।। রাজু আহমেদ মামুন ।।
আছি
ভ্রম নয়, বিদীর্ণ হওয়ার সত্য—
জনপদ যখন জঙ্গল হয়ে যাচ্ছে, হিংস্র লতারা
ধেয়ে যাচ্ছে চারদিকে আর
হরিণেরা সব হয়ে যাচ্ছে মাংসাশী নেকড়ে।
মানুষের নামে জন্ম হচ্ছে মানুষের খোসা
যার মধ্যে ঠাসা থাকে বিকৃত লাশ।
বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি হচ্ছে বিশ্বাস, যখন
খাঁটি দুই নম্বর বিরল!
বাঁচার অযোগ্য হতে হতে
ধুলা হয়ে উড়ে গেছি সময়ের নদীটির পরে
ঢেউয়ে ঢেউয়ে জমে গেছি তলদেশে
অক্রিয় স্থবির পলি!
আছি- জলতলে, অবাঞ্ছিত, নীরব
উপরে কালের স্রোত।
দেবী ও ভাবোন্মাদ কিশোর
ধর্ষক হাতের মতো ভাবোন্মাদ কিশোরের হাত
ছুটে চলে দেবীর স্তনের দিকে
ঘূর্ণি বায়ে সরে সরে হাসে দেবী
তবু হাত বাড়িয়ে ধরতে চায় বারবার
আঁচলের মতো নদী রেখে রেখে যেন সরে যায় দেবী
সেই পথে দৌড়ায় কিশোর— অবিরাম
দেবী লুকোচুরি খেলে, মিলিয়ে মিলিয়ে যায় ;
কিশোর হয়রান
আবার সঙ্গীত হয়ে বেজে ওঠে বাতাসে, বৃক্ষের পাতায়
ছুঁয়ে দিতে দৌড়ায় কিশোর!
ত্রাস হয়ে দেবী বেজে ওঠে মেঘে মেঘে, দমকা হাওয়ায়, বিদ্যুৎ চমকে
উন্মাদ আগলে ধরে আকাশ বাতাস
তারপর একদিন জলভরা মেঘের মতোন
নেমে আসে দেবী
ততদিনে ভাবোন্মাদ কিশোর- মস্ত যুবক
নম্র হাতে স্তন ছুঁয়ে ডেকে ওঠে, ‘মা’!
ঘুমমুক্তি
‘কবে?’
বয়স্ক এক স্বপ্নের মুখে দাঁড়িয়ে পড়ে
বিব্রতকর রুক্ষ একটা প্রশ্ন
তাতে আকাশ গুমোট হয়
নীরবতা নামে এমন যেন— শোনা যাবে
কাঠবিড়ালির শ্বাস
তাতে আকাশ গুমোট হয়
এক চাপা তাড়না যেন—
ছুটে চলে এর থেকে ওর কাছে
হঠাৎ, স্বপ্নের ফোঁটা-অশ্রু পড়ে
পড়তে পড়তে নদী!
নদী ছুটছে নদী!
নদী ছুটছে দৃশ্য পাল্টে পাল্টে
দৃশ্যের তলে ঘুমায়ে যাচ্ছে স্বপ্ন
দৃশ্যের তলে ঘুমায়ে যাচ্ছে প্রশ্ন
দৃশ্যের তলে ঘুমায়ে যাচ্ছে দৃশ্য
ঘুমায়ে যাচ্ছে চোখ— চোখের অন্তরালে
ঘুমায়ে যাচ্ছে ঘুম-ঘুমের অন্তরালে…
মৃত চিৎকারের দেশে
রঙচটা চর্মের তলে সাতঁরানো বাসনার কথা একবুড়ো
বলেছিল বৈশ্যা মেয়েটির কাছে
তারপর যা হয়—
বৈশ্যা বলেছিল, তথাস্তু লোলচর্ম, বাসনার রসনা তৃপ্ত হবে আমার দোকানে,
ফেলো কড়ি…
ঝরছে কড়ি, ডুবছে রসনা
ঝরছে কড়ি, ডুবছে রসনা…
অতপরঃ ঢেকুর তুলে ঠাকুর চলে অভিনয়ের মঞ্চে
মঞ্চে মঞ্চে ছড়ানো ছিটানো শুভ্র শান্ত বাক্স
ঠাকুর জানে বাক্সের মাঝে শুয়ে আছে যত মৃত চিৎকার!
রাজু আহমেদ মামুন
কবি ও সাংবাদিক। জন্ম ১৯৭৪ সালের ১ জানুয়ারি বাংলাদেশের বরগুনা জেলায়। শিক্ষা, সমাজ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক ধাবমান’ পত্রিকার সম্পাদক। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: ‘দহন সংক্রান্তির কবিতা’ (২০০৬), ‘ওঁ নিরর্থকতা ওঁ গতিশাশ্বত’ (২০০৮), ‘ম্যানগ্রোভ মন’ (২০১৭) এবং ‘মিথের ঘোড়া’ (২০২০)