আজ বৃহস্পতিবার, ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হয়তো এ ঘুঙুর সময় অনন্ত বরফেরই হলো

।। সোনালী চক্রবর্তী ।।

আদরিণী, কিছু পিঙ্গল বসন্তশোক

আলগোছে তুলে রাখা ভালো,

বলা কি যায়,

হয়তো এ ঘুঙুর সময় অনন্ত বরফেরই হলো!

কতদিন ভুলিয়ে রাখবে নিজেকে,

সমুদ্র কখনো উচ্চারণ করে?

‘মধু ক্ষরন্তি সিন্ধব’…

হেমন্তরেখা

টলটলে গর্ভ নিয়ে শীত খুঁজছে

বিবাগী রোদ্দুরের সর,

আর তুমি দাঁড়িয়ে আছো,

অবিকল অতীতে হেঁটে যাওয়া সাধক শালপথ।

বৃক্ষ নয়, পাতাদেরই খুঁজি,

ঝরে পড়ায় যে নির্লিপ্তি,

হয়তো, তারও পরে লুটিয়ে থাকায় 

অধিক সমাধি।

ভেসে ওঠার ছিলো,

যাবতীয় যুদ্ধ শেষে প্রান্তর ও পাঁজরের,

দূর থেকে চন্দন মনে হবে,

সেই সব ধূসর তিমির মতো অলীক উপকূলে।

অথচ, ডানা খুঁজতে খুঁজতে 

দিকভ্রান্ত দ্বিপদী জনমে

যেভাবে কেউ কেউ তীর আর বাকিরা… 

ব্যাধ হয়ে যায়,

খানিক মায়া আধেক আলেয়া নিয়ে

মারুফিয়া দহে ঝিঁঝিঁমতো ডুবে গেলে।

বলেছিলাম,

আদরিণী, কিছু পিঙ্গল বসন্তশোক

আলগোছে তুলে রাখা ভালো,

বলা কি যায়,

হয়তো এ ঘুঙুর সময় অনন্ত বরফেরই হলো!

কতদিন ভুলিয়ে রাখবে নিজেকে,

সমুদ্র কখনো উচ্চারণ করে?

‘মধু ক্ষরন্তি সিন্ধব’…

ম্যাগমা

ঘৃণার বাদামে তাকিয়ে জানা গেলো জোয়ার সমাগত, যেভাবে সামান্য সাদা পরী মহাকাশে রেখে যায় অজস্র ছাই নিতান্ত অবহেলে। তবুও অঘ্রাণে বৃষ্টি এলে এখনো মনে হয় যতটা দহন পুষি, কিছুটা বারুদ পেলে দাবানল ভিজে যেত। বনমালী, প্রেমিকেরা রিরংসায় কেন আমি পাঞ্চালী, তারা জানেনা তুমিই রূহদার আজন্ম আভূমি। অভিযোগ নেই, ঘাতক চিনি না বলে জিভের নরমে প্রলোভনেরা শাতিল হয়ে গেলে আমি আজও বলতে পারিনি “মামেকং পরমং ব্রজ” হে মাধব এই তোমার আদরিনী

প্রতিসরণ

অদ্ভুত সন্তুর কড়ি ধোয়া বৃষ্টির ছাঁটে, ‘মাধব মাধব বাচি’ শুনতে চেয়ে শিউরে উঠে কেন যে ভাবলে… মাছেরা আবীর মেখে কোনো এক গলিত রাসের চূর্ণ চীনা লণ্ঠনে, মৃত কীটের কলঙ্ক পেয়েছিলো বিনিময় সোহাগে, দ্বিধারা সেই হতে দ্বিধাগ্রস্ত কৃষ্ণগহ্বরে।

অপরিমেয় আলো অথচ অনির্বাণ মনখারাপের সুতো শীত সন্ধ্যাদের শরীরে, যেন গ্রীবার ময়ূর ভেঙে সিঁথিতে নীল জড়িয়ে রেখেছে আদরিণী বেশুমার বিরাগে।

HENRI MASSON (1907-1996), Canada and Belgium.

সোনালী চক্রবর্তী

কবি, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক ও অনুবাদক । ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর । ২০১৬ সালে প্রত্যক্ষ লেখালিখির জগতে যুক্ত হওয়ার আগে পরিচয় ছিলো ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী । বর্তমানে লাতিন আমেরিকান সাহিত্যে গবেষণারত । প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : ১| ‘জামার নীচে অলীক মানুষ’ (২০১৭) ২| ‘পদ্মব্যূহে নিম অন্নপূর্ণা’ (২০১৯) ৩| ‘মমিস্রোতে বেহায়াসিন্থ’ (২০২১) সম্পাদিত গ্রন্থ ‘ষটচক্র’ (ভারত বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগ, ২০১৯) ও “সংকলিত বাক্” (২০১৯) । কবিতার সঙ্গে নিয়মিত অনুবাদক বিশ্বসাহিত্যের । অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে ‘নীলগিরি ওয়াগন’, ‘দি ডেইলী স্টার’, ‘অংশুমালি’-সহ ভারতের বাইরের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় এবং কবিতা পঠিত হয়েছে ‘দিল্লী সার্ক সম্মেলন’- এ ।

Share

4 thoughts on “হয়তো এ ঘুঙুর সময় অনন্ত বরফেরই হলো”

  1. অপূর্ব। এ লেখনী আগামীর,প্রাগৈতিহাসিক দ্বারা এর বিচার অসম্ভব।তবে একটা কথা না বলে পারিনা তা হলো,এ শব্দ পাঠ করলে স্নিগ্ধতা ছেয়ে যায়,আর ছেয়ে যায়,ধেয়ে আসে তোলপাড়…এ নিশ্চিত ভাবেই
    আগামীর,কবি সময়েও অনেক এগিয়ে আছেন ! শুধুই বিষ্ময়,বিষ্ময়,বিষ্ময়..

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top