।। কাজী ওয়ালী উল্লাহ ।।
ভ্রমণ
শিশুর আঁকড়ে ধরা স্তনের মতো ভ্রমণের টিকেট এখন আমার হাতে
ইন্দ্রিয় সচল হয়ে ওঠা সুরে আমি লঞ্চের ভেঁপু শুনছি
নিজেদের গলি ভেবে ট্রেনের বগিগুলার দিকে দৌড় দিই
আমার চুল নদীর স্মৃতিতে ভাসা পালের বাতাসে কাঁপবে
এই পথের নকশা বেরিয়েছে আম্মুর দিগন্তে তাকিয়ে থাকা থেকে
তোমার কন্ঠে ফুলে ওঠা রগের রেখাংশ থেকে
আর কুরআনের আয়াতগুলা থেকে
সেখানে আমার বোনের মতো ছোট ছোট খাল
যেনো নির্জন এক রেলওয়ে স্টেশন, এমন কোনো কুয়ার পাড়
বৃষ্টির ছিটা এসে যার তলপেটে শ্যাওলা ফুটিয়ে যায়
আমি বের হবো একটা ছিঁড়া অনুভূতি নিয়ে
পিঠে আধোয়া কাপড়ে ভরা ব্যাগ
আর পৌঁছে পাবো নতুন কোনো রোদ
চারিদিকে কেবল মায়া শব্দের ঘ্রাণ ভেসে বেড়াচ্ছে
শীতের শেষে
বিলাপের মতো নিঃশ্বাস ফেলে বেঁচে আছি
রোদের নানান ফাঁক থেকে শীত এসে জড়ো হচ্ছে
কথাগুলা শুকনা মাটির মতো, চিড় খাওয়া
তোমার প্রসঙ্গ বাক্যের ভারসাম্য রক্ষায় জরুরি এখন
কোনো আধভাঙা বাড়ির দেয়ালে আমাদের বিয়ের শ্যাওলা ফুটছে
জানালার জাফরিতে উড়ে আসা পাতা লেগে আছে
এই অল্প আলোর বিষাদে ঘুম ধরে যায়
বিড়ালের আনাগোনা ভালো লাগে তোমার মতো
এক অচেনা বৃদ্ধের গায়ের ঘ্রাণে আচ্ছন্ন হয়ে
প্রাচীন গুহার স্মৃতি ফিরে পেয়েছিলাম
যখন ফুলও মানুষকে ভাবাতে ফুটেছে
পুরানা জাহাজগুলার নকশা আঁকা হয়নি
আজ আধোয়া কাপড়ে শুয়ে ক্যাসেট শোনার দিনে
ভাবি আর কত ল্যান্ডস্কেপ পেরিয়ে তোমাদের গ্রাম?
লিরিক শেষ হলো, হাঁসগুলা খালে নেমে পড়ছে
অন্তিম সুরের দিকে পালক ভাসিয়ে দিয়ে
এলাস
আমারো ধানের মতো
শেষ হয় দিন
এখানে তো পেকে গেছে
আমের বিপিন।
ক্লাসরুমে ছিঁড়াফাঁড়া
কিতাবের ঢাল
সব কি গো মনে আছে
নাহুর মেছাল?
কিছুই শুনিনি হায়
এতোদিন ধরে
বৃষ্টি যে পড়ে গেছে
টিনশেড ঘরে!
টান দিলে খুলে যায়
আকাশের ব্লাউজ!
পুদিনা যে পেকে রজঃ
শরমে সবুজ!
কোথায় যে চলে যাবো
এলাস! এলাস!
আমিও তোমার নামে
ফেইল করে বাস।
প্রচ্ছদের ফটোগ্রাফ: মোহাম্মদ রোমেল
কাজী ওয়ালী উল্লাহ
জন্ম ২০০০ সালে, চিটাগাং জেলার গ্রামের দিকে। বর্তমানে চিটাগাং শহরেই বসবাস করেন, পড়াশোনাও একই শহরে। বছরের বেশির ভাগ সময় কাটে মাদ্রাসার হোস্টেলে আর ক্লাসে। ছুটির দিন বলতে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে শনিবার ঘুম থেকে জাগা পর্যন্ত। ফোনে ইন্সটল করা একটা অ্যাপ, আর একাডেমিক পড়াশোনার জন্য দিস্তা মেপে কেনা খাতাতে কবিতা লেখেন। কবিতা লেখেন অকাতরে তবে কবিতার চেয়ে চেয়ে গদ্য পড়েন বেশি।