সীমান্তজুড়ে কাঁটাতার পড়ছে

গুচ্ছ কবিতা

।। রুদ্র হক ।।

আমি বলেছিলাম
তুমি চলে গেলে
সব কিছু থেমে যাবে—
থেমে গেছে!
একা হয়ে যাবে পুরো পৃথিবী
এখন পৃথিবীজুড়ে লকডাউন
শরীরে শরীরে ঘর বাঁধছে অনুজীব!


সীমান্তজুড়ে কাঁটাতার পড়ছে


জ্বরতপ্ত দিন

তুমি ছেড়ে যাওয়ার পর
পৃথিবী জুড়ে লকডাউন
হাত ছেড়ে গেছে হাত
পা স্থবির, মাথা উল্টো পথে হাঁটছে
এক একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ—সীমান্তজুড়ে
কাঁটাতার পড়ছে!
শূন্য আকাশে বিহবল পাখি—
মানুষের কী হয়েছে!

আমি বলেছিলাম
তুমি চলে গেলে
সব কিছু থেমে যাবে—
থেমে গেছে!
একা হয়ে যাবে পুরো পৃথিবী
এখন পৃথিবীজুড়ে লকডাউন
শরীরে শরীরে ঘর বাঁধছে অনুজীব!

আমার জানালায়
যে গাছ দুই বাহু মেলে ধরে আছে
তাতে ডানা গুটিয়ে বসেছে
কাক ও কোকিল
একজনের হাতে মৃত্যু ঘন্টা
অন্যজনের হাতে প্রশ্ন

এমন জ্বরতপ্ত দিনে—বসন্ত আসে কেন?


নিরপরাধ ঘুম

আমি এক নিরপরাধ ঘুম
পৃথিবী আমাকে জাগিয়ে তোলে
হাতে অস্ত্র তুলে দেয়
দাঁতে শুয়োরের চর্বি কেটে কার্তুজ ভরা রাইফেল
কাঁধে তুলে দিয়ে বলে, মারো
আমি দিগন্তের দিকে হাজারো গুলি ছুঁড়ে দেখেছি
কোথাও কোনো শত্রুপক্ষ নেই
শত্রুহীন স্বপ্নহীন একটা দীর্ঘদিন
আমি বয়ে নিয়ে গেছি সমুদ্রের কাছে
উল্লাসে ফেটে পড়া দস্যুর দল
সর্বস্ব ছিনিয়ে নিতে গিয়ে দেখেছে
বুকে কোনো মানচিত্র নেই
চোখের খুব গভীরে
একটা পথ দূরে যেতে যেতে
দূরে যেতে যেতে
শূন্যে মিলে গেছে…


নদী ভর্তি মদ

আমি ক্ষমতাকাঠামোর ভেতরে বাস করি
রাত হলে আমাকে পুলিশ ধরে না
চোর ধরে না, ডাকাত ধরে না
হাসি পেলে আমি ঠা ঠা হাসি
তুই কে রে শালা?
পিঠের ওপর সরকার হয়ে বসে আছিস?
নদী ভর্তি মদ যাচ্ছে সমুদ্রের দিকে
কেউ কিচ্ছু বলছে না
পাখি ফ্লাই করছে মহাশূন্যে
কিচ্ছু বলছে না
আমি দিগন্তের দেয়ালে আজ বিকেল বিকেল
ঠেস মেরে বসেছি
গাছের ডালে মাস্তানটা শিস মারছে
সূর্য ড্রেস চেঞ্জ করছে
লাল নেত্রী ঘরে ফিরছে

স্যালুট! স্যালুট!

নেশা হলে আমি দেখেছি
মাথাটা খুব বৈশ্বিক হয়ে ওঠে
সমতল থেকে মালভূমি
একটা পেট মোটা বল
গড়িয়েই চলছে
পৃথিবীর সব মাতাল তখন ভাতৃসম
সব পাগল এখন ভাষা বোঝে
খুব ছন্দ
খুব তাল মেনে
ফিরতে ফিরতে দেখি
আস্ত ট্রেন বনে গেছি
চেইন টানছি
থামছেই না
থামছেই না
ট্রেন কি তবে পৃথিবীর ঘোড়া?
নাকি প্রকরণবাদী কবিতা কোনো?
মানুষকে ঘোড়ার পিঠে চড়ার
রাইট কে দিয়েছে?


সাহানা

আমার মৃত্যুর পর সাহানা
কেউ বলবে লোকটা কবি ছিলো
কেউ বলবে ভণ্ড
আমাকে মণ্ড বানাতে হবে স্মরণ সভা
কেউ বলবে ওর বিষণ্ণ চোখ দু’টো ভোলা যায় না
কেউ খুব গোপন কোন স্মৃতির সুবাস ছড়াবে
মানুষহীন দৃশ্যগুলো পৃথিবীর আকাশের নিচে
কোথায় হারাবে?

এই ভেবে চায়ে চুমুক দিতে দিতে
সভার আড়ালে ব্যর্থতা নিয়ে মুখ খুলবে দুই বন্ধু!

সাহানা, আমার সঙ্গে গোপন দুপুরগুলো মনে পড়বে তোমার
আমার ঘরে ফেলে আসা অন্ধকারগুলোয়
তুমি কি আলো ফেলবে না?
একটা ক্যামেরা হাতে
আমার প্রেমিকাদের বাড়ি বাড়ি ঘুরবে শবনম

তুমি তাকে বলে দিও
কাউকে ভালোবাসেনি ও
কোনো কবিতা লেখেনি সে—

মানুষের বুকে বুকে
রুদ্র শুধু নির্জন ছায়া ফেলে গেছে

প্রচ্ছদ: অতনু সিংহ

লেখক পরিচিতি
রুদ্র হক

রুদ্র হক

জন্ম ১৯৮৭ সালে, ফেনী জেলায়। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘নাক নেই’ (২০০৭)। পেশা সাংবাদিকতা। ইমেইল: rudrohuq1@gmail.com

Share