আজ বৃহস্পতিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কালো পোশাক পরা মানুষটাকে

।। সাদ রহমান ।।

বাকি আর সব কিছুই, জগত বা প্রতিচ্ছবি
জগত জগতের মতোই

কালো পোশাক পরা মানুষটাকে, তাই ফুলের পাশে দেখে
বসে আছে যে, কাঁধ বাঁকা করে উপন্যাস লেখে

ভাবনাচিন্তাগুলো আসে, তায় অতি দূরে চলে যায়
নতুন ভাবনা আসে
প্রায় পানি বা যেকোনো স্থানেই
অতি প্রবাহিত হয়

প্রধানমন্ত্রী

সারাদেশে, এমনকি নোয়াখালীর অতি মন্থর কোনো গ্রামেও
যেখানে
জাম গাছের নিচেও মানুষ বসে হত্যা করে
অপর অথবা কাউকে

আবাহনীর বা মোহামেডানের, বা জুয়ার
বা একখানি রাজনৈতিক মাত্র অবসাদের ছায়ায়

সেমনই,
দেখা হবার মতো কোনো মজমা বা সভায়
কবিতা, কিংবা ছড়া পাঠের আসরে

কোনো কবি, কবিতার ফাঁকে ফাঁকে যতোখানি
মিস করে যাইতে পারে অনুভবেরে
ততখানি ধরাজ্ঞান হয়ে, ক্যানো কেহ
হয়তো মহিলা কিংবা নারী

বা কোনো দ্বাদশী বা ত্রয়োদশী ছোট কেউ
ডেকে তো কহিলো না ড্যাডি!

আমার মূর্ছা হয় তখনই
ততখানি
যতখানি মন্ত্রীসভার পরে নিরবে প্রধানমন্ত্রী!

নিঃসঙ্গ শাড়ি বা নারী মাত্র চরিত্র
কিন্তু তার ব্যথা
বা অনুভবের ছাপ ও প্রভাব
সর্বক্ষেত্রেই প্রভাবিত আছে

সারাদেশে, এমনকি নোয়াখালীর অতি মন্থর কোনো গ্রামেও
যেখানে
জাম গাছের নিচেও মানুষ বসে হত্যা করে
অপর অথবা কাউকে

আবাহনীর, বা মোহামেডানের, বা জুয়ার
বা একখানি রাজনৈতিক মাত্র অবসাদের ছায়ায়
.
১৫ জুন, ২০২১

উৎসর্গ মাসুদুল করিম

ভাবনাচিন্তাগুলো কেন জীবনের শত কাছাকাছি ঘুরলো, শুধু তাই নিয়েই
মাসুদুল করিমের এই মনে ভয় হয়

বাকি আর সব কিছুই, জগত বা প্রতিচ্ছবি
জগত জগতের মতোই

কালো পোশাক পরা মানুষটাকে, তাই ফুলের পাশে দেখে
বসে আছে যে, কাঁধ বাঁকা করে উপন্যাস লেখে

ভাবনাচিন্তাগুলো আসে, তায় অতি দূরে চলে যায়
নতুন ভাবনা আসে
প্রায় পানি বা যেকোনো স্থানেই
অতি প্রবাহিত হয়
.
১২ জুন, ২০২১

বড়

এক অশেষ অনবদ্য কারখানায় আমাদের যেদিন জন্ম হলো, সেদিনও আমাদের ‘বাবা-মা’রা সারিবদ্ধভাবে বৃক্ষের মগডালের উপরে শির উচু করে দাঁড়াতো, আইডেন্টিটি- সহ

আর যেদিন, আমাদের কারখানায় এসে সোনার বস্তার উপরে বসে থাকতো অভদ্র মাস্তানেরা, শুধু
সেদিনই, আমাদের অতিসুন্দর বোনগুলোর জম্ম হতো

আমাদের গ্রামবাংলার পাতিহাস, জসীমউদ্দীনের রসোৎপাদক বই, গাছের পাতার নড়াচড়া, তখনও সেখানে দেখা যেতো, আমাদের কারখানা-পুর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণে

গ্রীষ্মের অসহ্য এক দুপুরে, বুঝতে পারলাম, আমরা সবাই, এখন আর কেউ এসে তোমাকে দেখবে না, অথচ ধুলার বাটি, রিকশার শব্দগুলো অযথাই, আমাদের বিশ্বকল্পনার বাহিরে গিয়ে ক্যানো ঘটবে বলে আমাদের সেই বিশ্বাস, নিছকই অযথাই, আর সেদিনই, আমরা বড় প্রাণি হয়ে উঠলাম

তারপর থেকে আমাদের ডেটিং অ্যাপের ব্যবসা আরম্ভ, আল্লাহর রহমতে, খোদার ইচ্ছায়, ফেসবুকে

আমাদের মাথাগুলো ছিলো কিছুটা ছোট ছোট, বলতে দ্বিধা নাই, তার চাইতেও তুখোর ছিল জীবনের ভাবধারা, নিছকই খুবই হয়তো একদিন, বিকালে বা সন্ধ্যায়, নির্ঝঞ্ঝাটে কোনো পেঁপে গাছের তলে এসে বসতাম, আর একমাত্র সেটাই আমাদের অ্যাপকে বাদ দিয়ে, মাথা বা হাঁটু ধরে বসে থাকা

আর মাস্তানেরা গলার সুরে জীবনের গান, তখনও গাইতে থাকতো

তারপরে, সেগুলাও শেষ হলো, সেদিনও বৃষ্টি পড়ছিলো, দূরদূরান্তে হাটুপানির সমুদ্র, মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলো তাও, দোকানের শাটার ধরে, কেউ কেউ ঝুলে, কেউ কেউ সবিনয়ে ছুটে, যদিও সেটাও গাড়ি বা পাজারোর মধ্যে, হুশ হুশ শব্দে

সেদিন বৃষ্টির রাতে, পরে আমরা দীর্ঘ এক ঘুম দিলাম, আমাদের বয়স তখন ২৪ বা ২৩ এর নিচে এবং উপরে, তো সকালে, পাখিরা ডাকতো, সেই পাখিও আমাদের বন্ধু ছিলো

তারপরে, ঘুম ভাঙলো পাখির শব্দে

বিয়া করার কথা হচ্ছিলো আমাদের কারো কারো, কারো কারো ততোদিনে বিয়া হয়ে গেছে, যদিও বন্ধুত্ব ও মিছেকলা ঘাস গ্রামের গরুর মতোন আমরা খেতাম

তারপরে একদিন সবুজ ঘাস শেষ হয়ে গেলো, আমাদের বাবা-মাদের জীবনে শেষবারের মতোন উড়ে আসলো হাওয়াবিবির আগ্রহ, প্রায় অসহ্য, হয়েই তবে আমরা গৃহে ফিরলাম

দেখলাম তিনতলার মধ্যে আরেকটি মা, যদিও নতুন, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সুশৃঙ্খল ভঙ্গিতে শাড়ি পরতেছে, পাশ ফিরে শুইলাম, জীবন আরম্ভ হলো, সত্যি এই গল্পের থেকে বের হবার সাধ্য আমাদের কারোরই ছিলো না

মাঝে মাঝে গান শুনতাম আমরা, মাঝে মাঝে ব্যাকুল হয়ে শতব্যস্ত রাস্তার মধ্যে যতোদূর দৃষ্টি যায় ততদূর ছুটে যেতাম, পানির মতো, আবার ফিরে আসতাম, আপন ঠিকানায়

এরপরে, আস্তে আস্তে আমাদের ঘুমের সমস্যা দেখা দিলো

পাশে বালিশ থাকতো, নদীতে মাছ থাকতো, সেই মাছ পেরে এনে আমরা খেতাম

সেই নদী, গান গাইতো আমাদের জন্য

যতোদূর দৃষ্টি যায় ততোদূর গিয়ে আমরা আবার ফিরে আসতাম

কেননা দৃষ্টি একসময় ফুরাইতে থাকতো

একসময়
বেদনায় বিদ্ধ হয়ে কী নির্মুল এক অহংকারে, আমরা পথের পাশে দাঁড়িয়ে, অল্প একটু চা খেয়ে, অল্প একটু জিম করে, দৌড়ায়ে, হেঁটে, ঘুমায়ে, লাফ দিয়ে, বাচ্চাকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়ে, সেই মধুমাখা তীব্র গরমে
অদ্ভুত জলপ্রপাতের অশেষ বৃষ্টি-ধারায় নির্গত হয়ে, বিমূর্ত শব্দের ঝনঝনানির অতিবিরক্তির চুরাশিষ্ট, ব্যথা-নির্ব্যথা হয়ে, কেবলই টিনের চালের সেই শব্দ মানুষের ঘরে, আজও সেই শব্দ বউ বা মায়ের ঘরে, আমরা শুনতে পাই

অশেষ বেদনায়, জীবনের ক্লান্তিমাখা কণ্ঠের সেই কান্না, আমরা আজোও কাঁদি

.১১ জুন ২০২১

অনুবাদের কথা

কেউ একজন পথের পাশে বসে গেল কুকুর আদর করতে
এই বাক্য
ইংরেজিতে লিখতে গিয়া কতোভাবে আমি লেখলাম

আরো একবার
আরো কতো বাক্য আমি লিখতেছিলাম

যেমন গাছের নিচে পড়ে, মরে গেলো রোগী
তেমনই গাছও অতি সমব্যথী মন নিয়ে, পড়ে থাকে রাস্তায়
আর কুকুরগুলাও ছিলো গাছেরই পাশে

এভাবে, রক্তের ইংরেজিতে আসা ব্লাডও
তেমনই, অতি ব্যক্ত কোন বিষয় ছিল
কিন্তু নিতান্তই পড়ে থাকা রাস্তায়
যা অতি রোদে

তো যা হোক, এসবের ইংরেজি বসে আমি
বানাচ্ছিলাম
সেদিনই
পরে গুগল ট্রান্সলেটরকে দিয়ে দেই

পরে নিজেই হাঁটতে হাঁটতে নীলক্ষেতে গিয়ে
‘আমাকে অনুবাদ করুন’ লেখা দেখে দাঁড়াই
তখনও,
যদিও দুনিয়া ছিলই ব্যস্ত, স্বনিত ব্যস্ততায়

দুনিয়ারা পড়ে ছিল চারিপাশে
তাই থাকে
আর দুনিয়াদের উপরেও দুনিয়াদের মাটির কবর
তার পাশেও অসংখ্য গাছ বা প্রকল্প আছে
আছে নদী, কল্পনা, আর মৌমাছির অগণিত ডাক

তারপরে,
বিকাল হলো
কেননা শুধু সেটাই হবার বাকি ছিলো
সেইদিন
আর আমি, নিজেও অতি ব্যস্ত রাস্তার একপাশে
দাঁড়িয়ে, নীরবে
নারীর গভীর থেকে পাস্তুরিত বেদনা
খাইতে চেষ্টা করি

এভাবেই অপরাধ নিজ গুণে গাছ বা মাটি থেকে
প্রবাহিত হয়
আমাকেও, তোমাকেও জানি, জানায় ও হাতছানি দেয়

আর প্রকল্পগুলোও
যথা আবাসন প্রকল্পগুলো দাঁড়াতে থাকে ততো উঁচুতে
এক মহিমান্বিত, সেই নিদারুণ, ত্রস্ত উম্ ঝাপিত
গোধুলির সকরুণ রঙ
একে অপরকে জড়ায়

.৯ জুন, ২০২১

অনেক ছাতা

অনেক পাতা পইড়া ছিলো রাস্তায়
অনেক ছাতা পইড়া ছিলো তার পাশে
দিগন্ত যতদূর যাইতে পারতো ঠিক
ততদূর হইতেই মরার ডাক আসে

অনেক পাতা পইড়া ছিলো রাস্তায়
অনেক ছাতা পইড়া ছিলো তার পাশে

অনেক ব্যথা-যন্ত্রণা-বেদনাজনিত
ভোগা কাব্যগাথা
মৃত্যুপতিত
আজি,
শিমুলগাছের তলের ভিতর বসিয়া বসিয়া হাসে

বাকি,
আর তুমি যত বেশি গুদমারা খাও
ততো বেশি দুনিয়া তোমারই উজ্জ্বল

তত বেশি নিখিল, দুনিয়াদারি, কান্দিতে
কান্দিতে যায় আদিকালের গৃহবধু
গ্রামীণ সবান্ধব রাস্তায়

ওগো মোর নিখিলবিশ্ব, ওগো মৌমাছি এবার
ভাবাও মোরে
ওগো পিপীলিকা, সবাস্তব সবই, ঘটিতেছে চুইচুই
আমি দেখি
পড়িতেছে মধু নারীর স্তন হতে
.

৯ জুন, ২০২১

প্রচ্ছদের ছবি: Yulia Reznikova


সাদ রহমান


জন্ম, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ১৯৯৬, ঢাকা। প্রধান পরিচয় : লেখক। পদ্য এবং গদ্য— সাহিত্যের এই দুই সাইডেই সমান আগ্রহ। সেই সঙ্গে, টান আছে দর্শনচর্চা ও পোলিটিক্যাল বিষয়গুলোর দিকে। ভবিষ্যতে সিনেমাও বানাবেন এমন আশা করেন।Share

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top