।। সুদীপ্ত চক্রবর্তী ।।
“স্যাঁতস্যাঁতে জীবনের জল
বেগুনী হয়
জাম ফাটে, ডিম ফাটে
কলাবতী বনে অচেনা ভ্রমর এসে বসে”
নিরুদ্দেশ
অন্ধকারে শাদা বক হারিয়ে গিয়েছে
সকালে সবুজ আর রাতে
কালো গাছ পার হতে হতে
ঘন বর্ষার মেঘে
মেয়েটির সাথে ছোট ছাতাটির নীচে
লুকোতে লুকোতে
টিউবের আলোটিকে
সহসা সকাল ভেবে
জানালার গ্রিলে আছড়ে পড়েছে
এখন গভীর রাত মানুষের নিয়মাবলীতে
বেনাগরিক
সীমান্ত শহর জোড়া সে এক দারুর দোকান
মুখচোরা আপাত আড্ডাবাজ
কোজাগরী রাত, শবেবরাত…
পার হলে অদূরে পাহাড়
পা ভেজানো নদী
আইনসভা ঘিরে দেখি লক্ষ পরিযায়ী
ডোবা চাঁদ ভেজা চাঁদ
পূর্ণিমায় পূর্ণ পাহাড়
পার হয়ে এলে
অদূরেই রডোডেন্ড্রন
স্নিগ্ধতর তার ছায়া
সীমান্তে কুয়াশা চিরকাল
গোলাপি দু’চোখ, কী আনন্দ…
আমাদের দেশ নাই
যাবো না কোথাও
অন্নদাতা
বাজার থেকে হেঁসেলের মাঝে
তোমার অবিরাম হেটে চলা মনে পড়ে
খাবার টেবিলে আমাদের হাসিমুখ দেখে
তোমার দু’চোখ বেয়ে উপচে ওঠা
তৃপ্তিঘন জল
আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দেবে বলে
ইশারায় ডেকে নেয় মা
এখন এই পথ ধুলোয় ধুলো
বাজারে পৌঁছানো যায় না
আনাজপাতি শুকিয়ে যায়, ফুরিয়ে যায়
নিরামিষ রবিবারগুলো
হাতাখুন্তির মৃদু আর কর্কশ আওয়াজে
ভরে ওঠে
খাবার টেবিলে বসে লবণের অভাববোধ হয়
বালকের বাড়ি
সেইসব স্যাঁতস্যাঁতে কলাবতী বন
লাল হলুদ ফুল
রাতের জানালা জুড়ে
শত সহস্র ব্যাঙের চিৎকার
ভোরের শুরুতে , টানা বর্ষায়
স্বচ্ছ্ব পুকুর জোড়া ব্যাঙাচির ডিম
দু’হাতে সরিয়ে
সাঁতার কাটছি আজ
চিৎ সাঁতারে ভেসে আছে
লিঙ্গ ও নাসিকা যুগল
পাকা জাম গাছ থেকে
কালো জাম ঝরে পড়ে
স্যাঁতস্যাঁতে জীবনের জল
বেগুনী হয়
জাম ফাটে, ডিম ফাটে
কলাবতী বনে অচেনা ভ্রমর এসে বসে
তোষক ও জাজিমের মাঝে
সাপটি নিশ্চিন্তে ঘুমায়
অঘোরী
অঘোরবালার সাথে আমার পরিচয় অনেককাল তখনও এজন্ম পাইনি
সেজন্মের তেঁতুলতলায়
পুরনো কাসুন্দি মাখা শেষ বিকেলে…
এক অবিমিশ্র মনোমালিন্যের পর
অঘোরবালার সাথে দেখা হয়েছিল
মাছ ধরতে গিয়ে। আটা-ময়দা, পিপিলিকা-ডিম কেঁচো, শামুকের সাদা মাংস বেঁধে, বিমোহিত বিকটদর্শন কাঁকড়া শিকার
গৃহস্থের সন্ধ্যা যখন ভরপুর আমিষ; সাদা থান, আসন্নপ্রসবা সেই দেবীর সাথে চড়কের দিনে জিহ্বায় কাঁটা মেরে প্রথম কথা বলেছিলাম
অঘোরবালার সাথে হয়তবা দেখাই হয়নি
আমাদের জিহ্বাগুলি শূন্যে ঝুলে ছিল
সুদীপ্ত চক্রবর্তী
জন্ম: ১৯৭৪। পশ্চিমবঙ্গের নব্বই দশকের ভিন্ন স্বরের গুরুত্বপূর্ণ কবি। পেশা সূত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একজন প্রশাসক। জন্ম ও যাপন হাওড়া ও কলকাতা জেলায়, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে পেশার কারণে বসবাস করছেন। প্রকাশিত কবিতার বই – জলের শহর ( ২০০৫ ), স্মৃতি ও পুনর্জন্ম ( ২০১০), কাঠবেড়ালির সেতু (২০১৬ )।
Bujhbe ey khabar akash theke poreni…