চৈত্র সংক্রান্তি ও রাজনৈতিক কর্তব্য

।। আর্য সারথী ।।

সর্বপ্রকার সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক আধিপত্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অন্যতম উপায় হল চৈত্র সংক্রান্তি উদযাপন করা। দার্শনিক জায়গাটা বুঝলেও ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতে কেন চৈত্র সংক্রান্তির গুরুত্ব তা আমরা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হই। আমরা আলোকিত হয়েছি এর অর্থ হল আমরা পশ্চিমা জ্ঞানতত্ত্বের নিম্নশ্রেণীর দাসে পরিণত হয়েছি। আমরা পাশ্চাত্ত্যের ভাল দিকগুলো শেখার চেয়ে আমাদের সাথে বেমানান জিনিসগুলোর বিশ্রী রকমের নকল করেছি। তাই আজ আমাদের কাছে নিউ ইয়ার, থার্টি ফার্স্ট নাইট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আর তার অনুকরণে  কেবলমাত্র পয়লা বৈশাখ গুরুত্ব পেয়েছে। পয়লা বৈশাখের উৎসব কেবল মোগলদের খাজনা তোলা থেকে এসেছে এ কথা মেনে নেওয়া শক্ত। কারণ অপরাপর অঞ্চলের ইতিহাস তা বলছে না। তবে মোগল আমলে  নতুন করে গুরুত্ব পাওয়া শুরু হয় খাজনার কারণেই। আর ইংরেজ আমলে নিউ ইয়ারের অনুকরণে আমরা পয়লা বৈশাখের গুরুত্বের বয়ান তৈরি করেছি। অর্থাৎ পয়লা বৈশাখের গুরুত্ব যদি থাকেও তাহলেও তার আসল মর্ম আমরা হারিয়ে ফেলেছি৷ মোঘলের খাজনা তোলা ও নিউ ইয়ারের বঙ্গীয় সংস্করণ রূপে আমাদের সামনে হাজির আছে পয়লা বৈশাখ।

চৈত্র সংক্রান্তি ও রাজনৈতিক কর্তব্য

১.

সংক্রান্তি অনেক রকমের আছে। সূর্য কোনো রাশিতে কবে-কখন প্রবেশ করছেন তার হিসাব-কিতাব করেই সংক্রান্তি নির্ণীত হয়৷ সংক্রান্তি শেষও নয় ও শুরুও নয়৷  শেষ ও শুরুর মিলনস্থল  হল সংক্রান্তি। শেষ ও শুরু চক্রাকারে ঘোরে। একেবারে শেষ বা একেবারে শুরু বলতে কিছু নেই আমাদের এই অঞ্চলের ভাবচর্চায়। তাই আমাদের যাপনে ও সাধনায় সংক্রান্তি বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। আমাদের বিশ্ববীক্ষা, আমাদের জীবনজিজ্ঞাসা প্রতিফলিত হয় সংক্রান্তিতে। প্রকৃতির রঙ্গে প্রত্যক্ষ হওয়া শেষ ও শুরুর মিলনস্থলকে মনে রেখে আধ্যাত্মিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সত্তাকে আরও সক্রিয় করে তোলা এবং পারমার্থিক অভীস্পার প্রতি অনুরাগী হয়ে  সত্যানুসন্ধানে আরও সচেষ্ট হওয়া — এই হল সংক্রান্তির সারকথা।

এখন চৈত্র সংক্রান্তির বিশেষ গুরুত্ব বোঝা প্রয়োজন। এর পেছনে বঙ্গের নিজস্ব মিথ ও দার্শনিক জিজ্ঞাসা আছে৷ সেটা বুঝে নেওয়া প্রয়োজন।  বসন্তে কন্দর্পের পঞ্চশর প্রভাবে জর্জরিত হয়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ওজঃ ধাতু ক্ষয়ে মগ্ন বিশ্বচরাচর৷ অধিক ক্ষয়ের নেশায় আসে ব্যাপক চঞ্চলতা, দূর্বলতা ও কৃশতা। তাই চারিদিকে মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির ও ব্যাধির ছড়াছড়ি। নবপ্রাণের স্ফূরণ ঘটলেও তা হয়ে যায় নিয়ন্ত্রণহীন। চতুর্দিকে এই স্ফূরণ ও বীজবপনের পর গ্রীষ্মের আবির্ভাব। প্রচণ্ড উষ্ণতা ও ঝড়ের সম্মিলিত আঘাত ওজঃ নাশে বিপর্যস্ত শরীরকে করে আরও অক্ষম। তখনই আবার আবির্ভূত হয় ওজঃ ব্যয়ে সৃষ্ট বস্তু, যা ভোগে আবার ওজঃ সৃষ্টি হয় এবং চলতে থাকে কাম-রতির খেলা। চৈত্র সংক্রান্তি হল বাঙলার ঋতুচক্রে বসন্ত থেকে গ্রীষ্মে যাবার উপায়। বসন্ত ও গ্রীষ্ম একইসাথে হাজির হয়। বসন্তের বিদায়ী সুর ও গ্রীষ্মের আগমনী গান ঐকতান রূপে বাজে এসময়৷ (ক্ষণের এই আয়োজনে, যা ভেসে ওঠে মনে)  চরাচরের শুরু হয় এক মহামিলন; অনাদির আদি যা প্রকাশে ব্যর্থ বচন। সেই মহামিলন দর্শনে সব পাওয়া যায়; ভোগবিলাস আর মুক্তি-মোক্ষ তুচ্ছ মনেহয়। মন ডুবে যায় সেই মহামিলনের রত্নাকরে; সযতনে কুতুহলে প্রেমরত্নধন তুলিবারে। দারুণ দম্ভভরে মদন, মহাদেবের উপর করে বাণ নিক্ষেপণ। পুনঃপুনঃ প্রলুব্ধ করে মদন ভগবতীরে; উত্তরোত্তর শরের শক্তি বৃদ্ধি করিবারে। ভগবতী প্রজ্ঞাবতী করিয়ে বিচার; না রাখেন মন্দমতি মদনের আবদার। মদনের অতিবাড় বিশ্বচরাচরে; মহাদেব দেন তারে ভস্ম করে। মহাদেবের আজন্ম সাধনা কেবল ভগবতীর প্রেমলাভ আর ভগবতীর সাধনা মহাদেবের প্রেমলাভ। মহাদেবের বাসনা ভগবতীর দাস হতে এবং ভগবতী চান কেবল মহাদেবের দাসী হতে। দাস আর দাসী হওয়াতেই যে সাধনার পরিপূর্ণতা তা কেবল ওই দুজনেই বোঝেন। বাকিরা কতকিছু যে চায় তার ইয়ত্তা নেই। মদনভস্মের পর দাস-দাসী হওয়ার পথে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ হয়। শুরু হয় মহাদেব ও ভগবতীর অপার্থিব সঙ্গম। সেই সঙ্গমের ফলে জগৎব্যাপী অদ্বৈতের নীললোহিত জ্যোতি ছড়িয়ে পড়ে। বিন্দু আর বিসর্গ মিলে গিয়ে হংসমিথুন হয়ে লীলাকরে আর সেই লীলায় সোহং ধ্বনিত হয় বারবার। রসিক যে জন সে বুঝতে পারে, হংসমিথুন লীলা করে যে মহানন্দের শব্দ সোহং নির্গত করছেন তা আসলে ওঙ্কার ধ্বনি মাত্র। তাঁদের লিঙ্গযোনির মন্থনেই সেই অনাদির আদি নাদ ওঙ্কারের উদ্ভব। কেননা, হংসঃ আসলে সোহং আর সোহং হল ওঁ। মিলনান্দে যে শব্দ ওঁ ধ্বনিত হয় তাই জগতে অদ্বৈতের বর্ণ নীললোহিত রূপে দেখা দেয়। ওঁ সকল বর্ণের অতীত হলেও এই জগতে নীললোহিত হয়েই হাজির হয়। শক্তিস্ফূরণের লোহিত এবং প্রজ্ঞা প্রকাশের নীল মিলিত হয়ে নীললোহিত রূপে প্রকাশিত হয় ও জগতে মহামিলনের বার্তা দেয়। চারিদিকে তখন কেবল আনন্দের বন্যা।  সেই আনন্দে ঘুরতে থাকে ধর্মের চড়ক। আহ্লাদে আটখানা হয়ে সবাই জপ করে : ওং মণিপদ্মে হুং। এত কথার মানে হল বাংলার ইষ্ট, পরম, দয়াল যে যুগল তাঁদের মিলনোৎসব হল চৈত্র সংক্রান্তি। অর্থাৎ যে যুগলকে কেন্দ্র করে ভাবচর্চা সেই যুগলের মিলনের উৎসব হল চৈত্র সংক্রান্তি। ভাবচর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পাওয়া, বিশ্ব-নিখিলের সাথে নিজেকে আরও সংযুক্ত করা এবং নিজের পারমার্থিকতাকে শাণিত করা ছাড়াও এই দিনটা হল আনন্দোৎসব। বোঝা গেল চৈত্র সংক্রান্তি নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করতে গেলে গোটাকতক বই লেখা সম্ভব। কিন্তু আমরা এতকিছু এখানে আলাপ করব না। আমরা প্রবেশ করব আমাদের মূল আলোচনায়।

যুগলকে কেন্দ্র করে ভাবচর্চা সেই যুগলের মিলনের উৎসব হল চৈত্র সংক্রান্তি। ভাবচর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পাওয়া, বিশ্ব-নিখিলের সাথে নিজেকে আরও সংযুক্ত করা এবং নিজের পারমার্থিকতাকে শাণিত করা ছাড়াও এই দিনটা হল আনন্দোৎসব।

চৈত্র সংক্রান্তির নাচ

আজকের সময়ের প্রেক্ষিতে চৈত্র সংক্রান্তির রাজনৈতিক মর্মোদঘাটন আমাদের উদ্দেশ্য। শুরুতেই বলে নেওয়া ভাল যে, সর্বপ্রকার সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক আধিপত্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অন্যতম উপায় হল চৈত্র সংক্রান্তি উদযাপন করা। দার্শনিক জায়গাটা বুঝলেও ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতে কেন চৈত্র সংক্রান্তির গুরুত্ব তা আমরা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হই। আমরা আলোকিত হয়েছি এর অর্থ হল আমরা পশ্চিমা জ্ঞানতত্ত্বের নিম্নশ্রেণীর দাসে পরিণত হয়েছি। আমরা পাশ্চাত্ত্যের ভাল দিকগুলো শেখার চেয়ে আমাদের সাথে বেমানান জিনিসগুলোর বিশ্রী রকমের নকল করেছি। তাই আজ আমাদের কাছে নিউ ইয়ার, থার্টি ফার্স্ট নাইট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আর তার অনুকরণে  কেবলমাত্র পয়লা বৈশাখ গুরুত্ব পেয়েছে। পয়লা বৈশাখের উৎসব কেবল মোঘলদের খাজনা তোলা থেকে এসেছে এ কথা মেনে নেওয়া শক্ত। কারণ অপরাপর অঞ্চলের ইতিহাস তা বলছে না। তবে মোগল আমলে  নতুন করে গুরুত্ব পাওয়া শুরু হয় খাজনার কারণেই। আর ইংরেজ আমলে নিউ ইয়ারের অনুকরণে আমরা পয়লা বৈশাখের গুরুত্বের বয়ান তৈরি করেছি। অর্থাৎ পয়লা বৈশাখের গুরুত্ব যদি থাকেও তাহলেও তার আসল মর্ম আমরা হারিয়ে ফেলেছি৷ মোগলের খাজনা তোলা ও নিউ ইয়ারের বঙ্গীয় সংস্করণ রূপে আমাদের সামনে হাজির আছে পয়লা বৈশাখ। একটা মজার উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রায় আমরা মা লক্ষ্মীকে বাদ দিয়ে তাঁর পেঁচাকে নিয়ে মিছিল করি। আমরা বৈশাখের প্রতীক বলতে সবখানে পেঁচাকে দেখি। মা লক্ষ্মীকে বর্জন করে তাঁর বাহনকে নিয়ে আমরা মঙ্গল কামনা করছি! আমাদের পয়লা বৈশাখ উদযাপন হল লক্ষ্মীকে বাদ দিয়ে পেঁচাকে নিয়ে মিছিল করার সামিল। তাছাড়া আমাদের আরও সমস্যা বিদ্যমান। আমরা আজ একেকজন প্রতিযোগিতা করে হিন্দুস্তানী ( উত্তর ও পশ্চিম ভারতীয়), আরবী , ইরাণী, তুরাণী, আফগানী হতে শুরু করেছি। হিন্দুস্তান (হিন্দি বলয়) , আরব, ইরাণ, তুরাণ, আফগানের সভ্যতা ও সংস্কৃতি নিয়ে কোনো বিদ্বেষ থাকার কারণ নেই। বিপদের ব্যাপার হচ্ছে আমাদের না জেনেবুঝে অন্ধ অনুকরণ।  আমরা আমাদের প্রতিটি সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বয়ান নির্মাণের ক্ষেত্রে ভিত্তি ধরছি উত্তর ও পশ্চিম ভারত, আরব, ইরাণ, তুরাণ ও আফগানিস্তানকে। আমাদের ভাব দেখলে মনেহয় এখানে কোনও জ্ঞানতত্ত্ব বা সভ্যতা ছিলই না! পাশ্চাত্যের আধিপত্য নিয়ে তো আমরা খেয়ে না খেয়ে সরব কিন্তু অন্য দিকটায় সম্পূর্ণ নিশ্চুপ। ঐতিহাসিকভাবে এই সমস্ত রকম আধিপত্যবাদের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হতে গেলে আমাদের নিরিখ হল চৈত্র সংক্রান্তি।  চৈত্র সংক্রান্তি প্রমাণ করে আমাদের সম্ভাবনা কতখানি। চৈত্র সংক্রান্তি শুধু যুগলের মিলনোৎসব নয় পারমার্থিক বিচারে সমস্ত জগতের সাথে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত হয়ে নিজের সত্তার বহুবিধ দিকের আবিষ্কারও বটে। অর্থাৎ জগতের সাথে নিজের সম্বন্ধকে নতুন করে আবিষ্কারকে নিজেকে ফিরে পাওয়ার উৎসব চৈত্র সংক্রান্তি। চৈত্র সংক্রান্তির এই বয়ানকে কেন্দ্র করে আজকের দিনে আমাদের রাজনৈতিক কর্তব্য কিভাবে আমরা নির্ণয় করব তা আমাদের বুঝতে হবে। আমরা এক্ষেত্রে নোট আকারে কিছু কথা লিখে নিতে পারি :

১) আমাদের মধ্যে সমাজ নির্মাণের আকাঙ্ক্ষার জায়গা থেকে মৈত্রীর চর্চা করতে হবে ;
২) বহুত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গি (সকলের মত ও পথকে স্বীকার করার দৃষ্টিভঙ্গি)  বজায় রাখতে হবে;
৩) প্রাণ-প্রকৃতির সুরক্ষায় সচেষ্ট হতে হবে এবং
৪) প্রতিনিয়ত পর্যালোচনামূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে অগ্রসর হতে হবে।

চৈত্র সংক্রান্তিকে রাজনৈতিক অর্থে পাঠ করতে গেলে বা রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা হিসেবে চৈত্র সংক্রান্তিকে উপস্থাপন করতে গেলে কোটগুলো মনে রাখা জরুরি।

আমরা আজ একেকজন প্রতিযোগিতা করে হিন্দুস্তানী ( উত্তর ও পশ্চিম ভারতীয়), আরবী , ইরাণী, তুরাণী, আফগানী হতে শুরু করেছি। হিন্দুস্তান (হিন্দি বলয়) , আরব, ইরাণ, তুরাণ, আফগানের সভ্যতা ও সংস্কৃতি নিয়ে কোনো বিদ্বেষ থাকার কারণ নেই। বিপদের ব্যাপার হচ্ছে আমাদের না জেনেবুঝে অন্ধ অনুকরণ।  আমরা আমাদের প্রতিটি সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বয়ান নির্মাণের ক্ষেত্রে ভিত্তি ধরছি উত্তর ও পশ্চিম ভারত, আরব, ইরাণ, তুরাণ ও আফগানিস্তানকে। আমাদের ভাব দেখলে মনেহয় এখানে কোনও জ্ঞানতত্ত্ব বা সভ্যতা ছিলই না!

৩.

গাজনের নাচ

চৈত্র সংক্রান্তি যখন পারমার্থিকভাবে মৈত্রী নির্মাণের তাগিদ দেয় তখন আজকের পরিপ্রেক্ষিতে তার রাজনৈতিক মর্ম দাঁড়ায়— রক্ত,   বর্ণ, ধর্ম, সম্প্রদায়, ভাষা, সংস্কৃতি, পরিচয় ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও পার্থক্যের ঊর্ধ্বে গিয়ে রাজনৈতিকভাবে এক ও অখণ্ড রাজনৈতিক সত্তা রূপে হাজির হবার রাজনৈতিক ইচ্ছা, অভিপ্রায় বা সংকল্প৷ এটাই মূলত ইউরোপীয় অর্থে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ন্যায্যতা ও সিদ্ধতা লাভের ভিত্তি, আধুনিক গঠনতন্ত্রে /সংবিধানে যা বিধৃত থাকে, তা এর দ্বারাই তৈরি হয়। আমরা যদি এই মূল্যবোধ বজায় রাখতে পারি তাহলেই বহুত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গি সমাজে সচল থাকতে পারে। আজকের বিবেচনায় বুর্জোয়া  গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে উজ্জীবিত করার কথা বলে ও গণতান্ত্রিক বিকাশের দ্বারা নতুন সমাজ ( বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র নামে ডাকতেই পারি)  নির্মাণের পথে অগ্রসর হওয়ার তাগিদ দেয়। যদি সমগ্র প্রাণ-প্রকৃতির সুরক্ষার বিষয়ে আমরা সচেতন না হই তাহলে অন্তত নতুন ধরনের সমাজব্যবস্থার স্বপ্ন আমাদের জলাঞ্জলী দিতেই হবে। অথচ চৈত্র সংক্রান্তির প্রতিটি আচার আমাদের মনে করিয়ে দেয় সমগ্র প্রাণ-প্রকৃতির সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা৷  এর মানে হল চৈত্র সংক্রান্তির রাজনৈতিক পাঠের সারকথা হল বৈপ্লবিক অভীপ্সা সচল রাখা। বিপ্লব একটি প্রক্রিয়া, যা  হঠাৎ ঘটার ব্যাপার নয় । বিপ্লব হঠাৎ হাতে অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে ক্ষমতা দখল করা নয়। এর জন্য সমাজেরও বিপুল বুদ্ধিবৃত্তিক প্রস্তুতির দরকার হয়। বিপ্লবী বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতাকে ন্যায্য ও সিদ্ধ প্রমাণ করার নীতি ও কৌশলের অন্তর্গত। কমরেড লেনিন এই কারণে  বিপ্লবী তত্ত্বচর্চা ও প্রচারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। এ ছাড়া বিপ্লবের সফলতা অসম্ভব। একমাত্র এভাবেই নিরন্তর পর্যালোচনামূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে অগ্রসর হওয়া যায়।

রক্ত,   বর্ণ, ধর্ম, সম্প্রদায়, ভাষা, সংস্কৃতি, পরিচয় ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও পার্থক্যের ঊর্ধ্বে গিয়ে রাজনৈতিকভাবে এক ও অখণ্ড রাজনৈতিক সত্তা রূপে হাজির হবার রাজনৈতিক ইচ্ছা, অভিপ্রায় বা সংকল্প৷ এটাই মূলত ইউরোপীয় অর্থে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ন্যায্যতা ও সিদ্ধতা লাভের ভিত্তি, আধুনিক গঠনতন্ত্রে /সংবিধানে যা বিধৃত থাকে, তা এর দ্বারাই তৈরি হয়। আমরা যদি এই মূল্যবোধ বজায় রাখতে পারি তাহলেই বহুত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গি সমাজে সচল থাকতে পারে।

আর্য সারথী

২৯ শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪০৭ বঙ্গাব্দে গাজীপুরের টঙ্গীতে একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁদের আদিনিবাস জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলার রায়দেরপাড়া গ্রামে। বাল্যকাল থেকেই তাঁর মধ্যে দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, সঙ্গীত প্রভৃতির প্রতি আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় । তাঁর ইতোপূর্বে প্রকাশিত ‘মজলুমের সহজপাঠ প্রথম পর্ব’ ও ‘ভাব সমাহার’ সুধী মহলে সাড়া ফেলেছে। বর্তমানে ইউটিউবে ভিডিও তৈরি করে থাকেন।

Share