আজ বৃহস্পতিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মানুষ যেমন বলে মানুষীর তরে

কবিতাগুচ্ছ

।। আহসান উল্লাহ ।।

কথা কও কালোজল— খামে রাখা টাকা
কথা কও হে সবুজ সরোবর পাখি
নদী তুমি কথা কও খরস্রোতে ডাকা
কথা কও ভেঙে যাও আমার একাকী

তিতিরিনা এবং তিনটে টিঁপ

একবার ঘুম ভাঙে —
চোঁখে মেখে মেখে শতাব্দীর ঘোর।
হলুদ ডিমলাইটে লোটাকম্বল আত্মগত হয়
কেতুরসমগ্র ভাসে নিবারণ হলুদ আলোয়
তিতিরিনা হাসে ফাঁসে বেমালুম চুম্বন যবনিকা।

দিনের পথিকেরা দিনেই রয়
দিনদিন তাদের দ্বীনপ্রীতি দিনেই দেখা দেয়
রাতে অন্য বিষয়
সময় দিন আর রাতে ভাতে মাছ মেখে
মুখে তুলে নেয় প্রলয়নলা
বারবিতা আশ্রয় খুঁজে অন্ধকার গলি গলি
বারান্দায় রকিং চেয়ারে ঝিমোয়
কতিপয় মেদহীন কবিতা।

সুকান্ত আজ সমুদ্র পেরিয়ে বৃহৎ ব্রিটেনে
কবিতার দায় চাপিয়েছে সেথা ভাতের হোটেল
তিতিরিনার কোনও খোঁজ নেই আর
সে হলুদ শাড়ি এবং তিনটে টিঁপ
ত্রিভুজের মতো কপাল
ফর্সা কপাল
ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া কদমের মতো চুল
লাশকাটা ঘরে ডোমদের ছানাছানি
তারপর –
তার আর পর ছিল কই
হেঁটে চলে গেল বিষুব বিপ্রতীপে !


সাধুসঙ্গ

অন্ধকার একটা সাঁকোর উপর দিয়া হাইটা যাইতেছে
শীতের শেষ বাতাস-

সাধুসঙ্গ চাইতে আসা ভাবখয়রাতিরা একে একে আইসা দাঁড়াইতেছে রাস্তার উপর
আবছা একটা চাঁদের আলোর নিচে
ওরা দেখতেছে এই অন্ধকার তাদেরও চিনা ফেলাইছে
বুকের ভিতর থিকা খুইলা আসতেছে শৈশব
একটা আচমকা মোমেন্ট আইসা
উদিলা কইরা দিতেছে তাদেরে
একটা অন্ধ বাদুড় ঝাপটানির মতো শব্দ কইরা নিজেদেরে হাতড়াইতেছে ইতিউতি।


একটি নীরব প্রহর

কথা কও
বালুঘাট ছেড়ে যাওয়া যান
কথা কও খেলাঘর— মোমের পুতুল
কথা কও কথা কও ভুলে যাওয়া গান
নীল শাড়ি আলতায় খোঁপার বকুল

নিশিরাত কথা কও আলো জ্বালো মুখ
চেয়ে দেখো দয়াময় কী হেঁয়ালি জানে
কথা কও কথা কও আমার অসুখ
কপাল পুড়েছে জানি আজ কোনখানে

যে পরানে বাঁধি তারে— বলে গেছি কথা
মানুষ যেমন বলে মানুষীর তরে
সে মুখ ডেকেছে এনে এই নীরবতা
জীবন গিয়াছে ঢেকে সুখের উপরে

কথা কও কালোজল— খামে রাখা টাকা
কথা কও হে সবুজ সরোবর পাখি
নদী তুমি কথা কও খরস্রোতে ডাকা
কথা কও ভেঙে যাও আমার একাকী


সয়াবিন

যেন আহ্নিক বেলায় বাইদ্যার দল ডাইকা যায়—
যেন কামালখাড়া থুইয়া পশ্চিমে সারি সারি তালগাছ
বড় রাস্তার ধারে পাটি বুননের মতো কইরা ঘর বুনসে
অইখানে, দুনিয়ার সব দেমাগ লইয়া –

আরও এট্টু দূরে গেলে তাপালির বাসা – আস্ত ঢেউটিন
এই ওরাই লাগাইতে পারসে, লাগাইতে যেহেতু ঢাকনা লাগে
তাপালিরে লাগাইতে আমি চাই নাই কোনোদিন
সে আমারে মরিচের ফুল দিয়া মালা বুইন্যা দিসে
ঝিনুকের খোসা, শেকড়বাকড় ইত্যাদি সামনে থুইয়া
আমারে বিয়া করসে
তাপালির আম্মা, সারাদিন কানতেসে
নদীর পাড়ে ত অনেক মাতব্বরই মাগনা লাগায়
গায়ে গায়ে বাতাস লাগাইয়া তাপালি আমারে কইতে আইলো
চুদানির পোলা ভেক ধরছসনি
আমি একটা ডাহুকের ভয়ংকর গান শুনতেছিলাম
আকাশের অনেক উচায় পা দোলাইতে দোলাইতে!

দিলের ভিতর দুনিয়া

আম্মা যখন কোনও ভুল করতো—
আব্বায় খুব কঠিনভাবে তা শুধরাই দিতো
তাতে কিছুদিন আম্মার মন খারাপ থাকলে
আব্বা ইচ্ছা কইরা ছোট্ট কোনও ভুল কইরা ফেলাইতো
যাতে আম্মা তা শুধরাই দিয়া হাইসা ফেলাইতে পারে
খুব ছোটবেলায় দেখছি তাদের ভুল শুদ্ধের খেলা
আর এখন মনে হইলো
প্রেম !

প্রচ্ছদের ছবি: অরূপ ঘোষ

আহসান উল্লাহ

বাংলাদেশের তরুণ কবি। বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। পড়াশুনা: মেকানিকাল ইন্জিনিয়ারিং-এ। চাকুরিজীবী।


Share

1 thought on “মানুষ যেমন বলে মানুষীর তরে”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top