বোর্ডমেনের পরের ছবিটার ক্যাপশানঃ ‘ব্যবস্থা নিজেরে নিজে পরীক্ষা করছে’। কানাডিয়ান-আমেরিকান শিল্পী বোর্ডমেন রবিনসন (Boardman Robinson)। হঠাৎ চোখে পড়ল।
দাজ্জাল নিজেকে পরীক্ষা করছে, পাশে মানুষের করোটি ও হাড়গোড় ইত্যাদি। মার্চের ১৯ তারিখে ১৯২১ সালে ছবিটি দ্য লিবারেটার পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। সি এল আর জেমস (CLR James ৪ জানুয়ারি ১৯০১ – ১৯ মে ১৯৮৯) তাঁর ‘আধুনিক রাজনীতি’ (Modern Politics) বইতে ছবিটি আবার ছেপেছিলেন।
এটা সম্ভব কি? ধরেন, পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিজেরে নিজে পরীক্ষা করে দেখছে। বুঝতে চায় সে কেমন, তারে এই কিসিম লাগে কেন? কেন সে এই রকম হোল? এতো কুৎসিত তার শরীর, তার চেহারা? যদি সে তার বিমারি ধরে ফেলতে পারে তাহলে চিকিৎসাটাও নিজে করতে পারে। ঠিক কিনা? আচ্ছা ব্যবস্থা হিসাবে পুঁজিতন্ত্র সেটা পারে কি?
এ ব্যাপারে বরাবর দুইটা তত্ত্ব আছে: প্রথম তত্ত্ব হোল, এটা সম্ভব এবং পুঁজিতন্ত্র নিজের বিমারি নিজে শনাক্ত করতে পারে, নিজের সংস্কার নিজে করে, নিজের বিমার সারায় বা সারাতে পারে। কিম্বা শুধু সংস্কারও না, পুঁজিতন্ত্রের ভেতর থেকেই বিপ্লবী মানুষ পয়দা হবে, তারা দুনিয়া বদলে দিবে। কারা সেই রকম হতে পারে? কার্ল মার্কস ভেবে চিনতে খুঁজে পেতে শ্রমিকদের কথা বললেন। বললেন, তারা পারবো।
দাজ্জাল নিজেকে পরীক্ষা করছে, পাশে মানুষের করোটি ও হাড়গোড় ইত্যাদি। মার্চের ১৯ তারিখে ১৯২১ সালে ছবিটি দ্য লিবারেটার পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। সি এল আর জেমস (CLR James ৪ জানুয়ারি ১৯০১ – ১৯ মে ১৯৮৯) তাঁর ‘আধুনিক রাজনীতি’ (Modern Politics) বইতে ছবিটি আবার ছেপেছিলেন।
লেনিন এসে বললেন, তারা নিজে নিজে পারবে না, তাদের মধ্যে সম্ভাবনা আছে, কিন্তু কাজটা তাদের দিয়ে করিয়ে নিতে হবে। তো কারা তাদের দিয়ে করাবে? উত্তর: করাবে কমিউনিস্টরা। তো কমিউনিস্টরা কি সিস্টেমের মধ্যে নাকি সিস্টেমের বাইরে? তারা কোথা থেকে পয়দা হবে? মার্কস জাঁআ জ্যাক রুশোর একটা অনুমান নিয়ে মুশকিলে ছিলেন। রুশোও সমাজ বদলাতে চায়, সিস্টেম ভাঙতে চায়। কিন্তু সেটা করবে কে? যাঁরা সচেতন তাঁরা বিপ্লবের শিক্ষা দেবেন। কিন্তু এই সচেতনতা কোথা থেকে আসে, শিক্ষাটা দেবে কে? রুশোর বিপ্লবী চিন্তা আরও মুশকিলে ফেলে দিল। বিপ্লবের যিনি শিক্ষক হবেন, তিনি কোথা থেকে আসবেন? তিনি তো আর ফেরেশতা নন যে আকাশ থেকে পড়বেন। লেনিন প্রশ্নটা বোঝেন নি বলা যাবে না। বুঝলেন, কিন্তু আসল প্রশ্নের উত্তর দিলেন না: অর্থাৎ কমিউনিস্টরা আসবে কোত্থেকে? বরং প্রশ্নটাকে আরও কমপ্লিকেটেড করে দিয়ে গেলেন। বললেন বিপ্লব করবে পেশাদার বিপ্লবীরা। সিস্টেমের ভেতর/বাহির নিয়ে তাঁর মাথাব্যথা ছিল না।
কিন্তু প্রশ্নটা নিয়া কেউ বিশেষ উচ্চবাচ্য করে নি। কারণ এটা তো মানতেই হবে যে লেনিন রাশিয়ায় বিপ্লব করে দেখিয়েছিলেন, ‘কমিউনিস্ট’ বা ‘কমিউনিস্ট পার্টি’ বলতে তিনি কি বুঝিয়েছেন। আমরা বুঝেছি কিনা, কিম্বা এখনও বুঝি কিনা সেটাঈ বরং প্রশ্ন। এটা বোঝা গেল, যদি সময় জারের রাশিয়া হয়, লেনিনের মতো নেতা থাকে, সঙ্গে স্ক্রুপস্কায়া। তাহলে বিপ্লব ঘটে যায়। বা আসল সত্য যে স্ক্রুপস্কায়ার সঙ্গে লেনিন ও ইস্ক্রা পত্রিকার সম্পাদকগণ – তাহলে বলশেভিক পার্টি নামক একটা বিপ্লবী হাতিয়ার গড়ে ওঠে এবং বিপ্লব হয়। (পুরুষরা স্বভাবদোষে স্ক্রুপস্কায়ার নাম বলে না)। যাই হোক, নগদ লাভ হচ্ছে এই যে ব্যবহারিক দিক থেকে লেনিনের হাত ধরে বিপ্লবের একটা বিজ্ঞান গড়ে উঠেছে যার পঠনপাঠন ছাড়া আধুনিক সমাজে রাজনৈতিক বিপ্লব অসম্ভব। বিশেষত প্রথম শিক্ষা যে বিপ্লবীরা বিজয়ী গণঅভ্যূত্থানের পরে পুরানা রাষ্ট্র ভাঞে এবং নতুন গঠন্তন্ত্র প্রণয়ণ করে।
বোর্ডমেনের আরেকটি ছবি: ‘গণতন্ত্র ও ব্যবসা’
সেই রামও নাই, সেই অযোধ্যাও নাই। নাই রাশিয়া, লেনিন, কিম্বা বলশেভিক পার্টি। ফলে লেনিনের ফেলে রাখা কমপ্লিকেটেড প্রশ্ন এখন আরও কমপ্লিকেটেড হয়ে উঠেছে। লেনিন যদি ঐতিহাসিক দুর্ঘটনা বা অলি-আউলিয়া না হয়ে থাকেন তাহলে কিভাবে একটি সিস্টেমের মধ্যে বিপ্লবী পয়দা হয় এটা আমরা বুঝব কি করে? এই উত্তর লেনিন দিয়ে যান নাই। শুধু বলে গিয়েছিলেন, বিপ্লবীদের ‘পেশাদার’ বিপ্লবী হতে হবে। কিন্তু পেশাদারিত্ব ব্যাপারটা আসলে কি? সেটা কে কারে কিভাবে শিখাবে? পেশাদার বিপ্লবী হবার তরিকা কি? এটা তো কারখানায় পয়দা করা যায় না। সমাজে কোন উৎপাদনমূলক বা ক্রিয়েটিভ কিছু করলাম না, পড়া লেখা ভাবনা চিন্তা নাই শুধু বিপ্লব বিপ্লব করলাম আর পার্টির চাঁদায় ফুল টাইম হলাম — লেনিন নিশ্চয়ই এটাকে পেশাদারিত্ব বোঝান নি। তেইশ বছর বয়সে তিনি ‘রাশিয়ায় পুঁজিতন্ত্রের বিকাশ’ নামক ঢাউশ বই লিখেছিলেন। তারপর তো লেখার ক্ষান্তি দেন নাই। রাতদিন লিখে গিয়েছেন।
অতএব একনম্বর প্রজেক্ট: ব্যবস্থা নিজেকে নিজে পরীক্ষা করে নিজের বিমারি নিজে সংশোধন করবে, কিম্বা বিপ্লবী কায়দায় নিজেকে বদলাতে পারবে — এই প্রকল্প বিশেষ আর এগোতে পারে নাই। এখন মনে হয় ফেইল করে গেছে। ব্যর্থ। এভাবে গোড়ার প্রশ্ন ফেলে রাখলে এটা কাজ করবে এমন আর মনে হচ্ছে না। অনেকের এখনও হুঁশ হয় নি। অনেকে পুরানা ঘরবাড়ী নিজের মতো বানিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভালো। কিন্তু পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থাকে বদলাবার রাজনীতি এগিয়েছে কিনা সন্দেহ।
দ্বিতীয় তত্ত্ব হোল, ব্যবস্থা কখনই তার নিজের অসুখ নিজে ধরতে পারবে না। ফলে ক্রমাগত তার জেনেটিক মিউটেশান ঘটে থাকবে এবং ক্রমে ক্রমে সে একটা দানবের রূপ পরিগ্রহণ করবে। দাজ্জাল। এই অসুখের নিরাময়ের জন্য আলাদা ডাক্তার দরকার, কিন্তু এমন এক ডাক্তার যে ব্যবস্থার ভেতরে পয়দা হয় না, পয়দা হয় বাইরে, আসে ব্যবস্থার বাইরে থেকে।
কিন্তু এই ‘বাহির’ জিনিসটা কি? প্রশ্ন উঠল, সিস্টেমের মধ্যে থেকেও বাইরে বেড়ে ওঠার কোন কুদরতি বা বেলায়েতি থাকতে পারে কিনা? আজকাল অনেকে বলছেন এটা সম্ভব। ‘মানুষ জিনিসটাই এমন যে ভেতরে-বাইরে এক সঙ্গে বাস করে। সেটা কেমন? যেমন ধরেন, আয়াতুল্লাহ খোমেনি। ইমাম তিনি, সমাজেও আছেন, ধর্মেও আছেন। ইহকালেও আছেন, পরকালেও আছেন। বা পরকালের ভাবনা নিয়ে ইহকালে বাস করেন। সমাজের চোখ দিয়ে সমাজ দেখেন না, বরং ধর্মের চোখ দিয়ে সমাজ দেখছেন। অর্থাৎ তাঁর ইচ্ছা সংকল্প ইত্যাদি বিদ্যমান সমাজ থেকে পয়দা হয় নি, তার ভেতর থেকেও তৈরী হয়েছে। তাই যখনি সুযোগ পেয়েছেন সমাজের বাইরে দাঁড়িয়ে নিজে যতোটুকু বুঝেছেন সেই টুকু দিয়েই সমাজকে পালটে দিলেন। রীতিমতো বিপ্লব ঘটালেন। এই জন্য তিনি শুধু ধর্মের ইমাম নন, বিপ্লবেরও ইমাম। এই প্রথম দুনিয়াতে একটা বিপ্লব হোল, যেটা পাশ্চাত্য বিদ্যাবুদ্ধি সভ্যতার অহংকার জ্ঞানের গরিমা সব চুরমার করে দিলো। এই প্রথম প্রাচ্য তার নিজের ধর্ম, ঐতিহ্য, বিদ্যা, বুদ্ধি, হেকমতি সবকিছু নিয়ে নতুন ধরনের রাষ্ট্র বানালো। অন্তত মনে হচ্ছিল নতুন কিছু হচ্ছে। নতুন কিছু ঘটছে।
বোর্ডমেনের আরেকটি বিখ্যাত ছবি,’ শান্তিবাদীদের দর্শন’।
কিন্তু এখন গ্লোবালাইজেশান। আমরা গ্লোবালাইজেশান যতো বুঝলাম তাতে মনে হচ্ছে ‘ব্যবস্থা’ বা ‘সিস্টেম’ মানে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা বা বিধিবদ্ধ রাষ্ট্রের কায়কারবার মাত্র না। ব্যবস্থা দেশ, রাষ্ট্র, স্থান, ভূগোল, মানচিত্র শুধু এই সবের সঙ্গে যুক্ত না। এই বার কার্ল মার্কস আবার ফিরে এলেন। তবে অন্য কায়দায়। তার কম বয়সের লেখালিখি যুবক বয়সের নোট খাতা সব নিয়ে হাজির তিনি এইবার। বুঝা গেলো ‘পুঁজি’ কথাটা পুরানা বামপন্থিরা যেভাবে বোঝেন, মার্কস সেইভাবে বোঝেন নাই, বোঝানও নাই। নিজে তাঁর আমলে পুরান কথা কি বলছেন, আর কখন নতুন কথার আবিষ্কার করলেন, বা বলে ফেললেন সেটা নিজেও বিচার করে দেখবার সুযোগ পান নি। ফলে মেলা কনফিউশান রেখেই তাঁর ওফাত হয়েছিল। এখন বোঝা যাচ্ছে ব্যবস্থার ভেতর আর বাহির খুব জটিল একটা বিষয়। এটার মীমাংসা ছাড়া পুঁজিকে খতম করা সম্ভব না। অতএব পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেও না। এর বিলয়ের যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, সেটা ইউটপিয়াই থেকে যাবে।
অনেক দার্শনিক অনেকদিন থেকেই বলছিলেন, ধর্ম, কবিতা, শিল্পকলা, ইত্যাদি হোল ব্যবস্থার মধ্যে থেকেও ব্যবস্থার বাইরে যাবার দরজা। ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে মানুষ যেখানে দাঁড়াবার তৌফিক নিয়ে জন্মলাভ করে। অনেকেই বলেন, এগুলো ইহলৌকিক ধর্মের জগত। আধুনিকতা ইতিহাস ভেদে ‘ধর্ম’ ব্যাপারটার অর্থের রূপান্তর বিচার না করে বিমূর্ত কায়দায় তার বিরোধিতা করে। ফলে মানুষের ধর্ম প্রাণতার স্বাভাবিক বৃত্তির সঙ্গে কাব্য, চিত্রকলা বা সামগ্রিক ভাবে শিল্পকলার সম্বন্ধ এখন আর ধরতে পারে না। কাব্য, ছবি আঁকা কিম্বা শিল্পকলার কারবারের মধ্যে সবসময়ই একটা পারলৌকিক ঘটনা ঘটতে থাকে। যা নাই তাকে ধরবার সাধনা করে শিল্প। পারলৌকিক হলেও ধর্ম, কাব্যচর্চা, ছবি আঁকা, গান গাওয়া ইত্যাদি কোন কিছুই কেউ পরলোকে করে না, ইহলোকেই করে। পারলৌকিকতার এই স্বাভাবিক দরজাটা আধুনিকতার গুণ্ডাবাহিনী ক্লোজ করে দিয়েছিল একসময়। এখন অনেকদিন ধরেই আবার খুলবার চেষ্টা চলছে। ধর্ম, কাব্য, শিল্পকলাসহ দৈনন্দিন জীবনের নানান পার্থিব ও অপার্থিব জীবনচর্চার মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে বিদ্যমান ব্যবস্থার বাইরে যাবার আকুতি তৈয়ার হয়, রাজনীতি যদি তাকে ঠিক ভাবে আমলে নিতে পারে তাহলে এই অভিজ্ঞতাকে একটা পরিকল্পনা হিসাবে হাজির করে এবং ব্যবস্থা বদলাবার পথ ও পদ্ধতি দেখায়। এ ছাড়া সিস্টেমকে ধ্বংস করা সম্ভব না। অতএব ব্যবস্থার মধ্যে থেকেও ব্যবস্থার বাইরে যাবার দরজাটা চেনা দরকার। সেটা পারলৌকিক ব্যাপার আসলেই। কারণ যা লৌকিকতাকে অতিক্রম করে যেতে চায় একে অন্য কিভাবেই বা শনাক্ত করা সম্ভব?
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না আমরা এখানে ইহলৌকিকতা/পারলৌকিকতা বাইনারি কায়দায় চিন্তা করছি না। বলছিনা ইহলৌকিকতা ভাল, পারলৌকিকতা খারাপ, কিম্বা পারলৌকিকতা ভাল, ইহলৌকিকতা দুই দিনের মুসাফিরখানা শুধু। আমরা ইহলোকে আছি ও বাস করি বলে খালি ইহলোকবাদি না। ইহলৌকিক মানুষ সমান্তরালে পারলৌকিকতার জগতেও বাস করে। আমরা রোজ হাশর বা মৃত্যুর পরের পরলোক নিয়ে কথা বলছি না। সেটা নিয়েও কথা হতে পারে। পারলৌকিকতা মানে মানুষের ঘর শুধু ইহলোকে নয়, তার একটা পারলৌকিক জগতও আছে, যেখানে সে ফুরসত পেলেই দরজা ফাঁক করে বেরিয়ে যায়। দুইটা নিয়েই মানুষ। আর এ কারণে ইহলোকের মধ্যে ইহলোকের বাইরে মানুষ বেহেশতের স্বপ্ন দেখে – কিম্বা ভাল থাকলে ভুতে যেমন কিলায়, তেমনি দোজখকেও ভয় পায়। তাকে প্রথাগত অর্থে ধর্মে বিশ্বাসী হতে হবে এমন কথা নাই। মানুষ ধর্মে বিশ্বাস না করেও ধার্মিক হয়। কেউ যেমন বেহেশতের স্বপ্ন দেখে ঠিক তেমনি, যে-সমাজ এখনও কায়েম হয় নাই সে সমাজেরও স্বপ্ন দেখে কেউ কেউ। যেমন সমাজতন্ত্র, কিম্বা কমিউনিজম। বেহেশতের স্বপ্ন দেখার সঙ্গে এর বিশেষ কোন ভেদ নাই। ধর্মপ্রাণের ধার্মিকতা থেকে কমিউনিস্টদের ধার্মিকতাকে এই দিক থেকে জেরজবরে ইতরবিশেষ করা যায় না। প্রত্যেকেই একই গোয়ালের গরু। তাদের এখনকার দা-কুমড়া সম্পর্ক ঘটেছে ইতিহাসের কারনে, তার বিচার আলাদা। সে বিচারে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বা শ্রেণি সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্ততু অর্থনৈতিক সম্পর্কের অতিরিক্ত কিছু ব্যাপার আছে যাকে অর্থশাস্ত্র দিয়ে বোঝা যায় না। এই অতিওরিক্ত ব্যাপারটা কি? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে আবার ধর্ম, ভাব, কবিতা, শিল্পকলা ইত্যাদির ডাক পড়েছে। সিস্টেমের ভেতরে থেকে সিস্টেমের বাইরে যাবার দরজা কোথায় সেটা নিয়ে খোঁজাখুঁজি। কারণ পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিলয় ঘটাতে হবে। নইলে জেনেটিকালি মডিফাইড অর্গানিজমের নিজেই সে তার নিজের রূপান্তর ঘটাতে থাকবে। পরিণত হবে দাজ্জালে।
কেউ ধার্মিক বলে তার শরীর, চেহারা, স্বভাব খাসিলত যেমন যে কোন মানুষের মতোই থাকে, তেমনি কেউ কমিউনিস্ট হলেও সেটা বদলে যায় না। একই রকমই থাকে। ঐতিহাসিক কারণে প্রকাশ ভিন্ন। আর দুজনের কেউই আসমানে বাস করে না, বাস করে দুনিয়ার গোয়ালখানায়। কমিউনিস্টদের চেয়ে পরলোকবাদী দুনিয়ায় আর কে আছে! মোল্লা-পুরোহিতদের চেয়েও তাদের ধর্ম বিশ্বাস প্রবল। তারা মরণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চায় না। এখনই দুনিয়ায় বেহেশত কায়েম করতে চায়। তাই না? তবে যখন পারে না, তখন তারা অবশ্য শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগ দিয়ে ধর্মীয় মৌলবাদীদের হত্যার খেলায় প্রভূত আনন্দ লাভ করে। টুপি দাড়ি ওয়ালাদের তাড়াতাড়ি বেহেশতের পথে শহিদ হবার কাজটা কাউকে না কাউকে তো করতেই হবে। একসময় ইসলামপন্থিরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় একই কাজ করেছিল। সেই ইতিহাস মনে রাখলে আমরা বুঝব উভয়ে পরস্পরের স্থান বদল করেছে মাত্র। বাংলাদেশে যতক্ষণ না আমরা আসল শত্রুকে চিনব তখন পর্যন্ত শত্রুর হয়ে পরস্পরকে হত্যার বীরত্ব আমরা দেখিয়ে যেতে থাকব।
দাজ্জাল নিজেকে নিজে পরীক্ষা করছে, ছবিটা তাই মেলা কথারই জন্ম দেয়। ইহলৌকিকতা বাদ দিয়ে যেমন পারলৌকিকতা নাই, তেমনি মানুষের পারলৌকিক জগত বাদ দিলে মানুষ আর মানুষ থাকে না। এই প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন না করলে ব্যবস্থার মধ্যে থেকে ব্যবস্থার বাইরে যাবার দরজা খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। And she said “We are all just prisoners here, of our own device”।
তবে ব্যবস্থার মধ্যে যখন একবার চেক ইন করেছেন তখন তার বন্দিখানা থেকে বের হবার উপায় নাই।
এবার তাহলে ইগলসের গানটি শুনুন
ছাদ থেকে ঝোলা আয়নার ঝাড়বাতি
গোলাপি বরফে শ্যাম্পেন গলে পড়ে
সেই নারী এসে জানাল আমাকে, স্যার
আমরা বন্দি হাতকড়া নিজে নিজে
বানিয়ে নিজেই নিজেদেরই কারাগারে
আমরা বন্দি আমাদেরই তামাশায়।
খানাপিনা জোর চলছে ভোজনকক্ষে
এই জেয়াফতে সকলে হাজিরা আছে
ছুরিকাঁটা দিয়ে পশুর মাংসে তারা
যারপরনাই আঘাতে আঘাত হানে
মাংস ছিঁড়ছে, কাবাব হচ্ছে জন্তু
পশুটি মেরেও তবু মেরে ফেলা যায় না।
সকল শেষের আগে শুধু মনে আছে
দৌড়ে পালাতে খুঁজছি কোথায় দরজা
সেই রাস্তাটি খুঁজে বের করা দরকার
যে পথটি ধরে এইখানে আমি এসেছি
দেখে ফেলেছিল রাতের চৌকিদার
বলল, ‘এতোটা অস্থির কেন তুমি?
এখানে আমরা প্রোগ্রাম করা যন্ত্র
মুসাফিরখানা অভ্যাগতকে সদা
স্বাগত গ্রহণে সততই সক্ষম
যদি চাও তবে অতিথি তালিকা থেকে
যখনি ইচ্ছা মুছে দেওয়া যাবে নাম
কিন্তু বন্ধু, মুসাফির খানা ছেড়ে
ত্যাগ করে যাওয়া কারুরই সাধ্য নাই।
—–
অনুবাদটা দিলাম বোঝার সুবিধার জন্য। মাত্রাবৃত্তে। বোঝাতে একটু অনুবাদকের স্বাধীনতা নিয়েছি। পড়তে আরাম হতে পারে ভেবে। ইগলসের ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’র ইংরেজি লিরিকসের অংশটা এরকমঃ
Mirrors on the ceiling,
The pink champagne on ice
And she said “We are all just prisoners here, of our own device”
And in the master’s chambers,
They gathered for the feast
They stab it with their steely knives,
But they just can’t kill the beast
Last thing I remember, I was
Running for the door
I had to find the passage back
To the place I was before
“Relax, ” said the night man,
“We are programmed to receive.
You can check-out any time you like,
But you can never leave! “
Last thing I remember, I was
Running for the door
I had to find the passage back
To the place I was before
“Relax, ” said the night man,
“We are programmed to receive.
You can check-out any time you like,
But you can never leave! “