।। নজরুল আহমেদ ও অতনু সিংহ ।।
ব্রাত্য বসুদের মতো বুদ্ধিজীবীরা কৃষকদের আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেন এবং বামফ্রন্ট সরকারের অনৈতিক জমি গ্রহণের বিরুদ্ধে মানুষকে প্রভাবিত করেছিলেন। আসলে গ্রামসির ভাষায় ব্রাত্য বসু ‘অর্গানিক ইন্টেলেকচুয়াল’-এর ভূমিকা পালন করেছিলেন তখন। হয়তো আজও তিনি সেই ভূমিকাই পালন করছেন।
শিল্পের রাজনীতি বা চারু-রাজনীতি, শিল্পকর্মের মাধ্যমে ও শিল্পীর নিজস্ব রাজনীতি ও শিল্পীর রাজনৈতিক ব্যক্তি হয়ে ওঠা– এসব কিছুর নিদর্শন বহু যুগ ধরেই সকল সমাজে বিদ্যমান। এবং এই সকল দৃষ্টান্ত আজও সকল দেশ ও সমাজেই বহমান। আবার রাজনীতিরও একটা শিল্প আছে। কিন্তু যখন একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী পূর্ণমাত্রায় একজন প্রতিষ্ঠিত ও সফল রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠার পরও আবার নতুন ভাবনায় শিল্পকে মানুষের কাছে প্রতিষ্ঠিত করে তখন নিঃসন্দেহে সেটা ভাববার বিষয় এবং প্রশংসার যোগ্য। ভারতীয় উপমহাদেশে, বিশেষত বৃহৎ বঙ্গে বহুদিন ধরেই সিনেমা, থিয়েটার এবং সংগীতজগতের মানুষরা রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেছেন, করছেনও। এবং তা সংসদীয় ও অসংসদীয়, উভয় ক্ষেত্রেই। উপমহাদেশে বৈপ্লবিক রাজনীতির পাশাাপাশি সংসদীয় রাজনীতিতে লেখক ও শিল্পী সমাজের ইতিবাচক অংশগ্রহণের সবচেয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তামিলনাড়ু। করুণানিধি, রামচন্দ্রণ, জয়ললিতা থেকে হালফিলের রজনীকান্ত কিংবা কমল হাসানদের নাম এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। করুণানিধি আধুনিক তামিল সাহিত্যে একজন উজ্জ্বল তারকা, একজন কবি ও লেখক, এমনকী চিত্রনাট্যকার। বাকিরা গুরুত্বপূর্ণ অভিনয়শিল্পী, চলচ্চিত্র তারকা ও চলচ্চিত্র পরিচালক। কিন্তু চলচ্চিত্র ও লিটারেচারের সঙ্গে তামিল রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সংযোগের দৃষ্টান্ত বাদ দিলে হালফিলের উপমহাদেশের রাজনীতির মূল ধারায় বা সংসদীয় ধারার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, চারুজগতে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পপুলার কালচারের সঙ্গে যুক্ত শিল্লীরা পূর্ণোদ্যমে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করছেন এবং রাজনৈতিক জীবনে পা রাখার পর ক্রমশই নিজের শিল্প বলয় থেকে ছিটকে যাচ্ছেন শিল্পীরা, এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী ব্রাত্য বসু। যিনি একইসঙ্গে নাট্যকার, থিয়েটার ও চিত্রপরিচালক, কবি, প্রাবন্ধিক এবং পশ্চিমঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু । যিনি একদমই তাঁর থিয়েটার ও চলচ্চিত্র সাফল্যের মধ্যগগনে সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন এবং বর্তমানে রাজনৈতিক সাফল্যের মধ্যগগনে রয়েছেন। কিন্তু তাঁর শিল্পকর্ম এবং শিল্পীসত্তা এতোটুকুও লঘু হয়নি, বরং দুটোই আরো নতুন মাত্রাই বিকশিত হচ্ছে। এই মুূহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের নন্দনতাত্ত্বিক চর্চা ও সৃজনের বহু শাখায় ব্রাত্য বসুর অবাধ ও সফল বিচরণ। একের পর সফল ও শিল্পমান উত্তীর্ণ চলচ্চিত্র তিনি তৈরি করছেন যেমন, তেমনই সাহিত্যের নানা শাখায় তিনি সফল। এতদিন সকলের অগোচরে কবিতা লিখতেন। বছর দুয়েক আগে তাঁর প্রথম কবিতার বইও প্রকাশ পেয়েছে।
কিন্তু এখন আলাদা করে ব্রাত্য বসুর শিল্পকর্ম ও তার রাজনৈতিক সত্তা নিয়ে লিখতে হচ্ছে কেন? লিখতে হচ্ছে এই কারণেই ভারত ও ভারতীয় উপমহাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং পশ্চিমবাংলায় সমাজ ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্রাত্য বসুর সৃজনসম্ভারের বহুমাত্রিক অভিঘাতের পাশাপাশি ক্ষমতার অলিন্দে থেকে ক্ষমতার কেন্দ্রিকতার মুখোমুখি তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক স্ট্রাগেলকে পর্যালোচনাটা ক্ষমতা ও রাজনীতিক, রাজনৈতিক ক্ষমতা ও ক্ষমতার রাজনীতি এবং প্রতিস্পর্দ্ধি শিল্পরাজনীতির আর্গুমেন্টগুলোকে যাতে সামনে আনা যায়। যাতে একজন শিল্পী তথা রাজনৈতিক শিল্পীর স্ট্রাগেলকে তাঁর পার্সোনাল ও পোলিটিকাল স্ট্রাগেলের দ্বান্দ্বিকতাকে আর্ট-এন-কালচারের বাহাসের অংশ করে তোলা যায়। এবং তা করে তোলাটা জরুরী কারণ তথাকথিত বাম ও প্রগতীবাদীদের ক্যানসেল কালচারই তো বাবু ও ভদ্রবিত্ত সমাজ সূত্রে এতদিন সামনে থেকেছে। তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে গণশিল্পের পরিসর তৈরির ক্ষেত্রে ইনক্লুসিভ সোসাইটি তৈরি করাটা সময়ের দাবি বলেই মনে হয়।
ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে যে রাজনৈতিক জটিলতা ও ক্রাইসিস চোখে পড়ছে, সাতচল্লিশ পরবর্তী সময়ে এত তীব্র ছিল্ না। এমনকী সমাজের সার্বিক অবস্থার কথা বিবেচনা করলে জরুরী অবস্থার সময়েও এই ক্রাইসিস ছিল না। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পর ধীরে ধীরে আধুনিক ভারতরাষ্ট্র ক্রমশই একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। সেই এক কেন্দ্রিক রাষ্ট্রের ইডিওলজিক্যাল ভিত্তি হলো ‘হিন্দি হিন্দু ও হিন্দুস্থান’। ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বিশেষ করে মুসলমানরা আক্রান্ত। দলিত, আদিবাসীরা আক্রান্ত। লিঙ্গভিত্তিক সংখ্যালঘুরাও ফিয়ার সাইকোসিসে ভুগছেন। জল, জমি, জঙ্গল ধ্বংসের সমস্ত রকমের প্রচেষ্টা চলছে। আক্রান্ত দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো। সাংবিধানিক সংস্থাগুলির ক্ষমতা ক্রমশই সংকুচিত হচ্ছে। ওই সংস্থাগুলি ক্রমশই সরকারের কাঠের হাতের পুতুল হতে বাধ্য হচ্ছে। গোটা দেশে জোর করে হিন্দি চাপানোর প্রয়াস চলছে। সিএএ ও এনআরসি কে কেন্দ্র করে বাঙালিদের রাষ্ট্রহীন বা বেনাগরিক করার জোর চেষ্টা চলছে। এই রকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে যখন ভারত দাঁড়িয়ে. তখন পশ্চিমবঙ্গে একটি সমন্বয়বাদী প্রতিরোধী রাজনৈতিক ও নন্দনতাত্ত্বিক বর্গ গড়ে তোলার বদলে ব্রাত্য বসুর মতো বুদ্ধিজীবীদের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন পশ্চিমবঙ্গের সংসদীয় ধারার তথাকথিত বাম-প্রগতিশীলদের একাংশ। অথচ ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্রাত্য বসুকে দেখা গিয়েছে, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ছুটে গিয়ে বাম-গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতি্ক সংগঠন ও ইন্ডিভিজুয়ালদের সঙ্গে জনসভায় শামিল হতে। আমরা অনেকেই জানি ব্রাত্য বসু ছাত্রজীবনে মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী রাজনীতি করেছেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় তিনি ডিএসসি নামের একটি বিপ্লবী বামপন্থী ছাত্রসংগঠন করতেন। তাঁর পিতা বিষ্ণু বসু ছিলেন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির একনিষ্ঠ কর্মী ও নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তিত্ব। এবং পশ্চিমবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ একজন নাট্যকার ও বুদ্ধিজীবীষ ফলে পারিবারিকভাবেই ব্রাত্য বসু শিল্প, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বড় হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি চিরাচরিত প্রাতিষ্ঠানিত বামধারার রাজনীতিকে আপন না করে বিপ্লবী কমিউনিস্ট রাজনীতির দিকেই ঝুঁকে ছিলেন। আবার ইউরোপীয় ডগমাটিক বামধারাকেও অন্ধভাবে তিনি আঁকড়ে থাকেন নি, সেটাকে তিনি বহনও করেননি। বরং তিনি সেটাকে দেশ কাল ও সময়ের প্রেক্ষিতেই দেখতে চেয়েছেন। রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি থিয়েটার এর ক্ষেত্রেও সেটা প্রতিফলিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে বাম জমানায় সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম পর্বের উত্তাল সময়ে প্রতিবাদের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছিলেন ব্রাত্য বসু। শিল্পের (industry) স্বার্থে বাম সরকারের জোর করে সাধারণ মানুষের জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে তিনি গর্জে উঠেছিলেন। তৎকালীন তৃণমূল নেত্রী (বর্তমানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমি আন্দোলনের শরিক হয়েছিলেন তিনিও। এবং সরাসরি তৃণমূল দলে যোগ দিয়ে ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে জোড়া ফুল চিহ্নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তৎকালীন দোদন্ডপ্রতাপ সিপিএম নেতা গৌতম দেবে বিরুদ্ধে। এবং তিনি জয়ী হয়েছিলেন। ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসানের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় শিক্ষামন্ত্রী হিসেবেও তিনি শপথ নিয়েছিলেন।
ব্রাত্য বসুর প্রথম মৌলিক নাটক ‘অশালীন’। ১৯৯৪ সালে তিনি এই নাটক রচনা করেছিলেন। ১৯৯৬ সালে ‘গণকৃষ্টি’ নাট্য দলের সহায়তায় কলকাতার একাডেমি অফ ফাইন আর্টসে প্রথম এই নাটকের অভিনয় হয়। তখন ব্রাত্য বসুর বয়স মাত্র ২৬ বছর। থিয়েটার সমালোচকরা এই নাটককে প্রথম বাংলা উত্তর আধুনিক নাটক হিসাবে বর্ণনা করেছেন। এরপর তিনি ‘অরণ্যদেব’, ‘মুখোমুখি বসিবার’ এই দুটি নাটক রচনা করেন। এই সময় তিনি ‘শ্যামল স্মৃতি সম্মান অর্জন করেন। এরপর ‘শহর ইয়ার’ ও ‘চতুষ্কোণ’ নামে দুটি নাটক রচনা করেন ব্রাত্য বসু । ২০০১ সালে ব্রাত্য বসু ‘সত্যেন মিত্র পুরস্কার’ অর্জন করেন । ৩০-৩১ বছর বয়সের মধ্যেই তিনি অত্যন্ত একটা সফল নাট্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ফেলেছিলেন। ব্রাত্য বসুর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিতর্কিত, প্রশংসনীয় ও রাজনৈতিক নাটক হল ‘উইঙ্কেল টুইঙ্কেল’। ২০০২ সালে এই নাটকটা তিনি রচনা করেছিলেন। এই নাটকে তিনি বামফ্রন্ট জামানার সামাজিক অবক্ষয় ও বাম সরকারের রাজনৈতিক অবক্ষয়ের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এই নাটকটি অত্যন্ত সফল একটি নাটক। এই নাটক নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। কেউ বলেছেন এই নাটকটি পুরোপুরি বাম সরকারকে টার্গেট করেই লেখা হয়েছিল। আবার কেউ বলেছেন এটি ব্রাত্য বসুর ব্যক্তি জীবনেরই প্রতিফলন। আবার এটাও অনেকে বলেছে যে সংসদীয় ও পচনশীল ভুয়া বাম ধারার সঙ্গে সেই সত্তর দশক থেকে বিপ্লবী বামধরার যে সংঘাত, সেই সংঘাতের উত্তরসূরী হিসাবে রেডিক্যাল রাজনৈতিক স্পেস খোঁজার করা চেষ্টা করা একজন পোলিটিকাল ইন্ডিভিজুয়ালের রাজনৈতিক বাহাস। অনেকে মনে করেন, নাটকে বাবা সব্যসাচী আর ছেল ইন্দ্রর বিশ্বাস ও মতাদর্শের দ্বন্দ্বটা ব্রাত্য বসুর ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিফলন বোধহয়! কেননা বাবা সিপিএম, আর ছেলের ক্রমশই তৃণমূল হয়ে ওঠা…. কিন্তু ভাল করে দেখলে বোঝা যাবে সংসদীয় ও বিপ্লবী এই উভয় বাম ধারার একদিকে সুবিধাবাদ ও সংশোধনবাদ আর তার বিপরীতে লেফট ডগমা ও ইওরোসেন্ট্রিজমে আচ্ছন্ন হয়ে থাকা বিপ্লব বাসনার জাঁতাকলে স্বপ্নভঙ্গ ও স্বপ্নসন্ধানের দ্বন্দ্ব প্রতিফলিত হয়েছে উইঙ্কেল টুইঙ্কেলে ।
ব্রাত্য বসুর আরেকটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাটক হল রুদ্ধসঙ্গীত। ২০০৯ সালে রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী দেবব্রত বিশ্বাসের জীবন অবলম্বনে এই নাটক রচনা করেছিলেন তিনি। এই নাটকের মধ্যেও তিনি একটা সময়কে ধরেছেন। দেবব্রত বিশ্বাসের পাশাপাশি, ঋত্বিক ঘটক, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, সলিল চৌধুরীর মতো গণনাট্যের সঙ্গে যুক্ত দিকপালরা এই নাটকের অন্যতম চরিত্র। দেবব্রত বিশ্বাসের জীবনীর পাশাপাশি ঋত্বিক ঘটক থেকে সলিল চৌধুরী কীভাবে তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বদের দ্বারা অপমানিত হয়েছিলেন সেটা এই নাটকে তুলে ধরা হয়েছে। একদিকে গণতাতান্ত্রিক অতি-কেন্দ্রিকতা, অপরদিকে বাম-কৌলিন্য, রাবিন্দ্রিক ট্যাবু, প্রমিত বাবুয়ানি, ইওরোসেন্ট্রিক ডগমা তথা ‘অর্থনীতি বনাম সংস্কৃতি’র চিরাচরিত এঙ্গেলিসীয় ডগমা–যা বারবার নিও মার্কসিস্টদের দ্বারাা প্রশ্নের মুখে পড়েছে, ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলের এরিক ফ্রম টু অন দ্য কালচারাল ফ্রন্টের ঋত্বিক ঘটক– এসব কিছুই জর্জ বিশ্বাস জীবনেরল ক্রাইসিস ও গণনাট্যের সঙ্কটের আবহে নিওলেফট ব্রাত্য বসু সামনে এনেছেন, কখনও প্রকটভাবে, কখনও প্রচ্ছন্নভাবে।
এছাড়াও ব্রাত্য বসু বহু নাটক লিখেছেন, পরিচালনা করেছেন এবং অভিনয় করেছেন। অভিনয় করেছেন অসংখ্য সিনেমায়। হারবার্ট, কালবেলা, হেমলক সোসাইটি, মুক্তধারা, মায়ার জঞ্জাল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। তিনি পাঁচটা চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। চলচ্চিত্রগুলো হল হল ‘রাস্তা’, ‘তিস্তা’, ‘তারা’, ‘ডিকশনারি’ ও ‘হুব্বা’। সম্প্রতি তাঁর হুব্বা ছবিটি পশ্চিমবঙ্গের বিগত বাম আমলের ক্ষমতার কেন্দ্রিকতা ও ক্ষমতা লুম্পেনাইজেশনকে সামনে আনে, এবং তা একজন তথাকথিক সমাজ বিরোধীকে কাঠগড়ায় একতরফা দাঁড় করিয়ে নয়, বরং সিস্টেম যেভাবে ছোটলোকের সমাজ থেকে ভদ্রবিত্ত সমাজের সমাজবিরোধীকে পয়দা করে এবং এক সময়ে তাকে যেভাবে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে টিকিয়ে রাখে বাম লেবাস-পরা প্রমিত বাবুয়ানি ভদ্রবিত্তের সমাজ, সেই সিস্টেমকেই ব্রাত্য বসু প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন আপাত অ-ভদ্রবিত্ত ও আপাত-নিম্নবর্গের প্রতিনিধিত্বকারী দল তৃণমূলের একজন নেতা ও একজন চলচ্চিত্রী হিসাবে। শুধু তাইই নয়। ব্রাত্য বসু একজন কবিও। যে কবিতায় তিনি নিজের সঙ্গে নিজেই বাহাস করেন। আত্মদ্বন্দ্ব, বিষাদ, হর্ষ, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের দেয়ালায় তিনি বুঝিয়ে দেন তাঁর ভিতরে আদতে একজন কবিই বসে আছেন।
প্রশ্নটা হল থিয়েটার, সিনেমা এবং সাহিত্যকর্মে এরকম একটা সফল মানুষের রাজনীতিতে আসা, রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা লাভ, রাজ্যে পটপরিবর্তনের আগের ও পরের প্রতিবাদী অবস্থানের মধ্যে পার্থক্য ও রাজ্যে মন্ত্রী হওয়ার পরও তার শিল্পকর্ম চালিয়ে যাওয়ার ধারাবাহিকতা। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম পর্বে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান যথার্থ ছিল। তখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও এখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক নয়। তখন কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার। সেই সরকারের সহযোগী হিসেবে ছিল বামফ্রন্ট। আর রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট সরকার। শুধু ক্ষমতাই থাকা নয় দীর্ঘকাল থেকে ক্ষমতায় থাকার ফলে ক্ষমতাই মূলত গ্রাস করেছিল সরকারকে। আমরা এটা বলছিনা যে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যের জন্য কিছুই ভালো কাজ করেনি। অবশ্যই কিছু ভাল কাজ করেছিল। উল্লেখযোগ্য ভূমি সংস্কার এবং পঞ্চায়েত ব্যবস্থার সম্প্রসারণ। মানুষ তার সুফলও পেয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সরকারের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল পাটিতন্ত্র ও পাটিতন্ত্রকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা। দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকার ফলে সমাজের সার্বিক স্তরে বামফ্রন্ট সরকারের একটা আধিপত্যবাদী মনোভাব তৈরি হয়েছিল। এবং সেখান থেকে তৈরি হয়েছিল এক অহংবোধ। সেই অহংবোধেরই বহিঃপ্রকাশ ‘আমরা ২৩৫ ওরা ৩০’। সেই আধিপত্যের বিরুদ্ধে তখন রুখে দাঁড়ানোটাই ছিল জরুরী কাজ। যেটাকে মার্কসীয় চিন্তা গ্রামসির ভাষাই বলে ‘কাউন্টার হেজিমনি’ এই কাউন্টার হেজিমনির কাজটা করেছিল বাংলার জমি হারানো কৃষকরা। ব্রাত্য বসুদের মতো বুদ্ধিজীবীরা কৃষকদের আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেন এবং বামফ্রন্ট সরকারের অনৈতিক জমি গ্রহণের বিরুদ্ধে মানুষকে প্রভাবিত করেছিলেন। আসলে গ্রামসির ভাষায় ব্রাত্য বসু ‘অর্গানিক ইন্টেলেকচুয়াল ’-এর ভূমিকা পালন করেছিলেন তখন। হয়তো আজও তিনি সেই ভূমিকাই পালন করছেন।
ব্রাত্য বসুর সরাসরি সংসদীয় রাজনীতিতে আসা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। পৃথিবীতে বহু সিনেমা থিয়েটার এবং সংগীত জগতের মানুষ সরাসরি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেছেন এমন উদাহরণ আছে। যদিও তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন রাজনীতিতে আসাটা তাঁর কোনও সচেতন প্রয়াস ছিল না। পরিস্থিতিই তাঁকে একপ্রকার রাজনীতিতে আসতে বাধ্য করেছিল। তিনি এটাও বলেছেন সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ এবং মন্ত্রী হওয়ার ঘটনায় তাঁর কোনও খেদ নেই বরং তিনি বিষয়টাকে উপভোগ করেন। তিনি এখন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী, তৃণমূল কংগ্রেসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই সরকারের আমলেও নানান ইস্যু ঘটছে। সেসব ইস্যুর বিরুদ্ধে তিনি কি আগের মতোই প্রতিবাদ করতে পারবেন? একাধিকবার সাংবাদিকরা তাঁকে এই প্রশ্ন করেছিলেন? তাঁর স্পষ্ট এবং সৎ উত্তর ছিল, না তাঁর পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। তিনি একটা দলের মধ্যে আছেন। দলের নিয়ম-শৃঙ্খলা মানতে তিনি বাধ্য। ঠিক যেমন একটা থিয়েটার গ্রুপের নিয়ম-শৃঙ্খলা সমস্ত কর্মীকে মানতে হয়। রাজনৈতিক দলের মধ্যে থেকে সেই একই নিয়ম-শৃঙ্খলা মানা বাঞ্ছনীয়। যদি কিছু বলতেই হয় সেটা দল থেকে বেরিয়ে গিয়ে বলাটা উচিত বলেই তিনি মনে করেন। অন্যদিকে সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম পর্বে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে এখনকার বিজেপি সরকারের ফারাক প্রায় আসমান জমিনের মতই। এখন কেন্দ্রের বিজেপি সরকার অ-বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকার গুলোকে ক্ষমতার দিক থেকে কার্যত মিউনিসিপ্যালিটি লেভেলে নামিয়ে এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে অত্যন্ত দুর্বল করা হয়েছে। বিরোধীদলের বিধায়কের টাকা দিয়ে কিনে বা ভয় দেখিয়ে অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে প্রায়ই ভেঙে দিয়ে সেখানে গেরুয়া সরকার কায়েম করা হচ্ছে। ইডি, সিবিআই, আয়কর দপ্তরের মত কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে অবিজেপি শাসিত রাজ্যের নেতা মন্ত্রীদের হেনস্তা করাটা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সর্বোপরি আদানি আম্বানিদের মতো কর্পোরেট সংস্থা দের সাহায্যে অর্থনৈতিকভাবে অনেক বেশি বলিয়ান ভারতীয় জনতা পার্টি। ফলে এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোটায় এখন আশু কর্তব্য। কেরালা-সহ দক্ষিণ ভারতের অন্যান্য রাজ্য ও পশ্চিমবঙ্গ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে বলেই এখনও ভারতীয় সংবিধানের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়নি। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটা মন্ত্রী হিসাবে ব্রাত্য বসু নিজের দলের পক্ষে দাঁড়াবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে ক্ষমতা বৃত্তের তো কিছু নেতিবাচক বিষয় আছেই, ক্ষমতার পরিকাঠামোর সুযোগে অনেক সময়েই অলিন্দে ঢুকে পড়ে লোভি, মাফিয়া, রেপিস্ট, দুর্নীতিবাজের গং। যার দরুণ আর জি করের মতো ঘটনাও ঘটে। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ নিশ্চয়ই জায়েজ। পশ্চিমবঙ্গে এ ধরনের ঘটনাকে কেউই সমর্থন করছেন না, কিন্তু এহেন ঘটনাকে সামনে রেখে যখন এক্সট্রিম রাইট উইঙ্গাররা মাথা তুলতে চায়, সেই সোশিও-পলিটকাল রাইট-উইঙ্গার ও কর্পোরেটদের নয়া উত্থানের বিরুদ্ধেও তো পাল্টা প্রতিরোধ দরকার। আমাদের বিশ্বাস এই সকল বিষয়েই ব্রাত্য বসু ‘অর্গানিক ইন্টেলেকচুয়াল ’-এর ভূমিকা পালন করছেন এবং তা করে যাবেন।
এখন প্রশ্ন, ব্রাত্য বসু বর্তমানে ডানপন্থী না বামপন্থী? এই প্রশ্ন নিয়েও বৌদ্ধিক মহলে জোর চর্চা চলে। বিশেষ করে তৃণমূলে সরাসরি যোগ দেওয়ার পর এবং এখনো কেউ কেউ বলেন যে ব্রাত্য বসু তাঁর বামপন্থী আদর্শ ত্যাগ করে দক্ষিণ পন্থায় নিজেকে মিশিয়ে দিয়েছেন। যারা এই ভাবনা ভাবেন তাদের এই ভাবনা পুরোপুরি মিথ্যে। বরং চিন্তা ভাবনায় ব্রাত্য বসু এখনোও বামপন্থী বলেই মনে হয়। বামপন্থী হলেই যে ভারতের কোন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকতেই হবে, তারও কোনও মানে নেই। মতাদর্শ নিয়ে গোটা পৃথিবীজুড়ে যত জন মানুষ কাজ করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ফরাসি দার্শনিক ও মার্কসীয় চিন্তক লুইস অলথুসার। আলথুসারের মতে মতাদর্শ (ideology) কোনও মতবাদ, বিশ্বাস, বা ধারণার মধ্যে সীমিত নয়, মতাদর্শের একটা বিশাল মূর্ত রূপ অর্থাৎ বস্তুগত অস্তিত্ব আছে, যেটা ব্যক্তি বা সমাজের ব্যবহারিক ক্রিয়ার মধ্যে পাওয়া যায়। তিনি মতাদর্শকে ফ্রয়েডের অজ্ঞানের (unconscious) সঙ্গে তুলনা করেছেন। অর্থাৎ কোনও ব্যক্তি মানুষ কোনও অবাম দলে গেলেন ও কিছু একটা তথাকথিত বামপন্থী দলের বিরুদ্ধে বললেন, তার মানেই তার গায়ে দক্ষিণপন্থী তকমা লাগিয়ে দেওয়ার কোনও মানে হয় না। গ্রামসির ভাবনায়, রাষ্ট্র তার আধিপত্য (হেজিমনি) কায়েম করে মতাদর্শের ( ideology) মধ্য দিয়ে। আবার আলথুসার বলেছেন মতাদর্শ কাজ করে মিডিয়া, বিদ্যালয়, চার্চ, ক্লাবের মত প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। অলথুসার এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলেছেন ‘ইডিওলজিক্যাল স্টেট অ্যাপারেটারস’। বর্তমানে ভারত রাষ্ট্র, কর্পোরেট সংস্থা পরিচালিত মূল শ্রেণির সংবাদ মাধ্যম গুলির মাধ্যমে তাদের মতাদর্শ ‘হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্তান’ গোটা দেশে প্রচার করছে। এর বিরুদ্ধে পাল্টা প্রচার প্রয়োজন। যেটা ব্রাত্য বসু তাঁর থিয়েটার, সিনেমা ও লেখনীর মধ্য দিয়ে করছেন বলেই মনে হয়। কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে রাজ্যের থিয়েটার দলগুলিকে ফতোয়া দিয়ে জানানো হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গুণকীর্তন করে একটি নাটক অভিনয় করতে হবে। তবেই কেন্দ্রের পাঠানো মোটা অনুদান এবং অর্থ পাবে থিয়েটার সংস্থাগুলি। এই বিষয়টি লিখে এক্স হ্যান্ডেলে তার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন ব্রাত্য বসু। গোয়া চলচ্চিত্র উৎসবে তার পরিচালিত সফল ছবি ‘ডিকশনারি’ কে জায়গা দেওয়া হয়নি। এই অভিযোগ জানিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী।
তবে ব্রাত্য বসু ছাঁচে ফেলা বাম পরিকাঠামোতে থাকতে যে রাজি নন সেটা তার রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি থিয়েটার ও অন্যান্য শিল্পকর্মের মধ্যে দিয়েই পরিষ্কার বোঝা যায়। দীর্ঘ সময় ধরেই থিয়েটারের সঙ্গে বামপন্থার একটা যোগ ছিল। থিয়েটারের সঙ্গে বামপন্থাকে সমার্থক হিসেবেই ধরা হতো। অর্থাৎ থিয়েটার এর মধ্যে থাকবে প্রতিবাদ এবং সমাজ পরিবর্তনের বার্তা। এই ধারণা থেকে অনেকটাই বেরিয়ে এসেছেন ব্রাত্য বসু। এ ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘থিয়েটারের মধ্য দিয়ে সবসময় প্রতিবাদ করতেই হবে তারও কোনও মানে নেই।’’ আসলে ব্রাত্য বসু বাংলা থিয়েটারকে জনপ্রিয় করতে চেয়েছিলেন এবং এখনো চান। তিনি মনে করেন বাংলা থিয়েটার মানুষের কাছে পৌঁছাক। তাঁর থিয়েটার এর মধ্যে তিনি অনেক সময়ই পপ এলিমেন্টকে ব্যবহার করেছেন। পাশাপাশি তিনি এটাও বলেছেন, ‘‘বাইরে পপুলার এলিমেন্ট থাকলেও ভেতরে কিন্তু শান্ত নিস্তরঙ্গ জীবনের কথা বলা আছে।’’
ব্রাত্য বসু যখন রাজনীতিতে এসেছিলেন, ২০১১ সালে রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছিল তার আগে থেকেই ব্রাত্য বসু থিয়েটারের মধ্য গগনে পৌঁছেছিলেন। রাজ্যের অনেক বুদ্ধিজীবী সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের আন্দোলনের পথ ধরে বা পরে সরাসরি তৃণমূল রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যোগ দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে কবির সুমন ছাড়া আর কেউ ব্রাত্য বসুর মতো তাঁর শিল্পকর্মকে আগের মতোই সমভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। সম্প্রতি ব্রাত্য বসু পরিচালিত হুব্বা সিনেমা ব্যবসায়িকভাবে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। ভারত ছাড়িয়ে ইউরোপ আমেরিকাতেও এই ছবির প্রদর্শন হচ্ছে। যেভাবে হিন্দি সিনেমা গত কয়েক দশক ধরে বাংলাকে গ্রাস করছিল সেই জায়গায় হুব্বা নিঃসন্দেহে একটা চ্যালেঞ্জ জুড়ে দিয়েছে। শুধু তাইই নয়, বাংলার সমাজ জীবনের গ্যাংস্টার কে নিয়ে এইভাবে এর আগে বাংলায় কোন সিনেমা তৈরি হয়নি। সেই দিক দিয়ে দেখলে ব্রাত্য বসু পরিচালিত হুব্বা বাংলা সিনেমায় একটা নতুন ঘরাণা। তাই রাজনৈতিক সাফল্যের শিখরে থেকেও ব্রাত্য বসু অন্যান্যদের মতো স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে না দিয়ে থিয়েটার, সিনেমা নিয়ে নতুন করে যে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছেন সেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। ব্রাত্য বসু নিজেই বলেছেন তার রাজনৈতিক সত্তা কখনোই তার শিল্পী সত্তাকে ছাপিয়ে যায়নি। চেতনায় তিনি আজও বামপন্থী।