।। পিয়াল রায় ।।
“এ ভাষা এমনই যা কেবল পুরোপুরি খাঁচাতেই বোঝা সম্ভব
আরো একটু ঝুঁকে পড়ো
খাঁচার ভিতর উঁকি দিয়ে দেখো
যে ঝড়ের পাখি তোমার সঙ্গে কথা বলত রোজ
সে আজও মনের অসীমতার কাঁধে চড়ে
কেমন বেফিকর দোল খাচ্ছে”
গোপন সংকেত
এই রাত্রি বুজিয়ে দিক দুটো চোখ
শুধুমাত্র খুশি রাখার বিচিত্র খেয়াল আসুক
আজ রাত খোলাখুলি পান করার রাত
প্রেমিকের গরম নিঃশ্বাস
জানি, এসব কিছুমাত্র সাধ্য নয়
তবু চাপা গলার সুরে
নির্ভর প্রখর জড়িয়ে নিক মহানিশা নিটোল মৃণাল
এই নিশুতি রাত
এই গৃহবন্দী সদা সতর্ক চুর ক্লান্ত এক রাত
একফোঁটা দাগ ফেলে যাক নেচে ওঠার
মেঝের ওপর টুকরো টুকরো বর্ণ বর্ণ ঘ্রাণ
এমনকি এই ঘনঘোর রাত অন্য কোনো আত্মার ভিতর নিজেকে বলি দিতে দিতে
টহলরত নৈশপ্রহরা ও তালাবন্ধ পৃথিবী থেকে
শুষে নিক আজ সুবাসিনী বিষের ছোবল
পাখি শিকারী
শান্ত হও, রাত নেমেছে পৃথিবীতে
গভীর দুটো চোখ বন্ধ করে ভাবো
যে পাখির সঙ্গে কথা বলতে রোজ
অন্তত কিছু সময়ের জন্য যাকে মনে করেছিলে
আঁধারের আচ্ছন্নতায় মগ্ন দুঃখী এক
নীল শরীরের মায়া ছড়িয়ে যে ডেকেছিল কাছে
যার ছটফটানি শেষপর্যন্ত তোমাকে নিয়ে গেছিল তন্দ্রাচ্ছন্ন সেই বুকের ভিতর
যাকে তুমি চিনি দিতে, দিতে সুস্বাদু জল
সুগন্ধি ঘষে চকচকে করে তুলতে নীল নীল পালক
যার কাঁধে ভর দিতে আরো কাছে সরে সরে এলে বুঝেছিলে
এ ভাষা এমনই যা কেবল পুরোপুরি খাঁচাতেই বোঝা সম্ভব
আরো একটু ঝুঁকে পড়ো
খাঁচার ভিতর উঁকি দিয়ে দেখো
যে ঝড়ের পাখি তোমার সঙ্গে কথা বলত রোজ
সে আজও মনের অসীমতার কাঁধে চড়ে
কেমন বেফিকর দোল খাচ্ছে
বাজার
আবার আরো একটা ওলোটপালট
নেমে এল রাস্তায়
ক্ষীণ দৃষ্টি, ঘড়ঘড়ে স্বর
চোখের পাতা সাদা, কালচে ঠোঁট কিঞ্চিৎ খোলা
যেন মিথ্যে বাতিলের জলজ্যান্ত প্রতীক
অতিবৃদ্ধ, ফলে সহজভঙ্গুর
বাজারে যার জায়গা নেই কোনোমতেই
সেই এসেছে কিনা খাপ খাইয়ে নিতে
হাতে খান কতক তালপাতা দিয়ে বানানো হাতপাখা
বাজারি আবহাওয়ার গরমে কুঁকড়োনো
বাজারকে শোনাবে বিশুদ্ধ বাতাসের কথা
স্বর্ণখচিত এই কথন রাজ্যে শুনবে কে?
কে এই বুড়োটে বাতাস বাঁচিয়ে রাখতে
চুরমার করবে আনন্দমহল!
অন্ধ তালা ভেঙে কে তার হাতে চাপ দেবে নির্ভরতার
অনবরত একীভূত হওয়ার বাঞ্ছনায় বুড়ো বাতাস
ডুব দিল দুঃসাহসিক জংলা জলের ভিতর
কেউ এলো না, কেউ না
শেষ পর্যন্ত এমন একজনকেও পাওয়া গেল না
বাজার যাকে পরিয়ে দিয়েছে নিষ্কন্টক মালা
পিয়াল রায়
জন্ম দুর্গাপুর, পশ্চিমবঙ্গ। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে স্নাতকোত্তর। বইপড়া, বেড়ানো ও গান শোনা প্রিয় ব্যসন। এ পর্যন্ত কবিতাবই তিনটি। কবিতার পাশাপাশি প্রবন্ধ রচনায় উৎসাহী। লেখালেখির শুরু ২০১২ সালে।
খুব সুন্দর হয়েছে পিয়াল। প্রথম দুটো খুব ভালো লাগলো।