ারতের গান
হাদিসগুলাকে মনে হয়, দস্তরখানার উপর ছড়িয়ে থাকা বিচি
আমি তোমার খেঁজুর চিবানোর আস্বাদ পাই মুখে
আবু হুরাইরার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে বিড়াল পুষেছি একদা
কল্পনায় কান পেতেছি, কী নামে ডাকছো শুনতে
আমার সমস্ত জীবন, মেটাফর বেয়ে তোমাকে হাতড়ে যাওয়া
আমি তোমার ওজুর পানি ঢেলে দিতে চাই, নবী
গুহায় খাবার পৌঁছে দিতে চাই
আমার চোখ তোমার সিরাতের হলুদ পৃষ্ঠা ভিজিয়ে দিচ্ছে
আর হরফগুলা বাতাসে কাঁপতে কাঁপতে জেগে উঠছে
কথার মধ্যখানে হঠাৎ থেমে গেলে, যে নিস্তব্ধতা নির্মাণ হয়,
তা’ই তো বালির মরুভূমি, তোমার শতাব্দীর স্মৃতি,
বলো, আমি কার সাথে আর কথা বলি!
গোপন প্রেম
(তুমি ধান কুড়াতে এসো
আমি লাইন মারতে যাবো
তুমি লজ্জাবোধের বশে
বাঁ’পা দৌড়াতে মচকাবা।)
হঠাৎ পূজার ফুলের ঘ্রাণে
দাঁড়াই হিন্দুগাছের পাশে
ফুলের সোসাইটি মেন্টেইন
খারাপ, আমরা গেলেও হাসে
গ্রামের নিজস্ব সংস্কৃতি
কেমন হোমিওপ্যাথির মতো
সবই নিতান্ত হার্দিক
আবার কিছুটা বিব্রত
(তুমি ঘাট-মুখা রাস্তায়
ওদিক আমিও তবে যাবো
তুমি রাঁধতে বসে হঠাৎ
থেমে আমার কথাই ভাবো)
পাখি প্রাবন্ধিকই যেন
ভাবে বসে ডালের স্নেহে
তাদের নিবের মতোন ঠোঁট
ডোবায় কালির মতন দেহে
আহা ইস্থিতিশীল মাটি
রোদে লাগছেনা হাঁসফাঁস?
ছাইয়ে রূপান্তরের আগেই
কিছু গজিয়ে নাও হে ঘাস
(তুমি দাদির কাছে ভোরে
এসে আমপারা উল্টাবা
ঘুমে হাই তুলে হাই তুলে
আমি গলদ ধরে দেবো।)
সমুদ্রপ্রধান কবিতা
আমাদের সব স্মৃতি, রোদে রোদে ঘুরে বেড়ানোর।
যখন পুকুরে তালপাতার শ্যাডো, ছায়াপ্রপঞ্চের হাই।
যখন চারিদিকে বিরামবিস্তার, কাটা আপেলের মতো রোদ, পাতা-নুয়ে-পড়া-আবহ।
আমরা মৌসুমি ফলের ঋতু পালন করেছি,
ঘুমিয়েছি বাতি জ্বেলে রেখে। |
কোনো কোনো মেয়েকে দেখেছি, শিশুদের ভয় দেখিয়েছে, প্রেমিকের দিকে হেসে তাকিয়েছে।
ফাঁকা বয়াম ভরে রেখেছি রোদে
বুঝিনি,
দুপুরেই কেনো শুধু বোধে, এ হলুদ সৌরজগত সাজে।
পেন্সিল-ত্বকগুলো শার্পনারে কেটে কেটে হতো প্রজাপতি।
ফুফুর বাড়ির পাশে, সমুদ্র ঢেউয়ের ছায়া নিয়ে শুয়ে ছিলো
আমরা গেছি, নিজেদের মায়াগুলো প্রাচীন লবনে ধুতে
সেখানে ঘোড়ার খুর ও শামুকেরা ভিজছে।
সেখানে ধু ধু ব্যাপ্তিকেও উদ্যান মনে হয়
সেখানে মেদুর মেঘ এমন কৌতুকাবহে উড়ে, যেন আমাদেরই বানানো বিমান।
মন্থরতা
কোনো উত্তাপ নাই, বিলাপ নাই। কেবল ধীর, কেবলই ধীর। অংশগ্রহণের মতো বিচ্ছিন্নতা, আড়মোড়া ভাঙার মতো চলাচল। তুমি কোন দিনের খরতাপ, রাতের সন্তাপ। এই মুখে আয়না নাই, তবু কী দেখো! কোনো অনুবাদ, সারমর্ম নাই, কী বুঝোটা বলো?
ভ্রমরের মতো রোজ একই পথে ওড়া, কোনো ডাল নাই, কাল নাই, একই পথে ওড়া। বিমর্ষতার মতো টাল খেয়ে হাঁটা, পান খেয়ে গোধূলি কি বাটা ফেলে গেলো? পানের পিকের মতো লাল সূর্যটি, বটি দিয়ে কেটে দিলো আলো। তুমি কোন ঘুম নিয়ে শুয়ে আছো দেখি
ধরে আসা বৃষ্টি’কে
প্রথাগত দিন নিয়ে
পড়ে থাকি বলে
ঝাউগাছ ভরে আছে
ফোঁটা ফোঁটা জলে।
ধরে আসা বৃষ্টির
অপ্রতিভতার
আড়ালে স্বীকার করি
অভাব তোমার।
কিছু দূর ছাদে কারো
ভেজা মখমল
নারী ও জলের ঘ্রাণে
হতবিহ্বল।
বাতাসে ফুঁসিয়ে দিয়ে
ক্লান্তির জের
জানালা আঁধার করে
ঝুলে মেয়েদের…
অচলিত কিছু মেঘ
অতি ধীরলয়ে
এখনো বইছে যেন
সাধুভাষা হয়ে।
অতঃপর চারিদিক
কী যে অনাচারে!
হয়তোবা ভরে যাবে
লাল ব্রেসিয়ারে।
খালি গায়ে
খালি গায়ে শুয়ে থাকে কেউ
শহরের ভাড়া করা ঘরে
প্রজাপতি মুখে নিয়ে ছাদে
কোনো এক টিকটিকি নড়ে
বাল্বহীন হোল্ডার কিছু
মাকড়ের জাল বোনা তাতে
আমাদের খাওয়া এঁটো মাছ
পড়ে আছে বিড়ালের পাতে
স্লিপ করা দুইফোঁটা জল
পড়ে গিয়ে যেন বিব্রত
ব্যাগে নিয়ে বয়ে চলি এক
বড়ুয়া নারীর দেয়া ক্ষত
খানিকটা পড়ে যায় জলে
ধুতে গিয়ে চাল চিঁড়ে যার
তাকে দিয়ে ঝেঁকে নিতে চাই
কিছু কিছু স্মৃতির ব্যাপার
বেসিনের ভাঙা দর্পণে
পানি মেখে ঠিক করি চুল
মাঝেমাঝে কেটে যাই কেন
আমিও কি তোমার আঙুল?
গজলের পুরানো ক্যাসেট
ফিঁতা ছেঁড়া, বাজেও না অত
বিছানা’ই ধরে রাখে শুধু
মোটা কোনো নার্সের মতো
আমার আলস্যকে
লাল মাছের মতো সূর্য, চিরাচরিতের দিকে যায়, আমাদের জন্য রেখে ধু ধু আঁশ।
তোমার আধোয়া কাপড়ের ঘ্রাণ, ঠান্ডা হাওয়া বয়ে নিয়ে আসে।
আমি বসে থাকি নিদ্রাভঙ্গ, মুখ ধুতে যাওয়ার পূর্ব-অবসাদে।
দৃশ্যে, উতলে উঠে মাড়।
হাই-তোলার মন্থরতা নিয়ে, বিনিদ্র হই
তারপর, ঘুমিয়ে পড়ি
সমস্ত চিন্তা উজাড় করে দিয়ে সন্ধ্যার আলস্যকে।
কাজী ওয়ালী উল্লাহ
জন্ম ২০০০ সালে, চিটাগাং জেলার গ্রামের দিকে। বর্তমানে চিটাগাং শহরেই বসবাস করেন, পড়াশোনাও একই শহরে। বছরের বেশির ভাগ সময় কাটে মাদ্রাসার হোস্টেলে আর ক্লাসে। ছুটির দিন বলতে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে শনিবার ঘুম থেকে জাগা পর্যন্ত। ফোনে ইন্সটল করা একটা অ্যাপ, আর একাডেমিক পড়াশোনার জন্য দিস্তা মেপে কেনা খাতাতে কবিতা লেখেন। কবিতা লেখেন অকাতরে তবে কবিতার চেয়ে চেয়ে গদ্য পড়েন বেশি।
বুঝা গেলো, পাঠক কালে কবি ভালোই ছিলেন। মনোযোগী ছিলেন প্রেমিকার দু’ঠোঁটের মিলনের মত। কবিতার ভেতর পাঠককে ডুবিয়ে দিতে অনেকটাই সফল বলা যায় কবিকে। নবী’কে নিয়ে তার কবিতা আছে এখানে, তাই প্রসংশা করা যাবে না। কারণ প্রসংশায় নবীজির নিষেধ আছে বড্ড।
শুভকামনা থাকলো কবির জন্য।
ভালোবাসা কবির প্রেমিকার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।