আজ বৃহস্পতিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কয়েকটা রাস্তায় আমি যেরকম দেখলাম

।। প্রত্যুষ বন্দ্যোপাধ্যায় ।।

জাঙিয়ার বুকপকেট ব্যাপারটা
ছ্যাবলামো বলেই জানতাম এতদিন
অথচ বইমেলার বোম্বাই চাট আর ফুলকপির
চিকেন চাউয়ের ধাক্কাধাক্কি সামলে
নক্সাদার পাঞ্জাবীর একাডেমী কবি তখন
ওখান থেকেই পেনটা বার করে সই দিচ্ছিলেন  
আদুরে ঘর্ঘর পুসিক্যাট পাঠিকাদের

কয়েকটা রাস্তায় আমি যেরকম দেখলাম

দু’জন ছাতা খুললো
পাশাপাশি হাঁচলো
মাপলো আড়চোখে পরষ্পর

তখন বৃষ্টি শুরু
পরিবর্তন এন্ড কোং নির্মিত বাস ছাউনির
চাদ্দিক থেকেই জলের ছাঁট ভেতরে

তড়িঘড়ি মাথায় রুমাল চেপে 
এলো যে তৃতীয় জন তার কোনো ছাতা নেই
কান নীচু গা ঝাড়া দেওয়া কুকুরটারও নেই

এই সব দেখেশুনে ওই দু’জন
ট্যারচা হেসে
আলগোছে পিক্‌ ফেলার মতো কয়েকটা কথা
ছিটিয়ে দিলো পতনশীল বৃষ্টির ফোঁটায়

— আজ আকাশের অবস্থা বেশ খারাপ
— মানুষ চিরটাকালই খুব বোকা

তারপর তিনটে লোকই বিলকুল ভিজে গেলো
আর কুকুরটার কথা লেখার জন্যে
কেউ আমাকে পয়সা দিলো না

🪟

কলকাতার রাস্তায় ফণিমনসার ঝাড়

আমি থমকে ভাবি
আজ মদটা কী বেশী খাওয়া হয়ে গেছে

তোমাকে আজকাল আর বাসস্টপে দেখি না
তুমি বরের গাড়িতে যাও
আর প্রেমিকের বাইকে ফেরো

তিনটে পাগলের মিছিলেও
কলকাতা অচল হয়ে পড়ে আজকাল
আজকাল টিভিতে চোপ্‌ উন্নয়ন চলছে প্রোগ্রামটা
বেশ ভালোই টিআরপি দিচ্ছে বলে শুনছি

জাঙিয়ার বুকপকেট ব্যাপারটা
ছ্যাবলামো বলেই জানতাম এতদিন
অথচ বইমেলার বোম্বাই চাট আর ফুলকপির
চিকেন চাউয়ের ধাক্কাধাক্কি সামলে
নক্সাদার পাঞ্জাবীর একাডেমী কবি তখন
ওখান থেকেই পেনটা বার করে সই দিচ্ছিলেন  
আদুরে ঘর্ঘর পুসিক্যাট পাঠিকাদের

হেসে উঠতে গিয়ে
সেই যে হ্যাচোড়প্যাচোড় দৌড়ে
কিভাবে যেন
কলকাতার রাস্তায় ফণিমনসা
তার মাথায় ফুল
মাত্রা ভুলে যাওয়া মদ আর
এখনও নিজের না-কিতাব কবিতাগুলো দেখে ফেললাম

🪟

কয়েকটা রাস্তায় জল পড়ে যায়
কয়েকটা রাস্তায় ঝাঁঝরি দিয়ে গড়িয়ে যায় জল

সেই রাস্তার দু’পাশে নিচু নিচু  
টালি ঘর খোলা ঘর দেওয়ালে পেচ্ছাপ  

তোমার বন্ধুরা আর কেউ এখানে থাকে না

বাপির বুকের যে অসুখ
তাকে তুমি চেনো
বাপি কিন্তু তাকে হঠাৎ দেখে ফেলে বেশ চমকে গেছে
যা হোক করে নিজের কবিতাগুলো গুছিয়ে
রাখতে চাইছে মাথার বালিশের পাশে

ওকে ওর কাজ করতে দাও
তুমি নিজের কাজটা করো

অথচ তোমার কাজটা যে ঠিক কি

রাস্তায় রাস্তায় জল পড়ে যাচ্ছে
বালতি অপেক্ষা করছে
ঝাঁঝরি বেয়ে নেমে যাচ্ছে জল

রাস্তা থেকে মুখ ফিরিয়ে
যে ঘরের দিকেই তাকাও

তোমার বন্ধুরা আর কেউ সেখানে থাকে না

ব্যাংক কফি হাউস খেলার মাঠ
সবকটাই রাস্তা দিয়ে তৈরী

বাজার শ্মশান মহাবিদ্যালয়
রাস্তা জুড়ে জুড়েই উপনিবেশ

এমনকি তুমি যে সেক্টর ফাইভের তথ্য সাম্রাজ্যে
বেগার খাটো
সেখানেও রাস্তার পোষাকি নাম
স্ট্রীট এভিনিউ

কেয়ার অফ ফুটপাথ গায়কের
দাড়িতে জেল
গাড়িতে সারেন্ডার তেল

বাচ্চারা শিখে গেছে
ডাঁয়ে বাঁয়ে তাকাতে হয়
তারপর নিরাপদ জেব্রার গায়ে গায়ে
পেরিয়ে যেতে হয় রাস্তার মোড়

সেই যে একটা আধুলি গড়িয়ে দিয়েছিলে
কখন যে সেটা টপ্‌ স্পিন খেয়ে
একটা মাতালের পিছু নিলো
মাতালটা কুকুরের

আর তুমি যেন সেই এতোলবেতোল মদ
যে রাস্তা দেখলেই টলতে শুরু করে

🪟

পৃথিবীর তিনভাগ জল
একভাগ স্থল

আর সেই স্থলভূমিতে আমরা পৌঁছাই
রাস্তা দিয়ে

রাস্তার কোনো বিশেষ্য বিশেষণ নেই
রাস্তার সর্বনাম রাস্তা-ই

তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসার রাস্তা
আর নিয়ে যাওয়ার রাস্তায়
অপরাহ্নের ছায়াপাত দীর্ঘায়িত হয়

এতোদিন বাদেও যেন বুঝে উঠতে পারলাম না
কবিতা আর টাকার মধ্যে কেন এতো শত্রুতা

বাগুইহাটির বারান্দায় দীপ্ত ছবি শোকাচ্ছে
দীপ্ত’র ক্যানভাসে মাছি তাড়াতে
যাবো আমি

অটো আর প্রাইভেট বাসে
আজকাল বাধ্যতামূলক গানের ক্লাশ শুরু হয়েছে
আমার শহর থেকে দৌড়ে পালাচ্ছে সব রঙ
আর গুটিগুটি হেঁটে এসে দখল নিচ্ছে
নীল আর সাদা

তবু সন্ধ্যে হলেই আলোগুলো ঝামরে ওঠে
আর রাস্তাগুলো আমায় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে
শুঁড়িখানার সামনে এনে ফেলে
হাঁফায়

🪟

ঘর টপকানো পা
মিছিলের দিকে তো যাবেই

বন্ধুরা হেসে সরে গেছে

কয়েকটা নতুন মেয়ে
কয়েকটা নতুন ছেলের সাথে
প্রেমের অন্য ভাষা লিখে চলে পোস্টারে পোস্টারে

কিছু পাখি
এখনও অসহিষ্ণু ডানা ঝাপটায়

বিকেল যতোই মরে আসুক
তোমাকে ডাকলেই
রাস্তাগুলো ঝমঝম বেজে ওঠে

ক্রমাগত এগিয়ে যাওয়ার প্রতি
বিশ্বস্ততা ছাড়া
আর কি-ই বা উপহার দিতে পারি

রাস্তা তুমি বলো

Painting by Koos Ten Kate

প্রত্যুষ বন্দ্যোপাধ্যায়

জন্ম ১৯৬০, নিবাস, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, ভবানীপুর। স্বাক্ষর। সম্পাদিত পত্রিকা – শব্দ, ক্যানেস্তারা। প্রকাশিত কবিতার বই – অব্যয় সংহিতা (ধানসিড়ি) ‘ক্যাজুয়াল স্বৈরতন্ত্রী (অক্ষরযাত্রা)। প্রকাশিতব্য, ‘চালচিত্র’ (অক্ষর যাত্রা)

Share

3 thoughts on “কয়েকটা রাস্তায় আমি যেরকম দেখলাম”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top