তোমার গলা শুকিয়ে উঠছে

।। প্রত্যুষ বন্দ্যোপাধ্যায় ।।

অতএব সংবাদ যেমন বলবে আর তুমি
যা বলতে চাও মুখোমুখি
হচ্ছে রোজ আর
তোমার গলা শুকিয়ে উঠছে অপসৃয়মান
বন্ধুদের কাঁধ কার যে কোথায় গোপন
অ্যাজেন্ডা রাখা সযত্ন
বাঘনখ ঈশ্বরের দোহাই যাই বলো
হত্যার স্বপক্ষে কোনও জবানবন্দী
নেই তোমার বরং থাকুক
বিস্তীর্ণ প্রান্তর একা ও অন্যমনষ্ক
আসন্ন ফলক

আসন্ন ফলক

এঃ মাঃ ছোঃ
প্রতিভার পেছনে দৌড়ুতে চাইছো

তারপর পাহাড়ের উচ্চতা সংকেতে আমরা
একে অপরের ভুলগুলো নিয়ে হাসলাম আর
খানিকটা ইয়ার্কির বাতাস বইলো
কিছুটা ঠান্ডা হল চারপাশ
মনোহরদার চায়ের স্বাদ ফিরিয়ে এনে
একটা লেড়ো বিস্কুট আর একটা
প্রজাপতি বিস্কুটের পুরনো ক্যাচরা আবার
মরা ডানা মেলবে, না কী সেদিন
ওই রুটের সব বাস  বন্ধ থাকবে, সেতু ভাঙা
স্টপেজটাও ফাঁকা

পেছন চিমটি কাটতে
তুমিও তো কম দড়ো নও এবং
ব্যাকরণ সম্পর্কে সজাগ উদাসীন ফলে
তীব্র বিষদাঁতে ঈষৎ কফ জমে তুমিও ব্যাঁকা
বঙ্কিম ভঙ্গী কিছু প্রত্যাঘাত পাও সফল
সংকেত হয় জোরে হাওয়া দেয় আর

দলে দলে যোগ দেয় যে সকল নামভোজী
চারপাই বাগস তারা ক্রমে ক্রমে আলো আসায়
উন্মুক্ত হয়ে পড়ে
অবিকল যেন সেইসব হাড় দেখে খ্যাকস করলো
শাণিত শেয়াল

আংশিক বধিরতা শনাক্ত ফলে যে
বলেছিল রাস্তা দেখে পেরিয়ো, সে
আসলে আওয়াজ দেয়নি
মনে হয়েছিল
মাথাময় এইসব কীট তুমি বয়ে বেড়াও আর
সে জানতেও পারে না
তুমিও কি বুঝতে পারো মস্তিষ্ক
ও মস্তির যোগসাজস মাঝেমাঝে
গাধাটুপি পরে বিপজ্জনক
কার্নিশ থেকে ফিরে আসার পর খটখটে
উঠোনে পা হড়কানোর মতো

অতএব সংবাদ যেমন বলবে আর তুমি
যা বলতে চাও মুখোমুখি
হচ্ছে রোজ আর
তোমার গলা শুকিয়ে উঠছে অপসৃয়মান
বন্ধুদের কাঁধ কার যে কোথায় গোপন
অ্যাজেন্ডা রাখা সযত্ন
বাঘনখ ঈশ্বরের দোহাই যাই বলো
হত্যার স্বপক্ষে কোনও জবানবন্দী
নেই তোমার বরং থাকুক
বিস্তীর্ণ প্রান্তর একা ও অন্যমনষ্ক
আসন্ন ফলক

আয়নাটা, আর একটু  ঘুরিয়ে

আঘাটার ঘাটে শেষমেশ

পথে যা যা হয়েছে
চুপ
গোল কোরও না

ঘাটে জল এসে ভাঙছে
বেশিদিন নেই
বিপন্ন লাইটহাউস

দ্রুতগামী অন্ধতা ছিটকে আসছে
তোমার মতই তোমার ভুলগুলো অসম্পুর্ণ
সাবাস মর্চে ঘ্রাণ লবনের ক্ষয়রোগ

দাহকার্যগুলো যথা নিয়মে হয়েছিল কী না
হত্যাগুলো হয়েছিল
শ্মশানকে পিঠে নিয়ে ফেরা

তোমারই আস্তাবলে জাবনা ডাবুতে মুখ ঝুঁকিয়ে
অবিকল তোমার মতন

নিজেদের ওপর থেকে আলোটা সরিয়ে
আয়নাটা আর একটু ঘুরিয়ে ফেলব কী আমরা 

দিন পালনের আংশিক পৈতে
তুমি ফিরে দেয়ালে টাঙাও

ঈষৎ হেলে থাকাই
প্রাচীন দর্পণ

তুমি আরেকটু দুলিয়ে

মজাখিল্লির নামে
সবকিছুই চলবে না কী এখন

পুরোটাই আমোদগেঁড়ের জাবনা

তুমি গোটা খাবে না মাখা

দেয়ালের সপ্তাহ ঝুলে থাকে আর
তাকে খুঁটে খুঁটে দিনগুলো
রাতগুলো

অর্ধেক চাঁদ ছিঁড়ে যায় আর
চোখ তার বালিশের দৃষ্টিকোণ বদলাতে গিয়ে
বদলে নেয় ঘুম

দেখা ব্যাপারটা তো আর আজকের নয় হে
ঘাট ঘাট কা পাণি
ঘট ঘট কা জল

কেউ ফিরতেই পারে
পথটা থেকে যাবে

এবং পথ মানেই বোধহয়
সামনে পেছনে
সর্বত্র

শুষ্ক খুলির ভেতর যেমন বিগত
হাসির ধুলো লেগে থাকে

আজকের এই ক্যাকোফেনি খিল্লি সব
আগত চোয়ালের ওঠাপড়া ব্যবহার্য
হাড়ের ধুলো হবে

এটা জেনেও চান্স পে ডান্স
দাঁত ক্যালাতে কেউ ছাড়ছিনা

লজ্জা শরমের কথা আর উঠছেই বা কেন
পোঁদের ট্যানা আর পর্দা
দুটোই বেহাত

তুমি বড়জোর অন্ধকার ও আলকাতরার
পার্ফেক্ট অ্যামিউজমেন্টে
মুখ ছুপাতে পারো

সারাটা জীবন শুধু
অস্থির নেতি আর নেতি ধরে ধরে
উপশ্রান্ত এসে দেখছো

নাম্বারিং গেম খেলার জন্যে
লাশের জোগান
ঠিক হয়ে এসেছে

এরইমধ্যে বিশ্বাস যে কখন
চোখ হারিয়েছে

মৃতদেহ ও ঘাতক
চেনা না অচেনা

একটু সতর্ক থেকে কী
কানের পাশ দিয়ে গুলি এড়াবে

রাতের সঙ্গী ছায়া আর
তোমার যমজ
একের বিরুদ্ধে অপর

বাইরের রক্তপাত ভেতরের
কোথায় যে ছলকাবে

এ আর এমন কী
ওরকম মুখ করে সব গ্রাস
প্লাবণের দোহাই দিতে দিতে বাকি দিনগুলো

বিদগ্ধ চিত্তের পাশ থেকে সযত্নে সরে
দগ্ধ প্রাণের মহাভার

আর কোনও অস্তিত্বের চকমকি নেই
উদ্বেগ পাথর উদ্বেগ জল
আর বিষণ্ণ সন্ত্রাস

কী যেন ভর করে কী যেন ভারী হয়
অতর্কিত বিস্ফোরণে ফাটে স্নায়ু
সহ্যের ব্যালকনি

তুমি আর সতর্ক হও না

দেখতে পাওয়া আর না দেখতে পাওয়াদের কাট্টি
সে ছিলো আছে থাকবে

তাতে জায়গাগুলো ততোটা বদলায় না
যতোটা তুমি


আপাতত, রাস্তাটা

কথা চালাচালি ,শুধু,  কথা
ঠোঁট থেকে গড়িয়ে নামছে
কষ থেকে গড়িয়ে নামছে
রীতিমাফিক চোখ চেটে নিচ্ছে যা যা নেওয়ার
আর তুমি একটা ছিবড়ে পুষ্টিকলার দীর্ঘ
ধারাবিবরনের  অংশ হয়ে যাও
স্থবির তাকাও

রবার আর কাচ দিয়ে ঘিরে থাকা গলি
একটা গামছায় সংকেত দিয়ে
বেঁধে রাখা
আমাদের হড়কানো সন্ধেগুলো
বন্ধুগর্বে স্ফীত ধমনী আছড়ায়, রক্তে ভায়োলিন
মেধায় বিচ্ছেদ বিষ
স্ট্যাম্প কালেক্টারের চিমটে যেন অবলীলা
কোণ কান চিপটে ধরে
মুহূর্তের সময়ক্ষরণ

বড় বেশি বাজে বকছিলে সেদিন
বড় বেশি বাজে বকছিলো সেদিন

আক্রান্ত মাসবছরগুলো
আর ক্যালেন্ডারের দোষ দেখো না
তোমার সব আকুলিবিকুলি প্রচেষ্টার উত্তরে
একটা খিল্লি একটা সাইজ করে নেবার স্কীম এইসব
অপেক্ষায় থাকতেও পারে

কী আর করা

আপাতত রাস্তাটা পেরোও হাওয়ার
দেওয়ালটা টপকাও

প্রত্যুষ বন্দ্যোপাধ্যায়

জন্ম ১৯৬০, নিবাস, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, ভবানীপুর। স্বাক্ষর। সম্পাদিত পত্রিকা – শব্দ, ক্যানেস্তারা। প্রকাশিত কবিতার বই – অব্যয় সংহিতা (ধানসিড়ি) প্রকাশিতব্য – ক্যাজুয়াল স্বৈরতন্ত্রী (অক্ষরযাত্রা)।

Share