।। জয়শীলা গুহবাগচী ।।
পাঠ
শব্দ ছেয়ে যাচ্ছে সমুদ্র প্রবণতার মাঝে
পাতা ঝাঁঝির কোলে মৃত কবিতা জেগে আছে
তার গায়ে অজানা ভাষার রঙ
মৃদুমন্দ ইমেজ দুলতে দুলতে আসে
শুঁকে দেখে গোপন আঁতাত
অচেনা পংক্তি লেগে আছে কিনা সূর্যমাখা জলে
কবিতা নামের কিছু অসমাপ্ত নিঃশ্বাস
মুক্তো পরিস্থিতির ভেতর রেখে দেয় হেঁয়ালিফুল
ভেতর ঘরে একটিই ঢেউয়ের চোখ… স্থির
হাড়গোড়ের ভেতর নিরন্তর সামুদ্রিক ফুঁ
খিদেফুল ফোটে
কবিতার অচেতন পাঠে চাঁদ হাতে ঘুমোই
সচেতন পাঠে ভুলে থাকি
ভাঙা জাহাজ ভর্তি অজস্র পৃথিবী
প্রুনিং
কতটা বেঁচে থাকা খুলে নেব
ধারণার ইতিহাস থেকে
ঠিক কতটা বিদ্রুপের আবছায়ায়
হা হা হাসির মেলানকলি স্থির হয়ে থাকে
কত জীবন মানুষ গন্ধের অসুবিধে লিখছি
লিখছি চাষ আবাদের নিজস্ব লড়াই
সেইসব অস্তিত্বের হিসেব নিকেশে
একটা লাগামছাড়া বাতাস আঁকড়ে ধরি
এইটুকুই আমি…
আজকাল ‘আমি’ বলতেও দ্বিধা
আমি নামের দশ বারোটা সময়কাল শুধু
দেখার ভেতরে না দেখার ইচ্ছে
অপ্রকাশিত পৃথিবীর ভেতর অপ্রকাশিত আমি স্রোত
ছুঁয়ে দেখবো ভাবি
আলো নিভে গেলে যেভাবে
আলোর অভাব ছুঁতে পারি…
আলো নামের স্যানাটোরিয়াম দেখা যায়…
দূরতর
জানার একটি চেতনা থাকে
না-জানারও
প্রত্যেকটি জানার ভেতর যে ভণ্ড বসে আছে
তার উলুকসুলুক চোখ
বাঁ হাতের সমুদ্র থেকে
ডান হাতের শ্মশান পর্যন্ত ছড়ানো উঠোনে
কখনো সূর্য ফোটেনি
তারাদের জল এসে ভেজায়নি
প্রপিতামহীর আঁচল
তাদের ওয়েব জুড়ে অন্ধকারের গান নেই
শেষ নিঃশ্বাসের কেপে ওঠা শোক নেই
তাই না-জানার চেতনাকে শালিখ বলে ডাকি
খিদে বলে ডাকি
আদর করে নাম রাখি সহনীয় হাড়িকাঠ
হরিণের সত্যি ও মিথ্যে
এক আশ্চর্য রুহের ভেতর
রেখে যাচ্ছি মৃত ইচ্ছের গান
গানের ভেতর থেকে ঘড়ি তুলে নিলে
যেসব বেঁচে থাকা পড়ে থাকে
তাদের গায়ে বেড়ালের চোখ
হ্যাঁ আর না এর মাঝে কিছু সম্ভাব্য প্রশ্ন
পুরানো বাতাসের গায়ে বিলি কাটে
মানুষের কথার আঁশ
স্রোতে স্রোতে ঝিকমিক করে মিথ্যে
মায়াবনের মতো বানিয়ে তোলা
ঘনিয়ে ওঠা ধারণার গাছ…
তার ফুল থেকে তুমি
তার অনন্ত থেকে আমি
ভেসে যাচ্ছি আশ্চর্য রুহের ভেতর
অকারণ হরিণে…
ঘড়ি প্রবণতা
খুব ধীরে ভেঙে যাচ্ছে মিনিট সেকেন্ড
তারপর এক অসময় ক্যালেন্ডার ভেঙে
বুকের হা হা নৌকোর ভেতর
অসমতল দীর্ঘ হচ্ছে
ধূলোর জীবনে এসব
অনন্ত ও জন্মান্তর চলতে থাকে
হাত পায়ের শুকিয়ে ওঠা গাছ
কিছু বলে, কিছু বলেও না
কিন্তু ঘটনাক্রমকে বিস্বাদের মতো দেখালে
আকাশজল, বৃষ্টিফুল, পাতার আলো
এইসব জড়িয়ে নিঃশ্বাস হওয়া যায়
নইলে কোথাকার ট্রেন কোথায় ছেড়ে যায় কে জানে
তুমি মূল থেকে আবছা হলে
তোমার আয়ুতে সিঁড়িভাঙা অঙ্ক
জ্বলজ্বল করে
তুমি থেকে ট্রেন
ট্রেন থেকে তুমি… নিঃশব্দ গলিয়ে গলিয়ে
ক্রমশ জোনাকিগাছ হয়ে ওঠো
আমি হয়ে ওঠো
আর ভেঙে যাও অকূলের দড়িদড়ায়
প্রচ্ছদের ছবি– ‘The angel Ruh holding the celestial spheres’, illustration from the ‘Aja’ib al-Makhluqat’ (Wonders of Creation) by Qazwini, c.1550-1600 (ink, colour and gold on paper)
জয়শীলা গুহবাগচী
জন্ম ও বেড়ে ওঠা- উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি শহরে। ছাত্র বয়েস থেকে লেখার শুরু। তবে শূন্য দশকে লিটল ম্যাগাজিনে আত্মপ্রকাশ। প্রকাশিত বই তিনটি। ‘দেবদারু অপেরা’, ‘থার্মোকট, ফুল্লরার কলের গান’। প্রকাশিতব্য কবিতার বই- ‘ফার্নের গন্ধ’
অপ্রকাশিত পৃথিবী… 👍 অপ্রকাশিত স্রোত
… খুবই ভালো