রুপা ও তামাতে গড়া দু’চোখ তোমার

।। কাজী ওয়ালী উল্লাহ ।।

“হেরেমে নাচছে যেন কারা সামা নাচ
পাহাড়েও শ্রমণেরা গাঢ় ধ্যানে রত
রুপা ও তামাতে গড়া দু’চোখ তোমার
রাজার মূর্তি আঁকা মোহরের মতো”

দেয়াং পাহাড়

তোমাকে ডাকবো বলে দাঁড়িয়েছি দেয়াং পাহাড়ে
টিলা থেকে টিলা বেয়ে, ঘোড়াটাকে ছেড়ে দিয়ে ঘাসে
প্রাচীন কালের এক পুরাতন গির্জার কিনারে
পাদ্রিদের গোর থেকে শূন্যতার ঘ্রাণ উঠে আসে

সাগরের ফেনা আর দ্বীপ থেকে দ্বীপান্তর হয়ে
ধ্বনি ও প্রতিধ্বনিত এই ডাক পৌঁছাবে যে কবে!
পার্বত্য বৃষ্টিপাতে টিলা ধসে পড়বার ভয়ে
ঘোড়ার লাগাম টেনে এইবার নেমে যেতে হবে

ঘুরেছি ঢালুতে বসা বিকালের পাহাড়ি বাজারে
খুঁজি কোনো রেস্তোরাঁয় নাবিকেরা খায় কিনা মদ
কম্পাসের কাঁটা নেড়ে আমাকে তারাই শুধু পারে
গোপনে দেখিয়ে দিতে তোমাদের শহরের পথ

আমি কি ডেকেই যাবো? গির্জা থেকে বর্ষণের পরে
বাইবেলের শান্ত ধ্বনি ভেসে আসে বাংলা ভাষান্তরে

সেন্টমার্টিন

রুহের ভিতরে আমি এনেছি তোমার হাওয়া বয়ে
শামুক বেরিয়ে আসে দাঁড়ি থেকে, এখনো আঁচড়
লাগালে হঠাৎ করে, রেটিনা ও আইরিশ ক্ষয়ে
গিয়েছিলো দুই চোখই হয়ে দুটা প্রবালপাথর

নিকটে যেতেই দেখি, একটা ফলের মতো তুমি
মধ্যসাগরে সেই ঝুলে আছো, ভেসে এলো ঘ্রাণ
এবং তোমার এই নীলাভ, কসমিক বেলাভূমি,
ছোট ছোট ঢেউয়েদের হরিণছানার মতো প্রাণ

ভেবেছি বসতি গেড়ে ঝিনুকের ব্যবসায়ী হবো,
সমুদ্রের গোপনীয় নকশা আঁকা তাদের শরীরে
পতিত তারার ছিটা, ইতিহাস, রেনেসাঁ, এসবও
খোলের ভিতরে নিয়ে, ধীরে ধীরে উঠে আসে তীরে

আর সে রোয়াঙ মেয়ে, নাম যদি রুসমা খানম
হয়েছিলো মনে তাকে আরো এক দ্বীপের মতোন

ফিরিঙ্গি

নোঙর ফেলেছে দেখো ফিরিঙ্গি জাহাজ
বণিকেরা নামে, সাথে ক্রীতদাস-দাসী
লাল কেশরের এক ঘোড়া উপহার
দিলাম তোমাকে যেন বুঝো ভালোবাসি

আমি তো জানিনা ওই পর্তুগিজ ভাষা
কার সাথে কথা বলে কাটাবো সময়?
যত দূরে তোমাদের বাড়ি, তারচেয়ে
পনেরো শতকও আজ কাছে মনে হয়

হেরেমে নাচছে যেন কারা সামা নাচ
পাহাড়েও শ্রমণেরা গাঢ় ধ্যানে রত
রুপা ও তামাতে গড়া দু’চোখ তোমার
রাজার মূর্তি আঁকা মোহরের মতো

মধ্যযুগেরও আগে হয়েছিলো দেখা
মোগল আমল থেকে আমি সেই একা

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ

আসো ঘর ছাড়ি আজ ক্যারিবীয় দুপুরের রোদে
এবং হারাই জুতা বার্বাডোজ সাগরের পাড়ে
ছোট এক দ্বীপ থেকে অন্য আরো ছোট কোনো দ্বীপে
হেঁটেই পৌঁছি চলো, অধিকন্তু এই খালি পায়ে

আমার মাথায় দেখে কোঁকড়ানো, ফেনায়িত চুল
শিশুরা ধরেছে ঘিরে চতুর্দিকে, ভেবে ক্যারিবীয়
ফরাসি কবিতা পড়ে যেন খুব মসিয়েঁ মসিয়েঁ
আমাদেরও স্মৃতিকথা চিরকাল কলোনিশাসিত

শহরে শহরে ঘুরে, আর শুনে জলদস্যুর গান,
সন্ধার নাভিতে, বসে ভারতীয় কোনো রেস্তোরাঁয়
বলার থাকবে শুধু বিষণ্ণ সেই নিগ্রো মেয়েকে
এসেছি হৃদয় নিয়ে, আমি এক দাসব্যবসায়ী

আসো খুলি আজ এই ক্যারিবীয় বোতলের ছিপ
এই দ্বীপ, এ ফেনাও তো কিছুটা মাদক জাতীয়

ছবি- Francesco del Cossa, Saint Lucy , c. 1473/1474. .

কাজী ওয়ালী উল্লাহ

জন্ম ২০০০ সালে, চিটাগাং জেলার গ্রামের দিকে। বর্তমানে চিটাগাং শহরেই বাস করেন, পড়াশোনাও একই শহরে। বছরের বেশির ভাগ সময় কাটে মাদ্রাসার হোস্টেলে আর ক্লাসে। ফোনে ইন্সটল করা একটা অ্যাপ, আর একাডেমিক পড়াশোনার জন্য দিস্তা মেপে কেনা খাতাতে কবিতা লেখেন।

Share