আজ বৃহস্পতিবার, ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দরবার হয়ে বসি স্মৃতিতে তোমার

।। অতনু সিংহ ।।

তুমিও গায়েবি আহা
তোমার বিভঙ্গ দেখি ফুলের বাজারে
দরবার হয়ে বসি স্মৃতিতে তোমার
ফুলের গন্ধে আর রঙের মায়ায়

দরবার হয়ে বসি স্মৃতিতে তোমার

তোমারে এই জোছনায়

কে এক জ্যোৎস্না ফেলে রেখে
বাড়ি ফিরে গেছে…
তার আলো গায়ে মেখে
রাস্তা পেরোই
দেখি প্রাচীন অশ্বত্থ এক
বাকি কথা তার বলে দিতে চায়,
ঘুমের ভিতরে সে গায়
মরে যাওয়া পাখীদের গান,
খসে পড়া ফুলের আলাপ…
জোছনা তাহার একাকী কোথায়
ভেসে চলে যায়
বড় একা একা ভেসে চলে যায়

তোমার পর্দাসীনে

যে তুমি পর্দা নিলে
তোমার আকার মনে রেখে
নদীর সমুখে আসি পুনর্বার
বৃক্ষসারিতে মেঘের গম্ভীর ভেঙে
অকাল বরষা সাজে
যে পরম কেঁদে যায়
তাহার অঙ্গের মায়া তুমি সেই
মায়াবতী, নিঝুম দুপুরে
কবেকার বেড়ালের মা
আজ এই গায়েবের ভিতর
তুমিও গায়েবি আহা
তোমার বিভঙ্গ দেখি ফুলের বাজারে
দরবার হয়ে বসি স্মৃতিতে তোমার
ফুলের গন্ধে আর রঙের মায়ায়

মায়া ও মুখাগ্নি

সর্বাঙ্গ জ্বলেছে তোমার
জ্বলেছে অতীত আর
ঘটমান সময়ের ঘড়ি
দেহঘড়ি পুড়ে গেছে ঘাটে
ওরা সব চুপিচুপি শিয়রে
দাঁড়ায়ে তোমার
লুঠ করে নিয়ে গেছে শ্বাস!
এ শহর সাজিয়ে দিয়েছে চিতা
প্রতিটি নগরপিতা আসলে তোমার হন্তারক

আমিও পিতার পালিত শিশ্ন
তবু তোর মুখে ছড়িয়ে দিয়েছি জল
অগ্নিশলাকা ছুঁইয়েছি মুখে
দেখেছি, ময়নাতদন্তে
কাটা ছিল ওষ্ঠ তোমার…
স্মৃতিতে হয়তো কোথাও
রাধিকাপুরের গান, চুম্বন চুম্বন,
সেটুকুও জলে ও আগুনে
ধুইয়ে দিয়েছি-— দেখেছি কীভাবে
এ দুনিয়া সবলের হাতে
পুরুষের হাতে কেবলই দখল হয়ে যায়

রাধিকা বিকেলে মহামায়া পোড়ে
শিব সাক্ষ্য রাখে, সেও ব্যর্থ একদিন
কাঁধে নিয়ে কার শব, প্রলয়ের
ব্যর্থ কবিতা লিখেছিল কেবল

কবিরা ব্যর্থ বারংবার
এ সকল ব্যর্থতা
মৃত্যুর পদ্য রচে যায়
হত্যার পদ্য রচে যায়

বেরঙিন

বিবর্ণ হয়ে গেছি মানে
সকল রঙের অভিজ্ঞতা মিশে গেছে।

একদিন বিকেলবেলায়
যখন সূর্য ডুবতে চাইছে গঙ্গায়
আর আমি হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে—
ভাসিয়ে দিচ্ছি একটা মালা,
বেদনার, হর্ষের আর সেই অ্যাকোয়া ঘ্রাণের
যা ছিল শরীরী সঙ্গীতে তাহার–
ডুবন্ত সূর্যকে বলছি, আরেকটু ওয়েট করুন প্লিজ
আগে মালাখানি ভেসে যাক দক্ষিণে,
শহর ছাড়িয়ে, নগরের স্মৃতি ছাড়িয়ে, অরণ্য পার হয়ে
সমুদ্রে এই বাংলার…
বিবর্ণ মালা ভাসছে
আর আমি জলপায়ে সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে
ঢুকে পড়ছি একটা নিশ্চিন্ত গুম্ফায়
যেখানে কে যেন বসে আছেন অনাদি হয়ে
তাঁর বিবর্ণে আমিও বসেছি
একটা সন্ধ্যায়।
বাইরে দেবীমূর্তি ভাসানের প্রস্তুতি—
হুল্লোড় চলছে—
যেভাবে শ্মশানযাত্রায় শোরগোল থাকে
তারপর মালা ভেসে যায়

গঙ্গায়, পদ্মায়, মেঘানাতে
আর রাধিকার যমুনাবেলায়…

আতপমাধুরী

থেমে যাওয়া শ্বাসের শিয়রে
উঠেছে সূর্য আবার
সে আলোর অর্থ কি বুঝেছিলে তুমি?
যে ফুল নিশিপ্রেম, রজনীশুভ্র
তারে গলে নিয়ে কোথায় যে ভেসে চলে গেলে
হে ভস্ম, মায়ার কুণ্ডলী,
তার ঘ্রাণ তোমার নিমিত্তে পাইলো যাহারা
তারা কেউ তোমারে দেয়নি গান,
আতপমাধুরী…

অন্ধকারের পিঠে নাকি আলোক ইশারা—
এ প্রবাদ মিছে প্রমাণিতে
নিভে গেলে গ্রহনের দিনে কার গ্রাসে
করালে কাহার!

খোয়াবে তোমার এসেছিল কালী, তুমি তার কাছে
চেয়েছিলে আশ্রয় সুশীতল, কবিতার
দিনকাল তুমি নাকি চেয়েছিলে
স্বপ্নের ভিতর অশ্রুকাতরতায়…
সেও দেখেনি তোমায়
নাকি তার দৃশ্যের গায়েবে নূর এসেছিল

প্রথম ভোরের আলোয়
আলো হয়ে তুমি হারালে আলোর ভিতরে কেবল
তুমিও গায়েব হলে, রুহ হলে, ছায়া হলে,
আয়নার সামনে রেখে গেলে
আমাদের ব্যর্থ কবিতাসকল

পরজনমে হবো রাধা

আজ নয় কাল
নিজের ভিতরে ডুবে যাওয়া
শিখে নেবো ঠিক
নিঝুম ওই পাহাড়ের গায়ে
হেমন্ত গাঢ় হওয়ার বেলায়

যে তুমি দগ্ধ যুবতী
নিজের ভেতরে ফের তোমাকেও পাবো
হিমেল বাতাসে দুইজন মিলে মিশে
কোথায় যে হারাবো সেদিন— অনুমানে নাই।
শুধু এক কুটিরের রেখা হতে গান
ভেসে আসে আবছায়া
কুয়াশায়…
উঠোনে ঝরে আছে ফুল,
গন্ধবকুল

রান্নাবাটির উনানে গান গেয়ে সারাবেলা
আমি হবো রাধা
খোঁপায় চন্দ্রাবতী পুরাণের মালা
বেঁধে দেবে তুমি—
আমার ভিতরে তুমি বনমালি
আর তোমার ভিতরে পাহাড়,
হেমন্তের ঘ্রাণ—

তারপর মহাকাশ, তারপর
শূন্য সকল…

ফটোগ্রাফ: প্রয়াত বর্ণালী মণ্ডল (১৯৭৪-২০২১)

অতনু সিংহ

কবি, গদ্যকার। জন্ম ও বসবাস- পশ্চিমবঙ্গে। বেশ কিছু সময় কাটিয়েছেন বাংলাদেশের ঢাকায়। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ৪টি, ছোটগল্প সংকলন- ১টি। পেশায় সাংবাদিক। স্বাধীন চলচ্চিত্র কর্মী। ‘প্রতিপক্ষ’ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top