আজ বৃহস্পতিবার, ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সকল প্রকার দলমত এবং পুলিশ নির্বিশেষে

চারটি কবিতা

।। সাদ রহমান ।।

প্রতিপক্ষ

ওরা নাকি আমাকে
‘প্রতিপক্ষ’তে লেখতে নাকি দিবে না

আর তাই আমারও, সত্যি নাকি মন খারাপ!

কিন্তু ‘প্রতিপক্ষ’
কি আমার লেখাগুলো
উপরের কোন দিকে রাখবে
মানে সেটাও কি আর
আমার কনশাস থেকে বাদ

অরা বলে, যদি লেখো
‘প্রতিপক্ষ’কে– তাহলে ‘প্রতিপক্ষ’ও লিখেছিল
বাংলার পিউরনেস অব
মঙ্গল শোভাযাত্রাকে

লিখেছিল কি?
কিন্তু ভাই,
আমি তো তাই, পড়ে গেছি
কঠিন মনস্তাত্ত্বিক ফাঁপড়ে

অরা বলে
‘প্রতিপক্ষ’কে আমি লেখলে
লেখবো না কোনোদিনও
আর যেন ওদেরকে– কোনোদিনও,
এমনকি এই মহিমান্বিত বিশ্বে
আমার সামনে
নাস্তানাবুদ হয়ে যাবে, কাঁটাতারের সাঙ্গিকে!

ওরে বাপ রে…

আমাকে
বলে কিনা প্যারালাইজড দিবে করে ওরাই সকলে মিলে!

কিন্তু সেটাও বা
কী করে সম্ভব হবে?

এখন,
বরং ‘প্রতিপক্ষ’ই যদি নিজ থেকে
আমার লেখাগুলো
একটু না হয় উপরের দিকে ছাপে

তাহলে,
কিছুটা আমার বেঁচে যাওয়া
আর একা একা কলা খাওয়া
বিপন্ন প্রত্যয়ে
ঘটতে পারে;

বাকিটা জীবন– নাহলেও
যতদিন বাঁচতে পারি, অগ্নিকে
বৃক্ষকে, লতাকে, কলাকে
লিখবো না আর
ভাববো না
‘প্রতিচিন্তা’, অথবা আরও কোনও
‘প্রতিপক্ষ’কে

একপ্রকার,
প্রায় সকল প্রকার দলমত এবং পুলিশ নির্বিশেষে
বিপ্লব আর প্রতিবিপ্লবের
ঝান্ডু মুছে দিয়ে
পক্ষ আর প্রতিপক্ষের
সাদা হাঁস সন্ধ্যায় পানির মায়া ভুলে
এক দৌড়ে চলে যাব বাগানের
ওই মধ্যিখানে

বসে থাকব আমার বাকিটা নশ্বর জীবন
মহাকবি বিশ্বকবি আবুল হাসানের বেশে

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০


আমাদের পাড়ায়

আজ সকাল দশটায় ঘুম থেকে ওঠার পরে আমাদের পাড়ায়
গ্যাসের সিলিন্ডার নিয়ে আসা হয় হোটেল ব্যবসার নামে
কিন্তু ফাটবে না কখনোই এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করে ব্যবসায়ীর বাবা

তখন আস্তে করে একজন বলে ওঠে জটলার মধ্য হতে–
“আমরা কি হাবা?”

“ফাটলে তো আমরাই আর মরলেও আমরাই–
তুমি কি আর আমগো সাথে যাবা?”

এইসব শুনে টুনে আমি ঘরে ফিরে যাই
প্রখর রৌদ্রের ঝাঁঝে নিজের বিছানায় আবার গিয়ে আস্তে করে ঘুমাই

ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে ভয়ার্ত হয়ে যাই, যদি সিলিন্ডার ফেটে যায়
স্বপ্নের মধ্যে পাড়ার ব্যবসায়ী আর তার বাবার চেহারা মনে পড়লে
একটা কৃত্রিম মায়া তৈরি হয়ে পড়ে অসম্ভব ক্রিয়ায়

পাড়ার ষণ্ডাদের হাত থেকে আমি ব্যবসায়ী আর তার বাবাকে
বাঁচাবার জন্য উঠে পড়ে লাগি

কিন্তু লাভ হয় না, লাত্থি ঘুসি কিল পড়তে থাকে গণতালে
কেউ ল্যাওড়ায় ধরে টান মারে আর কেউ ধরে বালে
নাজেহাল হতে থাকে ব্যবসায়ী পিতাপুত্র

তখন পাশের রাস্তা দিয়ে কমিশনার দুপুরের নামাজের জন্য হেঁটে চলে যায়

এই গরম দুপুরে, প্রখর রোদ্র-এর তাপে আমার আর কমিশনারের
উভয়ের মাথা টলমল করে
আমরা তখন কেউই কোনো বাস্তবিক বা অভ্যন্তরীণ
বিষয়গুলো টের পেতে আর পারি না

যথারীতি, কমিশনারকে পিছনের কাতারে রেখে জোহরের নামাজ সম্পূর্ণ হলে
অতঃপর ঘুম ভাঙে, একটু স্বাভাবিক লাগে, একটু মায়ার রেশ থাকে

একটু হাসিকান্না, আর একটু শান্ত রোদ, ঝিমিয়ে পড়লেই পারে
ছোট ভাই দরজা খুলে এসে দুপুরেরই তৃষ্ণার্ত গাজরের সালাদ দিয়ে যায়

৮ সেপ্টেম্বর


সমাজের চিত্র

সব কিছু কেবলই বেঠিক হতে চললো
যতোই সকালের আলোগুলি আরো ফুটলো

ভালো জীবনের চিন্তাগুচ্ছ ফের বাদ দিয়ে
আকাশকুসুম সব গুটায়ে রেখে দিয়ে
মনে হলো যাই, মনে হলো যাওয়ার চেয়েও
আসতাম যদি আবার, তাই মঙ্গল হতো

দুই মুঠো ভাত নিয়ে প্লেটে ডিম তেলে ভেজে খাই
রঙিন গল্প আসে, পাশে সকালের এমনই ভোরের চরিত্র
উঠেছে ঘুম থেকে, নাকি উঠেনি, শহরের দৌহিত্র?

খাওয়া শেষ হয়, তখনও সকাল বসে নির্বিকার
পাখি তো দেখে লোকে, দুই পাতা কবিতাও লেখে

পরিণত প্রস্তাব, অথবা কি ভোরেরই ভিন্ন মর্ম তৈরি করে?
পাখিরাও দেখে দেখে শিখে, মানুষ তো বটেই
দেখেছি সভ্যতা শিখবার পরে মানুষ তো ক্যাউ করে ওঠেই…

বেলা বয়ে যায়, মনে হয় সবকিছু বৃথাই অযথা কষ্ট
কষ্ট
বার করে আনতে চাই, বার হয়, বটেই
ততোই, প্রবিষ্ট হই

মিথ্যা কথা বললে, সত্যের মতো এই ভোরে
পাখির খাঁচায় শত বন্দি হয়ে রই

এখন বিশেষ কোনো সময় কাটে না
উপন্যাসের একটা বই নিয়ে বসবো যে, পত্রে–
পত্রে পত্রে ওই সমাজের চিত্রই

আজকাল মনে হয় কবিতাও শুধু ওই, চিত্রই
আঁকে ও পরিষ্কার করে, আঁকে
তাই পরিষ্কারে বড়দা তো বাধ্যই!

উপন্যাসের সব বই বিনত প্রস্তাবে
নিচুমনে ফিরিয়ে দিয়ে আসি, যেহেতু
কিছুই থাকে না প্রায়

কোনোখানে, অবশ্য কখনো তো, ঠিকই সব ছিল
লেগেছিল, গেঁথেছিল ঠিকই হায়

উচ্চরবে কতো গান
চরিত্ররা গাইতে জানতেন, বলে ভাবতাম
বড়দার কথায়!

১১ সেপ্টেম্বর


যাদেরকে আর ডেকো না

যাতনার পরে এসেছে এ ভোর
বসন্তের পরে চেতনা

ঘুমানোর পরে যারা জাগবে না
তাদেরকে আর ডেকো না

কলসিতে আজ নতুন জলের
থাকবে নতুন ছন্দ

ভালোর পরে তো মন্দ হবেই
মন্দের পরে মন্দ

৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

অলঙ্করণ: বৈশালী
প্রচ্ছদের ছবি: Joan Miró i Ferrà, Spain


সাদ রহমান


জন্ম, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ১৯৯৬, ঢাকা। প্রধান পরিচয় : লেখক। পদ্য এবং গদ্য— সাহিত্যের এই দুই সাইডেই সমান আগ্রহ। সেই সঙ্গে, টান আছে দর্শনচর্চা ও পোলিটিক্যাল বিষয়গুলোর দিকে। ভবিষ্যতে সিনেমাও বানাবেন এমন আশা করেন।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top