রবীন্দ্রনাথের ‘রাশিয়ার চিঠি’

।। বদরুদ্দীন উমর ।।

রবীন্দ্রনাথের ‘রাশিয়ার চিঠি’ নামে ২০০৯ সালে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, লেখক, সমাজতাত্ত্বিক বদরুদ্দীন উমর। রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে তাঁর সেই লেখাটি পুনঃপ্রকাশিত হচ্ছে ‘প্রতিপক্ষ’ পত্রিকায়।

রবীন্দ্রনাথ রাশিয়ার চিঠিগুলোতে ১৯৩০ সালে অর্থাৎ বিপ্লবের মাত্র তের বছর পর সেখানকার অবস্থা দেখে অভিভূত হয়েছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি রাশিয়ার কিছু সমালোচনাও করেছিলেন, যা কিছুটা ছিল অনুষ্ঠানভিত্তিক এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্পর্কে পশ্চিমা প্রচারণার দ্বারাই অনেকাংশে প্রভাবিত। তিনি তার তৃতীয় চিঠিতে নিজেই লিখেছিলেন, ”মস্কো থেকে যখন নিমন্ত্রণ এলো তখনও বলশেভিকদের সম্বন্ধে আমার মনে কোনও স্পষ্ট ধারণা ছিল না। তাদের সম্বন্ধে ক্রমাগতই উল্টো উল্টো কথা শুনেছি…”

রবীন্দ্রনাথের ‘রাশিয়ার চিঠি’

পঁচিশে বৈশাখ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন উপলক্ষে অনেক ফাঁকা কথা, অনেক আদিখ্যেতা হয়। লোকের মধ্যে গদগদ ভাব দেখা যায়। তার মাহাত্ম্য নিয়েও বলা হয় অনেক কথা। রবীন্দ্রনাথের মাহাত্ম্য উপলব্ধির একটা উপায় হল, যিনি নিজেকে জাত বুর্জোয়া বলে আখ্যায়িত করেছিলেন সেই রবীন্দ্রনাথের ‘রাশিয়ার চিঠি’ পড়া।

বাংলাদেশে এবং পশ্চিমবাংলাতেও ২৫শে বৈশাখ ও ২২শে শ্রাবণ উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথের গল্প, গান, নাটক অবলম্বন করে অনেক প্রোগ্রাম হয়। নিঃসন্দেহে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বিশ্রামের কবি ও গীতিকার। সে তুলনায় তার নাটকের মধ্যে বিদ্রোহের উপাদান অনেক বেশি। এর পরিচয় তার জন্ম-মৃত্যুর অনুষ্ঠানে পাওয়া যায়; পাওয়া যায় ১ বৈশাখ ও বসন্তবরণ উৎসবের মধ্যেও। যেভাবে এসব অনুষ্ঠান পরিকল্পনা এবং উপস্থিত করা হয় তার থেকে মনে হয়, এর বাইরে রবীন্দ্রনাথের আর কিছু নেই। মানুষের সামাজিক জীবনের উন্নতির জন্য ‘জাত বুর্জোয়া’ হিসেবে লুণ্ঠনকারী বুর্জোয়াদের বিপরীতে রবীন্দ্রনাথের যে গভীর চিন্তা-ভাবনা ছিল, তার কোন পরিচয় এসব দিনের অনুষ্ঠানে পাওয়া যায় না। শিক্ষার ক্ষেত্রে, ইতিহাস চর্চা বিষয়ে, সমাজে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে, শোষণ-বঞ্চনা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের অবস্থান বোঝা যায় না। উপরোক্ত সব দিবসে রবীন্দ্রনাথের কবিতা, গান, নাটক অবলম্বন করে নানা অনুষ্ঠান সত্ত্বেও মানুষ হিসেবে রবীন্দ্রনাথের পরিচয় আড়ালেই থেকে যায়। কাজেই রবীন্দ্রনাথের গান, নাচ, নাটক নিয়ে যাদের গদগদ ভাবের শেষ নেই, তাদের ক’জন রবীন্দ্রনাথ থেকে কোন প্রকৃত শিক্ষা লাভ করে, তার ঠিক নেই। শুধু তাই নয়, দেখা যায় যে, জনগণের পকেট মেরে যারা বড়লোক হয় অথবা ভবিষ্যতে বড়লোক হওয়ার ভাবনায় মশগুল থাকে, তারাই এমন অনুষ্ঠানে জায়গা দখল করে বঙ্গ সংস্কৃতি চর্চায় এগিয়ে থাকে।

১৯১৯ সালে ইংরেজরা পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে শত শত মানুষকে গুলি করে হত্যার পর কংগ্রেসের নেতা মহাত্ম্যা নামে পরিচিত মোহন লাল করম চাঁদ গান্ধী তার বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদ না করে মৌন থাকলেও রবীন্দ্রনাথ তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তাকে দেয়া ‘নাইট’ খেতাব বর্জন করেছিলেন। সেই ফ্যাসিস্ট হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আরও নানাভাবে তিনি তার বক্তব্য প্রদান করেছিলেন। এই বক্তব্যের মধ্যে যে রবীন্দ্রনাথের দেখা পাওয়া যায় সেই রবীন্দ্রনাথকেই পাওয়া যায় তার রাশিয়ার চিঠিতে।

রবীন্দ্রনাথ সোভিয়েত সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৩০ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়া গিয়েছিলেন। সেখানকার অবস্থা দেখে যে চিঠিপত্র তিনি লিখেছিলেন সেগুলোই তার রাশিয়ার চিঠি নামে পরিচিত। লক্ষ্য করার বিষয় যে, রবীন্দ্রনাথের অনেক চিঠিপত্র ও রচনা নিয়ে কথাবার্তা ও লেখালেখি হলেও তার রাশিয়ার চিঠির কথা শোনা যায় না বললেই চলে। এটা শুধু যে সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধেই এক চক্রান্ত তাই নয়, এ চক্রান্ত রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধেও। কারণ এর দ্বারা রবীন্দ্র চরিত্রের এমন একটি দিককে আড়াল করা হয়, যার মধ্যে তার মহত্ত্বের পরিচয় সব থেকে বেশি উচ্চারিত।

রবীন্দ্রনাথ রাশিয়ার চিঠিগুলোতে ১৯৩০ সালে অর্থাৎ বিপ্লবের মাত্র তের বছর পর সেখানকার অবস্থা দেখে অভিভূত হয়েছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি রাশিয়ার কিছু সমালোচনাও করেছিলেন, যা কিছুটা ছিল অনুষ্ঠানভিত্তিক এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্পর্কে পশ্চিমা প্রচারণার দ্বারাই অনেকাংশে প্রভাবিত। তিনি তার তৃতীয় চিঠিতে নিজেই লিখেছিলেন, ”মস্কো থেকে যখন নিমন্ত্রণ এলো তখনও বলশেভিকদের সম্বন্ধে আমার মনে কোনও স্পষ্ট ধারণা ছিল না। তাদের সম্বন্ধে ক্রমাগতই উল্টো উল্টো কথা শুনেছি। আমার মনে তাদের বিরুদ্ধে একটা খটকা ছিল। কেননা গোড়ায় ওদের সাধনা ছিল জবরদস্তির সাধনা।” এই ‘জবরদস্তির সাধনা’র অর্থ হল বিপ্লবের সাধনা। রবীন্দ্রনাথ যে বিপ্লবপন্থী ছিলেন না তা বলাই বাহুল্য। যাই হোক, তার চিঠি সম্পর্কে কিছু আলোচনার আগে এটা বলা দরকার যে, সব কিছু দেখে তিনি যদি শুধু মুগ্ধ কথাবার্তা বলেই তার মূল্যায়ন শেষ করতেন, সেটা তার ‘জাত বুর্জোয়া’ চরিত্রের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতো না। তিনি যে সেটা করেননি, মুগ্ধ কথাবার্তার সঙ্গে কিছু সমালোচনাও করেছিলেন, এর মধ্যে তার সততার পরিচয় ছিল।

১৯১৯ সালে ইংরেজরা পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে শত শত মানুষকে গুলি করে হত্যার পর কংগ্রেসের নেতা মহাত্ম্যা নামে পরিচিত মোহন লাল করম চাঁদ গান্ধী তার বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদ না করে মৌন থাকলেও রবীন্দ্রনাথ তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তাকে দেয়া ‘নাইট’ খেতাব বর্জন করেছিলেন। সেই ফ্যাসিস্ট হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আরও নানাভাবে তিনি তার বক্তব্য প্রদান করেছিলেন। এই বক্তব্যের মধ্যে যে রবীন্দ্রনাথের দেখা পাওয়া যায় সেই রবীন্দ্রনাথকেই পাওয়া যায় তার রাশিয়ার চিঠিতে।

রাশিয়ার চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্পর্কে তাদের অর্থনৈতিক নির্মাণ, মানবিকতা, সাম্যচিত্ত জাগিয়ে তোলার নানা শিক্ষাগত ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে যা কিছু লিখেছেন তার সব কিছু নিয়ে এখানে আলোচনা করা সম্ভব নয়। তবে তার জন্মদিনে নানা উৎসবের আড়ম্বরে তার যে পরিচয় আড়ালে থেকে যায় সে পরিচয় কিছুটা উপস্থিত করার জন্য তার রাশিয়ার চিঠি থেকে কিছু উদ্ধৃতি প্রাসঙ্গিকই হবে।
২৫শে সেপ্টেম্বর লিখিত তৃতীয় চিঠিতে তিনি বলেছেন, “আপাতত রাশিয়ায় এসেছি, না এলে এ জন্মের তীর্থ দর্শন অত্যন্ত অসমাপ্ত থাকত।”

প্রথম চিঠিতে তিনি লিখেছেন, “আমাদের সকল সমস্যার সবচেয়ে বড় রাস্তা হচ্ছে শিক্ষা। এতকাল সমাজের অধিকাংশ লোক শিক্ষার পূর্ণ সুযোগ থেকে বঞ্চিত, ভারতবর্ষ তো প্রায় সম্পূর্ণই বঞ্চিত। এখানে এই শিক্ষা যে কী আশ্চর্য উদ্যমে সমাজের সর্বত্র ব্যাপ্ত হচ্ছে তা দেখলে বিস্মিত হতে হয়। শিক্ষার পরিমাণ শুধু সংখ্যায় নয়, তার সম্পূর্ণতায়, তার প্রবলতায়। কোনও মানুষই যাতে নিঃসহায় ও নিষ্কর্মা হয়ে না থাকে, এজন্য কী প্রচুর আয়োজন ও কী বিপুল উদ্যম। ওই শ্বেত রাশিয়ার জন্য নয়, মধ্য এশিয়ার অর্ধসভ্য জাতের মধ্যেও এরা বন্যার মতো বেগে শিক্ষা বিস্তার করে চলেছে; সায়েন্সের শেষ ফলন পর্যন্ত যাতে তারা পায় এজন্য প্রয়াসের অন্ত নেই। এখানে থিয়েটারে ভালো ভালো অপেরা ও বড় নাটকের অভিনয়ে বিষম ভিড়, কিন্তু যারা দেখছে তারা কৃষি ও কর্মীদের দলের। কোথাও এদের আবাসন নেই। ইতিমধ্যে এদের যে দুই-একটা প্রতিষ্ঠান দেখলুম সর্বত্রই লক্ষ্য করেছি, এদের চিত্তের জাগরণ এবং আত্মমর্যাদার আনন্দ।”

দুর্বলকে শক্তি দেয়ার যে সাধনা ও কর্মকাণ্ড সেখানে রবীন্দ্রনাথ দেখেছিলেন, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যদি কেউ বলে, দুর্বলের শক্তিকে উদবোধিত করার জন্যই তারা পণ করেছে, তাহলে আমরা কোন্ দুঃখে বলব যে, তোমাদের ছাড়া দাঁড়াতে নেই। তারা হয়তো ভুল করতে পারেÑ তাদের প্রতিপক্ষরাও যে ভুল করছে না তা নয়।

“বার্লিনে এসে একসঙ্গে তোমার দু’খানা চিঠি পাওয়া গেল। ঘন বর্ষার চিঠি, শান্তিনিকেতনের আকাশে শালবনের ওপরে মেঘের ছায়া এবং জলের ধারায় শ্রাবণ ঘনিয়ে উঠেছে, সেই ছবি মনে জাগলে আমার চিত্ত কি রকম উৎসুক হয়ে ওঠে, সে তোমাকে বলা বাহুল্য। কিন্তু এবারে রাশিয়া ঘুরে এসে সেই সৌন্দর্যের ছবি আমার মন থেকে মুছে গেছে। কেবলই ভাবছি, আমাদের দেশজোড়া চাষীদের দুঃখের কথা।”

দেশে প্রকৃত গণতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা ও জনগণের জীবন নতুন ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর চেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে সামরিক খাতে অপব্যয় যে এদেরকে বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছিল, এ ব্যাপারে তিনি যেভাবে দৃষ্টি আর্কষণ করেছেন তা সত্যিই বিস্ময়কর। ‘শত বুর্জোয়া’ হয়েও যে তিনি এ বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন এর মধ্যে যে শুধু তার গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় আছে তা-ই নয়, সোভিয়েত ইউনিয়নে যে তাদের নির্মাণকাজ কি প্রবল প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে করতে হয়েছিল তার উল্লেখ করে তিনি তাদের যে প্রশংসা করেছিলেন এটা তার শ্রেণীর লোকদের মধ্যে পূর্ণতাই বলতে হবে।
এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য হল, “মনে রেখো, এখানে যে বিপ্লবে জারের শাসন লয় পেলে যেটা ঘটেছে ১৯১৭ খিস্টাব্দে। অর্থাৎ তের বছর পার হল মাত্র। ইতিমধ্যে ঘরে-বাইরে এদের প্রচণ্ড বিরুদ্ধতার সঙ্গে লড়ে চলতে হয়েছে। এরা একা, অত্যন্ত ভাঙাচোরা একটা রাষ্ট্রব্যবস্থার বোঝা নিয়ে। পথ পূর্বতন দুঃশাসনের প্রভূত আবর্জনায় দুর্গম… অর্থসম্বল এদের সামান্য; বিদেশের মহাজনী গদিতে এদের ক্রেডিট নেই। দেশের মধ্যে কলকারখানা এদের যথেষ্ট পরিমাণে না থাকাতে অর্থ উৎপাদনে এরা শক্তিহীন। এই জন্য কোনোমতে পেটের ভাত বিক্রি করে চলেছে এদের উদ্যোগপর্ব। অথচ রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সকলের চেয়ে যে অনুৎপাদক বিভাগ-সৈনিক বিভাগÑ তাকে সম্পূর্ণ সুদক্ষ রাখার অপব্যয় এদের পক্ষে অনিবার্য। কেননা আধুনিক মহাজনী যুগের সমস্ত রাষ্ট্রশক্তি এদের শত্রপক্ষ এবং তারা সকলেই আপন আপন অস্ত্রশালা কানায় কানায় ভরে তুলেছে।”

রাশিয়া সম্পর্কে যেসব কথা রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, তার কারণ সম্বন্ধে বলতে গিয়ে তিনি লিখেছেন “তোমার মতো ভদ্র মহিলাকে সাধারণ ভদ্রগোছের চিঠি না লিখে এ রকম চিঠি যে কেন লিখলুম তার কারণ চিন্তা করলেই বুঝতে পারবে, দেশের দশা আমার মনের মধ্যে কি রকম তোলপাড় করছে। জালিয়ানওয়ালাবাগের উপদ্রব্যের পর একবার আমার মনে এই রকম অশান্তি জেগেছিল।

দেশে প্রকৃত গণতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা ও জনগণের জীবন নতুন ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর চেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে সামরিক খাতে অপব্যয় যে এদেরকে বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছিল, এ ব্যাপারে তিনি যেভাবে দৃষ্টি আর্কষণ করেছেন তা সত্যিই বিস্ময়কর। ‘শত বুর্জোয়া’ হয়েও যে তিনি এ বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন এর মধ্যে যে শুধু তার গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় আছে তা-ই নয়, সোভিয়েত ইউনিয়নে যে তাদের নির্মাণকাজ কি প্রবল প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে করতে হয়েছিল তার উল্লেখ করে তিনি তাদের যে প্রশংসা করেছিলেন এটা তার শ্রেণীর লোকদের মধ্যে পূর্ণতাই বলতে হবে।
এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য হল, “মনে রেখো, এখানে যে বিপ্লবে জারের শাসন লয় পেলে যেটা ঘটেছে ১৯১৭ খিস্টাব্দে। অর্থাৎ তের বছর পার হল মাত্র। ইতিমধ্যে ঘরে-বাইরে এদের প্রচণ্ড বিরুদ্ধতার সঙ্গে লড়ে চলতে হয়েছে। এরা একা, অত্যন্ত ভাঙাচোরা একটা রাষ্ট্রব্যবস্থার বোঝা নিয়ে। পথ পূর্বতন দুঃশাসনের প্রভূত আবর্জনায় দুর্গম…


মোট ১৩টি চিঠি এবং উপসংহারে তিনি রাশিয়া সম্পর্কে অনেক কিছু লিখেছিলেন, যা দারুণভাবে পাঠযোগ্য। রাশিয়া সফর তার চিত্তে কি ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল সে বিষয়ে তার একটি উদ্ধৃতি দিয়েই এখানে শেষ করব। রাশিয়া থেকে ফেরত পথে বার্লিন পৌঁছে ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি এক চিঠিতে লেখেন, “বার্লিনে এসে একসঙ্গে তোমার দু’খানা চিঠি পাওয়া গেল। ঘন বর্ষার চিঠি, শান্তিনিকেতনের আকাশে শালবনের ওপরে মেঘের ছায়া এবং জলের ধারায় শ্রাবণ ঘনিয়ে উঠেছে, সেই ছবি মনে জাগলে আমার চিত্ত কি রকম উৎসুক হয়ে ওঠে, সে তোমাকে বলা বাহুল্য। কিন্তু এবারে রাশিয়া ঘুরে এসে সেই সৌন্দর্যের ছবি আমার মন থেকে মুছে গেছে। কেবলই ভাবছি, আমাদের দেশজোড়া চাষীদের দুঃখের কথা।”
বর্ষার কবি, বিশ্রামের কবি, রবীন্দ্রনাথের ভাবনার এই জগতের সঙ্গে কয়জনের পরিচয় আছে?


৬.৫.২০০৯

Share