আজ বৃহস্পতিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ইমেজ ওর সন্ততি, ওর নারীত্ব

।। কৌশিক চক্রবর্তী ।।

“শংকরদা সিনেমা বানানোর ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা চাইতো। তাই কখনো কারো কাছ থেকে টাকা নিতে পারিনি পাছে সে ডিকটেট্ করে বা টাকা ফেরত না দিতে পারায় অপমানিত করে। সিনেমা বানানোর ক্ষেত্রে ও দায়হীন অবস্থায় যেতে চাইতো সবসময়। আমি প্রফেশনালিজমের কথা শংকরদাকে অনেকবারই বলেছি। ও তার প্রত্যুত্তরে দার্শনিকতার কথা বলতো। আসলে সমস্ত মানুষ হয়তো সব কিছু করে উঠতে পারে না কিন্তু ইনভল্ভড থাকতে চায় নিজেকে গড়বে বলে।”

ইমেজ ওর সন্ততি, ওর নারীত্ব

(এক স্বাধীন চলচ্চিত্রী, চিত্রকর ও লেখকের জীবনের মূর্ত-বিমূর্ত অস্তিত্ব ও শিল্পভাষা)

তখন বিনয় মজুমদার কে নিয়ে তথ্যচিত্র ‘অন্য আলো অন্য আঁধার’ সবে শেষ করেছে শঙ্করদা। ২০০৩ চার হবে।কবি সাহিত্যিক ইন্টেলেকচুয়াল,রসিক মহলে ছবিটি যথেষ্ট প্রশংসিত হলো।

কিন্তু সেইভাবে ওর সাথে আমার আলাপ হয়নি। স্কুল পরবর্তী তখন আমার একটি সাইকেল ছিল। আর শংকরদারও একটা সাইকেল ছিল।পেশাগতভাবে শংকর দা ছিল ইংরেজি ভাষার  শিক্ষক। প্রাইভেট।দৈনন্দিন কাজকর্মের জন্য সাইকেল একটা বড় ভরসার ব্যাপার। আমরা সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছি পাশাপাশি। চালিয়ে যাচ্ছি অনেকটা দূরে চলে যাব বলে চেনা মানুষের থেকে। রিক্সার মতন সাইকেলও একটি  অসাধারণ যান। দূষণহীন। এই সাইকেল চালাতে চালাতেই শংকরদা’র সাথে আমার আলাপ হয়েছিলো। কবি বিনয় মজুমদারের তথ্যচিত্রর ব্যাপারটা একটু আগে বলেছি ওই তখন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শংকরদা সাইকেল ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি কিনে উঠতে পারিনি। কারণ সামর্থ ছিলনা। সবাইতো পয়সা করতে পারে না। কিন্তু পয়সা করতে না পারা একটি মহৎ ব্যাপার এটা আমি মানছি না। শংকর দাও চেয়েছিল কিন্তু পারেনি। সবাই তো সবকিছু পারেনা।

তো আমরা সাইকেল চালাচ্ছি। সিনেমার আর কী বা বাকি থাকে। এই যেমন একটি ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে শংকরদা তার ভারী শরীর নিয়ে সাইকেল চালাচ্ছে। সাইকেল চালিয়ে  ফ্লাইওভারের উপরে উঠতে খুবই কষ্ট হচ্ছে জিভ বেরিয়ে যাচ্ছে শংকরদার।আর কষ্ট সহ্য করতে পারলো না  প্যাটেল যুগল। মধ্যবয়স্ক পুরুষ মানুষের বিচির মতো ঝুলে গেল চেন এবং প্যাটেলখানি। তৃতীয় বিশ্বের এই মফস্বলে একজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট চিত্রপরিচালক তাঁর ভেঙে যাওয়া সাইকেলটি ফ্লাইওভারের ওপর টেনে হিঁচড়ে তুলছে। চেন থেকে আলগা হয়ে যাওয়া প্যাটেল এলোমেলো পাক খাচ্ছে। হুসহাস। চেন ঘসা খাচ্ছে রাস্তায়। সাইকেল  হিঁচড়ে হিঁচড়ে  ফ্লাইওভারের উপরে তুলছে শংকরদা। সিনটি শেষ হয় এখানেই তখন কালো পর্দায় ভেসে উঠে একটি লেখা-

                  জেসাস হ্যাভ টু বিয়ার হিজ ওউন ক্রস

শংকরদার মৃত্যুর পর ওর একটি ডায়রি থেকে এই আইডিয়াটা আমি দেখি।
শংকরদার মৃত্যু ২৭.০১.২০১৯।।

গভীর অবসাদের মধ্যে শংকরদা কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় শুধু ঘুরে বেরাতে থাকে সেসমায় । একেকটা গলি একেকটা কলোনি।একেকটা বাড়ির দিকে তাকিয়ে ভাবতো এই বাড়িগুলোতে কি একটাও  মেয়ে নেই যার সাথে একটু দূরে গিয়ে বসতে পারে। গল্প করতে পারে। অনেক পরে শংকরদা পাঁচটা শর্ট ফিল্ম নিয়ে একটা ছবি বানিয়ে ছিলো  “সা রে গা মা পা”। সেখানে সা ছবিটিতে এই অনুভবটাই কাজ করেছে। কিন্তু সে অনেক পরের কথা কারণ  সেই ছবিগুলো আমারই সম্পাদনা করা ও অভিনয়ও করেছিলাম বটে একটিতে।

শংকরদা সিনেমা বানানোর ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা চাইতো।তাই কখনো কারো কাছ থেকে টাকা নিতে পারিনি পাছে সে ডিকটেট করে বা টাকা ফেরত না দিতে পারায় অপমানিত করে। সিনেমা বানানোর ক্ষেত্রে ও দায়হীন অবস্থায় যেতে চাইতো সবসময়। আমি প্রফেশনালিজমের কথা শংকরদাকে অনেকবারই বলেছি। ও তার প্রত্যুত্তরে দার্শনিকতার কথা বলতো। আসলে সমস্ত মানুষ হয়তো সব কিছু করে উঠতে পারে না কিন্তু ইনভল্ভড থাকতে চায় নিজেকে গড়বে বলে। শংকরদা’র কাছে শিল্প ছিল-

ঘাটে বসে আছি আনমনে বহিয়া যাতিছে সুসময়… 
সেই ঘাটে তরী ভিড়াবো না যাহা তোমা পানে নাহি ধায়…

শংকরদা তার শিল্পভাষা শুরু করেছিল অভিনেতা হিসাবে। অল্প সময়ের মধ্যেই খুব পরিচিতি লাভ করেছিল। অভিনয় নিয়ে তখনও একটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে শুরু করে। ভাবে। ও শরীরকে অভিনয়ের মূল মনে করত। মাসেলের মেমারি দিয়ে চরিত্রের মুড তৈরি সেই ভাবনার কনটিনিউএশানে এখন ডের্কাদিও ইম্প্রোভাইজেশনের কথা মনে হচ্ছে সাইকোলজিক্যালি আরো অনেকটা।  নিরঞ্জন গোস্বামীর কথা শঙ্করদা খুবই বলতো তার ছাত্রাবস্থার। ক্যারেক্টার শংকরদা সবাইকে মনে করত না। ক্লাউডের ব্যাকগ্রাউন্ডে  রেখা তৈরি করতে হবে (ফটোগ্রাফিতে কম্পোজিশন যেটা করে বা সিনেমার ক্ষেত্রে আইলাইন যেটা তৈরি করে, অভিনেতা তার অভিনয় দিয়ে একটা স্পেস এর মধ্যে আরেকটা স্পেসকে ক্রিয়েট করে যে স্পেসটা আমরা দেখতে পাচ্ছি না,যাত্রায় সংলাপের দীর্ঘতা ও কন্ঠ দিয়েও এটা করা হয়)  দর্শকের মধ্যে চরিত্রের জার্নি এবং ইমাজিনেশান তৈরি করে অভিনেতার শরীর। আভিনয় একটা শারিরীক ব্যাপার।  তখন ওর সহকর্মীরা এই সবকিছু বুঝে উঠতে পারিনি। আসলে চায়ও নি। ওরা বলতো যে মঞ্চে অতদুর থেকে শরীরের এত সূক্ষ্ম ভাষা দর্শক কি বুঝতে পারবে বা দেখতে পারবে আদৌ। শংকরদা তাদের বলতো সাইকেল তো চলে কিন্তু বল বিয়ারিং কি দেখা যায়? একটা ওয়েব কাজ করবে মঞ্চ জুড়ে।  

শংকরদাকে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এই আঘাতটা শংকরদা একেবারেই নিতে পারেনি। বহু বড় ব্যক্তিত্বের কাছেও সুযোগ পেয়েছিলো যেমন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ‘বাঘ বাহাদুর’-এর লিড রোল। বিভাস চক্রবর্তী ওকে নিয়ে হ্যামলেট করতে চেয়েছিল শুনেছি।কিন্তু শংকরদা কাউকেই তখন সাড়া দিতে পারিনি। দল এই ভাবেই অনেক প্রতিভাকে থামিয়ে দেয়ে।

আর পার্টি।
আর গণ সংগঠন।  

কর্মহীন হয়ে পড়ে শংকরদা।

গভীর অবসাদের মধ্যে শংকরদা কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় শুধু ঘুরে বেরাতে থাকে সেসমায়। একেকটা গলি একেকটা কলোনি।একেকটা বাড়ির দিকে তাকিয়ে ভাবতো এই বাড়িগুলোতে কি একটাও  মেয়ে নেই যার সাথে একটু দূরে গিয়ে বসতে পারে। গল্প করতে পারে। অনেক পরে শংকরদা পাঁচটা শর্ট ফিল্ম নিয়ে একটা ছবি বানিয়ে ছিলো  ‘সা রে গা মা পা’। সেখানে সা ছবিটিতে এই অনুভবটাই কাজ করেছে। কিন্তু সে অনেক পরের কথা কারণ  সেই ছবিগুলো আমারই সম্পাদনা করা ও অভিনয়ও করেছিলাম বটে একটিতে।

বাংলাবাজারে তখনও উত্তরাধুনিকতা আসেনি। মহা আখ্যান ভেঙে গেলেও ভাঙেনি মনে মনে। এই চুপ চুপ ‘ধর্ম আফিম’, এই চুপ ‘প্রলেতারিয়েত একনায়কতন্ত্র’  চুপ চুপ বসে যা  “মার্কসবাদ সত্য কারণ ইহা বিজ্ঞান’ সংগঠনের হাতে এবং নেতৃত্বের হাতে প্রতারিত হয়েছে যত মানুষ প্রশ্ন করার অপরাধে, উত্তরাধুনিকতা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে দার্শনিকভাবে। সারা বিশ্বে। শংকরদা কলকাতা ছেড়ে বারাসাতে চলে আসে। মেট্রোপলিটন ছেড়ে মফস্বলে। শংকরদার ভাষায়-

বেশ্যালয় ছেড়ে প্রকৃতির খানিকটা কাছাকাছি।

কবি বিনয় মজুমদার তথ্যচিত্রটি নির্মিত হয়। তথ্যচিত্র প্রথম দুটি সিনের জোক্সটাপোজিশান দেখলে কিছুটা বোঝা যাবে।

তথ্যচিত্রে বিনয় মজুমদার বলছেন ‘দেশে একটাও প্রেমিক আছে নাকি’ কাট করে শংকরদা দেখায় হিন্দি সিনেমার নায়ক, নায়িকার জামা কাপড় খুলছে। থর থর করে কাঁপছে নায়িকার নাভি তবে নিশ্চয়ই এটি একটি লাভ মেকিং দৃশ্য। কাট টু বাইক চালু হচ্ছে ।  কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে ফ্রেমে ধূষর লিঙ্গের মতন বাইক ও হাইরাইজার লিঙ্গের মতো। বা কাটিং উইথ  জয়নুল আবেদীন আর সোমনাথ হোর দুর্ভিক্ষ চিত্র পাশাপাশি নরীবাদ। নেতৃত্তের প্রতারণা কিভাবে মানুষকে বঞ্চিত করেছে এবং মানুষ কোণঠাসা হয়ে গেছে। একা। শংকরদা সিনেমার একটা টুলকে খুবই ব্যবহার করত তার সমস্ত কাজেই। ও এটাকে বলতো সেকেন্ডারি মন্তাজঅন্য আলো অন্য আঁধার-এর ছত্রে ছত্রে এটা আছে। আন্ডারলাইন করা। বা যেনও প্রামিকার সাথে কথা বলতে বলতেও কম্পালশান নিয়ে কেউ বার বার সিলিংফ্যনের দিকে তাকাছে। খুলে পরতে পারে এই আশঙ্কায়। কিন্তু তাকে সে বলল এখন যদি কারেন্ট চলে যেত !

বাংলাবাজারে তখনও উত্তরাধুনিকতা আসেনি। মহা আখ্যান ভেঙে গেলেও ভাঙেনি মনে মনে। এই চুপ চুপ ‘ধর্ম আফিম’, এই চুপ ‘প্রলেতারিয়েত একনায়কতন্ত্র’  চুপ চুপ বসে যা  “মার্কসবাদ সত্য কারণ ইহা বিজ্ঞান’ সংগঠনের হাতে এবং নেতৃত্বের হাতে প্রতারিত হয়েছে যত মানুষ প্রশ্ন করার অপরাধে, উত্তরাধুনিকতা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে দার্শনিকভাবে। সারা বিশ্বে। শংকরদা কলকাতা ছেড়ে বারাসাতে চলে আসে। মেট্রোপলিটন ছেড়ে মফস্বলে। শংকরদার ভাষায়, বেশ্যালয় ছেড়ে প্রকৃতির খানিকটা কাছাকাছি।

পোস্টমর্ডানিটি যাদের ‘আদার’ বলে বা ওই সাবঅর্লটারন বলে তাদের সাথে সময় কাটাতে শংকরদা ভালোবাসতো। কেউ কিছু জিঞ্জাসা করলে বলত,আমার আরাম হচ্ছে। তো অন্য আলো অন্য আঁধারের পর ও বানায় তথ্যচিত্র ‘পোড়া মাটি মুখ’ –

ইট ভাঁটার পরিযায়ী শ্রমিকদের ভাটির উত্তাপে পাশবিক শ্রম আর তাদের দোল উৎসবের জাকস্টাপোজিশানই ছবির বিষয়। ইঁট ভাঁটা নিয়ে শংকরদা তিনটি ছবি বানায়। প্রথম ‘ডন টু ডাস্ট’ তারপর ‘দে আর নট আওয়ার্স’ তৃতীয় ‘পোড়া মাটি মুখ’।  বিহারী ও আদিবাসী দুই রকম শ্রমিক ছিলো দুই রকম সংকৃতি। বিহারীদের ভোজপুরী চটুল রস। আর আদিবাসীদের মাদোলের তালে তালে কোমরে কোমর। হাতে মুঠো হাত বেঁধে ওতপ্রোত দুলে চলা  দুলে চলা আর নেচে চলা নেচে চলা নেচে চলা

 ইঁটভাঁটার আগুন কখনো নেভে না।ফ্যালাসের মতো দাড়িয়ে আছে চিমনিগুলো। ইঁটভাঁটার আকাশ দিয়ে প্লেন উড়ে যায়।তার নিচে পিঠে বাচ্চা বেঁধে মায়েরা মধ্যযুগীও শ্রম দিতেছে। আট মাসের গর্ভবতী মহিলারা মাথায়  দশ-বারোটা করে ইঁট বইছে। আবার তাদের সন্তানরা এসবই করছে খেলা ভেবে বুঝতে পারছে না তারা শ্রমিক হয়ে যাচ্ছে।

তথ্যচিত্রে কোনোরকম ভয়েস ওভার ব্যবহার না করে বা যাকে ‘গড্ ম্যান ভয়েজ’ বলে সে সব ছাড়া শুধু শট সাজিয়ে সাজিয়ে গল্প বলা একটা চ্যালেঞ্জ। আর সেটাই করার চেষ্টা করছে শংকরদা যতদিন তথ্যচিত্র বানিয়েছে ততদিন। মহুয়া অধ্যুষিত রাতে আগুন জ্বলেছিলো। আগুনের ফুল্কি উড়ছ, আকাশে চাঁদ জোছনাময়। ইঁটভাঁটার চিমনির গাঢ় ধোঁয়া ওভারল্যাপ করে দিচ্ছে চাঁদ। অনেক আগে থেকেই মাদলের শব্দ কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ডে চলেছেই।  এইভাবে একটি হাইপার রিয়াল টেক্সুয়ালিটি তৈরি হয় ইমেজের ভিতর। বা দিনের বেলায় সেই বিহারী শ্রমিকটির মাতাল অবস্থায় কোকোকোলা নিয়ে নাচ। আমি সেই প্রথম এই সব দেখি এবং শুটও করি কিছু। চন্দন মণ্ডল বলে  একজন শংকরদার বেশিরভাগ ছবির চিত্রগ্রহণ করেছিল। আমরা যারা শংকরদা’র সাথে কাজ করতাম তারা কেউ কোনো পয়সা নিতাম না। পয়সা ছিলো না। শংকরদা  বলত এ হচ্ছে নিজের হাত পুড়িয়ে মাংস খাওয়া। প্রেমের কারণেই আমাদের হাতগুলোও পুড়ে যেত। তবু দাগ কি পড়েছে কোনো?

‘সা রে গা মা পা’

শংকরদার অন্যতম পরীক্ষামূলক পাঁচটি ছোট ছবি নিয়ে একটি ছবি। সিনেমা ছিল শংকর দার কাছে  দার্শনিকতা।

 চা এবং দীর্ঘ জেগে থাকা। চায়ের কাপ ভরছে কেটলি। কাপ ভরে উপচে পড়ছে চা। তবু কেটলি অপচয় করছে চা।  মেঝেময় চা গড়িয়ে যাচ্ছে। দূরদেশী এক রাখাল ছেলে বাঁশিটি তার ফেলে গেছে যেন। এই বলে বলে নারী সে উল বোনে আর  খুলে ফেলে আগের গাঁথাটুকু।

দুর্গা প্রতিমা যেমন নির্মাণ হয়। পূজা হয়। ভাসান হয়। আবার নির্মাণ হয় আবার ভাসান হয়। এক গভীর রহস্য নিয়ে কাঠামো জেগে থাকে ঘাটে। দু’দিনের জীবন পাবে বলে।

বৃক্ষনাথ হে !

সে অর্থে এটাই শংকরদার শেষতম তথ্যচিত্র।কৌরবের অন্যতম পিতা। কবি কমল চক্রবর্তী ও তাঁর ভালোপাহাড়কে নিয়ে এই ছবি।এই রকম প্রোফাইল ডকুমেন্টারি নিয়ে শংকরদা একবার বলেছিল ‘ দেখ আমাকে আমার কথা বলতে হবে। যদিও মনে হচ্ছে আমি একটা অন্য মানুষকে নিয়ে ছবি করছি  কিন্তু আসলে আমি নিজেকে নিয়ে ছবি করছি। শংকরদা চাষ করতে চাইতেন যত কম করেই হোক চাষ করতেই হবে গাছ লাগাতে হবে। শেষের দিকে নিজের বাড়িতে অল্প অল্প করে শুরু করেছিল। বারাসাতের মতো মফস্বল শহরেও ও থাকতে পারছিলো না  আরও রিমোটে  চলে যেতে চাইছিল। একটু বেশিই রিমোটে চলে গেল শংকরদা অনেক পরিকল্পনা এবং ছবির স্ক্রিপ্ট ফেলে রেখে। মর্মান্তিক  লাঙ ক্যান্সারে হঠাৎই শংকরদা আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।

নব্বইয়ের মাঝামাঝি থেকে শংকরদার নির্মিত ছবিগুলো

১. ডন টু ডাস্ট
২. দে আর নট আওয়ার্স
৩. অন্য আলো অন্য আঁধার
৪. পোড়া মাটি মুখ
৫. সা রে গা মা পা
৬. বৃক্ষনাথ হে!
৭. কেঁদুলি কড়চা
৮. রুটি (প্রকাশিতব্য)


শেষ চার-পাঁচ বছর শঙ্করদা টাকা নিয়ে কাজ করা শুরু করেছিল। শুধু সিনেমাতেই থাকবে এই চিন্তা থেকে।

তার মধ্যে অন্যতম দুটো কাজ

১. টুয়ার্স ফিউচার
২. অরণ্যসুন্দরী

এছাড়া হাজার হাজার পেইন্টিং আছে শংকরদা’র। পরে কখনো তা নিয়ে কথা বলা যাবে তবে পেইন্টিংগুলোকে প্রিজাভ করা যাবে কিনা জানি না। শংকরদার মেয়ে সৌমিতা কর্মকার নিজেও অসাধারণ ছবি আঁকে এবং ওইগুলো আঁকড়ে ধরে আছে। শংকর দার কিছু পেইন্টিং এবং কিছু সিনেমার লিংক রইল।

দেখুন ডিরেক্টরস শো-রিল

সা রে গা মা পা

(এই ছবিটি দেখতে হলে নামের উপরে ক্লিক করুন প্রথমে। তারপর পকেটমানি ফিল্মস-এর উইন্ডোতে গিয়ে গুগলের মাধ্যমে লগ ইন করুন। এরপর সার্চ ভাটনে গিয়ে লিখুন Sa re ga ma pa )

পোড়া মাটির মুখ

(এই ছবিটি দেখতে হলে নামের উপরে ক্লিক করুন প্রথমে। তারপর পকেটমানি ফিল্মস-এর উইন্ডোতে গিয়ে গুগলের মাধ্যমে লগ ইন করুন। এরপর সার্চ ভাটনে গিয়ে লিখুন Pora matir mukh )

অন্য আলো অন্য আঁধার

(এই ছবিটি দেখতে হলে উপরে নামের উপর ক্লিক করলেই হবে)

বৃক্ষনাথ হে!

(এই ছবিটি দেখতে হলে উপরে নামের উপর ক্লিক করলেই হবে)

চিত্রকলা: শংকর কর্মকার, ফটোগ্রাফি: কৌশিক চক্রবর্তী

শংকর কর্মকার

লেখক, চিত্রকর, স্বাধীন চলচ্চিত্রকার। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসতে বাস করতেন। স্বল্পায়ু এই শিল্পী আমাদের ছেড়ে চলে যান ২০১৯ সালে।

কৌশিক চক্রবর্তী

পশ্চিমবঙ্গের শূন্য দশকের কবি ও চলচ্চিত্র সম্পাদক। জন্ম ১৯৮২। নিবাস, বারাসত, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ, ‘ওলা ওলা’ (১৪১৫ বঙ্গাব্দ) এবং ‘শয়নযান ও সমুজ্জ্বল কালোয়ে’ (১৪১৯ বঙ্গাব্দ)

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top