আজ বৃহস্পতিবার, ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

তোমার মউতের দিনের মতো

তিনটি কবিতা

।। মীর হাবীব আল মানজুর ।।

ঘড়িতে এগারোটা,

তোমার মউতের দিনের মতো
থকথকা হয়া আছে

কখনো এমন আফিমবোধে ঢুকে যাই,

হার লহমার ভিতর যেন তোমার জানাজার আজান হতে থাকে

বাবা হারালে পরাবাস্তব ঐরাবত

কী ক্যারফা বাধাইলা আমার পরানে
কেবল তোমার দিকে সফরের কুয়ারা করে

তোমার পরীক্ষা থাকলে তুমি দুপুরে ঘুমাবা
আর উঠে দেখবা এক লানতের বিকাল

মঙ্গলবার আসছে
আর সপ্তার পাল্লাটা শুক্রবারের দিকে ঝুঁকে গেছে

স্মৃতিই আমাদের চাঙা করে
যা তাম্বুলও ঠিকঠাক পারে না

হুয়ান রুলফো বলেন,
পাপীদের রুহ মারা গেলে
সারারাত ঝিঁঝির ডাক হয়ে কাতরায়

মাদ্রাসায় কী পরীক্ষা দিই!
অনার্স ছাড়াই স্নাতকোত্তরের সনদ তোমাদের খালি দেখাব

কিছুই ভাল্লাগে না
রোদ এত, 
গেণ্ডারিয়া স্টেশনে প্যান্ট ছেড়া পাগলের কালো নুনু যেন বের হয়া আছে

তোমার সাথে হবে না দেখা আর গেণ্ডারিয়া স্টেশনে 
গেণ্ডারিয়া স্টেশনে ব্রাণ্ডের ছোলাবুট পাওয়া যায়
সেখানে দূর থেকে বসে থাকা লোকদের গাঞ্জুট্টি লাগে

দীর্ঘদিন ভাবতাম সুন্দর মেয়েরা নাকে আঙুল দেয় না
ছেলেদের বদঅভ্যাসগুলা তাদের আরো কম কম

ইচ্ছা করে পিথিবি থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিই দুপুরের ঘুম
যাতে আর কেউ জেগে না উঠে গলি আবহাওয়ার ভিতর

কয়দিন পর পর একদুই লাইন করে যেভাবে লিখে রাখি
মার্চের ভিতর তেমন ছাড়া ছাড়া কিছু লিখে রাখা দরকার
কারণ গ্রীষ্মের শুরুও আমাদের জন্য কিছু না কিছু রেখে তো যায়


খুব ইজি চোখ নিয়া হায়াতের দিকে তাকালাম
আর গভীর কাব্যবোধ নিয়া সন্দিহান হলাম

যেখানেই যাই গরীব পানি খুঁজি
বোতলের পানি ম্যালা দাম, কিনতে পারি না

কতোরকমের কবিতা লিখতে জানো, আমাকে জানাও
আসো পাল্লা দিই মাত্রা ও গদ্যের হরফে

চারদিকে জোয়ানদের আলামত লেগে আছে
কাল দিন সুখ গেলে বুড়াদের মুরুব্বি ডেকে সম্মান করবো
আদব দেখাব খুব বাড়াবাড়ি করে

তোমার ভিজা গলা শুনে নন্দন ভাবি,
দেহের ভিতর এসরাজ কে যেন বাজাতে থাকে

এসরাজ এক্সাক্ট কোন যন্ত্রের নাম!
কী গ্যাঞ্জামে পড়লাম এই ওয়ার্ডটা ইউজ করে!

অন্ধকার নামবে নাকি সলিমুল্লাহ রোডে!
বাল! ফজলের সাথে সাইকেলে চড়ে দরবার থেকে ফ্রি ফুডপান্ডার ডেলিভারি দিব নাকি! 😕

নতুন প্রস্তাবনা জারি করি
কারো লেখা দেখে কোনো উস্কানি আমার তো হবে না

মুহাম্মাদপুরে বিকাল নামতে নিলে
না চিনা রাস্তায় হেঁটে হেঁটে কবির ভঙ ধরবো
পুরান দালান দেখলে থেমে গিয়ে ক্রিটিক করে করে ভালোবাসব তোমাকে, বাবুই
বুড়া আর গরীব কবিদের নিয়া মশকরা করাও শিখসি,
হেহে… অমুক হাসান দেখ, কী সোনার এন্ট্রি-পোয়েট্রি করে!

কিছু একটা লেখার সুখ পাওয়া হলো মোটামুটি,
উৎপলের মতো হলে কে আমাকে মাফ করতে যাবে!
😑


বাবা হারালে সন্তানেরা হারায় এক সৌরশরীর

এবার বাবাকে নিয়ে যাচ্ছে যেন আলো ও বিভাস!

এক মৃদঙ্গগহন অন্তারঙ্গারঙ্গির হাওয়া, বাবা

আমার অস্মিতার আলোয়ান তৈরি করেছিলে তুমি
আলোয়ানের জেবজুড়ে ছাইয়ের বাতাস ফুলে আছে, বাবা

আমার ফেনার ফেনয়িভ ভুলতা তোমাকে, বাবা

তোমার ছলনাময় কোমললিপ্সার কীর্তন
তোমার অসুখের পরাহত উপশম
তোমার কবরের উপর গুঞ্জন করবে
আমার শব্দস্মৃতি
আমার তেলাওয়াতরত কোরানের আয়াত ছাড়া কিছুই ছুঁবে না তোমাকে

ঘড়িতে এগারোটা,
তোমার মউতের দিনের মতো থকথকা হয়া আছে

কখনো এমন আফিমবোধে ঢুকে যাই,
হার লহমার ভিতর যেন তোমার জানাজার আজান হতে থাকে

বাবা হারালে পরাবাস্তব ঐরাবত

প্রচ্ছদের ফটোগ্রাফ: মোহাম্মদ রোমেল

মীর হাবীব আল মানজুর

বাংলাদেশের তরুণতম কবিদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর কবিতায় নিজস্ব স্বর ও কথনভঙ্গিমা ইতোমধ্যেই অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। প্রাতিষ্ঠানিক পত্র-পত্রিকাইয় সেভাবে লেখেন না বললেই চলে। অন্তর্জাল পত্রিকা ও ফেসবুকে নিজের টাইমলাইনে কবিতা লিখে চলেছেন। ১৯৯৯ সালে জন্ম, ঢাকাতে। কওমী মাদ্রাসায় পড়াশোনা।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top