।। শাদমান শাহিদ ।।
তেলাপোকার কোনো নাম থাকে না
তেলাপোকার কোনো গ্রাম-গঞ্জ-শহর থাকে না
তেলাপোকার কোনো প্রতিষ্ঠান-স্থাপনা থাকে না
তেলাপোকার কোনো মূর্তি-ম্যুরাল থাকে না
প্রতিপক্ষ
তিনি বললেন, যা দিলাম খুশি তো!
আমরা বললাম, খুশি
সে-রাতেই চিৎকার নামে পাড়ায়
ফটাফট বন্ধ হয়ে যায় দরজা-জানালা
একদিন এসে বললেন, আমাকে তোমাদের কেমন লাগে?
আমরা বললাম, ভালোলাগে
সেদিন সন্ধ্যার আগেই মহল্লা ছেড়ে পালিয়ে যায় পাখি
ছোটাছুটি শুরু করে দেয় গোয়ালের গরু-বাছুর
আরেকদিন বললেন, আমায় তোমরা ভোট দিবা তো!
আমরা বললাম, দিমু
সেদিনই নাযিল হয় অন্ধকার, ঘরে ঘরে
আর তার কালো পর্দায় বেজে ওঠে ধুপধাপ বুট-জুতোর শব্দ
একদিন দেখি তার মুখটা বেজার
না তিনি কোনো কথা বললেন
না আমরা
আশ্চর্য! সেদিনই সন্ধ্যার আগেভাগে ফিরে আসে পাখিরা
আকাশ জুড়ে জেগে ওঠে দুধেল চাঁদ
উঠোনে উঠোনে জড়ো হয় চিরায়ত গল্পের ঝাঁক।
তেলাপোকা
একদিন দেখলাম মাথার উপর কনক্রিটের ধুলো
ধুলোর অন্ধকারে ভেসে বেড়াচ্ছিলো ক্রুর হাসি
নিষ্ঠুর তামাশা
অপমান
ভেসে বেড়াচ্ছিলো কিছু পদশব্দ
একসময় ঘুম পায় আমাদের
আমরা ঘুমোই
দীর্ঘ ঘুম
একসময় জেগে উঠতে হয়
দেহমন যতোই অবসন্ন হোক ঘুমেরও মেয়াদ থাকে
জেগে উঠি কোনো প্রকার তাড়না ছাড়াই
দেখি— আমরা আর মানুষ নই, সব কাফকার তেলাপোকা
তেলাপোকার কোনো নাম থাকে না
তেলাপোকার কোনো গ্রাম-গঞ্জ-শহর থাকে না
তেলাপোকার কোনো প্রতিষ্ঠান-স্থাপনা থাকে না
তেলাপোকার কোনো মূর্তি-ম্যুরাল থাকে না
তেলাপোকার চোখ থাকে, সে দেখে
আমরা দেখি সবখানে কেবল
একটি নাম
একটি মূর্তি
একটি ম্যুরাল
তেলাপোকার কান থাকে, সে শুনে
আমরা শুনি অস্থির কিছু পদশব্দ
ক্রুর হাসি
নিষ্ঠুর তামাশা
অপমান
জিউল মাছ
ওরা কেটে নেবে হাত-পা-মুণ্ডু
আর আমি নিজেকে ছেড়ে দেবো অনায়াসে
অতটা বেকুব তো ছিলাম না কখনও
আমারও ছিল গোপন কাঁটা
এক ঘায়েই জ্বর ওঠে যেতো সমগ্র এশিয়ায়
নড়েচড়ে ওঠতো হাসপাতালের যন্ত্রপাতি
আর জিভে চেপে ধরা থার্মোমিটার
স্টেথোস্কোপ হাতে ছোটাছুটি শুরু হয়ে যেতো
কর্কটক্রান্তির এপ্রান্ত ওপ্রান্ত
সময় ছিল তখন
নাকারায় বাড়ি পড়লে দাঁড়িয়ে পড়তো সারিবদ্ধ
দশ লাখ চর
আর নব্বই হাজার কূল-উপকূল
এখনও যে দিন নেই, তা নয়
ভাবি
কেউ না কেউ তো প্রতিশোধ নেয়ই।
আমার চোখ অনবদ্যকে দ্যাখে
পুলিশ আসে বাসায়
প্রায়ই আসে
‘আমার ফাঁসি চাই’
‘ডেড রেকনিং’
বইগুলো বাসায় আছে কিনা
জানতে চায়
মাথা নাড়ি
নেই
তারপরও বন্ধ হয় না তল্লাশি
খোঁজ করে তাক থেকে শুরু করে আমার রগে রগে
বরাবরই একই উত্তর
নেই, জানি না
‘স্মৃতিকথা’
‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’
‘A BROKEN DREAM’
বইগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে
একদৃষ্টিতে
কেন কিনেছি এগুলো
কৈফিয়ত চায়
আমার চোখ তখন স্টাডি টেবিলের পাশে দাঁড়ানো অনবদ্যকে দ্যাখে
তার হাতে ছবি আঁকার প্যাড, পেন্সিল
এবার সে সিক্স থেকে সেভেনে উঠেছে।
শাদমান শাহিদ
জন্ম কুলিয়ারচর, কিশোরগঞ্জ। প্রকাশিত গ্রন্থ: ছোটগল্প: যমকুলি (২০১৪) , শিকড়, ঢাকা। উপন্যাস: পোস্টার চোখ (২০১৯) , চৈতন্য, সিলেট।সম্পাদনা: সম্পাদক, ত্রিকাল ( ছোটগল্প বিষয়ক লিটলম্যাগ, নরসিংদী)