।। নাদিয়া জান্নাত ।।
বিবাহ প্রস্তাব
তোমার আম্মা সকালে কোরআন পড়লেন। ভাবী পিঠা বানালেন। তুমি পাশের ঘরে। আমি ঘাপটি মেরে শুয়ে আছি আম্মার ঘরে। তুমি একবার এই ঘরে আসলা। কিছু বোঝার আগেই কপালে চুমু খাইলা। সারা জীবন তোমার কাছে থেকে যেতে বললা আমারে।
তোমার বাড়ির পাশে রাধাকৃষ্ণপুর বাজার। পাশে ইস্কুল।
তারো পাশে বড় ময়দান। ঈদে মেলা হয় ময়দানে।
তুমি বললা ঈদ এলে মেলায় নিয়ে যাবা। তোমার আম্মারে খালাআম্মার বদলে আম্মা ডাকার অনুমতি দিলা
আরো বললা, যদি মরণ আসে বকুল আর জাম গাছের তলে আরো সব কবরের পাশে আমারে তুমি কবর দিবা।
ঈঙ্গিত দিয়ে তুমি কি আমারে বিবাহ প্রস্তাব দিলা?
লাভ বাইট
প্রেমিক মানুশটারে বৃক্ষ ভাবলাম।
প্রেমিকের শার্টটারে বৃক্ষের শরীরে আগাছা ভাবলাম
মানুষের শরীর থেকে আগাছা সরাইতে সরাইতে সাপের কামড় দেখলাম—
দেখলাম, বুকের মফস্বলে সাপের দাঁত আঁকা সোনার সিঁড়ি।
কে এমন তুফান নামাইলো! কে তারে দিলো সন্দেহবাতিক কামড়ের ফুল!
যেন জখমের ভেতর আঁকাঁ বাঁকা তুরাগ টকটকে লাল বিষে ডিগবাজি খাইতেছে ঘন ঘন; যেন সে ফুটে আছে সবথেকে নিরাপদে— প্রেমিকের বুকে
এই পথ দিয়ে
পশ্চিম বগুড়া রোড, বরিশাল যাওয়া যায় না
মাওয়া ফেরীঘাট পার হয়ে কাঠাঁলবাড়ি।
এরপর কৈ যাবা? মাদারীপুর ঘুরে সন্ধ্যায় বরিশাল যাবা কি?
লেবু কাটা দিনে বরিশাল যেও না।
যদি যাও, বগুড়া রোড যাবা কি! গেলে যেও।
শোভনার প্রেমে পড়ো; আর তার খোলা কাঁধে
ঠোঁট দিয়ে এঁকে দিয়ো ট্রমা
বিবাহ
(ক)
পৃথিবীর বকুলেরা একদিন যাবে
খসেখসে, জানালার পাশে গাছ থেকে
টুপ করে ঝরে যাবে সুবাসিত প্রেম।
ফুলেদের যা যা ছিলো, তারা বিবাহের
(খ)
কবুল— আষাঢ় মাস
কবুল— জন্মদিন
মোনাজাতে কবুল তুমি, ক্ষুধা
‘নটে গাছটি মুড়োলো’। কবুল হাততালি।
পিওর ব্যাচেলর কবুল, বকুল বোবাকালা
কবুল।
কবুল।
কবুল।
মেঘ-মৈথুন কবুল তোমার, কবুল দুঃখনিদ্রা।
উড়ে এসে জুড়ে বসা কবুল,
করোনাকাল কবুল
কবুল তুমি বর—
কবুল তুমি বউ—
(গ)
কবর আমরা বুকে পুষছি,
তার এপিটাফে লেখা
‘বিবাহিত’
(৫)
নিয়তি একটি রিসাইক্লিং প্রসেস, তাকে মানছি
ঝুঁকে ঝুঁকে নদী দেখতে নেই।
ফুল এবং প্রাণীদের মধ্যে বেছে নিতে হয় ‘কুকুর’।
হাইফেন থেকে সরে এসে যা যা গোপন ভ্রমণ
তা তা আমাদের ‘আয়ু’—
বর্ষার পানিতে ডুবে গেছে কবর।
ধানে ঠোঁকর দিচ্ছে পুঁটি মাছেদের সারি।
মিনিংলেস ব্যথা জ্বরের ভেতর অনেকটা উপচে গেলে
হৃদয়ের কোথাও ঝুলতে দেখা যায় ‘টু লেট’।
বিধবার শরীরে অচীন চার্চঘর,
হাঁটু গেঁড়ে বসে থাকা নববধূ আলো এখন টায়ার্ড— তবুও;
চলে যাবার পথ উল্টে গেলে একা বসে থাকে,
যে কোন রবিবার—
অলঙ্কারণ: বৈশালী
নাদিয়া জান্নাত
বাংলাদেশের তরুণ কবিদের মধ্যে অন্যতম। রংপুরের মেয়ে। ইতোমধ্যে তিনটি কাব্যগ্নথ প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলি হলো যথাক্রমে, ‘বুনোফুল ও ছবিওয়ালার গল্প’, ‘শালুক ফুলের যাতনা’ এবং ‘ইতি তোমার লাবণ্য’।
ভালো লেগেছে।