আজ বৃহস্পতিবার, ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মেটে রঙের মুখশ্রী

কবিতা সিরিজ

।। জ্যোতি পোদ্দার ।।

ফেলে ফেলেই বাড়ন্ত পথ হয়।
পথের বাঁক হয়।
কথার ভাঁজে একান্ত বীজমন্ত্র হয়।

টানাটানা চোখের গোলগাল বাটার মতো
মেটে রঙের মুখশ্রী কোথাও ফেলতে পারিনি।


প্রতিবেশী

একজন পাতা লকলক করে
নড়ছে আর নড়ছে
আর ভকভক করতে করতে
উগড়ে দিচ্ছে দু’হাতে
সবুজ আর হলুদ বমি।

ওয়াক থু
ওয়াক থু…

লিকলিকে পাতলা শরীরে
খামছির দাগ
চিমটির কুচানো আঁচড়
আর সারা গায়ে বিবর্ণ শ্যাওলা।

আমার নিকট প্রতিবেশী
জানলার পাশে
দেয়ালের পাশে
মাঝখানে নয় ইঞ্চি করিডোর।
হাত বাড়ালেই
হাতের পাতায়
একজন পাতা রাখে মাথা
নীরবে নিভৃতে
ভয় আর বিস্ময়ের চোখে।


মেজবান

একবার এক মিশ্র বনে গিয়েছিলাম।

এটা সেটা কত কী
সাথে ছিল আমাদের!
বোতল ছিল
গ্লাস ছিল
ছিল কুচি কুচি সাদা সাদা বরফ
আর রুচি চানাচুর

ইচ্ছে করেই তাঁবু নেইনি।

যেখানে রাত সেখানে কাতের
মতো করে মেহগনির
গোঁড়ায় শুয়েছিলাম সারারাত।

মেহগনি তাঁর পাশের মেহগনিকে
ডেকে এনে খুব নিকটে
হাত ছোঁয়া উঁচুতে পাতার ছাউনি
বানিয়ে দাঁড়িয়েছিল সারারাত।


ভোজ

একবার রিঙ ছুঁড়ে সাবান পেয়েছিলাম।
কসকো সাবান।
দুই টাকার বাজিতে
পীত রঙের কসকো সাবান।

মোড়কে মাথায় টাওয়েল জড়িয়ে
সাবান ফেনা বাথটবে ডুবে আছে মেয়েটি।

মোড়ক খুলবার আগেই
আমি টাওয়েল ধরে টান দিয়েছিলাম।

ঘাড় বাঁকিয়ে তেড়েফুঁড়ে আসবার
সাথে সাথে বুঝেছিলাম
মেয়েটির শুধু বড় খোঁপা নয়।
কথার চোপাও আছে।


মেটে রঙের মুখশ্রী

কতকিছু ফেলে দিয়েছি।
ফেলে দিতে হয়।
এই যেমন মুঠোভরা রঙিন মার্বেল।
অথবা আয় রে আমার গোলাপফুল

ফেলে ফেলেই বাড়ন্ত পথ হয়।
পথের বাঁক হয়।
কথার ভাঁজে একান্ত বীজমন্ত্র হয়।

টানাটানা চোখের গোলগাল বাটার মতো
মেটে রঙের মুখশ্রী কোথাও ফেলতে পারিনি।

কুমোর পাড়ার একথাল কাঁদামাটির
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুতুলের
সারিতে দেখেছিলাম তাকে
কড়া সোঁদাগন্ধ নাকে মেখে।
বিষ্ময়ভরা চোখে।


আমি

মুখ আঁকতে চেয়েও পারিনি।
আদল আসে না।
ভেঙে ভেঙে যায়।
রেখার গতিপথ কেবলই পাল্টে যায়।

মুখ ও মুখোশের সীমান্তরেখা
না থাকার কারণে প্রায়ই
মুখকে মুখোশ
আর মুখোশকে মুখ ভেবেছি বহুদিন।

মুখোশও আঁকতে পারছি না।
কেবলই ছানিপরা চোখের মতো
সবকিছু ব্লার হয়ে যায়।

একবার জলের শরীরে মুখ দেখে
আঁতকে উঠেছি
এ কীসের প্রতিবিম্ব?
আমার মুখ না মুখোশের?

নিজের মুখ ও মুখোশ ব্লার হয়ে
গেলে কি আর
মুখ আঁকা যায় কিংবা মুখোশ?

অলংকরণ- সাইদ উজ্জ্বল

জ্যোতি পোদ্দার

জন্ম ১৯৭৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশের নয়ের দশকের কবি। বাসস্থান বাংলাদেশের শেরপুর জেলার নালিতা বাড়ি। পেশা শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত। প্রকাশিতকাব্যগ্রন্থ: ‘(a+b)2 উঠোনে মৃত প্রদীপ’ (১৯৯৭), ‘সীতা সংহিতা’ (১৯৯৯),
‘রিমিক্স মৌয়ালের শব্দঠোঁট’ (২০০২), ‘ইচ্ছে ডানার গেরুয়া বসন’ (২০১১), ‘করাতি আমাকে খুঁজছে’ (২০১৭) এবং ‘দুই পৃথিবীর গ্যালারি’ (২০১৯)।

Share

2 thoughts on “মেটে রঙের মুখশ্রী”

  1. ভালই লাগলো। কবিতার নামগুলোও বেশ।
    এই কবির গুণমুগ্ধ একজন পাঠক আমি। তাই একটু সমালোচনা করাই যায়। “ভোজ”? এই কবিতার ৯ নম্বর লাইনে “দিয়েছিল” এর স্থলে “দিয়েছিলাম” হবে বোধহয়। তবে কবিতার নামকরনটা আমার বুঝে আসেনি, অপরিণত পাঠক বলেই হয়তো।
    “আমি” কবিতার “ব্লার” শব্দটি নিয়ে আগেই লিখেছি। তবে এটাকে খুবই উন্নত মানের কবিতা বলে মনে হয়েছে আমার কাছে।

    সবচেয়ে ভাল লেগেছে “মেটে রঙের মুখশ্রী”!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top