।। মীর হাবীব আল মানজুর ।।
সিনথেসিস
তুমি কি লেস লেস লেসবিয়ান!
আলোয় ফুটো আর ছায়ায় ম্লান
মেঘলা জ্যোতি, তার নীলাভে প্লুত
নেকাব থেকে ঝরে, সমাজচ্যুত!
মসিঁয়ে চেনো তুমি মাদমোজেল?
ফেডাপ! নিচ্ছ নাকি এ্যলকহেল?
দেখছ স্বপ্নে এক সাক্যিউবাস
গলছে ঠোঁট যেন সাক্যিউল্যান্ট
তুমি কি লেস লেস লেসবিয়ান?
ভাঙছ তুমি এক স্মৃতির ক্লোন
তুমি কি কিম কিম কাদেশিয়ান!
মেয়েই! নাকি তুমি ছেলের ভ্রূণ?
তোমার চোখগুলা প্রিটেনশাস
কখনো লাগে খুব সাসপিশাস
বোঝা তো যায় না এ নার্সিসাস
তোমার সব ঢঙ খুব প্রেশাস
২০১৮
আমার কবিতা
পাখি, পেপের মতো পেকে ওঠো
আমার অলিন্দ ভরা ছাই,
আমার সমস্ত কবিতায় অহম ও অস্মিতা বড়ো বেশি
কবিতায় বহু অনর্থচর্চা চাই
তেল, মেদ আর অপ্রয়োজনীয় বহু উপকরণ চাই
দূর্বোধ্য দূর্গকে খাতার স্কেচে রেখে দিতে চাই
লোহার রেলগাড়ি, তুমি কি হাঁসের ঠোঁটও চাকায় চ্যাপ্টা করে দিতে পারো!
আমার অঞ্জলি ভরা চুল ও চুন তেজী উপাচার,
আমার তালুতে অনেক উত্তেজের স্বেদ,
অনেক অস্থিরতার ভেষজভেদ
আমার প্রার্থনা তোমার সীমাতে আমার থাকবার
আমার মরফিন তোমাকে একবার দর্শন,
তারপর আবার আমার স্মৃতি জ্বলজ্বল করে
একটা কাঁচাগাব ফলে আছে পাহাড়ি পাকা গাবের পাশে
আমি কি স্মৃতির কাছে কোনো অদ্ভুত ঔরসের কথা বলবো,
যেখানে ছায়ার প্রজনন হয়!
২০১৮ অগাস্ট
অজ্ঞাতে তোমার বিভাবে
তুমি কে! তোমাকে জানি না, তোমাকে জানার খুব আগ্রহ না,
শুধু একটা হাওয়া বেমালুম অস্বস্তি নিয়াসে,
হয়ত একটা আবহ, একটা আবেশ-যা তোমার চুল ওড়ায়,
হয়ত বামহাত-তোমার মাঝে চলে আসা কাপড় উরুতে তুলে দেয়
একটা রাস্তা কখনো তুমি হয়ে যায়, একটা বিমূর্ততা তোমাকে নিয়াসে
একটা ঘ্রাণ-তোমার প্রাচুর্যতা অল্পে নিয়াসে, আমার দিকভোলা-বিভ্রমি লাগে
তোমাকে চিনি না, শুধু হিজাবের এক রঙ মাঝে মাঝে বাতাসে
হয়ত একসময়ে আমাদের দৃষ্টিপাতে কাকতাল হয়
অল্প আলসা অজ্ঞাতে অল্প ভালো লাগে
শুধু দৃষ্টি থেকে তোমাক বিনির্মাণ, বিসঙ্গায়ন, হাকিকত জানি না, জানতে অল্প আগ্রহ,
এই আধা চেনায় একটা নতুন পুলক, একটা আলো বুক থেকে বের হয়ে
মাথা থেকে পা ছেয়ে ফেলে
এ বয়স; উন্মুখরতার ভেতর; উন্মত্ত যৌনতা যার গান
উন্মীলন হচ্ছে পরতের; যার ভেতর প্রচুর আকিবুকি
তাকাতেও শিখো নাই, এরকম হায়া নাই স্মৃতির ভেতর
এভাবে হয় না পিরিত, এভাবে যায় না রোবাস্তু খাওয়া
তোমার তাকানো লুকানো ছুরির দাপট, সুরধর্মী না’এর কপাট,
আমাকে ফণিমনসা ছুইলো যেবার, সে রকম লকলকে হাওয়া
আমি জানি না ঘুম ও তার উচ্চারণধর্মীতা
প্রথম যেদিন সাপের পা দেখি, এরপর দীর্ঘদিন
তোমার দৃষ্টি আমাকে বিত্তশালী রেখেছিল
আফ্রিকার ইতিহাস অল্প অল্প জানছি,
আর ঘুমে ব্যক্তিগত রক্তহ্রদ লালিত হচ্ছে
আমি কে! আমাকে চেনার জন্য অল্প বেখেয়াল কাল রাখো,
তাতে আমার পরিচয় পুঞ্জিভূত হবে
আমি কে! আমি আমার ভেতরে তোমার গান, যার সুর ক্ষীণ নিশ্চেতনের ভেতর,
যার সুর দৃষ্টির ভেতরের আলোকে স্বর দেয়
আমি কে! আমি মৃত্যুর নিরুত্তাপ সুরসিক,যাকে ছুয়ে আছে আলোর এজমা
সেপ্টেম্বর ১৯
তোমাকে লিরিক ভাবি
তোমাকে লিরিক ভাবি
আর এক থতমত প্রতিতুলনার ভিতর গুছিয়ে আনি
বাহু দেখে প্রজাপতি ভাবি
সুন্দর কী যে! এ ভাবনায় আত্মার গোস্ত ফেটে যায়
এস্রাজ এতটুকুও বাজাতে শিখি নাই তাই
আমার আঙুল খালি সব সিনট্যাক্স ভেঙে ফেলে
অথবা
তুমি এক নুরানি চূড়া আর আমার আঙুলেই কেবল এসরাজ ঘেমে যায়!
ও হাওয়া, ওগো পতাকার পতপত
যেন বেলুনের সুন্দর বুঝতে আমাকে শিশু হতে হবে
দীপ্তি না, শুধু ভাঙার স্পৃহা!
আজ সারাদিন হেটে হেটে বাতাসে ঘুমাব আমি
পাখি যেভাবেই ডাকে সেভাবেই গুঞ্জরণ হয়
পাখি বসতে বসতে এক মিথ্যার ডাল পাখি হয়ে গেল
পাখির গোপন অভ্যাস মিথ্যা নিপুণ রপ্ত করেছে
তোমারে গভীর সত্য বললাম পাখি,
এখন কোকিল না কাকের ডাক ডাকো
তাতে আমার কীইবা আসে যায়!!
আমার পূর্বপুরুষের ভিতর নিশ্চিতভাবে কেউ শকুন ছিল,
না হলে মাঝে মাঝে কেন নখ চাগাড় দিয়ে উঠে!
তোমার অনুপস্থিতি এমন আওয়াজীয়ো,
একলা বধির কোনো পাখির মতো হৃদয়ের গুড় গুড় শুনি
কোথা থেকে বিষ্টি আসে!
মার্কার পেন আনো,
ঘ্রাণ শুকে শুকে ছাট উপভোগ করা যায় কি না দেখি!
আমার প্রার্থনায় আরো দূরে চলে যায় বিকালের অবগাঢ়ি ছায়া,
আমার পরিচিত মুখগুলি হয়ে যাচ্ছে দূর অপরিচিত অপলাপ
কবিতায় বিষ্টির কথা আর কোনোভাবে বলা যায়,
যদি তার সাথে আমশি চিবানোর কথা না বলি!
ডিসেম্বর আসতেছে, সবুজ
শীতের শুরুতে আমি চাই কিছু সংকেত রেখে যেতে
নভেম্বর ২০২০
সমুদ্র সফরের গান
আমরা সমুদ্রে যাব, সমুদ্রের সঙ্গে মিলিয়ে পোশাক কিনছি। রাতদিন এক উন্মাতাল প্রখরতার ভেতর, ঠান্ডা আমাদের শিহরণকে নৈকট্য দিচ্ছে। মা’র জন্য এক কার্ডিগান কিনব, তাতে বাবার ঘামের গন্ধ খুজছি। সমুদ্রে যেতে আমাদের যে পথ, তাতে আমরা তুষার দেখছি। আমাদের দু’হাতে দাস্তানা, আমাদের হৃদয়গুলোকে উষ্ণ করছি। আগুন জ্বালাতে হবে, আঙারের প্রশমন আমাদের ঠোটে বুলিয়ে দিচ্ছি। আহা সমুদ্র! আমরা সাংগীতিক স্বপ্ন দেখছি। যে দিন পিছে ফেলে রেখে সামনে তাকিয়েছি, তা কি অবসন্নতার রোধে সামনে আসছে! নতুন সময়ের দিকে উদবাহু হয়ে আছি, তা কি ছাই পেরিয়ে অল্প আগুনের উশুম নিয়ে আছে! বাবা এই শীতে, ঘনসিক্ত কবরের মাটি। বাবা, আমাদের মাত্র শুরু হওয়া যৌবনের সামনে এক কমা! এই শীত, প্রাণান্ত বিবরণ তোমার। তুমি-সমুদ্রের সামনে চতুর্মুখী ভাঙা নক্ষত্রের গুড়া। কী আনন্দ লাগছে আমার, আমার আত্মাকে বারবার পাঠাচ্ছি সমুদ্রের জিয়ারতে। আমাদের মেহন তাবাসসুম রুপ ধরে সম্মুখে, বিপ্লব লাতিন আর আফ্রিকা তাতে শিহরণ দিচ্ছে। আহা উত্তেজনা! হিংস্রতার হাসির দিকটা দেখি। আহা বিপ্লবের উত্তেজনা! তাতে যৌনতা একাকার হয়ে যাচ্ছে। চাদর থেকে পা বেরিয়ে গেলে শীত, আর যখন ভেতরে টেনে নিচ্ছি, এক মধুর জৈবস্বপ্ন পাগল করে দিচ্ছে। আহা সমুদ্র! ছোট ছোট সোনালী মাছ আর পাথরের বাষ্প কি রেখেছ আমাদের জন্য! আহা সমুদ্র! তোমাকে দেখে কারা শরাব নিচ্ছে!
সমুদ্র এক বিশাল পরিখা ধরে রেখেছে ওখানে, আত্মা পরাক্রান্তা হবে বুঝি সমুদ্রের সুখে
ডিসেম্বর ১৯
মুহাম্মাদপুরের জন্য মর্সিয়া
আমি মুহাম্মাদপুরের জন্য কিছু লিখতে চাই,
আর সেটা আমার পিথিবীর গুঞ্জরণ থেকে
আজ ২৭ সেপ্টেম্বর
আমার দূরত্বে শুধু মুহাম্মাদপুরের প্রতি শোক
কী দিন এসেছিল!
আমি এসেছিলাম ফরিদাবাদ আর আমার হৃদয় পড়ে ছিল মুহাম্মাদপুরে!
মিলব্যারাক আর পোস্তগোলার প্রতিটা পথ অল্প চিনেছে আমাকে,
তারা আমার দুইচোখে ২৭ সেপ্টেম্বরের অপেক্ষা দেখেছিল
সেপ্টেম্বরের মহিম দিনটা আসলো আর আমি মুহাম্মাদপুরের দিকে দ্রুতগামী কোনো যানই পেলাম না
আমার শৈশব কেটেছে মুহাম্মাদপুরে
সেখানে ২৭ সেপ্টেম্বর সংঘটিত হওয়া ছাড়া আমি কীভাবে বাচতে পারি!
আর কত ভালো লাগে আল মমিন রেস্তোরায় যেতে
আর ১৫ টাকায় কলমিশাক কিনে খেতে!
আমিষের অভাব আমাকে সারারাত দূরে ষাড়ের স্বপ্ন দেখায়
এখানে গরম আলুর চপ যতটা আরামের তা কি
সলিমুল্লাহ রোডের পুরির চেয়েও বেশি সুখ দেয়!
আমার জন্ম মহল্লা আমার জন্য আকুলি করে
আর আমি তাকে প্রত্যাখ্যান করি ধূপখোলায়, গেণ্ডারিয়ায়
এখানে আমার কিচ্ছু নাই,
সব নতুন করে কেন গড়ে নিব!
আমি মুহাম্মাদপুর থেকে দূরে আছি
আর আমার কবিতার আত্মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছি
আমি যদি ফিরে যাই আবার সান্দ্র মহল্লায় আর দিনভর হাটি
মাঝের ছিন্ন সংযোগ কি আবার যুক্ত হবে!
বৃহস্পতিবার তুমি আসো না যে!
আমি মুহাম্মাদপুরে আম্মুর কাছে যাব
যেখানে আমার মাশুকার বাতাস ঘেমে আছে
আল্লাহ গো
আল্লাহ গো, আমি তোমারে স্মরণ করতেছি এমন এক ছিন্নতার ভেতর দিয়া,
যা নিস্তেজতার অকূলতায় ছড়াইছে,
আমার বুকের ভেতর থেকে ভাঙ্গনের
এক তীব্র ধারা প্রচণ্ড প্রকাশ্যমানতা পেয়েছে,
আমার ভেতর এক বিশাল গহ্বর হা করে
নিজে থেকে ব্ল্যাকহোলের মতো গুটায়ে ফেলতেছে নিজেরে
আমার চিৎকার কইরা উঠতে ইচ্ছা করতেছে,
আল্লাহ গো, আমার বিস্ফোরিত হয়া যাইতে ইচ্ছা করতেছে,
আমার ছিন্নভিন্ন আত্মা তোমার কাছে যদি ফানাত্বের প্রমাণ হইতে পারে!
আল্লাহ, আল্লাহ গো, আমি কই যাব গো আল্লাহ!
আমার নিজস্ব কোনো মৌলিকত্ব নাই বিখণ্ডায়ন ছাড়া,
আমার নিজস্ব কোনো অস্তিত্ব নাই আবদিয়্যাত ছাড়া,
আমার নিজস্ব কোনো মালিকত্ব নাই ক্ষুদ্রতা ফেরি করা ছাড়া
আল্লাহ, আল্লাহ গো, আমার এতমিনান তো হইতেছে না!
আমি মইরা যাইতে পারতেছি না তোমার বিশ্বাসের কারণে,
আল্লাহ গো, আমি তো বাইচাও থাকতে পারতেছি না ওই অদৃশ্য নুরের তাজাল্লির যন্ত্রণায়
ওই আল্লাহ, ওই আকাশের মালিক, আমি তোমার কোনো নাম জানি না
তোমার অজস্র জহরতের মতো আস্মাউল হুসনা দিয়া আমি কী করবো!
তোমার নাম শুনলেই আমার গোলামিয়্যাত অস্থৈর্যে প্রেসের মার্বেলের মতো কাপতে কাপতে বীভৎস ব্যথায় হুল্লোড়াইতে থাকে
তোমার ঈশ্বরত্বের অসংখ্য নিদর্শন দিয়া আমি কী করবো!
আল্লাহ গো, আমার চারপাশে ঝলমলাইতে ঝলমলাইতে থাকা তোমার ঐশ্বর্যের বিস্তারের বিহার দেইখা আমি কী করবো!
আমি তো চাই আমার অস্তিত্বরে তোমার সঙ্গে মিলায়া ফেলতে,
আমি টুকরা-টুকরা হয়া যাইতে চাই, আমি অণুসম হয়া নাই হয়া যাইতে চাই
তোমার নবী আদমের স্ত্রী হাওয়ার ভুল থেকে আমি কী শিক্ষা নিবো!
আমি নূহের নৌকা থেকে কিসের প্রত্যক্ষতা আদায় করবো!
তোমার অবিস্মৃত দাউদের কথা স্মরণ করে আমি কী করবো!
আমি সুলাইমানের সাম্রাজ্যের কথা জাইনা কিসেরে কীভাবে সাজাবো!
আমি মূসার লাঠির কোন নির্দেশনা গ্রহণ করবো!
আমি ঈসার উড্ডয়ন দিয়া কী শান্তি পাবো!
আর তোমার খলিল ইবরাহিমের কথা, তার উত্তপ্ততাকে প্রশান্ত শীতলতার সেই আঞ্জামের কথা আমার পানিকে বেগমানতা দেয়া ছাড়া আর কী-ইবা করবে!
তোমার ঐশ্বরিকতার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ আয়াত মুহাম্মাদের কথা বলতে গেলে আমার আর কিচ্ছু থাকবে না, কিচ্ছুই থাকবে না
আল্লাহ গো, তোমারে পাবার মতো কোনো গূঢ়তত্ত্ব, কোনো ফর্মুলা
আমার জানা নাই
আমি শুধু কিছু নাম জানি, জানি এই রুমি, ওই তাবরিজ, সেই হাল্লাজ
আর অগণন আলায়ী ও সার্মাদের কথা
যাদের প্রতিবিম্ব আত্মআন্ধারি মুকুরে আমারই
মুখমণ্ডলের প্রতিভাসে ভেসে উঠে
আল্লাহ গো, চারিভিতের লোকেরা আমারে পথ দেখানের জন্য
কয়,
এইদিকে তোমার মনজিল, অইদিকে তোমার মোকাম
অথচ ওরা আমার বুকের ভেতরকার কাবার কথা জানে না
কিন্তু আজীজ, সে কাবার কোনো প্রদীপে সামান্য আলোর এতমিনানও নাই
আমার কোনো ঐশ্বর্যের প্রতি টান নাই কাহহার,
শুধু যদি শুনি কোনো মানব অস্তিত্বের সঙ্গে আমারো অধিক তোমার দিলদারিয়্যাতের উত্যগ্রতা,
তখন তার উন্মাদতা আমার ক্রমশ ভাঙনের আওয়াজকেও ঢেকে দিতে চায়
তখন আমার ভেতরকার দাসত্বের যারিয়্যাতসমস্ত বেদনার
শিখাগ্রকে ছুয়া ফেলে,
আমি জড়ত্বের স্পর্দ্ধা ছুয়া ফেলি,
আমি নিস্তরঙ্গতার সমুদ্রে নিজেরে ছড়ায়ে ছড়ায়ে দেই
আমার কিচ্ছু ভালো লাগে নারে আল্লাহ, কিচ্ছুই ভালো লাগে না কান্না ছাড়া
আমার সোনা মালিক আল্লাহ,
আমার যাদুবাবু আল্লাহ,
আমার ময়না-টিয়া আল্লাহ,
তোমার ইলাহিয়্যাত কেন বান্দাকে কয়লার বিক্ষিপ্ততায়
ছাইয়ের শূন্যতার আকার দেয়!
তুমি কি বোঝো না মাহবুবা! তোমার বোঝার ক্ষমতা নিয়া মাহবুব কেন মাশকুক হয়ে পড়ে
এইসব হরফ, লফজ, কালাম দিয়ে আমি কী করবো গো আল্লাহ!
আমার ছিত্তিছানত্বে লফজের কোনো ইশারা নাই,
আমার মিসমারত্বে কালামজ্ঞান কারো নাই,
আমি অতনেইচ্ছা হয়া যাইতেছি যেইখানে, সেখানে হরফ সাংকেতিকতা ছাড়া আর কী
আল্লাহ গো, দৈহিক ইবাদাত দিয়া তোমারে পাইতে চাইলে আমার
সমস্ত অঙ্গ নদিভূত হয়ে যায়,
তখন ঢেউয়ের উচ্চমার্গতা ছাড়া আর কোনো ফোপানি শুনতে পাই না
সোনামানিক আল্লাহবাবু, আমি দেহ ও আত্মার মাঝামাঝিতে আছি
আমার আত্মার ডানা গেছে ভাইঙে,সে নড়তেও পারতেছে না সামান্য
আমার আত্মা অজ্ঞতা ও অজ্ঞানতার হ্রদে আছে ডুবে,
সে হাসফাস করে, বাচার জন্য আকুলিবিকুলি করে,
একটা সংযোগ চায় আলোর আর পায় না যখন মরমে মরমে মরে
আমার বেচাইনিয়্যাত তোমার ফেরেশতারা দেখো বুঝে গেছে!
তাদের-যারা নুয়ে আছে সেজদায়, তারা কাঁদতেছে
যারা নুয়ে আছে রুকুতে, তাদের গলায় জাক্কুম বোধ হচ্ছে
যারা জিকিরে ইল্লাল্লাহ ছাড়া আর কিছু বলতে পারতেছে না,
তারাও তোমার ফিকিরচ্যূত হয়ে যাইতেছে
আল্লাহ গো, শুধু তুমি বুঝতেছো না
তোমার ইশকিয়্যাতে যারা একবার পড়ে তারা বোঝে তুমি কি অবোধ হাবিবা!
তোমাকে ঢাকার জন্য কতো সুদৃশ্য অথচ কতো পুরু পর্দা তুমি তৈরি কইরা নিছো!
আল্লাহবাবু, তোমার কাছে পাপ কইরা কইরা আসলেও আমি কি তোমারে বিস্মৃত হইছি কখনো!
তুমি যে আমারে বাদ দিয়া আল্লাহ, আরো কতজনের দিকে তাকাও আমি কি রুষ্ট হইছি কখনো!
সাধারণ্যে আমার মূল্যহীনতাকে কোনো দুঃখই স্পর্শ করতো না,
সাধারণ্যে আমাকে উন্মাদ ঠাউরানো আমার গর্বেরই হতো,
শুধু যদি নেকাবের আড়াল থেকে আমাকে একবার স্থির দৃষ্টির সাথে
শুধু একবার শুধু তাজাল্লীর জ্বলনে
আমার দুঃখকেন্দ্রগুলারে তুর পাহাড়ের ভস্মীভূততা দিতা
আমি পাখির উড্ডীনতায় জগত থিকা নিজেরে লুপ্ত কইরা নিতাম!
মীর হাবীব আল মানজুর
বাংলাদেশের তরুণতম কবিদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর কবিতায় নিজস্ব স্বর ও কথনভঙ্গিমা ইতোমধ্যেই অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। প্রাতিষ্ঠানিক পত্র-পত্রিকাইয় সেভাবে লেখেন না বললেই চলে। অন্তর্জাল পত্রিকা ও ফেসবুকে নিজের টাইমলাইনে কবিতা লিখে চলেছেন। ১৯৯৯ সালে জন্ম, ঢাকাতে। কওমী মাদ্রাসায় পড়াশোনা।
অরূপ ঘোষ
শূন্য দশকে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম সারির কবিদের মধ্যে অন্যতম। কবিতার পাশাপাশি গদ্য লেখেন। এছাড়াও একজন চিত্রকর। সাহিত্য ছাড়া আগ্রহের বিষয় দর্শনচর্চা, সঙ্গীত, চিত্রকলা ও সিনেমা। পড়াশুনা বাঙলা সাহিত্যে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক। থাকেন পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায়। লেখালেখি ও ছবি আঁকার পাশাপাশি কৃষিকাজ করেন।